লিওনেল মেসির বয়স তখন ১৮ বছর। বার্সেলোনা ফ্রি–কিক পেলে ব্যস্ত হয়ে উঠতেন ডেকো, রোনালদিনিও ও জাভি হার্নান্দেজ। পাশে দাঁড়িয়ে সবই দেখতেন মেসি। বার্সেলোনা ফ্রি–কিক পেলে সেখান থেকে শট নেওয়ার ছাড়পত্র পাননি তখনো।

একটু পরিণত হয়ে ওঠার পর অবশ্য বেশি দেরি হয়নি। তত দিনে অনুশীলনে ফ্রি–কিক নেওয়াও রপ্ত করেছেন। ড্রিবলিং ও গোল করা মেসির স্বভাবজাত হলেও ফ্রি–কিক সহজাত ছিল না। এ জন্য অনুশীলন করে বিদ্যাটি রপ্ত করতে হয়েছে। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে মেসির প্রথম কোচ আলফিও বাসিল ২০০৭ কোপা আমেরিকায় তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, ফ্রি–কিকে বলে আঘাত করার সময় বাঁ পা আরও সামনে এগিয়ে আনা উচিত। তাতে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বলের গতি আরও বাড়ানো সম্ভব।

আরও পড়ুনরিয়াল মাদ্রিদের অনুশীলনে কেন ড্রোন ব্যবহার করছেন আলোনসো ৬ ঘণ্টা আগে

ফ্রি–কিক নিয়ে শুরুতে মেসির কৌতূহল ছিল। সে কৌতূহল মেটাতে অনুশীলনে নেমে ফ্রি–কিকের প্রেমে পড়ে যান। এ নিয়ে মেসি নিজে একবার বলেছিলেন, ‘ফ্রি–কিকের জন্য কখনো অনুশীলন করতে অভ্যস্ত ছিলাম না। একদিন একটু চেষ্টা করে দেখার পর বুঝতে পারলাম, এই জায়গায় অনেক উন্নতি করা সম্ভব, যেটা আমি করেছি।’

বার্সার সে সময়ের ফিটনেস কোচ হুয়াঞ্জো ব্রাউ ফ্রি–কিক শিখতে মেসির অনুশীলন প্রসঙ্গে একবার বলেছিলেন, ‘শেষ ফ্রি–কিকটি জালে না পৌঁছানো পর্যন্ত সে অনুশীলন ছেড়ে যেত না।’ এই চেষ্টার ফলেই ধীরে ধীরে মেসি এখন ফ্রি–কিক থেকে শট নেওয়ায় বিশ্বসেরাদের একজন। ২০০৮ সালে আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ফ্রি–কিকে প্রথম গোল পাওয়ার পর এখন সেই সংখ্যাটা ৬৮, যার মধ্যে শেষ গোলটি দেখা গেছে পরশু ক্লাব বিশ্বকাপে পোর্তোর বিপক্ষে। চোখধাঁধানো এক গোল!

পোর্তোর বিপক্ষে তখন ১-১ গোলের সমতায় মায়ামি। ৫৪ মিনিটে পাওয়া ফ্রি–কিক থেকে গোল করেন মেসি, আর সে গোলেই ২-১ ব্যবধানে ম্যাচ জিতেছে মায়ামি। পোর্তো গোলকিপারের থেকে পোস্টের দূরত্ব যেদিকে একটু কম, সেদিক দিয়েই বল জালে পাঠান আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। বলটা বেশ বাঁক নিয়ে বাতাসে ভাসতে ভাসতে আশ্রয় নেয় জালে। শটটি দেখে মনে হতেই পারে, মেসি বুঝি জোরে কিক নেওয়ার চেয়ে বলের গতিপথ নিয়ন্ত্রণেই বেশি জোর দেন। কারণ, বাঁ পায়ের ভেতরের অংশ দিয়ে নেওয়া কিকে বল একদম কম্পাসের মাপে বাঁক নিয়ে জালে ঢুকেছে।

আরও পড়ুনঝড় ও গোলবন্যার রাতে দি মারিয়া যেখানে শীর্ষে৯ ঘণ্টা আগে

জয়ের পর সরাসরি ফ্রি–কিক থেকে করা গোল নিয়ে ডিস্পোর্টসের সঙ্গে কথা বলেন মেসি। জানান, কিক নেওয়ার আগে কল্পনায় বলটির গতিপথ ঠিক করে নিয়েছিলেন। তখন মেসির কাছে জানতে চাওয়া হয়, প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের তৈরি মানবদেয়ালের ওপর দিয়ে না মেরে গোলকিপার যেদিকে দাঁড়িয়ে, সেদিকে মারলেন কেন? মেসির উত্তর, ‘দেয়াল একটু লম্বাদের (খেলোয়াড়) নিয়ে বানানো হয়েছিল।’

