গত শুক্রবার শুরু হওয়া হামলায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা কয়েক মাসের মধ্যে পুনর্গঠন সম্ভব। এই হামলা ইরানের সরকার ও সাধারণ জনগণের মধ্যে পারমাণবিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

মাত্র কয়েক দিনের যুদ্ধেই ইসরায়েল ইরানের ১২ জনের বেশি শীর্ষ পরমাণুবিজ্ঞানী হত্যা করেছে। তাদের শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বের বড় অংশকে নিশ্চিহ্ন করেছে। হামলা হয়েছে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ অংশে। কিন্তু  ইরানের বিস্তৃত ও সুরক্ষিত পারমাণবিক কর্মসূচিকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি। আর এ বিষয়ে ইসরায়েলি সেনা কমান্ডার ও আন্তর্জাতিক পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার বিশেষজ্ঞরা একমত।

ইসরায়েলের প্রাথমিক হামলাগুলো ইরানকে একটি কার্যকর পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার ক্ষমতা কয়েক মাস পিছিয়ে দিতে পেরেছে, এমনটা জানিয়েছেন এক ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা। কিন্তু মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা, ইরান বোমা তৈরি করতে আরও অন্তত তিন বছর দূরে ছিল।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, ইরান পারমাণবিক বোমার দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে বলেই তিনি হামলা চালানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু সেটি সত্য হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া ইসরায়েল হয়তো আরও বেশি ক্ষতি করতে পারবে না।

আরও পড়ুন২৫০০ বছরের পুরোনো দুশমনি: ইসরায়েল কি ‘মরদখাই’? ইরান কি ‘হামান’?১৭ জুন ২০২৫

হামলাগুলো যা অর্জন করেছে, তা হলো ইরানের নেতৃত্বে ভীতি ও ইরানি জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করা। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় শিশুরা নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে পুরো তেহরানের মহল্লা খালি করার নির্দেশ গাজার ঘটনার ভয়াবহতার সঙ্গে মিল আছে। ফলে নিজের সরকারকে পছন্দ না করলেও তা ইরানিদের ইসরায়েলের প্রতি ঘৃণাকেই উসকে দিয়েছে। ইসরায়েল নিজে পারমাণবিক অস্ত্র বানিয়েছে। কিন্তু প্রকাশ্যে তা স্বীকার করেনি। বহু ইরানি এখন বিশ্বাস করেন, তাঁদেরও এমন অস্ত্র দরকার।

এক পশ্চিমা সামরিক কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েলের হামলাগুলো পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তারের পক্ষেই কাজ করবে। তিনি বলেন, ‘আমার নিজস্ব মত হলো, যদি এরপরও তাদের সক্ষমতা থাকে, তাহলে তারা যত দ্রুত সম্ভব পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে এগিয়ে যাবে।’

গত বছর ইসরায়েল স্পেশাল ফোর্স কমান্ডো পাঠিয়ে সিরিয়ায় এক গোপন হিজবুল্লাহ ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ধ্বংস করেছিল। ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনা সুরক্ষিত হলেও ইসরায়েল এখন পশ্চিম ইরানের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ করছে বলে দাবি করছে।

ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প সামরিকভাবে ধ্বংস করার সবচেয়ে বড় বাধা হলো পবিত্র নগর কোমের কাছে ফোর্দো স্থাপনাটি। এটি পাহাড়ের গভীরে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে ইসরায়েলের সবচেয়ে শক্তিশালী বোমাও এর নাগাল পাবে না। এখানে সেন্ট্রিফিউজ ও উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বড় অংশ রয়েছে। কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী বাংকার ধ্বংসকারী বোমা হয়তো এটি ধ্বংস করতে পারে। তা–ও নিশ্চিত নয়।

