দেশে সাধারণত এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের প্রথমার্ধ পর্যন্ত আমের ভরা মৌসুম ধরা হয়। এ সময়ের মধ্যে গোপালভোগ, হিমসাগর, আম্রপালি, ল্যাংড়া, নাকফজলি ও হাঁড়িভাঙার মতো জনপ্রিয় জাতের আম বাজারে পাওয়া যায়। একসঙ্গে বাজারে অধিক পরিমাণে আমদানি হওয়ায় তখন অনেকে কাঙ্ক্ষিত দাম পান না।

বেশির ভাগ আমের জোগান যখন শেষ হয়, তখনই পাকতে শুরু করে নাবি (বিলম্ব) জাতের আম। বারি আম-৪, বারি আম-১২ (গৌড়মতি) ও আশ্বিনার মতো এসব আম মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে আসায় দাম বেশি পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। ফলন ও লাভ বেশি হওয়ায় নওগাঁয় নাবি জাতের আমবাগানের সংখ্যা বাড়ছে।

নাবি জাতের আমের মধ্যে জেলায় সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে গৌড়মতি ও বারি আম-৪। স্বাদ, মিষ্টতা ও ফলন বেশি হওয়ায় কৃষকেরা এখন এই আম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। যাঁরা বারি আম-৪ ও গৌড়মতি আম চাষ করেছেন, তাঁরা অন্যান্য জাতের আমের চেয়ে বিগত বছরগুলোতে চার-পাঁচ গুণ বেশি দামে বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বারি আম-৪ ও গৌড়মতি (বারি আম-১২) বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত দুটি নতুন জাত। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্বের বিজ্ঞানীরা ২০০৩ সালে বারি আম-৪ ও ২০১২ সালে গৌড়মতি আম উদ্ভাবন করেন। বর্তমানের উত্তরাঞ্চলের নওগাঁ, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে জাত দুটি ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। দুটি জাতই সাধারণত জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় দুই মাস সময় ধরে বাজারে পাওয়া যায়।

কৃষি সম্প্রসারণের তথ্যমতে, এ বছর নওগাঁয় ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে ৪৩৮ হেক্টর বেড়ে এ বছর ৯৫০ হেক্টরে গৌড়মতি জাতের চাষ হয়েছে। এবার বারি আম-৪ চাষ হয়েছে ২ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে। গত বছর চাষ হয়েছিল ১ হাজার ৯৭৮ হেক্টরে। নাবি জাতের আরেক আম আশ্বিনা এ বছর চাষ হয়েছে ৮৫০ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া বারোমাসি আম বারি আম-১১ (কাটিমন) ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে ২২০ হেক্টর বেড়ে এ বছর জেলায় কাটিমন আমের চাষ হয়েছে ৫৬০ হেক্টর জমিতে। এ বছর জেলায় ৩ লাখ ৮৭ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে নাবি জাতের আম উৎপাদনের লক্ষ্যামাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন।

নওগাঁর সাপাহার উপজেলার আমচাষি রায়হান আলম নাবি জাতের গৌড়মতি চাষ করেছেন ৩০ বিঘা জমিতে। এ ছাড়া বারি আম-৪ চাষ করেছেন ১০ বিঘা জমিতে। গত বছর গৌড়মতির ফলন পেয়েছিলেন ২৫০ মণ। আর বারি আম-৪ পেয়েছিলেন ১২০ মণ। তিনি বলেন, নওগাঁয় বাণিজ্যিক ফল বাগানের প্রায় ৬০ শতাংশই হলো আম্রপালি। এর পরই রয়েছে ল্যাংড়া ও নাকফজলি আম। গোপালভোগ, হিমসাগর, ব্যানানা ম্যাঙ্গোর স্বল্প পরিমাণ বাগান রয়েছে। এখন আম্রপালি, ল্যাংড়া ও নাকফজলির পরেই সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে বারি আম-৪ ও গৌড়মতি।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে রায়হান আলম বলেন, ‘ভরা মৌসুমে বাজারে বিপুল পরিমাণে আমের আমদানি থাকায় দাম থাকে প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত; কিন্তু বারি আম-৪ বিক্রি শুরু হয় ৪ হাজার থেকে এবং শেষ হয় ৮ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত। আর গৌড়মতি বিক্রি শুরু হয় ৫ হাজার টাকা থেকে এবং শেষ হয় ১২ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত।’

গাছে ঝুলছে নাবি জাতের আম গৌড়মতি। নওগাঁর পোরশা উপজেলার বন্ধুপাড়া এলাকার একটি বাগানে সম্প্রতি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র চ ষ হয় ছ জ ত র আম গত বছর আম ৪ ও কর ছ ন এ বছর

এছাড়াও পড়ুন:

উড়োজাহাজ খাতে প্রতিযোগিতায় স্বচ্ছতা ও বৈষম্য বিলোপের তাগিদ ইইউ রাষ্ট্রদূতের

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িং এবং ইউরোপের এয়ারবাসের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে হঠাৎ এয়ারবাসের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছিল। আর চলতি বছর পাল্টা শুল্কের দর–কষাকষির ইস্যুতে বোয়িং অন্যতম শর্ত হিসেবে সামনে এসেছে।

এমন এক প্রেক্ষাপটে ঢাকায় এক আলোচনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার উড়োজাহাজ খাতে ব্যবসায় স্বচ্ছতা ও বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি সব পক্ষের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছেন। এই খাতে ‘অন্য অংশীদারদের’ তুলনায় ইউরোপের প্রতিষ্ঠানগুলোকে যাতে কম গুরুত্ব দেওয়া না হয়, সে বিষয়টি বাংলাদেশকে নিশ্চিত করতে বলেছেন।

মঙ্গলবার ঢাকায় ফ্রান্স-জার্মান দূতাবাসে ‘বাংলাদেশের এভিয়েশন গ্রোথ’ শীর্ষক এক আলোচনায় তিনি এ অভিমত দেন। আলোচনায় মাইকেল মিলার ছাড়াও যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জ্যঁ-মার্ক সেরে-শার্লে, জার্মান রাষ্ট্রদূত রুডিগার লটজ এবং এয়ারবাসের কমার্শিয়াল সেলস ডিরেক্টর (চিফ রিপ্রেজেনটেটিভ, বাংলাদেশ) রাফায়েল গোমেজ নয়া অংশ নেন।

ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি এ দেশে এয়ারবাসের উপস্থিতির বিষয়টিকে বিবেচনায় নিতে জোর দিচ্ছি। আমি খুব স্পষ্টভাবে বলতে চাই, স্বচ্ছতা এবং বৈষম্যহীনতার দীর্ঘদিনের আশ্বাস পূরণ করে এটিকে যেন বিমানের বহরকে আধুনিকীকরণ পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ দেশের উড়োজাহাজ খাতে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবশ্যই বিবেচনায় রাখা উচিত।’

ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জ্যঁ-মার্ক সেরে-শার্লে বলেন, ফ্রান্স ও ইউরোপের উড়োজাহাজ শিল্পের কেন্দ্রে অবস্থান করছে এয়ারবাস। প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও উদ্ভাবনের অনন্য সমন্বয়ই এটিকে বিশ্বজুড়ে উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর এক বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই খাতে বাংলাদেশের বিকাশ পর্বে এয়ারবাস হতে পারে এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তাঁর মতে, বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল সংযোগ ও ভৌগোলিক অবস্থান এই দেশকে আকাশপথে যোগাযোগের আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। বিমান বাংলাদেশের বহরে এয়ারবাস যুক্ত হলে এর স্থিতিশীলতা ও প্রতিযোগিতার সক্ষমতা আরও বাড়বে।

জার্মান রাষ্ট্রদূত রুডিগার লটজ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বাড়ছে, মধ্যবিত্ত শ্রেণি সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিমানের এখন প্রয়োজন আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব উড়োজাহাজ, যেখানে এয়ারবাস শক্ত অবস্থানে রয়েছে।

যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আকাশপথে যোগাযোগের আঞ্চলিক কেন্দ্র হওয়ার লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য সব সময় পাশে থাকবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বাণিজ্যিক যোগ্যতার ভিত্তিতে ইইউর অর্থনৈতিক উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সুযোগ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা সবার জন্য সমান সুযোগ প্রত্যাশা করি। এর অর্থ হলো বাংলাদেশকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অপারেটরদের অন্যান্য বাণিজ্যিক অংশীদারদের তুলনায় কম সুবিধা দেওয়া হবে না।
প্রসঙ্গত, বোয়িং ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ২৫টি উড়োজাহাজ বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে, আর এয়ারবাস দিয়েছে ১৪টির। এর মধ্যে রয়েছে ১০টি এ৩৫০ ও ৪টি এ৩২০ নিও।

সম্পর্কিত নিবন্ধ