ঠাকুরগাঁও-২ আসনে দলীয় প্রার্থী চান বিএনপির নেতা–কর্মীরা
Published: 8th, November 2025 GMT
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-২ আসনে (বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর ও রানীশংকৈল উপজেলার আংশিক) ১৯৯৬ সালের পর থেকে নিজ দলের প্রার্থী পাননি বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। জোটের হিসাব–নিকাশে পড়ে ২০০১ সাল থেকে সেখানে বরাবর জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীকে ছাড় দিয়েছে দলটি। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এবার আর শরিক কোনো দলকে ছাড় দিতে চায় না বিএনপি।
স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, আসনটি বারবার শরিকদের ছেড়ে দেওয়ায় মাঠপর্যায়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বিএনপির। এবার সেটার অবসান চান তাঁরা। এবার নির্বাচনে এ আসন অন্য কোনো দলকে দেওয়া হলে তৃণমূল পর্যায়ে বিদ্রোহ দেখা দিতে পারে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও-২ আসনটি বরাবর আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিকদের দখলে ছিল। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে এখানে মির্জা রুহুল আমিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাবা। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) থেকে ১৫-দলীয় জোটের প্রার্থী নির্বাচিত হন দবিরুল ইসলাম। ১৯৮৮ সালে আসনটি দখলে নেয় জাতীয় পার্টি। সেবার সেখানে জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হন মির্জা রুহুল আমিন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হয়ে দবিরুল ইসলাম আসনটি পুনরুদ্ধারের পর তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এর পর থেকে আসনটি দবিরুল ইসলাম ও তাঁর ছেলে মাজহারুল ইসলামের দখলে ছিল। এই আসনে ১৯৯১ সালে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন আলতাফুর রহমান এবং ১৯৯৬ সালে জুলফিকার মর্তুজা চৌধুরী। তবে সেবার নির্বাচনে তাঁরা প্রত্যাশিত ফলাফল পাননি। এর পর থেকে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন শুরু করতে গিয়ে আসনটি জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়ায় বিএনপির কেউ এ আসনে প্রার্থী হতে পারেননি। ছাড় পেয়ে ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হন আব্দুল হাকিম। বিএনপির সমর্থন নিয়ে আব্দুল হাকিম কেবল ভোটের ব্যবধান কমিয়েছেন। কিন্তু জয়ী হতে পারেননি। এতে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, এই আসনের জাতীয়তাবাদী চেতনার মানুষ এখন অবহেলিত। এর পেছনের কারণ, দীর্ঘদিন বিএনপির কোনো নেতাকে সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকাবাসী পাননি। বিএনপির নেতা-কর্মীরা জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে অক্লান্ত পরিশ্রম করে নিজেদের ভোট জামায়াতের বাক্সে তুলে দিয়েছেন। এরপরও ইতিবাচক ফল আসেনি। এবার জামায়াত আলাদা নির্বাচন করায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মাঝে আশা জেগে ওঠে। দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নির্বাচনী মাঠ সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সক্রিয় হয়ে ওঠেন কর্মীরা।
৩ নভেম্বর রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে ঠাকুরগাঁও-২ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। ঘোষণার এক পর্যায়ে তিনি ইঙ্গিত দেন, যেসব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি, সেখানে বিএনপির সঙ্গে যেসব দল যুগপৎ আন্দোলন করেছে, তারা আসতে পারে। এ ঘোষণায় স্থানীয় নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েন।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা তাঁতী দলের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর ধরে সংসদ নির্বাচনে আমরা দলীয় কোনো প্রার্থীকে ভোট দিতে পারিনি। যদিও জেতার মতো আবস্থান ছিল বিএনপির। আমরা নিজেরা পরিশ্রম দিয়ে জামায়াতের ভিত মজবুত করেছি। এবার জামায়াত না থাকায় নেতা-কর্মীরা আশায় বুক বেঁধে ছিল। কিন্তু প্রার্থী ঘোষণা না দেওয়ায় আমরা আবারও হতাশ। এবার বিএনপির প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থীকে মেনে নেব না।’
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জুলফিকার আলী বলেন, ‘দীর্ঘদিন এই আসনটি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা বঞ্চিত-নির্যাতিত হয়েছেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর নির্বাচনে বিএনপির জনপ্রতিনিধি পাব—এমনটাই আশা করেছিলাম। কিন্তু এখন আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছি। এবার দলীয় কোনো নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া না হলে আসনটি হারানোর আশঙ্কা দেখছি।’
আবুল হাশেম নামে হরিপুর উপজেলার এক বিএনপির কর্মী বলেন, ‘হামা বিএনপি পাগল। অনেক বছর ধানের শীষে ভোট দিবা পারুনি। হামার লোক না থাকিলে অন্যঠে ভোট দিবা যামোনি।’ বিএনপির কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে জোটের প্রার্থী জামানত হারাবেন বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
একই উপজেলার আরেক বিএনপির কর্মী কবিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই বিএনপির মহাসচিব এখানে সরাসরি নির্বাচন করুক। আর তা না হলে তাঁর পরিবারের অন্য কাউকে প্রার্থী করা হোক। আমরা এবার দলের বাইরে কোনো প্রার্থীকে ভোট দেব না।’
হরিপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের বলেন, ‘আমরা এবার এ আসনে ধানের শীষ মার্কারই (বিএনপি) প্রার্থী চাই। সে যে–ই হোক। এভাবে চলতে থাকলে দল ক্ষতির মুখে পড়বে। আমরা অন্তত এবার আশা করছি, আমাদের মধ্য থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। শরিক দলের কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হলে এলাকার মানুষ মানবে কেন?’