প্রাথমিক হামলার সাফল্যে ইসরায়েলে যখন উচ্ছ্বাস, তখন ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাচি হানেগবি সতর্ক করেছেন, ইরানি পারমাণবিক কর্মসূচি শুধু সামরিক উপায়ে ধ্বংস করা যাবে না। তিনি ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘স্থাপনায় হামলা করার মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রক্রিয়া থামানো সম্ভব নয়।’ তার চেয়ে বরং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির পথ সুগম করা উচিত, যাতে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি থামানো যাবে।

এদিকে নেতানিয়াহু স্পষ্ট বলেছেন, তিনি কূটনৈতিক সমাধানের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা নিতে বেশি আগ্রহী। ট্রাম্পকে তাঁর যুদ্ধবিরোধী অবস্থান থেকে সরে আসার জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন নেতানিয়াহু।

আরও পড়ুনকোনো ইহুদিরাষ্ট্র ৮০ বছর টেকে না—যে ভয়ে ভীত ইসরায়েল০৬ নভেম্বর ২০২৩

ইসরায়েলি নেতারা শুধু ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস নয়, তেহরানে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের স্বপ্নও দেখেন। কিন্তু বেসামরিক এলাকায় ইসরায়েলের প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত বর্তমান শাসনব্যবস্থার প্রতি ইরানি জনগণের সমর্থন বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ইসরায়েলি হামলার ভয় আরও বেড়েছে পশ্চিমা দেশের নীরবতার কারণে। গণহত্যা ও চরম সামরিক অন্যায় আক্রমণের পরও পশ্চিমারা কোনো বাধা দেয়নি। একসময় বিশ্বাস করা হতো আন্তর্জাতিক উদারপন্থী ব্যবস্থা ইসরায়েলকে লাগাম টেনে ধরবে। গাজার ধ্বংসস্তূপে সেই বিশ্বাসকে শেষ করে দিয়েছে।

যদি শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প এই যুদ্ধে না জড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন এবং ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে কোনো চুক্তি করতে দেরি করে, তাহলে ফোর্দোতে আরও বড় হামলা করতে ইসরায়েল দ্বিধা করবে না।

ইরানের বিশাল পারমাণবিক তথ্যের ভান্ডার ইসরায়েল হাতিয়ে নিয়েছে। তাতে সম্ভবত ফোর্দোর পারমাণবিক স্থাপনার পরিকল্পনা তারা পেয়েছে। এর মাধ্যমে স্থাপনার সহায়ক কাঠামো অচল করা, প্রবেশপথ বন্ধ করা বা বিশেষ বাহিনী দিয়ে স্থল অভিযানে প্ল্যান্ট ধ্বংস করা সহজ হয়ে যাবে।

গত বছর ইসরায়েল স্পেশাল ফোর্স কমান্ডো পাঠিয়ে সিরিয়ায় এক গোপন হিজবুল্লাহ ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ধ্বংস করেছিল। ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনা সুরক্ষিত হলেও ইসরায়েল এখন পশ্চিম ইরানের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ করছে বলে দাবি করছে। তাই সি-১৩০ বিমানে করে বিশেষ বাহিনী সেখানে পাঠিয়ে সাইটটি দখলের চেষ্টা ইসরায়েল করতে পারে।

ইসরায়েল এখন পড়ে গেছে উভয়সংকটে। তারা যদি হামলা বন্ধ করে, তাহলে ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির কাজ আবার শুরু করবে। তখন তাদের আবার বোমাবাজি শুরু করতে হবে।

এমা গ্রাহাম-হ্যারিসন গার্ডিয়ানের মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান সংবাদদাতা
গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া ইংরেজির সংক্ষেপিত অনুবাদ: জাভেদ হুসেন

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ধ ব স কর ইসর য় ল আরও ব ইসর য র ইসর

এছাড়াও পড়ুন:

কোনো দলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হলে জোট হতে পারে: সারজিস আলম

