ফলন ও লাভ বেশি, মৌসুম শেষের ব্যবসা ধরতে নওগাঁয় নাবি আম চাষ বাড়ছে
Published: 21st, June 2025 GMT
দেশে সাধারণত এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের প্রথমার্ধ পর্যন্ত আমের ভরা মৌসুম ধরা হয়। এ সময়ের মধ্যে গোপালভোগ, হিমসাগর, আম্রপালি, ল্যাংড়া, নাকফজলি ও হাঁড়িভাঙার মতো জনপ্রিয় জাতের আম বাজারে পাওয়া যায়। একসঙ্গে বাজারে অধিক পরিমাণে আমদানি হওয়ায় তখন অনেকে কাঙ্ক্ষিত দাম পান না।
বেশির ভাগ আমের জোগান যখন শেষ হয়, তখনই পাকতে শুরু করে নাবি (বিলম্ব) জাতের আম। বারি আম-৪, বারি আম-১২ (গৌড়মতি) ও আশ্বিনার মতো এসব আম মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে আসায় দাম বেশি পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। ফলন ও লাভ বেশি হওয়ায় নওগাঁয় নাবি জাতের আমবাগানের সংখ্যা বাড়ছে।
নাবি জাতের আমের মধ্যে জেলায় সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে গৌড়মতি ও বারি আম-৪। স্বাদ, মিষ্টতা ও ফলন বেশি হওয়ায় কৃষকেরা এখন এই আম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। যাঁরা বারি আম-৪ ও গৌড়মতি আম চাষ করেছেন, তাঁরা অন্যান্য জাতের আমের চেয়ে বিগত বছরগুলোতে চার-পাঁচ গুণ বেশি দামে বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বারি আম-৪ ও গৌড়মতি (বারি আম-১২) বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত দুটি নতুন জাত। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্বের বিজ্ঞানীরা ২০০৩ সালে বারি আম-৪ ও ২০১২ সালে গৌড়মতি আম উদ্ভাবন করেন। বর্তমানের উত্তরাঞ্চলের নওগাঁ, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে জাত দুটি ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। দুটি জাতই সাধারণত জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় দুই মাস সময় ধরে বাজারে পাওয়া যায়।
কৃষি সম্প্রসারণের তথ্যমতে, এ বছর নওগাঁয় ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে ৪৩৮ হেক্টর বেড়ে এ বছর ৯৫০ হেক্টরে গৌড়মতি জাতের চাষ হয়েছে। এবার বারি আম-৪ চাষ হয়েছে ২ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে। গত বছর চাষ হয়েছিল ১ হাজার ৯৭৮ হেক্টরে। নাবি জাতের আরেক আম আশ্বিনা এ বছর চাষ হয়েছে ৮৫০ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া বারোমাসি আম বারি আম-১১ (কাটিমন) ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে ২২০ হেক্টর বেড়ে এ বছর জেলায় কাটিমন আমের চাষ হয়েছে ৫৬০ হেক্টর জমিতে। এ বছর জেলায় ৩ লাখ ৮৭ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে নাবি জাতের আম উৎপাদনের লক্ষ্যামাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন।
নওগাঁর সাপাহার উপজেলার আমচাষি রায়হান আলম নাবি জাতের গৌড়মতি চাষ করেছেন ৩০ বিঘা জমিতে। এ ছাড়া বারি আম-৪ চাষ করেছেন ১০ বিঘা জমিতে। গত বছর গৌড়মতির ফলন পেয়েছিলেন ২৫০ মণ। আর বারি আম-৪ পেয়েছিলেন ১২০ মণ। তিনি বলেন, নওগাঁয় বাণিজ্যিক ফল বাগানের প্রায় ৬০ শতাংশই হলো আম্রপালি। এর পরই রয়েছে ল্যাংড়া ও নাকফজলি আম। গোপালভোগ, হিমসাগর, ব্যানানা ম্যাঙ্গোর স্বল্প পরিমাণ বাগান রয়েছে। এখন আম্রপালি, ল্যাংড়া ও নাকফজলির পরেই সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে বারি আম-৪ ও গৌড়মতি।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে রায়হান আলম বলেন, ‘ভরা মৌসুমে বাজারে বিপুল পরিমাণে আমের আমদানি থাকায় দাম থাকে প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত; কিন্তু বারি আম-৪ বিক্রি শুরু হয় ৪ হাজার থেকে এবং শেষ হয় ৮ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত। আর গৌড়মতি বিক্রি শুরু হয় ৫ হাজার টাকা থেকে এবং শেষ হয় ১২ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত।’
গাছে ঝুলছে নাবি জাতের আম গৌড়মতি। নওগাঁর পোরশা উপজেলার বন্ধুপাড়া এলাকার একটি বাগানে সম্প্রতি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র চ ষ হয় ছ জ ত র আম গত বছর আম ৪ ও কর ছ ন এ বছর
