চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা এগিয়ে নিতে একমত হয়েছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে তিন দেশের সমন্বয়ে নতুন একটি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রের (মেকানিজম) কথা বলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনায় এটি গঠিত হয়। বিশেষজ্ঞরা এটিকে তিন দেশের জোট বলছেন। এর লক্ষ্য হিসেবে ব্যবসা, বিনিয়োগ, স্বাস্থ্য, পানিসম্পদসহ বিভিন্ন খাতে নিবিড় সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন এ উদ্যোগ ‘কোনো তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে পরিচালিত হবে না’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার কুনমিংয়ে চীন-দক্ষিণ এশিয়া সহযোগিতা ফোরামের সাইডলাইনে বৈঠক করে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীন। শুক্রবার এ বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে চীন ও পাকিস্তান। গতকাল শনিবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ। 

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নবম চীন-দক্ষিণ এশিয়া মেলা এবং ষষ্ঠ চীন-দক্ষিণ এশিয়া সহযোগিতা বৈঠক বৃহস্পতিবার কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী বলেন, বেল্ট অ্যান্ড রুট উদ্যোগের অংশীদার হিসেবে তিন দেশই একসঙ্গে কাজ করতে পারে। ২০৩০ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে জাতীয় লক্ষ্য অর্জনের পক্ষে কাজ করতে পারে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান। মানুষের জীবনমান উন্নয়ন এবং প্রকৃত সমৃদ্ধির জন্য এই তিন বন্ধু দেশের গভীর অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।

চীন-দক্ষিণ এশিয়া সহযোগিতাবিষয়ক ফোরামে অংশ নিতে কুনমিংয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন রুহুল আলম সিদ্দিকী। চীনে অনুষ্ঠিত নিয়মিত এক্সপোর পাশাপাশি এ ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইডং ও পাকিস্তানের অতিরিক্ত সচিব (এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয়) ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী। বৈঠকের প্রথম পর্যায়ে অনলাইনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ অংশগ্রহণ করেন।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ-পাকিস্তান উভয়ই ভালো প্রতিবেশী, ভালো বন্ধু এবং চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। গ্লোবাল সাউথের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে তিনটি দেশই জাতীয় পুনরুজ্জীবন ও আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে কাজ করছে। সবার জন্যই একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ প্রয়োজন। চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতা এখানকার জনগণ আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চীন-বাংলাদেশ-পাকিস্তান ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা লক্ষ্য হচ্ছে– অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন। তিন দেশই শিল্প, বাণিজ্য, সমুদ্রবিষয়ক, জলসম্পদ, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি, মানবসম্পদ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং যুব উন্নয়নের মতো খাতগুলোতে সহযোগিতামূলক প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের জন্য তিন দেশ একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করবে।

চীন-বাংলাদেশ-পাকিস্তান জোর দিয়ে বলেছে, সহযোগিতা হবে প্রকৃত বহুপক্ষীয়তা এবং উদার আঞ্চলিকতাকে সামনে রেখে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতেও একই কথা বলা হয়েছে। এ বৈঠক আহ্বান করায় চীনের প্রশংসা করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব জনকেন্দ্রিক উন্নয়নের জন্য তিন পক্ষের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার কথা বলেন। তিনি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কৃষি, ডিজিটাল অর্থনীতি, পরিবেশ সুরক্ষা, সামুদ্রিক বিজ্ঞান, সবুজ অবকাঠামো, সংস্কৃতি, শিক্ষা এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য চীন ও বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার জন্য পাকিস্তানের প্রস্তুতির কথা জানান।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র পরর ষ ট র সহয গ ত ক জ কর লক ষ য র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

‘সংস্কার ছাড়া নির্বাচন জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা’

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বাষির্কী উপলক্ষ্যে পূর্ব কর্মসূ‌চির অংশ হি‌সে‌বে রাজধানী‌তে গণ‌মি‌ছিল ‌বের ক‌রে বাংলা‌দেশ জামায়া‌তে ইসলামী।

