নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কুবিতে ছাত্রদলের কর্মসূচি, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
Published: 8th, November 2025 GMT
নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) পোস্টারিং ও দলীয় কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে সংগঠনটি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের দেয়াল এবং বিজয়-২৪ হলের ৪০৫ নম্বর কক্ষের দরজায় দলীয় পোস্টার সাটিয়েছে তারা।
আরো পড়ুন:
মানসিক চাপে ভুগছেন যবিপ্রবির অনেক শিক্ষার্থী
বাঁচতে চান কুবি শিক্ষার্থী প্রভা
ছাত্রদলের এসব কর্মসূচি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন বলেন, “ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে যখন কোনো সংগঠন প্রকাশ্যে মিটিং বা সভা করে, সেটা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের পরিপন্থি নয়, বরং প্রতিষ্ঠানটির শৃঙ্খলা ও নিরপেক্ষ পরিবেশের ওপর সরাসরি আঘাত। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও প্রশাসনিক নীতিমালাকে উপহাস করার শামিল।”
তিনি বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে এ ধরনের আইন বহির্ভূত কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা জানাই। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, ক্যাম্পাসের শান্তিপূর্ণ শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হোক।”
আইন বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান রায়হান বলেন, “রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রশাসনের কার্যকারিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ছাত্রদল তাদের রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে, যা শিক্ষাঙ্গণে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করবে।”
তিনি বলেন, “বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আমরা দেখেছি, তাদের ছাত্র সংগঠন কতটা ভয়ানক ছিল। ছাত্র রাজনীতির নামে তারা বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত ছিল। ফলে জুলাই পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলে ক্যাম্পাসে স্থিতিশীল পরিবেশ থাকবে। তাই সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমার চাওয়া, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বহাল থাকুক এবং প্রশাসন সে সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করুক।”
হলে পোস্টার লাগানোর বিষয়ে ৪০৫ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, “কারা এখানে পোস্টার লাগিয়েছে, আমি জানি না। আমার মনে হয় ছাত্রদলকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এটা কেউ ষড়যন্ত্র করেছে।”
ওই কক্ষের আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী সুমিত সরকার বলেন, “আমি রুমের বাহিরে আছি। পোস্টার কে লাগিয়েছে আমি জানি না।”
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ বলেন, “জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস ছাত্রদলের একার না, এটা সবার। এ দিবস পালন করা প্রশাসনসহ সব ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের দায়িত্ব। এমন একটি দিবস প্রশাসন কেন পালন করেনি, সেটা প্রশাসনের প্রতি আমার প্রশ্ন।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী ফ্যাসিস্টের দোসরের দেওয়া একটি সিন্ডিকেট সিদ্ধান্তের দোহায় দিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখছে প্রশাসন। আমরা ছাত্রদল এটার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”
বিজয়-২৪ হলে পোস্টার লাগানোর বিষয়ে তিনি বলেন, “আমাদের দল থেকে হলে পোস্টার লাগানোর কোনো দিকনির্দেশনা ছিল না। আমার মনে হয় ছাত্রদলকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে কেউ ষড়যন্ত্র করছে এটা। আর যদি ভুলক্রমে আমাদের দলের কেউ এটা করে থাকলে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।”
আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “জাতীয় বিল্পব ও সংহতি দিবস বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি বড় ইস্যু। এটা শুধু ছাত্রদলের না, সব ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের পালন করা উচিত। মুক্তমঞ্চ হচ্ছে সবার মত প্রকাশের স্থান। তাই আমরা এই প্রোগ্রাম মুক্তমঞ্চে আয়োজন করেছি।”
বিজয়-২৪ হলে পোস্টার লাগানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, “আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। হলে পোস্টার লাগানোর বিষয়ে আমাদের সাংগঠনিক কোনো নির্দেশনা ছিল না।”
বিজয়-২৪ হলের প্রাধ্যক্ষ ড.