আগামীর বাংলাদেশ এবং জনগণের স্বার্থ সামনে রেখে যদি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়, তাহলে নির্বাচনী জোট হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এসসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ নগরের একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। এনসিপির কমিটি গঠন উপলক্ষে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার আহ্বায়ক এবং সদস্যসচিবের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সারজিস আলম বলেন, ‘যদি তারা (রাজনৈতিক দল) জুলাই সনদ বাস্তবায়নে একমত থাকে, বিচারিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে একমত থাকে, যদি তারা বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী এবং আওয়ামী ফ্যাসিস্টবিরোধী তাদের শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পারে—এ বিষয়গুলোতে যদি আমরা ঐকমত্য হতে পারি, তাহলে জনগণের স্বার্থে অ্যালায়েন্স (নির্বাচনী জোট) হতে পারে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলমান, তবে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

আগামী নির্বাচনে এনসিপি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং নিজেদের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করছে জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে যদি প্রতিটি ওয়ার্ডে এনসিপির আহ্বায়ক কমিটি থাকে, তাহলে ৩০০ আসনে শক্তিশালী প্রার্থী দিতে পারবেন। কমিটি গঠনের বিষয়ে কাজ চলছে।

আগামী সংসদ নির্বাচনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির (জাপা) অংশগ্রহণ করার কোনো অধিকার নেই উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি নেতা সারজিস আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এবং তাদের যারা দোসর জাতীয় পার্টি, তাদেরও আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো অধিকার নেই। এই জাতীয় পার্টির কত বড় সাহস, এই জিএম কাদেররা এবং এঁদের যারা সাঙ্গপাঙ্গ আছে, এরা যে খুনিদের দোসর এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ওই খুনিদের মদদদাতা, তার প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়। তারা যখন বলে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না! তাদের জন্মদাতা যে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ যে তাদের পেলেপুষে বড় করেছে, এর প্রমাণ তারা আবার নতুন করে দিচ্ছে। তাদের জাত চেনাচ্ছে। এই খুনিদের আগামীর বাংলাদেশের কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অধিকার নেই।’

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নে সারজিস আলম বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন আমাদের শাপলা প্রতীক দিতে গিয়ে তারা তাদের জায়গা থেকে একটি লম্বা সময় স্বেচ্ছাচারিতা করেছে এবং কোনো আইনগত বাধা না থাকা সত্ত্বেও আমাদেরকে শাপলা না দিয়ে শাপলা কলি দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে আমাদের জায়গা থেকে আহ্বান করব, তারা যদি ওই একই ধরনের আচরণ আগামী দিনে করে, তাহলে তাদের ওপর আস্থার সংকট তৈরি হবে। আমরা চাই, তারা সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠুভাবে তাদের প্রতিষ্ঠানের স্বাধীন যে সাংবিধানিক অবস্থা, তা যেন বজায় রাখে। তারা যেন পূর্বের মতো কোনো দলীয় নির্বাচন কমিশনে পরিণত না হয়। যদি কারও ভেতর এমন চিন্তা বা চেষ্টা থাকে, তাহলে তাদের পরিণতি তাদের পূর্বসূরিদের মতো হবে।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিদা সারোয়ার, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকিন আলম প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এনসিপির প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য
  • প্রয়োজনে প্রথম আলোর সম্পাদককে মনোনয়ন দেবে এনসিপি: নাসীরুদ্দীন
  • নির্বাচন হলে দেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে: সেনাসদর
  • নির্বাচন দেরি হলে বিভিন্ন ধরনের আশঙ্কা–বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা আছে: জামায়াতের আমির
  • দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের জন্য বিএনপিকে দায়ী করলেন আখতার হোসেন
  • কক্সবাজারে পুরনোদের ওপর আস্থা রাখল বিএনপি
  • জনগণের সহজে ভূমিসেবা নিশ্চিত করতে হবে: সিনিয়র সচিব
  • কোনো দলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হলে জোট হতে পারে: সারজিস আলম
  • অবিলম্বে গণভোটের দাবি চাকসুর
  • ক্ষমতার লোভে কেউ কেউ ধর্মকে ব্যবহার করছে: আব্দুস সালাম