নমিনি আর উত্তরাধিকারী একই ব্যক্তি না হলে কী হয়? তাঁরা কি একে অপরের বিরোধী হয়ে যান? মারা যাওয়া আমানতকারীর অর্থ কাকে দেয় ব্যাংক? এ নিয়ে যদি দুই রকম নীতি থাকে, সে ক্ষেত্রে কী ঘটে?

এসব প্রশ্ন সামনে আসে সম্প্রতি মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় আবুল কালাম আজাদ নিহত হওয়ার পর—তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নমিনি কে, তা নিয়ে আলোচনার সূত্র ধরে।

গত ২৬ অক্টোবর রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাডের আঘাতে কালামের মৃত্যু হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়। পোস্টে দাবি করা হয়, কালামের ব্যাংক হিসাবের নমিনি তাঁর বোন। তাঁর স্ত্রী-সন্তানেরা নমিনি না হওয়ায় বঞ্চিত হচ্ছেন।

তবে প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, নমিনি নিয়ে ছড়ানো এ তথ্য ঠিক নয়।

আরও পড়ুনমুসলিম উত্তরাধিকারেরা কে কতটুকু সম্পত্তি পান?২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

তা সত্ত্বেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে নানা আলোচনা চলতে থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন আসে, নমিনি কে হতে পারেন, আর তাঁর অধিকার কতটুকু?

মারা যাওয়া ব্যক্তির সম্পত্তি নমিনি পাবেন, নাকি উত্তরাধিকারের কাছে যাবে, এ নিয়ে হাইকোর্টের রায় ও ব্যাংক কোম্পানি আইনের মধ্যে ভিন্নতা আছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাজনীন নাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নমিনি আর উত্তরাধিকারের বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় অনেক মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। অনেক মামলা আদালতে আছে। এ সমস্যার দ্রুত সমাধান দরকার।’

আরও পড়ুনআমাদের কোনো ভাই নেই, বাবার সম্পত্তি কীভাবে পেতে পারি?১৪ ডিসেম্বর ২০২২নমিনির পরিচয় ও উত্তরাধিকারের অধিকার

নমিনি হলেন সেই ব্যক্তি, যাঁকে অর্থ গ্রহণ করার জন্য আমানতকারী মনোনীত করেন। আমানতকারীর মৃত্যু হলে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে পারবেন নমিনি।

তবে নমিনি একজন প্রতিনিধির ভূমিকা পাওয়া ব্যক্তি। তিনি যদি নিজে উত্তরাধিকারী হন, তাহলে আইন অনুযায়ী তিনি তাঁর প্রাপ্য অর্থ পাবেন। আর যদি তিনি উত্তরাধিকারী না হন, তাহলে তাঁর ভূমিকা হবে—সেই অর্থ মারা যাওয়া আমানতকারীর উত্তরাধিকারীর কাছে হস্তান্তর করা।

তবে বিষয়টি নিয়ে সমস্যা তৈরি হয় ব্যাংক কোম্পানি আইনে গিয়ে। উত্তরাধিকার কে, তা জানে না ব্যাংক। ব্যাংকের কাছে আমানতকারীর উল্লেখ করে যাওয়া নমিনিই গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (সংশোধিত)-এর ১০৩ ধারা অনুযায়ী, আমানতকারী মারা গেলে তাঁর অ্যাকাউন্টে গচ্ছিত টাকা মনোনীত ব্যক্তি (নমিনি) পাবেন। ব্যাংক সেই অর্থ নমিনিকে পরিশোধ করবে। নমিনি নাবালক হলে আমানতকারী আগেই একজন ব্যক্তিকে সেই অর্থ গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন।

আরও পড়ুনসম্পত্তির ভাগ কে কতটা পাবে, মুহূর্তেই জানা যাবে০৫ মার্চ ২০২২

এই ধারা অনুযায়ী, নমিনি অর্থ হাতে পাওয়ার যোগ্য হলেও কোনো ওয়ারিশ সেই টাকার মালিকানা দাবি করলে তাঁকে আদালতে যেতে হবে।