মঙ্গলবার মহাখালী রেলগেট থেকে শুরু হয়ে মগবাজার চৌরাস্তায় এসে মহানগরী আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের  বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এই আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে। এর আ‌গে সকাল ১০টায় মহাখালী কলেরা হাসপাতালের সামনে এক সং‌ক্ষিপ্ত সমা‌বেশ অনু‌ষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে প্রধান অতিথি ছি‌লেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে তি‌নি বলেন, ‘‘জনগণের রক্তের ওপর দিয়েই জুলাই বিপ্লব সাধিত হয়েছে। তাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়েই আপনি এখন ক্ষমতায়। আপনি বা আপনার পরিবারের কোনো সদস্য আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হননি। তাই নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করার রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন ঘোষণা করলে জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল হবে। আর দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলে তারা আপনাকে ছাড়বে না। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় থাকতে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে।’’

প্রয়োজনীয় সংস্কার ও পিআর পদ্ধ‌তিতে নির্বাচন দা‌বি ক‌রে ডাক্তার তা‌হের ব‌লেন, ‘‘গতানুগতিক পদ্ধতির নির্বাচন দেশ ও জাতির জন্য সুফল বয়ে আনবে না। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে প্রায় সকল নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। বিশেষ করে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনসহ শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনই নির্বাচন ছিল না। এসব নির্বাচনে ব্যাপকভিত্তিক রিগিং, গণহারে সিল মারা, কেন্দ্র দখল, ডামি নির্বাচন, ব্যালট ছিনতাই, দিনের ভোট রাতে করাসহ ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মূলত, এসব ছিল নির্বাচনের নামে প্রহসন। তাই দেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি তথা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চালু করতে হবে। এ পদ্ধতি চালু হলে নির্বাচনী অপরাধ থাকবে না, ভোট চুরি ও কেন্দ্রদখল হবে না। থাকবে না টাকার খেলা।’’

মূলত, যাদের প্রয়োজনীয় জনসমর্থন নেই তারাই এ পদ্ধতির বিরোধীতা করছেন। তারা মাস্তানী ও অর্থের বিনিময়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চান। কিন্তু জনগণ তাদের সে সুযোগ দেবে না। পিআর পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোনো পদ্ধতি তারা মেনে নেবে না ব‌লেও জানান তি‌নি।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা: ফখরুদ্দীন মানিক ও ইয়াছিন আরাফাত, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য জিয়াউল হাসান, জামাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক মো: আতাউর রহমান সরকার এবং ঢাকা মহনগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য নাসির উদ্দীন প্রমুখ।

ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘‘আগামীর বাংলাদেশ হবে ইনসাফ ও ইসলামের বাংলাদেশ। যেখানে সকল মানুষের অধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে।’’ তিনি গণহত্যাকারীদের বিচার এবং পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচন দিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।

মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টা জুলাই সনদ ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। কিন্তু সে সনদে জনপ্রত্যাশার বাইরে কিছু থাকলে তা দেশপ্রেমী জনতা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। শুধু ঘোষণা নয় বরং তা নির্বাচনের আগেই পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। নির্বাচন হতে হবে জুলাই সনদের ভিত্তিতেই। নির্বাচনের আগেই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হতে হবে। চাই প্রয়োজনীয় সংস্কারও। অন্যথায় অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’’

ঢাকা/নঈমুদ্দীন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই ঘোষণাপত্র ইসলামপন্থীদের অবমাননা ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি চরম অবহেলা
  • নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করায় কিছু উপদেষ্টার মন খারাপ: হাফিজ
  • তারেক রহমানের দিকে তাকিয়ে আছে দেশ: সেলিমা রহমান
  • জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জাতীয় পার্টির
  • প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
  • গতানুগতিক পদ্ধতির নির্বাচন কোনো সুফল বয়ে আনবে না: তাহের
  • বিএনপির সাংবাদিক হওয়ার দরকার নেই, জনগণের সাংবাদিক হোন: আমীর খসরু
  • জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের দোদুল্যমানতা কেটে গেছে: সালাহউদ্দিন
  • জুলাই আন্দোলন কোনো সমাপ্তি নয়, শুরু মাত্র: আসিফ মাহমুদ
  • ‘সংস্কার ছাড়া নির্বাচন জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা’