এক কক্ষের বাড়ি থেকে ‘রাজপ্রাসাদে’
Published: 9th, November 2025 GMT
নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি সম্প্রতি এক সকাল কাটিয়েছেন তাঁর মাসে ২ হাজার ৩০০ ডলার ভাড়ার ফ্ল্যাটের মেঝেতে তোয়ালে পেতে। রান্নাঘরের সিঙ্ক থেকে পানি পড়ছিল। তাঁকে ভবনের তত্ত্বাবধায়ককে ডাকতে হয়। তবে এটাই ছিল না তাঁর একমাত্র বিরক্তির কারণ।
‘আমি আর আমার স্ত্রী এখন ভাবছি, এক শোবার ঘরের ফ্ল্যাটটা আমাদের জন্য একটু ছোট হয়ে যাচ্ছে,’ সম্প্রতি ‘দ্য নিউইয়র্কার রেডিও আওয়ার’–এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জোহরান মামদানি এ কথা বলেন। এ সময় ওই ভাড়া বাসার পানির লাইনের সমস্যার কথা বলেন।
এখন মামদানি যদি মেয়রের সরকারি বাসভবন গ্রেসি ম্যানশনে উঠতে রাজি হন, তবে আর এমন দৈনন্দিন সমস্যা তাঁকে ভোগাবে না, তা নিশ্চিন্তেই বলা যায়। তাঁর নতুন বাসা হবে অনেক প্রশস্ত ও জাঁকজমকপূর্ণ।
কুইন্সের অ্যাস্টোরিয়ায় মামদানির বর্তমান বাসা একটি সাধারণ, ভাড়া-নিয়ন্ত্রিত অ্যাপার্টমেন্ট। আর গ্রেসি ম্যানশন হলো ২২৬ বছরের পুরোনো, ১১ হাজার বর্গফুট আয়তনের এক প্রাসাদ। সেখানে ঝকঝকে আয়না, ঝাড়বাতির আলো, মেহগনি কাঠের দরজা, আপেল ও ডুমুরগাছঘেরা বিশাল লন, আর সবজিবাগান—সবই আছে।কুইন্সের অ্যাস্টোরিয়ায় মামদানির বর্তমান বাসা একটি সাধারণ, ভাড়া-নিয়ন্ত্রিত অ্যাপার্টমেন্ট। আর গ্রেসি ম্যানশন হলো ২২৬ বছরের পুরোনো, ১১ হাজার বর্গফুট আয়তনের এক প্রাসাদ। সেখানে ঝকঝকে আয়না, ঝাড়বাতির আলো, মেহগনি কাঠের দরজা, আপেল ও ডুমুরগাছঘেরা বিশাল লন, আর সবজিবাগান—সবই আছে।
দান্তে ডি ব্লাসিও, বাবা বিল ডি ব্লাসিও নিউইয়র্কের মেয়র হওয়ার সময় কিশোর ছিলেন। ২০১৪ সালে এই গ্রেসি ম্যানশনে পরিবারের সঙ্গে উঠেছিলেন দান্তে। বলেন, ‘আমি নিজেকে তখন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ভাগ্যবান ছেলে মনে করতাম।’ আরও বলেন, ‘নিউইয়র্কে বেড়ে উঠে কোনো জায়গা পেলে সেটা হালকাভাবে নেওয়া যায় না। হঠাৎ করেই একটা লন আর একটা নাচঘর পেয়ে গেলে তো কথাই নেই।’
‘তবে এই বাড়িতে থাকা কিছুটা বিচ্ছিন্নতাও এনে দেয়,’ বলেন দান্তে। ‘নিউইয়র্কের জীবনের প্রতিদিনের বাস্তবতা—এর গৌরব আর অস্বস্তি। এ দুটো থেকেই আপনি দূরে চলে যান।’
তবে এ বাড়িতে (গ্রেসি ম্যানশন) থাকা কিছুটা বিচ্ছিন্নতাও এনে দেয়। নিউইয়র্কের জীবনের প্রতিদিনের বাস্তবতা—এর গৌরব আর অস্বস্তি। এ দুটো থেকেই আপনি দূরে চলে যান।দান্তে ডি ব্লাসিও, নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র বিল ডি ব্লাসিওর ছেলেগত কয়েক মাস ধরেই মামদানি বলেছেন, তিনি তাঁর বর্তমান ফ্ল্যাট ছেড়ে দিতে চান। কিন্তু বুধবার সকালে যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি কি গ্রেসি ম্যানশনে উঠবেন? তখন তিনি নিরুত্তর থাকেন।
‘আমি এখনো জানি না, কোথায় থাকব,’ বুধবার টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন মামদানি। ‘তবে জানি, কোথায় কাজ করব—সেটা হচ্ছে সিটি হল।’
ওই দিনই পরে এক সংবাদ সম্মেলনে মামদানি মজা করে বলেন, ‘গত রাতে আমার সুপারের কাছ থেকে একটা টেক্সট পেয়েছি। তবে গ্রেসি ম্যানশনই শেষ পর্যন্ত বেশির ভাগ মেয়রের ঠিকানা হয়—নিরাপত্তা আর বড় জমায়েত আয়োজনের সুবিধার কারণে; তাঁরা এটা পছন্দ করুন বা না করুন।’
এখানে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো। মামদানির বর্তমান অ্যাপার্টমেন্ট তাঁর সম্ভাব্য নতুন বাসা থেকে কতটা ভিন্ন, এসব উদাহরণ থেকে তা বোঝা যাবে।
গত কয়েক মাস ধরেই মামদানি বলেছেন, তিনি তাঁর বর্তমান ফ্ল্যাট ছেড়ে দিতে চান। কিন্তু বুধবার সকালে যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি কি গ্রেসি ম্যানশনে উঠবেন? তখন তিনি নিরুত্তর থাকেন।তাপ পোহানো ও গরম পানির সুবিধা২০১৮ সালে মামদানির কুইন্সের ফ্ল্যাটের ভাড়ার বিজ্ঞাপনে আকর্ষণীয় সুবিধার কথা বলা হয়েছিল—‘তাপ পোহানো ও গরম পানির সুবিধা ভাড়ার মধ্যেই’। এটি নিউইয়র্কের আইনে বাধ্যতামূলক সুবিধা।
