ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতায় সম্মত ঢাকা-বেইজিং-ইসলামাবাদ
Published: 22nd, June 2025 GMT
চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা এগিয়ে নিতে একমত হয়েছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে তিন দেশের সমন্বয়ে নতুন একটি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রের (মেকানিজম) কথা বলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনায় এটি গঠিত হয়। বিশেষজ্ঞরা এটিকে তিন দেশের জোট বলছেন। এর লক্ষ্য হিসেবে ব্যবসা, বিনিয়োগ, স্বাস্থ্য, পানিসম্পদসহ বিভিন্ন খাতে নিবিড় সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন এ উদ্যোগ ‘কোনো তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে পরিচালিত হবে না’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কুনমিংয়ে চীন-দক্ষিণ এশিয়া সহযোগিতা ফোরামের সাইডলাইনে বৈঠক করে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীন। শুক্রবার এ বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে চীন ও পাকিস্তান। গতকাল শনিবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নবম চীন-দক্ষিণ এশিয়া মেলা এবং ষষ্ঠ চীন-দক্ষিণ এশিয়া সহযোগিতা বৈঠক বৃহস্পতিবার কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী বলেন, বেল্ট অ্যান্ড রুট উদ্যোগের অংশীদার হিসেবে তিন দেশই একসঙ্গে কাজ করতে পারে। ২০৩০ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে জাতীয় লক্ষ্য অর্জনের পক্ষে কাজ করতে পারে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান। মানুষের জীবনমান উন্নয়ন এবং প্রকৃত সমৃদ্ধির জন্য এই তিন বন্ধু দেশের গভীর অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
চীন-দক্ষিণ এশিয়া সহযোগিতাবিষয়ক ফোরামে অংশ নিতে কুনমিংয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন রুহুল আলম সিদ্দিকী। চীনে অনুষ্ঠিত নিয়মিত এক্সপোর পাশাপাশি এ ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইডং ও পাকিস্তানের অতিরিক্ত সচিব (এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয়) ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী। বৈঠকের প্রথম পর্যায়ে অনলাইনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ অংশগ্রহণ করেন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ-পাকিস্তান উভয়ই ভালো প্রতিবেশী, ভালো বন্ধু এবং চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। গ্লোবাল সাউথের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে তিনটি দেশই জাতীয় পুনরুজ্জীবন ও আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে কাজ করছে। সবার জন্যই একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ প্রয়োজন। চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতা এখানকার জনগণ আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চীন-বাংলাদেশ-পাকিস্তান ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা লক্ষ্য হচ্ছে– অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন। তিন দেশই শিল্প, বাণিজ্য, সমুদ্রবিষয়ক, জলসম্পদ, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি, মানবসম্পদ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং যুব উন্নয়নের মতো খাতগুলোতে সহযোগিতামূলক প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের জন্য তিন দেশ একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করবে।
চীন-বাংলাদেশ-পাকিস্তান জোর দিয়ে বলেছে, সহযোগিতা হবে প্রকৃত বহুপক্ষীয়তা এবং উদার আঞ্চলিকতাকে সামনে রেখে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতেও একই কথা বলা হয়েছে। এ বৈঠক আহ্বান করায় চীনের প্রশংসা করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব জনকেন্দ্রিক উন্নয়নের জন্য তিন পক্ষের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার কথা বলেন। তিনি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কৃষি, ডিজিটাল অর্থনীতি, পরিবেশ সুরক্ষা, সামুদ্রিক বিজ্ঞান, সবুজ অবকাঠামো, সংস্কৃতি, শিক্ষা এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য চীন ও বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার জন্য পাকিস্তানের প্রস্তুতির কথা জানান।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র পরর ষ ট র সহয গ ত ক জ কর লক ষ য র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কোনো দলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হলে জোট হতে পারে: সারজিস আলম
আগামীর বাংলাদেশ এবং জনগণের স্বার্থ সামনে রেখে যদি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়, তাহলে নির্বাচনী জোট হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এসসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ নগরের একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। এনসিপির কমিটি গঠন উপলক্ষে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার আহ্বায়ক এবং সদস্যসচিবের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সারজিস আলম বলেন, ‘যদি তারা (রাজনৈতিক দল) জুলাই সনদ বাস্তবায়নে একমত থাকে, বিচারিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে একমত থাকে, যদি তারা বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী এবং আওয়ামী ফ্যাসিস্টবিরোধী তাদের শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পারে—এ বিষয়গুলোতে যদি আমরা ঐকমত্য হতে পারি, তাহলে জনগণের স্বার্থে অ্যালায়েন্স (নির্বাচনী জোট) হতে পারে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলমান, তবে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
আগামী নির্বাচনে এনসিপি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং নিজেদের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করছে জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে যদি প্রতিটি ওয়ার্ডে এনসিপির আহ্বায়ক কমিটি থাকে, তাহলে ৩০০ আসনে শক্তিশালী প্রার্থী দিতে পারবেন। কমিটি গঠনের বিষয়ে কাজ চলছে।
আগামী সংসদ নির্বাচনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির (জাপা) অংশগ্রহণ করার কোনো অধিকার নেই উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি নেতা সারজিস আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এবং তাদের যারা দোসর জাতীয় পার্টি, তাদেরও আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো অধিকার নেই। এই জাতীয় পার্টির কত বড় সাহস, এই জিএম কাদেররা এবং এঁদের যারা সাঙ্গপাঙ্গ আছে, এরা যে খুনিদের দোসর এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ওই খুনিদের মদদদাতা, তার প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়। তারা যখন বলে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না! তাদের জন্মদাতা যে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ যে তাদের পেলেপুষে বড় করেছে, এর প্রমাণ তারা আবার নতুন করে দিচ্ছে। তাদের জাত চেনাচ্ছে। এই খুনিদের আগামীর বাংলাদেশের কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অধিকার নেই।’
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নে সারজিস আলম বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন আমাদের শাপলা প্রতীক দিতে গিয়ে তারা তাদের জায়গা থেকে একটি লম্বা সময় স্বেচ্ছাচারিতা করেছে এবং কোনো আইনগত বাধা না থাকা সত্ত্বেও আমাদেরকে শাপলা না দিয়ে শাপলা কলি দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে আমাদের জায়গা থেকে আহ্বান করব, তারা যদি ওই একই ধরনের আচরণ আগামী দিনে করে, তাহলে তাদের ওপর আস্থার সংকট তৈরি হবে। আমরা চাই, তারা সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠুভাবে তাদের প্রতিষ্ঠানের স্বাধীন যে সাংবিধানিক অবস্থা, তা যেন বজায় রাখে। তারা যেন পূর্বের মতো কোনো দলীয় নির্বাচন কমিশনে পরিণত না হয়। যদি কারও ভেতর এমন চিন্তা বা চেষ্টা থাকে, তাহলে তাদের পরিণতি তাদের পূর্বসূরিদের মতো হবে।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিদা সারোয়ার, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকিন আলম প্রমুখ।