এছাড়াও পড়ুন:
ফলন ও লাভ বেশি, মৌসুম শেষের ব্যবসা ধরতে নওগাঁয় নাবি আম চাষ বাড়ছে
দেশে সাধারণত এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের প্রথমার্ধ পর্যন্ত আমের ভরা মৌসুম ধরা হয়। এ সময়ের মধ্যে গোপালভোগ, হিমসাগর, আম্রপালি, ল্যাংড়া, নাকফজলি ও হাঁড়িভাঙার মতো জনপ্রিয় জাতের আম বাজারে পাওয়া যায়। একসঙ্গে বাজারে অধিক পরিমাণে আমদানি হওয়ায় তখন অনেকে কাঙ্ক্ষিত দাম পান না।
বেশির ভাগ আমের জোগান যখন শেষ হয়, তখনই পাকতে শুরু করে নাবি (বিলম্ব) জাতের আম। বারি আম-৪, বারি আম-১২ (গৌড়মতি) ও আশ্বিনার মতো এসব আম মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে আসায় দাম বেশি পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। ফলন ও লাভ বেশি হওয়ায় নওগাঁয় নাবি জাতের আমবাগানের সংখ্যা বাড়ছে।
নাবি জাতের আমের মধ্যে জেলায় সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে গৌড়মতি ও বারি আম-৪। স্বাদ, মিষ্টতা ও ফলন বেশি হওয়ায় কৃষকেরা এখন এই আম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। যাঁরা বারি আম-৪ ও গৌড়মতি আম চাষ করেছেন, তাঁরা অন্যান্য জাতের আমের চেয়ে বিগত বছরগুলোতে চার-পাঁচ গুণ বেশি দামে বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বারি আম-৪ ও গৌড়মতি (বারি আম-১২) বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত দুটি নতুন জাত। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্বের বিজ্ঞানীরা ২০০৩ সালে বারি আম-৪ ও ২০১২ সালে গৌড়মতি আম উদ্ভাবন করেন। বর্তমানের উত্তরাঞ্চলের নওগাঁ, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে জাত দুটি ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। দুটি জাতই সাধারণত জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় দুই মাস সময় ধরে বাজারে পাওয়া যায়।
কৃষি সম্প্রসারণের তথ্যমতে, এ বছর নওগাঁয় ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে ৪৩৮ হেক্টর বেড়ে এ বছর ৯৫০ হেক্টরে গৌড়মতি জাতের চাষ হয়েছে। এবার বারি আম-৪ চাষ হয়েছে ২ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে। গত বছর চাষ হয়েছিল ১ হাজার ৯৭৮ হেক্টরে। নাবি জাতের আরেক আম আশ্বিনা এ বছর চাষ হয়েছে ৮৫০ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া বারোমাসি আম বারি আম-১১ (কাটিমন) ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে ২২০ হেক্টর বেড়ে এ বছর জেলায় কাটিমন আমের চাষ হয়েছে ৫৬০ হেক্টর জমিতে। এ বছর জেলায় ৩ লাখ ৮৭ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে নাবি জাতের আম উৎপাদনের লক্ষ্যামাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন।
নওগাঁর সাপাহার উপজেলার আমচাষি রায়হান আলম নাবি জাতের গৌড়মতি চাষ করেছেন ৩০ বিঘা জমিতে। এ ছাড়া বারি আম-৪ চাষ করেছেন ১০ বিঘা জমিতে। গত বছর গৌড়মতির ফলন পেয়েছিলেন ২৫০ মণ। আর বারি আম-৪ পেয়েছিলেন ১২০ মণ। তিনি বলেন, নওগাঁয় বাণিজ্যিক ফল বাগানের প্রায় ৬০ শতাংশই হলো আম্রপালি। এর পরই রয়েছে ল্যাংড়া ও নাকফজলি আম। গোপালভোগ, হিমসাগর, ব্যানানা ম্যাঙ্গোর স্বল্প পরিমাণ বাগান রয়েছে। এখন আম্রপালি, ল্যাংড়া ও নাকফজলির পরেই সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে বারি আম-৪ ও গৌড়মতি।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে রায়হান আলম বলেন, ‘ভরা মৌসুমে বাজারে বিপুল পরিমাণে আমের আমদানি থাকায় দাম থাকে প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত; কিন্তু বারি আম-৪ বিক্রি শুরু হয় ৪ হাজার থেকে এবং শেষ হয় ৮ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত। আর গৌড়মতি বিক্রি শুরু হয় ৫ হাজার টাকা থেকে এবং শেষ হয় ১২ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত।’
গাছে ঝুলছে নাবি জাতের আম গৌড়মতি। নওগাঁর পোরশা উপজেলার বন্ধুপাড়া এলাকার একটি বাগানে সম্প্রতি