নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালসহ চট্টগ্রাম বন্দরের স্থাপনা বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত জনগণ মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি শাহ আলম। আজ শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় চট্টগ্রাম নগরের পুরোনো রেলস্টেশন চত্বরে আয়োজিত গণসমাবেশে তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের মতামত উপেক্ষা করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে চাইছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো এখতিয়ার এই সরকারের নেই।

রাজনৈতিক দলগুলোকে বন্দর ইজারা দেওয়ার বিষয়ে বক্তব্য পরিষ্কার করার আহ্বান জানান শাহ আলম। তিনি বলেন, এনসিপি ও জামায়াতকে তাদের বক্তব্য পরিষ্কার করতে হবে। তারা বন্দর ইজারা দেওয়ার ব্যাপারে কী ভাবছে, তা জনগণ জানতে চায়। এখন পর্যন্ত তারা নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেনি।

বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার উদ্যোগে এই গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়। ‘জনমত উপেক্ষা করে লাভজনক চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেওয়া চলবে না’, এমন ব্যানারে কর্মসূচি পালিত হয়।

সমাবেশে সিপিবি নেতা শাহ আলম আরও বলেন, ‘দেশবিরোধী চক্রান্ত চলছে। মিয়ানমারে করিডর দেওয়ার আলোচনা আমরা শুনেছি। এখন বন্দর দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা বুকের রক্ত দিয়ে হলেও বন্দর রক্ষা করব।’

চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগ ও পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটর নিয়োগ নিয়ে দেশে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে শুরু হওয়া সেই নিয়োগপ্রক্রিয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও এগিয়ে নিচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সরকারের চুক্তি করার কথা রয়েছে।

সরকারের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে চলেছে বিভিন্ন সংগঠন। গত ২২ অক্টোবর ইজারা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)।

আজ আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার ডিসেম্বরের মধ্যেই সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চুক্তি করতে চায়। বন্দর বিদেশিদের হাতে গেলে দেশীয় শ্রমিকদের ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা রয়েছে। সরকার যেন আগেভাগেই দায় এড়াতে পারে, সে জন্যই বন্দরের মাশুল ৪১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।

সমাবেশ থেকে জানানো হয়, কাল রোববার থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। এ সময়ের মধ্যে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত না পাল্টালে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও করা হবে। তাতেও সফল না হলে হরতাল, অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে।

‘তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে’

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশিদ বলেন, সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকার একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ইজারার সিদ্ধান্তও তারই অংশ। এখনই এ সিদ্ধান্ত থেকে না ফিরলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু বলেন, সরকার নির্বাচন, সংস্কার ও বিচারের অঙ্গীকার থেকে সরে গিয়ে দেশবিরোধী অবস্থান নিচ্ছে। বন্দরের লাভজনক টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দিয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে। ডিপি ওয়ার্ল্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে কার্যক্রম পরিচালনায় বদনাম আছে।

গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন নাসু বলেন, ‘জনগণের মত ছাড়া কোনোভাবেই বন্দর ইজারা দেওয়া যাবে না। কিন্তু সরকার জনগণের মতের তোয়াক্কা না করেই সরকার বিভিন্ন চুক্তি করেছে। এই সরকার এনজিওবাদী সরকার। এরা সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে কাজ করছে।’

কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন বাসদ (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পাঠচক্র ফোরামের সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সেক্রেটারি শেখ নুরুল্লাহ বাহার প্রমুখ। সমাবেশ শেষে রেলস্টেশন চত্বর থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত মশালমিছিল করেন অংশগ্রহণকারী নেতা-কর্মীরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক সরক র র র ইজ র

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপিতে ৫ শতাংশ শিক্ষকের মনোনয়ন চায় শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) ৫ শতাংশ শিক্ষকের মনোনয়ন চায় শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট। বিশেষ করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ত্যাগী, স্বচ্ছ, হামলা-মামলার শিকার ও কারাভোগকারী শিক্ষক নেতৃবৃন্দকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

শনিবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায় শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসচিব মো. জাকির হোসেন।

তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি ২৩৭টি মনোনয়ন ঘোষণা করলেও এখনও সুযোগ রয়েছে শিক্ষক সমাজকে মূল্যায়ন করার। আমরা আশা করবো বিএনপি দীর্ঘদিনের নির্যাতিত ত্যাগী শিক্ষকদের মনোনয়নের মাধ্যমে মূল্যায়ন করবে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষক মর্যাদা রক্ষা এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঐক্যজোট সবসময় প্রগতিশীল ভূমিকা পালন করেছে। যখন গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ ছিল, তখনও আমরা থেমে থাকিনি। ‘আমরা বাংলাদেশী’ এবং ‘প্রফেশনাল মুভমেন্ট’-এর মতো নতুন প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে গেছি। বিগত ১৭ বছর শিক্ষক নেতাদের ওপর নির্যাতন, মামলা, হয়রানি, চাকরিচ্যুতি, হামলা ও কারাবরণ- সব কিছুই আমরা দেখেছি, সহ্য করেছি। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়ানো থেকে পিছপা হইনি। এই ত্যাগ-তিতিক্ষা কেবল শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের নয়, এটি বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন, ছাত্রসমাজ এবং লাখো অভিভাবকের স্বপ্নের প্রতিনিধিত্ব করে।’’

লিখিত বক্তব্যে জাকির হোসেন বলেন, ‘‘আমরা মনে করি, সংবিধান অনুযায়ী জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। আর সেই জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন জাতীয় সংসদের মাধ্যমে। জাতীয় সংসদে যদি সৎ, স্বচ্ছ, দেশপ্রেমিক, নীতিবান ও জনদরদী প্রতিনিধি না থাকেন তাহলে দেশ কখনও সমৃদ্ধির পথে এগোতে পারে না। শিক্ষকেরা দেশের বিবেক। শিক্ষকরা সমাজের নৈতিক ও বৌদ্ধিক নেতৃত্ব দেন। তাই জাতীয় সংসদে শিক্ষকদের অধিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।’’

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল ইতোমধ্যেই ৩১ দফা প্রস্তাবনার মধ্য দিয়ে একটি নতুন, গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, মানবাধিকার, প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কারের যে পরিকল্পনা দলটি ঘোষণা করেছে, তাতে শিক্ষকদের অংশগ্রহণ থাকলে নীতিনির্ধারণ আরও শক্তিশালী হবে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘গত ১৭ বছর শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের বহু নেতা হামলার শিকার হয়েছেন, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন, দীর্ঘ কারাবাসসহ মারাত্মক হয়রানি সহ্য করেছেন। অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, পরিবারে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা নেমে এসেছে। কিন্তু তারা আন্দোলনের পথ ছাড়েননি। আজ যখন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে, যখন নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রতিজ্ঞা সামনে, তখন এই ত্যাগী, স্বচ্ছ, নীতিবান শিক্ষক নেতাদের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যারা ত্যাগ করেছেন, সংগ্রাম করেছেন, গণতন্ত্রের জন্য নিজেদের জীবন-জীবিকা ঝুঁকিতে ফেলেছেন, তারাই নতুন রাষ্ট্র গঠনে সবচেয়ে যোগ্য নেতৃত্ব দিতে পারেন।’’

এমন প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দের কাছে তারা নির্বাচনে কমপক্ষে ৫ শতাংশ শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের ত্যাগী শিক্ষককে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান। 

ঢাকা/নাজমুল//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংস্কারের মূল লক্ষ্য প্রশাসনিক নয়, নৈতিক: প্রধান বিচারপতি
  • বিএনপিতে ৫ শতাংশ শিক্ষকের মনোনয়ন চায় শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট
  • বিএনপি আহ্বান করলে আমরা আলোচনায় যেতে প্রস্তুত: আযাদ
  • অভিজাততন্ত্র থেকে কি আমাদের মুক্তি নেই
  • গণভোটকে নির্বাচনের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার, অভিযোগ তাহেরের
  • বন্দরে এমপি প্রার্থী মাওলানা মইনুদ্দিন আহমাদ-এর গণসংযোগ 
  • ‘জামায়াতের রাজনীতি শুরু হয় জিয়াউর রহমানের নীতির কারণে’
  • জামায়াতের কেউ এমপি হলে সরকারি প্লট ও বিনা ট্যাক্সের গাড়ি নেবেন না : শফিকুর রহমান
  • চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাজনীতি করতে চাই: নাসীরুদ্দীন