অর্থাৎ ব্যাংক মারা যাওয়া আমানতকারীর অর্থ বুঝিয়ে দেবে নমিনিকে। নমিনি উত্তরাধিকারী না হলে, তিনি উত্তরাধিকারীকে অর্থ বুঝিয়ে না দিলে সে ক্ষেত্রে ব্যাংকের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।

নমিনির অধিকার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকি প্রথম আলোকে বলেন, অ্যাকাউন্ট খোলার সময় আমানতকারীকে নমিনি ঠিক করতে হয়। আমানতকারী এক বা একাধিক নমিনি নির্ধারণ করেন। কোন নমিনি কত শতাংশ পাবেন, তা–ও ঠিক করতে হয় আমানতাকারীকে। সেই অর্থ দেওয়ার জন্য ব্যাংক নমিনি বা উত্তরাধিকারী কাউকেই খুঁজে বের করবে না। তবে নমিনি এসে ব্যাংকের কাছে দাবি করলে, সব তথ্যপ্রমাণ ঠিক থাকলে নিয়ম অনুযায়ী নমিনিকে ব্যাংক অর্থ বুঝিয়ে দেবে।

নমিনির অনুপস্থিতিতে ব্যাংক মারা যাওয়া আমানতকারীর সম্পদ কীভাবে হস্তান্তর করবে, এ বিষয়ে শাহরিয়ার সিদ্দিকি বলেন, কোনো কারণে যদি নমিনি মারা যান বা নিখোঁজ থাকেন, সে ক্ষেত্রে আদালত যেভাবে উত্তরাধিকারের কাছে সম্পত্তি হস্তান্তরের নির্দেশ দেবেন, ব্যাংক তা অনুসরণ করবে। মোটকথা, ব্যাংকের সঙ্গে উত্তরাধিকারের কোনো সম্পর্ক নেই।

কোনো অ্যাকাউন্টের নমিনি অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে ব্যাংক তাঁকে টাকা দেবে না বলে উল্লেখ করেন শাহরিয়ার সিদ্দিকি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে ক্ষেত্রে নমিনিকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

অন্যদিকে ২০১৬ সালে সঞ্চয়পত্রের নমিনি নিয়ে একটি রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, সঞ্চয়পত্রের হিসাবধারী মারা গেলে টাকা নমিনির পরিবর্তে উত্তরাধিকারী পাবেন।

আরও পড়ুনআমি কি দত্তক বাবার সম্পত্তির ভাগ পাব না? ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪কালামের নমিনি কে, উত্তরাধিকার কারা

কালামের স্ত্রী ও দুই সন্তান আছে। তাঁর দুই সন্তানই অপ্রাপ্তবয়স্ক। কালামের উত্তরাধিকারী হিসেবে ১৮ বছরের আগে তারা বাবার কোনো অর্থ বুঝে পাবে না।

কালাম মারা যাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়। এতে দাবি করা হয়, কালামের ব্যাংক হিসাবের ‘নমিনি’ তাঁর বোন।

তবে প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘মেট্রো দুর্ঘটনায় নিহত কালামের ব্যাংক হিসাবের নমিনি আসলে কে’ শিরোনামের প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়, বোন নমিনি—এই তথ্য ঠিক নয়।

কালামের স্ত্রী আইরিন খান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এমন কোনো তথ্য কাউকে দেননি।

অবশ্য আইরিন জানিয়েছেন, তাঁর স্বামীর তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকার তথ্য তিনি জানেন। তবে এসব অ্যাকাউন্টের নমিনি কে, তা জানেন না।

অন্যদিকে কালামের বোন লাইজু আক্তার বলেন, তাঁর ভাই বিয়ের আগে যেসব অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন, সেগুলোয় বোনদের নমিনি করেন। কিন্তু বিয়ের পর তাঁরাই বলে নমিনি পরিবর্তন করেছেন। তাঁর ভাইয়ের জমি ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নমিনি তাঁর স্ত্রী।

আরও পড়ুনমেট্রো দুর্ঘটনায় নিহত কালামের ব্যাংক হিসাবের নমিনি আসলে কে০৪ নভেম্বর ২০২৫

কালামের মৃত্যুর পর এই পরিবারকে সহযোগিতার জন্য তাঁর স্ত্রীর নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এই অ্যাকাউন্টে নমিনি করা হয়েছে কালামের মা ও তাঁর ছয় বছর বয়সী বড় সন্তানকে।

নমিনি ও উত্তরাধিকারী কীভাবে নির্ধারণ করা হয়, সে বিষয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রমজান আলী সিকদারের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আইনি বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি। নমিনি শুধু জিম্মাদার—হাইকোর্ট থেকে এমন রায় আসার পর আপিল হয়। এটি এখন আপিল বিভাগে বিচারাধীন। এখনো শুনানি হয়নি। অর্থাৎ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। এ অবস্থায় ব্যাংক আইন অনুযায়ী, ব্যাংক অর্থ বুঝিয়ে দেবে নমিনিকে। কিন্তু নমিনি যদি তা উত্তরাধিকারীকে না দেন, সে ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারীকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে। নিহত কালামের উত্তরাধিকারীদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে, যদি নমিনি পাওনা থেকে তাঁদের বঞ্চিত করেন।

আরও পড়ুনপ্রাপ্যটুকু পেতেও ভোগান্তি০১ এপ্রিল ২০১৯আরও পড়ুনমামলা না করেও যেভাবে বুঝে পাবেন নিজের সম্পত্তি ২৮ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক অ য ক উন ট অর থ ব ঝ য় প রথম আল স ই অর থ অন য য় র জন য সন ত ন

এছাড়াও পড়ুন:

নমিনি হলেই কি মারা যাওয়া ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবের টাকা পাওয়া যায়

নমিনি আর উত্তরাধিকারী একই ব্যক্তি না হলে কী হয়? তাঁরা কি একে অপরের বিরোধী হয়ে যান? মারা যাওয়া আমানতকারীর অর্থ কাকে দেয় ব্যাংক? এ নিয়ে যদি দুই রকম নীতি থাকে, সে ক্ষেত্রে কী ঘটে?

এসব প্রশ্ন সামনে আসে সম্প্রতি মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় আবুল কালাম আজাদ নিহত হওয়ার পর—তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নমিনি কে, তা নিয়ে আলোচনার সূত্র ধরে।

গত ২৬ অক্টোবর রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাডের আঘাতে কালামের মৃত্যু হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়। পোস্টে দাবি করা হয়, কালামের ব্যাংক হিসাবের নমিনি তাঁর বোন। তাঁর স্ত্রী-সন্তানেরা নমিনি না হওয়ায় বঞ্চিত হচ্ছেন।

তবে প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, নমিনি নিয়ে ছড়ানো এ তথ্য ঠিক নয়।

আরও পড়ুনমুসলিম উত্তরাধিকারেরা কে কতটুকু সম্পত্তি পান?২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

তা সত্ত্বেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে নানা আলোচনা চলতে থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন আসে, নমিনি কে হতে পারেন, আর তাঁর অধিকার কতটুকু?

মারা যাওয়া ব্যক্তির সম্পত্তি নমিনি পাবেন, নাকি উত্তরাধিকারের কাছে যাবে, এ নিয়ে হাইকোর্টের রায় ও ব্যাংক কোম্পানি আইনের মধ্যে ভিন্নতা আছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাজনীন নাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নমিনি আর উত্তরাধিকারের বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় অনেক মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। অনেক মামলা আদালতে আছে। এ সমস্যার দ্রুত সমাধান দরকার।’

আরও পড়ুনআমাদের কোনো ভাই নেই, বাবার সম্পত্তি কীভাবে পেতে পারি?১৪ ডিসেম্বর ২০২২নমিনির পরিচয় ও উত্তরাধিকারের অধিকার

নমিনি হলেন সেই ব্যক্তি, যাঁকে অর্থ গ্রহণ করার জন্য আমানতকারী মনোনীত করেন। আমানতকারীর মৃত্যু হলে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে পারবেন নমিনি।

তবে নমিনি একজন প্রতিনিধির ভূমিকা পাওয়া ব্যক্তি। তিনি যদি নিজে উত্তরাধিকারী হন, তাহলে আইন অনুযায়ী তিনি তাঁর প্রাপ্য অর্থ পাবেন। আর যদি তিনি উত্তরাধিকারী না হন, তাহলে তাঁর ভূমিকা হবে—সেই অর্থ মারা যাওয়া আমানতকারীর উত্তরাধিকারীর কাছে হস্তান্তর করা।

তবে বিষয়টি নিয়ে সমস্যা তৈরি হয় ব্যাংক কোম্পানি আইনে গিয়ে। উত্তরাধিকার কে, তা জানে না ব্যাংক। ব্যাংকের কাছে আমানতকারীর উল্লেখ করে যাওয়া নমিনিই গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (সংশোধিত)-এর ১০৩ ধারা অনুযায়ী, আমানতকারী মারা গেলে তাঁর অ্যাকাউন্টে গচ্ছিত টাকা মনোনীত ব্যক্তি (নমিনি) পাবেন। ব্যাংক সেই অর্থ নমিনিকে পরিশোধ করবে। নমিনি নাবালক হলে আমানতকারী আগেই একজন ব্যক্তিকে সেই অর্থ গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন।

আরও পড়ুনসম্পত্তির ভাগ কে কতটা পাবে, মুহূর্তেই জানা যাবে০৫ মার্চ ২০২২

এই ধারা অনুযায়ী, নমিনি অর্থ হাতে পাওয়ার যোগ্য হলেও কোনো ওয়ারিশ সেই টাকার মালিকানা দাবি করলে তাঁকে আদালতে যেতে হবে।

অর্থাৎ ব্যাংক মারা যাওয়া আমানতকারীর অর্থ বুঝিয়ে দেবে নমিনিকে। নমিনি উত্তরাধিকারী না হলে, তিনি উত্তরাধিকারীকে অর্থ বুঝিয়ে না দিলে সে ক্ষেত্রে ব্যাংকের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।

নমিনির অধিকার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকি প্রথম আলোকে বলেন, অ্যাকাউন্ট খোলার সময় আমানতকারীকে নমিনি ঠিক করতে হয়। আমানতকারী এক বা একাধিক নমিনি নির্ধারণ করেন। কোন নমিনি কত শতাংশ পাবেন, তা–ও ঠিক করতে হয় আমানতাকারীকে। সেই অর্থ দেওয়ার জন্য ব্যাংক নমিনি বা উত্তরাধিকারী কাউকেই খুঁজে বের করবে না। তবে নমিনি এসে ব্যাংকের কাছে দাবি করলে, সব তথ্যপ্রমাণ ঠিক থাকলে নিয়ম অনুযায়ী নমিনিকে ব্যাংক অর্থ বুঝিয়ে দেবে।

নমিনির অনুপস্থিতিতে ব্যাংক মারা যাওয়া আমানতকারীর সম্পদ কীভাবে হস্তান্তর করবে, এ বিষয়ে শাহরিয়ার সিদ্দিকি বলেন, কোনো কারণে যদি নমিনি মারা যান বা নিখোঁজ থাকেন, সে ক্ষেত্রে আদালত যেভাবে উত্তরাধিকারের কাছে সম্পত্তি হস্তান্তরের নির্দেশ দেবেন, ব্যাংক তা অনুসরণ করবে। মোটকথা, ব্যাংকের সঙ্গে উত্তরাধিকারের কোনো সম্পর্ক নেই।