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হাকিম বলেন, “আমাদের ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ। আজ যারা প্রোগ্রাম করেছে, এতে তারা প্রশাসনের অনুমতি নেয়নি। আমি দুইটা ছবি দেখেছি, কিন্তু সেখানে শুধু খালি চেয়ার আর পোস্টার দেখেছি। বিষয়টা আমরা দেখব।”
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০তম সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রক্টরিয়াল বডির জরুরি নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা নিষিদ্ধ করা হয়।
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল ছ ত র র জন ত ছ ত রদল র দ ধ কর প রক শ ন বল ন আম দ র স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
বর্ণিল আয়োজনে ‘ইয়ামাহা বাইক কার্নিভ্যালে’
বর্ণাঢ্য আয়োজন ও হাজারো রাইডারের অংশগ্রহণে শনিবার অনুষ্ঠিত হলো ‘ইয়ামাহা বাইক কার্নিভ্যাল’। ঢাকার পূর্বাচলের বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে এ আয়োজন দেশের বাইকপ্রেমীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
২০১৬ সালে ইয়ামাহার সঙ্গে এসিআই মটরসের পথচলা শুরু। ১১ নভেম্বর এই যাত্রা ৯ বছরে পদার্পণ করবে। এ উপলক্ষে ইয়ামাহা বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত দিনব্যাপী উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রাইডাররা উপভোগ করেন টেস্ট রাইড, জিমখানা, স্টান্ট শোসহ নানা রোমাঞ্চকর বাইকিং কার্যক্রম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এসিআই মটরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক আরাফাত হোসেনসহ অন্য কর্মকর্তারা।
আয়োজনটি নিয়ে সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা দিবসটিকে উদ্যাপন করি। এবার বড় পরিসরে আয়োজন করছি। সারা দেশের সাত হাজারের বেশি রাইডার এখানে অংশ নিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শুধু মোটরসাইকেল বিক্রি নয়, বাইক-সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতে এ আয়োজনকে আন্তর্জাতিক মানের করার পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে দেশের বাইরের বাইকাররাও অংশ নেবে। আর ইয়ামাহা এখন তরুণদের স্বপ্নের প্রতীক—এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য। এ ধারাবাহিকতায় আমরা বাইক ইন্ডাস্ট্রিকে নেতৃত্ব দিচ্ছি।’
এসিআই মটরসের মহাব্যবস্থাপক আরাফাত হোসেন বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ইয়ামাহা শুধু একটি ব্র্যান্ড নয়, এটি এক বিশাল পরিবার। সামনে আরও উদ্ভাবন, আরও সেবা ও আরও ভালো অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই।’
মোটরসাইকেল ইন্ডাস্ট্রিতে ইয়ামাহা একটি জনপ্রিয় নাম, তরুণ প্রজন্মের কাছে যা ‘স্বপ্নের বাইক’ হিসেবে পরিচিত। বর্তমান বাজারে বিক্রির শীর্ষেও রয়েছে ইয়ামাহা। জনপ্রিয় এই ব্র্যান্ডের সফলতার পেছনে রয়েছে এর অনুমোদিত পরিবেশক এসিআই মটরস্। যাত্রার শুরু থেকেই নতুন নতুন মডেল ও বিক্রয়োত্তর সেবার মাধ্যমে বাইকপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছে ইয়ামাহা ও এসিআই মটরস্, যাদের সব কার্যক্রমই হয় গ্রাহকের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়ে।
অনুষ্ঠানে আসা কুমিল্লা ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাবের সদস্য ইভা সরকারের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। ইভা বলেন, ‘শখ করেই বাইক রাইড করি। এটা আমাদের বাইকারদের একটি মিলনমেলা। এখানে এসে ভালো লাগল।’
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাবের সদস্য কামারুজ্জামানও এসেছিলেন এ আয়োজনে। তিনি বলেন, ‘ইতিপূর্বে অনেক অনুষ্ঠানে এসেছি। এবারের আয়োজন একেবারেই ভিন্ন। দেশের আর কোনো বাইক কোম্পানি নেই, যারা এভাবে রাইডারদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চিন্তা করে। এ জন্য এ কমিউনিটির সদস্য হতে পেরে আমি গর্বিত।’
ইয়ামাহা বাইক কার্নিভ্যাল আয়োজনে বিভিন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি ছিল ইয়ামাহার বিভিন্ন সামগ্রীর প্রদর্শনীও। সন্ধ্যায় বিশেষ আকর্ষণ ছিল কণ্ঠশিল্পী কনা ও ‘নগরবাউল’ জেমসের পরিবেশনা, যা উপস্থিত বাইকপ্রেমীদের মধ্যে উৎসবের উচ্ছ্বাস আরও বাড়িয়ে দেয়।
বর্ণাঢ্য এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে গ্রাহক ও রাইডারদের সঙ্গে বন্ধন আরও সুদৃঢ় করল ইয়ামাহা ও এসিআই মটরস্—এমনই মতামত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।