এবারের নির্বাচনে এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফয়সল আমিন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সাবেক মহাসচিব আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য জুলফিকার মর্তুজা চৌধুরী।
জুলফিকার মর্তুজা চৌধুরী বলেন, ‘যেসব দল যুগপৎ আন্দোলনে ছিল, এই আসনে তাদের অবস্থান একেবারে নেই বললেই চলে। বিএনপি ছাড়া অন্য দলকে আসনটি ছেড়ে দিলে তারা জয়লাভ করতে পারবে না। এসব নিয়ে আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে আছি। আমাদের দলের নেতারা পাল্লা পাল্লা করতে গিয়ে নিজের দলের প্রতীকটাই ভুলতে বসেছিলেন। এখন সুযোগ এসেছে। আমরা চাই দলের প্রার্থী। দলের প্রার্থী পেলে এই আসনে সহজেই বিএনপি জয়ী হবে। কারণ, এখানে জামায়াত যে ভোট পায়, তার বেশির ভাগই আমাদের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের।’
মির্জা ফয়সল আমিন বলেন, ‘ওই আসনে দীর্ঘদিন আমার বাবা সংসদ সদস্য ছিলেন। এরপর সেখানে বিএনপির কোনো প্রার্থী জয়ী হতে পারেননি। পরে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার কারণে জামায়াতকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়। আসনটি পুনরুদ্ধারে বিএনপি নেতা-কর্মীরা এবারের নির্বাচনে আমাদের পরিবার থেকে একজনকে প্রার্থী হিসেবে চাচ্ছেন। এসব বিবেচনা করে দল সেখানে এখনো কোনো প্রার্থী দেয়নি। ওই আসনে দলীয় প্রার্থীই নির্বাচন করবেন। আসনটি জোটকে ছেড়ে দেওয়ার গুঞ্জনটি সঠিক নয়।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য় ব এনপ র ন ত দল র প র র থ ব এনপ র স ব এনপ র ক র ল ইসল ম ও ২ আসন এই আসন ল আম ন আম দ র কর ম র ঠ ক রগ সদস য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ভার্জিনিয়ার লে. গভর্নর নির্বাচিত হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম ঘাজালা
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ঘাজালা হাশমি ভার্জিনিয়ার লে. গভর্নর নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি রিপাবলিকান জন রিডকে পরাজিত করে এই পদে জয়ী হয়েছেন। তিনি ভার্জিনিয়া সিনেটের ১৫তম নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত প্রথম মুসলিম ও প্রথম দক্ষিণ এশীয় মার্কিন সিনেটর।
লে. গভর্নর পদে ঘাজালা জয়ী হওয়ার ফলে তাঁর সিনেট আসনটি শূন্য হয়ে যাচ্ছে। এই আসনে নতুন একজন সিনেটর নির্বাচিত করার জন্য বিশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ঘাজালা হাশমি ২০১৯ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন। সে সময় তিনি অভূতপূর্বভাবে রিপাবলিকানদের দখলে থাকা সিনেট আসনটিতে জয়ী হয়ে ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন।
পাঁচ বছর পর ২০২৪ সালে ঘাজালা সিনেটের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কমিটির চেয়ারপারসন হন, যা ডেমোক্র্যাটদের দুটি বড় অগ্রাধিকারের বিষয়।
ঘাজালার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ঘাজালা হাশমি ‘অন্যদের জীবনমান উন্নয়নে নিজেকে নিবেদিত করেছেন’। বিশেষ করে আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিবেশগত ন্যায়বিচারের মতো বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিয়েছেন।
কোথা থেকে এলেন ঘাজালা হাশমি
ঘাজালা হাশমি ১৯৬৪ সালে ভারতের হায়দরাবাদে জিয়া হাশমি ও তানভীর হাশমির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব কেটেছে মালাকপেট এলাকায় নানাবাড়িতে। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি তাঁর মা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং জর্জিয়ায় তাঁর বাবার সঙ্গে যোগ দেন।
ঘাজালার বাবা অধ্যাপক জিয়া হাশমি আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তিনি সেখান থেকে এমএ ও এলএলবি শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পরে নিজের প্রতিষ্ঠিত সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের পরিচালক হিসেবে অবসর নেন।
ঘাজালার মা তানভীর হাশমি বিএ ও বিএড ডিগ্রিধারী। তিনি কোঠিতে অবস্থিত ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন্স কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন।
ঘাজালা স্কুলজীবনে সেরা ফল করে বিভিন্ন পূর্ণ বৃত্তি ও ফেলোশিপ পান। তিনি জর্জিয়া সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মানসহ বিএ এবং আটলান্টার এমোরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমেরিকান সাহিত্য বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৯১ সালে ঘাজালা স্বামী আজহার রফিককে নিয়ে রিচমন্ড এলাকায় বসবাস শুরু করেন। তাঁদের দুই মেয়ে—ইয়াসমিন ও নূর। দুজনই চেস্টারফিল্ড কাউন্টি পাবলিক স্কুলস এবং ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন।
ঘাজালা হাশমি প্রায় ৩০ বছর অধ্যাপনা করেছেন। প্রথমে রিচমন্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরে রেনল্ডস কমিউনিটি কলেজে শিক্ষকতা করেন। সেখানে তিনি সেন্টার ফর এক্সেলেন্স ইন টিচিং অ্যান্ড লার্নিংয়ে (সিইটিএল) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।