জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীদের আটকে রেখে অটোরিকশা চালুর দাবিতে আন্দোলন করেছেন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। আজ বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা দিয়ে তাঁরা আন্দোলন শুরু করেন। এ সময় স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি হতে আসা শতাধিক শিক্ষার্থী, কমনওয়েলথের এশিয়া সুশাসন ও শান্তিবিষয়ক প্রধান মিশেল স্কোবিসহ কয়েকজন সাংবাদিক আটকা পড়েন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৯ নভেম্বর অটোরিকশার ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফসানা করিম মারা যান। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অটোরিকশা বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। এর বিকল্প হিসেবে ক্যাম্পাসে পায়ে চালিত রিকশা এবং কয়েকটি ইলেকট্রিক কার্ট চালু করা হয়। তবে সেগুলো প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় এবং ভাড়া বেশি হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফের অটোরিকশা চালুর দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় আজ দুপুরে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন একদল শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে নতুন প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে তাঁরা বিক্ষোভ শুরু করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় প্রশাসনিক ভবনের মধ্যে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি হতে আসা শতাধিক শিক্ষার্থী, কমনওয়েলথের অতিথি এবং কয়েকজন সাংবাদিক ও কর্মকর্তারা আটকা পড়েন। ভবনের ভেতরে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ কান্নাকাটি শুরু করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম ভেতরে আটকে পড়াদের বের করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন। একপর্যায়ে কমনওয়েলথের অতিথি ও সাংবাদিকদের বের করে দেওয়ার দাবি জানালেও বিক্ষোভকারীরা উপস্থিত সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন এবং মারতে তেড়ে আসেন। আন্দোলনকারী নন এমন শিক্ষার্থীরাও তাঁদের ভেতরে যেতে দেওয়ার অনুরোধ করলে তাঁদের ওপরও চড়াও হন বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন। এর একটু পর তাঁরা তালা খুলে দেন।

আটকে পড়া ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীদের একজন সোনিয়া আক্তার কান্না করতে করতে বলেন, ‘আমি ঝিনাইদহ থেকে আসছি, আমার মা বাইরে অপেক্ষা করছে। আমাকে বের হতে দিচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনে এত বাজে আচরণের শিকার হব কখনো ভাবিনি।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘তারা ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করছিল। তাদের বলা হয়েছে লিখিত আবেদন দিতে। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অংশীজনদের মতামত নিয়ে সাত দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়া কিছু শিক্ষার্থী অতি উৎসাহী হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে অসদাচরণ করেছে, সেগুলোর ফুটেজ সংগ্রহ করে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভবন র

এছাড়াও পড়ুন:

চালককে চেতনানাশক খাইয়ে অটোরিকশা ছিনতাই করেন তাঁরা

প্রথমে যাত্রী সেজে ভাড়া নিতেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা। পথে কৌশলে চালককে চেতনানাশক খাওয়াতেন। একপর্যায়ে চালক অচেতন হয়ে পড়লে অটোরিকশা ছিনতাই করে পালিয়ে যেতেন চক্রের সদস্যরা। দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি এভাবে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছিনতাই করে আসছে। এই চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ঢাকা ও মুন্সিগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. করিম মিয়া (৪৩), মো. মান্নান খান (৬৬), মনসুর ওরফে মোশারফ (৪৩), মজিবর (৫৪), জসিম (৩৭), মনির (৪৫), মো. জামাল হোসেন (৬৬), তৌহিদুল ইসলাম রবিন (২৬) ও ইউনুস (৫০)। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ডিবির বরাত দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১ অক্টোবর ভোর সাড়ে চারটার দিকে মোহাম্মদপুরের আল্লাহ করিম বাসস্ট্যান্ডে চা খাচ্ছিলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মো. শাহজালাল। এ সময় ৩০০ টাকায় কেরানীগঞ্জের আটিবাজারে যাওয়ার কথা বলে তাঁর অটোরিকশাটি ভাড়া করেন অপরিচিত এক যাত্রী। একপর্যায়ে ওই যাত্রী কৌশলে অটোরিকশাচালকের চায়ের মধ্যে চেতনানাশক মিশিয়ে দেন।

চা খাওয়া শেষে ওই যাত্রীকে নিয়ে আটিবাজারের উদ্দেশে রওনা করার কিছুক্ষণের মধ্যে প্রচণ্ড ঘুম অনুভব করেন অটোরিকশার চালক। তখন বছিলা মেট্রো হাউজিং গেটের কাছে গাড়ি থামাতেই চালক শাহজালাল অচেতন হয়ে পড়েন। চক্রটি তাঁকে রাস্তায় ফেলে অটোরিকশা, তাঁর মুঠোফোন ও মানিব্যাগে থাকা ৩ হাজার ৫৫০ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পরে চক্রটি চালকের মুঠোফোন থেকে অটোরিকশার মালিক জয়কে ফোনে ৬০ হাজার টাকা দাবি করে। তাদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে জয় ৬০ হাজার টাকা পাঠান। এরপর একই তারিখে রাত ১০টার দিকে চক্রটি জয়কে আবার ফোন দিয়ে অটোরিকশাটি রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের সামনে রাস্তার ওপর রাখা আছে বলে জানায়। পরে জয় গিয়ে সেখান থেকে অটোরিকশাটি নিয়ে আসেন। এ ঘটনায় ৬ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় নিয়মিত মামলা হয়।

ডিবির বরাত দিয়ে আরও বলা হয়, ডিবি তেজগাঁও বিভাগের একটি দল ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর ধোলাইপাড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে করিম মিয়া, মান্নান খান, মনসুর ওরফে মোশারফ, মজিবর, জসিম ও মনিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী একই দিন বেলা পৌনে একটার দিকে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের মূল হোতা মো. জামাল হোসেন, তৌহিদুল ইসলাম ও ইউনুসকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ১ হাজার ৯০০ পিস চেতনানাশক ট্যাবলেট ও এক লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

ডিবি সূত্র আরও জানায়, এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে যাত্রীবেশে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে চালকদের চেতনানাশক ট্যাবলেট খাইয়ে অটোরিকশা ছিনতাই করে আসছে। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫১ বছর ধরে পত্রিকা পৌঁছে দিচ্ছেন সৈয়দপুরের গফফার
  • চালককে চেতনানাশক খাইয়ে অটোরিকশা ছিনতাই করেন তাঁরা