এ সুবিধাই শেষ নয়। আরও কিছু সুবিধা ছিল। ফ্ল্যাটের রান্নাঘরে ছিল একটি জানালা, শোবার ঘরে দুটি আলমারি আর ভবনের ভেতরেই থাকতেন তত্ত্বাবধায়ক। নিজস্ব ওয়াশার–ড্রায়ার না থাকলেও ভবনে ছিল সাধারণ লন্ড্রি রুম।
১৯২৯ সালে নির্মিত হালকা ইটের এ নিচু ভবনে লিফট আছে, অ্যাস্টোরিয়ায় এটা বিরল। মামদানির প্রচারশিবির তাঁর ভাড়া ফ্ল্যাট নিয়ে কিছু বলতে চায়নি। অবশ্য, স্থানীয় রিয়েল এস্টেট এজেন্টরা অনুমান করছেন, জায়গাটা সর্বোচ্চ ৮০০ বর্গফুটের।
আরও পড়ুনজোহরান মামদানির সাফল্যে ডেমোক্র্যাটদের উচ্ছ্বাস; কিন্তু ক্ষমতায় ফেরা কি সহজ হবে০৮ নভেম্বর ২০২৫পূর্ণকালীন শেফ ও বলরুমঅন্যদিকে গ্রেসি ম্যানশনকে একসময় নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদক বর্ণনা করেছিলেন ‘লেবুর রঙের কেকের মতো প্রাসাদ’ হিসেবে। এটি কার্ল শুর্জ পার্কের ওপরে, এফডিআর ড্রাইভ (ম্যানহাটানের পূর্ব তীর ধরে চলা একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক)–এর পাশে অবস্থিত। গ্রীষ্মে বারান্দা থেকে দেখা যায় ইস্ট রিভারের মনোরম দৃশ্য।
অফিসের কাজ শেষে মেয়রদের গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে হয় এ প্রাসাদের কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত ফটক দিয়ে। সামনের দরজায় লাগানো আছে মেজুজা—ছোট একটি বাক্সে ইহুদি ধর্মগ্রন্থের কিছু বাণী–সংবলিত এক স্ক্রল। ১৯৭০–এর দশকের মেয়র আব্রাহাম বিম এটি প্রথম স্থাপন করেন।
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে জিতলেন প্রথম মুসলিম ও ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন উইয়র ক র ম মদ ন র ম য নশন
এছাড়াও পড়ুন:
জোহরান মামদানির ‘ট্রানজিশন’ দলের সবাই নারী
নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচনে জয়ের পরদিন থেকেই দায়িত্ব গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন জোহরান মামদানি। গতকাল বুধবার তিনি তাঁর ‘ট্রানজিশন টিম’ বা ক্ষমতা গ্রহণকারী দলের নাম ঘোষণা করেছেন। পাঁচ সদস্যের এ দলের সবাই নারী।
আগামী ১ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করবেন জোহরান মামদানি। ৩৪ বছর বয়সী দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এই মেয়র নিজেকে একজন ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট হিসেবে পরিচয় দেন।
স্থানীয় সময় গতকাল সকালে কুইন্সে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রানজিশন দলের নাম ঘোষণা করেন জোহরান মামদানি। এর নেতৃত্ব দেবেন লানা লেপোড। তিনি নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কাজ করবেন। কো–চেয়ার হিসেবে থাকবেন নিউইয়র্কের সাবেক ফার্স্ট ডেপুটি মেয়র মারিয়া তোরেস-স্প্রিংগার। আরও আছেন নিউইয়র্কের ফেডারেল ট্রেড কমিশনের সাবেক প্রধান লিনা খান, ইউনাইটেড ওয়েজের প্রেসিডেন্ট ও সিইও গ্রেস বোনিয়া এবং সিটির স্বাস্থ্য ও মানবিক পরিষেবাবিষয়ক সাবেক ডেপুটি মেয়র মেলানি হারজোগ।
নিউইয়র্কের দায়িত্ব গ্রহণ করে জোহরান মামদানি প্রশাসনকে শুরুতেই বড় ধরনের বাধার মুখে পড়তে হতে পারে। বিশেষ করে যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং তিনি মেয়র হলে নিউইয়র্ক সিটির জন্য কেন্দ্রীয় তহবিলের সরবরাহ বন্ধ করাসহ নানা হুমকি দিয়েছেন।সংবাদ সম্মেলনে জোহরান মামদানি বলেন, ‘আগামী মাসগুলোতে আমার দল ও আমি এমন একটি সিটি হল গড়ে তুলব, যেটি (আমাদের) নির্বাচনী প্রচারের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে সক্ষম হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন একটি প্রশাসন গড়ে তুলব; যা সমানভাবে সক্ষম ও সহানুভূতিশীল হবে, সততা দিয়ে পরিচালিত হবে এবং ততটাই কঠোর পরিশ্রম করতে প্রস্তুত থাকবে; যতটা পরিশ্রম এ শহরকে নিজেদের বাড়ি মনে করা কোটি কোটি নিউইয়র্কবাসী করে থাকেন।’
