‎শুটিং-আর্চারি না থাকায় ষষ্ঠ ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে পদকের খুব একটা আশা ছিল না বাংলাদেশের। কিন্তু গতকাল মধ্যরাতেই তিন পদক এনে দিয়েছেন ভারোত্তোলক মারজিয়া আক্তার।

সৌদি আরবের ‎রিয়াদে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় ভারোত্তোলনের ৫৩ কেজি ওজন শ্রেণিতে তৃতীয় হয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছেন বাংলাদেশের মারজিয়া। এই ইভেন্টে সোনা জিতেছেন তুরস্কের জানসেল ওজকেন। রুপা জেতেন ইন্দোনেশিয়ার বাসিলিয়া।

নিয়ম অনুযায়ী, ভারোত্তোলনে একজন খেলোয়াড় স্ন্যাচ, ক্লিন অ্যান্ড জার্ক ও টোটাল (দুই লিফটের যোগফল) তিন ক্যাটাগরিতে তিনটি পদক জিততে পারবেন।

‎বাংলাদেশের মারজিয়া প্রথমে ৫৩ কেজি স্ন্যাচে ৭২ কেজি ওজন তোলেন। এরপর ক্লিন অ্যান্ড জার্কে তোলেন ৯১ কেজি ওজন। সবশেষে স্ন্যাচ ও ক্লিন অ্যান্ড জার্ক মিলিয়ে ১৬৩ কেজি ওজন তুলেছেন মারজিয়া। তাতে তিন ক্যাটাগরি থেকেই তিনটি ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছেন সেনাবাহিনীর এই ভারোত্তোলক।

‎একইদিন বাংলাদেশের আরও দুই ভারোত্তোলকের খেলা ছিল। ৪৮ কেজি ওজন শ্রেণিতে পঞ্চম হয়েছেন মোসাম্মত বৃষ্টি, ৬০ কেজি ওজন শ্রেণিতে ষষ্ঠ আশিকুর রহমান।

‎‎গত ৭ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতা চলবে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। এবারের আসরে বিশ্বের ৫৭ দেশের প্রায় ৩ হাজার ক্রীড়াবিদ পদকের জন্য লড়ছেন। যার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছেন ১০ খেলার ৩৬ জন অ্যাথলেট।

‎ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে এ নিয়ে দশটি পদক জিতল বাংলাদেশ। ২০২২ সালে তুরস্কে হওয়া এই গেমসে আর্চারি থেকে এক রুপা, দুই ব্রোঞ্জ পেয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে আজারবাইজানের বাকুতে শুটিং থেকে একটি করে সোনা, রুপা, ব্রোঞ্জ ও রেসলিং থেকে একটি ব্রোঞ্জ পদকও এসেছিল।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এবারও কেন শিক্ষার্থীরা সময়মতো বই পাবে না

অতীতের ভুল থেকে আমাদের নীতিনির্ধারক, আমলাতন্ত্র ও প্রতিষ্ঠানগুলো যে কোনো শিক্ষা নেয় না—এটিই ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা। বই ছাপাতে দেরি হওয়ায় চলতি বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছাতে তিন মাস দেরি হয়েছিল। এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন যেমন চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে, সরকারকেও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। আগামী বছরে একই পুনরাবৃত্তি দেখতে পাওয়াটা হবে যারপরনাই হতাশাজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, আগামী বছরের শুরুতে প্রাথমিকের বই বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাবে বলে আশা করা হলেও মাধ্যমিকের বই নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। নবম শ্রেণির বই ছাপানোর জন্য মুদ্রণকারীদের সঙ্গে কেবল চুক্তি হয়েছে। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার কার্যাদেশই দেওয়া হয়নি। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে বাকি যেখানে ৫০ দিনের মতো, সেখানে কবে কার্যাদেশ দেওয়া হবে, কবে বই ছাপা হবে আর কবেই বা বাঁধাই হয়ে সেগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাবে?

শঙ্কার বিষয় হচ্ছে নভেম্বর–ডিসেম্বর মাসে মুদ্রণকারীরা সাধারণত গাইড বই ছাপার কাজে ব্যস্ত থাকে। ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে পোস্টার, লিফলেট ছাপানোর কাজও বাড়বে। এ বাস্তবতায় মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছাতে যে দেরি হবে, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, দেরিতে বই পৌঁছানোর কারণে যে শিখনঘাটতি তৈরি হবে, তার দায় কে নেবে? ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ ও এনসিটিবির কারণে শিক্ষার্থীরা কেন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।  

করোনা মহামারির কারণে শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ এমনিতেই শিখনঘাটতিতে ভুগছে। এরপরও যদি ফি বছর পাঠ্যবই ছাপাতে দেরি হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের ভুগতে হয়, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। এ বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এনসিটিবি আগভাগেই দরপত্রপ্রক্রিয়া শেষ করে মূল্যায়নের কাজও শেষ করেছিল। কিন্তু ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সেপ্টেম্বর মাসে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র বাতিল করা হয়। নতুন দরপত্র আহ্বানের পর যাচাই–বাছাই শেষ হলেও তিন শ্রেণির বই ছাপার কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি।

দরপত্রের নিয়ম অনুযায়ী চুক্তির পর ৪৫ দিনের মধ্যে তিন শ্রেণির বই ছাপিয়ে সরবরাহের কথা রয়েছে। কিন্তু খোদ এনসিটিবির কর্মকর্তারা সময়মতো বই ছাপানো হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন। বছরের শুরুতেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়াটা যে সরকার ও এনসিটিবির দায়িত্ব, সেই বোঝাপড়ায় ঘাটতি থাকায় বারবার একই সংকট সৃষ্টি হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। এ ক্ষেত্রে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জোরালো অঙ্গীকার প্রয়োজন।

মাধ্যমিকের তিন শ্রেণির বই ছাপানো নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, এনসিটিবিকে দ্রুত তা নিরসন করতে হবে। শুধু কার্যাদেশ দিয়ে বসে থাকলেই চলবে না, সময়মতো বইগুলো ছাপা হচ্ছে কি না, নিয়মিত তার তদারক করতে হবে। পাঠ্যবই ছাপাতে দেরি হওয়ায় প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের ভুগতে হচ্ছে, তাদের শিক্ষাজীবনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেকোনো মূল্যেই এই দুষ্টচক্র থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