কোনো অ্যাকাউন্টের নমিনি অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে ব্যাংক তাঁকে টাকা দেবে না বলে উল্লেখ করেন শাহরিয়ার সিদ্দিকি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে ক্ষেত্রে নমিনিকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

অন্যদিকে ২০১৬ সালে সঞ্চয়পত্রের নমিনি নিয়ে একটি রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, সঞ্চয়পত্রের হিসাবধারী মারা গেলে টাকা নমিনির পরিবর্তে উত্তরাধিকারী পাবেন।

আরও পড়ুনআমি কি দত্তক বাবার সম্পত্তির ভাগ পাব না? ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪কালামের নমিনি কে, উত্তরাধিকার কারা

কালামের স্ত্রী ও দুই সন্তান আছে। তাঁর দুই সন্তানই অপ্রাপ্তবয়স্ক। কালামের উত্তরাধিকারী হিসেবে ১৮ বছরের আগে তারা বাবার কোনো অর্থ বুঝে পাবে না।

কালাম মারা যাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়। এতে দাবি করা হয়, কালামের ব্যাংক হিসাবের ‘নমিনি’ তাঁর বোন।

তবে প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘মেট্রো দুর্ঘটনায় নিহত কালামের ব্যাংক হিসাবের নমিনি আসলে কে’ শিরোনামের প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়, বোন নমিনি—এই তথ্য ঠিক নয়।

কালামের স্ত্রী আইরিন খান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এমন কোনো তথ্য কাউকে দেননি।

অবশ্য আইরিন জানিয়েছেন, তাঁর স্বামীর তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকার তথ্য তিনি জানেন। তবে এসব অ্যাকাউন্টের নমিনি কে, তা জানেন না।

অন্যদিকে কালামের বোন লাইজু আক্তার বলেন, তাঁর ভাই বিয়ের আগে যেসব অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন, সেগুলোয় বোনদের নমিনি করেন। কিন্তু বিয়ের পর তাঁরাই বলে নমিনি পরিবর্তন করেছেন। তাঁর ভাইয়ের জমি ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নমিনি তাঁর স্ত্রী।

আরও পড়ুনমেট্রো দুর্ঘটনায় নিহত কালামের ব্যাংক হিসাবের নমিনি আসলে কে০৪ নভেম্বর ২০২৫

কালামের মৃত্যুর পর এই পরিবারকে সহযোগিতার জন্য তাঁর স্ত্রীর নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এই অ্যাকাউন্টে নমিনি করা হয়েছে কালামের মা ও তাঁর ছয় বছর বয়সী বড় সন্তানকে।

নমিনি ও উত্তরাধিকারী কীভাবে নির্ধারণ করা হয়, সে বিষয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রমজান আলী সিকদারের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আইনি বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি। নমিনি শুধু জিম্মাদার—হাইকোর্ট থেকে এমন রায় আসার পর আপিল হয়। এটি এখন আপিল বিভাগে বিচারাধীন। এখনো শুনানি হয়নি। অর্থাৎ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। এ অবস্থায় ব্যাংক আইন অনুযায়ী, ব্যাংক অর্থ বুঝিয়ে দেবে নমিনিকে। কিন্তু নমিনি যদি তা উত্তরাধিকারীকে না দেন, সে ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারীকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে। নিহত কালামের উত্তরাধিকারীদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে, যদি নমিনি পাওনা থেকে তাঁদের বঞ্চিত করেন।

আরও পড়ুনপ্রাপ্যটুকু পেতেও ভোগান্তি০১ এপ্রিল ২০১৯আরও পড়ুনমামলা না করেও যেভাবে বুঝে পাবেন নিজের সম্পত্তি ২৮ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