প্রতিদিনই বাড়ছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টার ৩৯৪ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে টানা চতুর্থ দিনের মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার রোগীর সংখ্যা ৩০০ ছাড়াল। গত মে মাসের তুলনায় চলতি মাসে রোগীর সংখ্যা হলো আড়াই গুণ।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, মে মাসে যেখানে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মোট ডেঙ্গু রোগী ছিলেন এক হাজার ৭৭৩ জন, সেখানে জুনের এক সপ্তাহ বাকি থাকতেই রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ১৯৯-এ। এর আগে গত রোববার ৩২৯ জন এবং শনিবার ৩৫২ জনের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তথ্য জানিয়েছিল অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৩৯৪ জনের মধ্যে বরিশাল বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৮, ঢাকা বিভাগে ৩৫, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৪২, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৫০, খুলনা বিভাগে ৮ জন এবং রাজশাহী বিভাগের হাসপাতালে ৪৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি। আগের হিসাবে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ ও নারী সমান। আর চলতি মাসে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের।
২২ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২৩ সালে দেশে ডেঙ্গু রোগী হয় তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মৃত্যু হয় এক হাজার ৭০৫ জনের। তার আগে ২০১৯ সালে রোগী ছিল এক লাখ ১ হাজার
৩৫৪ জন।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে করণীয়
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) গতকাল অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে ইন্টারনাল মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক ডা.
বিএমইউতে করোনা, ডেঙ্গু ও জ্বরের সাম্প্রতিক প্রবণতা নিয়ে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে ডা. নাজমুল বলেন, জ্বর কমানোর জন্য কেবল প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যাবে। ডেঙ্গুর জন্য অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন বা ব্যথানাশক জাতীয় ওষুধ নিষিদ্ধ। কারণ এগুলো রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। জ্বর কমে যাওয়ার পর হঠাৎ শরীর খারাপ হওয়া, বারবার বমি, পেটব্যথা, রক্তপাত, ঘন ঘন দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট বা চামড়া মলিন, অস্থিরতা, অজ্ঞান ভাব, মাথা ঘোরানোর মতো উপসর্গ দেখা গেলে এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ রোগীর জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে, ফুসফুসে পানি জমার ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণা বলছে, এতে ডেঙ্গুর চিকিৎসায় কোনো উপকার হয় না। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারেরও প্রয়োজন নেই। কারণ ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। যদি নিশ্চিত ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ থাকে (যেমন নিউমোনিয়া), তখন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা যেতে পারে।
বরগুনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের ঊর্ধ্বগতি
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু প্রকোপের ঊর্ধ্বগতি চলমান। সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫৭ জন। তার মধ্যে ৯৩ জনই বরগুনার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, রোববার বিভাগে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিলেন ১২৬ জন। যার মধ্যে বরগুনাতে ছিলেন ৭৩ জন। এখন বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ৪৩২ জন। তার মধ্যে ২৪২ জনই বরগুনা জেলার।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বর শ ল ব ভ গ বরগ ন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রোস্টেট ক্যানসারের যেসব সাধারণ উপসর্গকে অনেকেই অবহেলা করেন
সাধারণত ৫০ বছর বয়স পেরোনো পুরুষদের প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি থাকে। যাঁদের ওজন অতিরিক্ত কিংবা যাঁদের পরিবারে প্রোস্টেট ক্যানসারের ইতিহাস আছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও এ রোগের ঝুঁকি বেশি।
তবে একজন পুরুষ প্রোস্টেট ক্যানসারের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকুন কিংবা না থাকুন, কিছু উপসর্গ দেখা দিলে প্রত্যেকেরই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। দ্রুততম সময়ে রোগনির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করতে পারলে এই ক্যানসার নিরাময় করা সহজ হয়।
কিছু উপসর্গ জানা থাকপ্রোস্টেট ক্যানসার হলে মূত্রথলিতে চাপ পড়ে। তাই প্রস্রাব করতে অসুবিধা হতে পারে। প্রস্রাব শুরুর সময় প্রস্রাবের প্রবাহ আটকে যাচ্ছে বলে মনে হতে পারে। প্রস্রাব করার সময়ও প্রস্রাবের স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হতে পারে।
অল্প অল্প করে প্রস্রাব হতে পারে। প্রস্রাব করার পরও মনে হতে পারে, মূত্রথলিতে হয়তো প্রস্রাব রয়ে গেছে। বারবার প্রস্রাব করার প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষত রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যেতে পারে প্রস্রাবের চাপে।
আরও পড়ুনছোট্ট আমলকী ডায়াবেটিস, লিভারের রোগ ও ক্যানসার প্রতিরোধেও দারুণ কার্যকর১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫কারও কারও প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়াও হতে পারে। প্রস্রাবে রক্ত আসতে পারে। তলপেট, কোমর বা নিতম্বে ব্যথা বা অস্বস্তিকর একটা অনুভূতি হতে পারে। অনিচ্ছাকৃতভাবে ওজন কমে যেতে পারে। নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই অতিরিক্ত ক্লান্ত বা অবসন্ন লাগতে পারে।
শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে পারেন প্রোস্টেট ক্যানসার আক্রান্ত একজন রোগী। উত্থানত্রুটি দেখা দিতে পারে। বীর্যের সঙ্গে রক্তও আসতে পারে। বীর্য নির্গমনের সময় ব্যথা থাকতে পারে।
উপসর্গ দেখা দিলেএ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলেই প্রোস্টেট ক্যানসার হয়েছে ভেবে আতঙ্কিত হবেন না। অন্যান্য অনেক রোগেই কাছাকাছি ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। বয়সজনিত কারণে প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া কিংবা মূত্রনালি বা মূত্রথলির সংক্রমণেও এ ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।
ঠিক কী কারণে এমন উপসর্গ দেখা দিচ্ছে, তা নির্ণয় করা জরুরি। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত দ্রুততম সময়ে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন চিকিৎসক। কারণ অনুযায়ী দেবেন চিকিৎসা।
আরও পড়ুননব্বইয়ের দশকে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিদের কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি এত বাড়ছে কেন২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫যিনি সুস্থ আছেনঅনেক ক্ষেত্রেই প্রোস্টেট ক্যানসারের তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না। তাই কোনো উপসর্গ না থাকলেও ৫০ বছর বয়স পেরোনো একজন পুরুষের প্রতিবছর পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। রক্তের পিএসএ (প্রোস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন) পরীক্ষা করালে এ সম্পর্কে প্রাথমিক একটা ধারণা পাওয়া সম্ভব। বিশেষত যাঁদের পরিবারে প্রোস্টেট ক্যানসারের ইতিহাস আছে, তাঁদের এ বিষয়টি খেয়াল রাখা আবশ্যক।
এ ছাড়া তরুণ বয়স থেকেই স্বাস্থ্যকর জীবনধারার চর্চা করা প্রয়োজন প্রত্যেকেরই। ওজন রাখা উচিত নিয়ন্ত্রণে। লাল মাংস ও চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। ধূমপান বর্জনীয়। শরীরচর্চার অভ্যাসও গড়ে তোলা প্রয়োজন।
আরও পড়ুনপ্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার বা অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের যেসব উপসর্গ দেখা দেয় ত্বকে১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