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মেসি বলেন, ‘খেয়াল করলাম, গোলকিপার মাঝে একটু দাঁড়িয়েছিল। তার কাছের পোস্টে জায়গা ফাঁকা। সে একটু কাছাকাছি দাঁড়িয়েছিল। মানবদেয়ালের ওপর দিয়ে বল পাঠানো কঠিন ছিল, কারণ, লম্বা খেলোয়াড়েরা দাঁড়িয়েছিল। (গোলকিপারের পাশ দিয়ে) বলটা গেছেও জোরে, একদম ঠিক জায়গা দিয়ে যাওয়ায় আমি ভাগ্যবান।’

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মেসি ফ্রি–কিক নিতেন না। ক্লারিন জানিয়েছে, ফ্রি–কিকে ভালো করতে ডিয়েগো ম্যারাডোনাসহ অন্যান্যদের পরামর্শ নিয়েছিলেন মেসি। আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যমটি বলছে, পোর্তোর বিপক্ষে ফ্রি–কিকে গোল করে ফুটবলের আরেক কিংবদন্তির পাশে বসেছেন মেসি। ব্রাজিলের ‘সাদা পেলে’–খ্যাত জিকো, তাঁরও ফ্রি-কিক থেকে গোলসংখ্যা ৬৮।

বিবিসি জানিয়েছে, ফ্রি-কিক থেকে সরাসরি গোলে মেসির চেয়ে এগিয়ে আছেন শুধু ব্রাজিলের দুজন—জুনিনিও (৭৭) ও পেলে (৭০)। তবে ক্লারিন আরও একজনের নাম জানিয়েছে, তিনিও ব্রাজিলিয়ান। করিন্থিয়ানস কিংবদন্তি মার্সেলিনিও ক্যারিওকা। উইকিপিডিয়া অনুযায়ী, ব্রাজিল জাতীয় দলে (১৯৯৪-২০০১) চার ম্যাচ খেলা সাবেক এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার সরাসরি ফ্রি-কিক থেকে ৮০ গোল করেছেন। যদিও ক্লারিনের দাবি, তাঁর গোলসংখ্যা ৭৮।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ লক প র গ ল কর

এছাড়াও পড়ুন:

ইরান কঠিন সময় পার করতে সক্ষম হবে

ইরানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। গতকাল শনিবার ইস্তাম্বুলে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) বৈঠকে তিনি ইরানের প্রতি সমর্থন জানান। একই সঙ্গে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারকে আঞ্চলিক শান্তির সবচেয়ে বড় বাধা বলে উল্লেখ করেন।

ওআইসির বৈঠকে এরদোয়ান বলেন, ‘হাজার বছরের সংহতি ও সহনশীলতার শক্তিতে ইরান নিঃসন্দেহে এই কঠিন সময় পার করতে সক্ষম হবে।’ এ সম্মেলনে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচিও যোগ দেন।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ইরানের অনুরোধে ওআইসির সব সদস্যদেশের অংশগ্রহণে একটি বিশেষ বৈঠক গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হয়। চলমান ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক ওআইসির ৫১তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের অধিবেশনের অংশ হিসেবে ইস্তাম্বুলে আয়োজন করা হচ্ছে।

এবারের সম্মেলনের লক্ষ্য ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে চলমান সংঘাতের বিরুদ্ধে সমন্বিত প্রতিক্রিয়া গড়ে তোলা। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ার এই সংকটময় সময়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সদস্যদেশগুলো ইসরায়েলের হামলা মোকাবিলা এবং বিস্তৃত আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছে।

তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এবারের বৈঠক হচ্ছে রুদ্ধদ্বার। তাসনিম নিউজের বরাতে বলা হয়েছে, বৈঠকে ৪০ কর্মকর্তা অংশ নিচ্ছেন। বৈঠকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস বলেন, বৈঠকে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর হামলার বিষয়টি আলোচনা করা হবে।

এর আগে গত শুক্রবার জেনেভায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন আরাগচি। তবে ইউরোপের নেতাদের সঙ্গে ওই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। তবে যুদ্ধ বন্ধে তারা আলোচনা চালিয়ে যেতে চেয়েছেন। ইরান বলেছে, ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হলেই কেবল তারা কূটনীতির পথে হাঁটবে। জেনেভা বৈঠকের শেষে আরাগচি বলেন, ‘আক্রমণ বন্ধ হলেই ইরান আবারও কূটনৈতিক আলোচনার বিষয়টি বিবেচনা করতে প্রস্তুত। আমি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছি, ইরানের প্রতিরক্ষাগত সক্ষমতা কোনোভাবেই আলোচনার বিষয় নয়।’

বৈঠকের কিছুক্ষণ পরেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে খাটো করে দেখান। তিনি বলেন, ‘আমরা ইরানের সঙ্গে কথা বলছি, দেখছি কী হয়।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি মনে করি জেনেভায় হওয়া আলোচনাগুলো সফল হয়নি।’ এদিকে ওআইসির সম্মেলন শুরুর আগে এরদোয়ান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন পরমাণু আলোচনা শুরুর ঠিক আগে ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলা ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