গত মঙ্গলবার রাতে জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর গতকাল টেলিভিশনে নিজের প্রথম সাক্ষাৎকারে জোহরান মামদানি দ্রুত দায়িত্ব গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরুর ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ১ জানুয়ারির মধ্যে আমাদের দায়িত্ব পালন শুরু করতে প্রস্তুত থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের হাতে ৫৭ দিন আছে।’
নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানি। একই সঙ্গে তিনি প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত ও আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী নিউইয়র্কের মেয়র। এক শতাব্দীর বেশি সময়ের মধ্যে তাঁর চেয়ে কম বয়সী মেয়র নিউইয়র্ক সিটি আর পায়নি।
আরও পড়ুনজোহরান মামদানিকে বেছে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে: ডোনাল্ড ট্রাম্প৫ ঘণ্টা আগেনিউইয়র্ক সিটির দায়িত্ব গ্রহণ করে জোহরান মামদানি প্রশাসনকে শুরুতেই বড় ধরনের বাধার মুখে পড়তে হতে পারে। বিশেষ করে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি (জোহরান) মেয়র হলে নিউইয়র্ক সিটির জন্য কেন্দ্রীয় তহবিল সরবরাহ বন্ধ করাসহ নানা হুমকি দিয়েছেন।
আমরা এমন এক প্রশাসন গড়ে তুলব; যা সমানভাবে সক্ষম ও সহানুভূতিশীল হবে, সততা দিয়ে পরিচালিত হবে এবং ততটাই কঠোর পরিশ্রম করতে প্রস্তুত থাকবে যতটা পরিশ্রম এ শহরকে নিজেদের বাড়ি মনে করা কোটি কোটি নিউইয়র্কবাসী করে থাকেন।জোহরান মামদানি, নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়রজোহরান মামদানি নিজেও স্বীকার করেছেন, তাঁকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে প্রশাসনিক জটিলতা সামলানো ও শত্রুভাবাপন্ন ট্রাম্প প্রশাসনের অধীন কাজ করা। তবে তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, এর মধ্যেও তিনি নিজের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবেন।
জোহরান মামদানি বলেন, তিনি রাজনৈতিক বিভাজনকে পেছনে ফেলে নিউইয়র্কবাসীদের একত্র করার লক্ষ্যে কাজ করবেন। তাঁর মতে, নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের রাজনৈতিক মত যা–ই হোক, সবাইকে একই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। সামনের দিনগুলোতে তিনি ডেপুটি মেয়র ও এজেন্সি কমিশনারদের নাম ঘোষণা করবেন।
গত মঙ্গলবার রাতে জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর গতকাল টেলিভিশনে নিজের প্রথম সাক্ষাৎকারে জোহরান মামদানি দ্রুত দায়িত্ব গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরুর ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ১ জানুয়ারির মধ্যে আমাদের দায়িত্ব পালন শুরু করতে প্রস্তুত থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের হাতে ৫৭ দিন আছে।’এ ব্যাপারে মেয়র বলেন, কয়েকটি নাম আপনাদের চেনা হবে, কয়েকটি হবে না। তবে তাঁরা সবাই পুরোনো সমস্যার নতুন সমাধান খুঁজে পেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবেন। তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ১ জানুয়ারি, যখন আমাদের শহর নতুন প্রশাসনের শপথ অনুষ্ঠান উদ্যাপন করবে, চলুন একই সঙ্গে আমরা আমাদের শহরে একটি নতুন যুগের সূচনাও উদ্যাপন করি।’
আরও পড়ুনজোহরান মামদানির জয়: নিউইয়র্কের ইহুদিদের ইসরায়েলে চলে আসতে বলছেন ইসরায়েলি মন্ত্রী৩ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনমেয়র নির্বাচনে জয়ের পর এবার আসল চ্যালেঞ্জের মুখে মামদানি১৫ ঘণ্টা আগে