ট্রেনের হুইসেল বাজছে। ধীরে ধীরে প্ল্যাটফর্ম ছাড়তে শুরু করেছে খুলনা-চিলাহাটি রেলপথের সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি। সাত সকালে জীবিকার তাগিদে নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলস্টেশনে হাজির ৬৮ বছর বয়সী হকার আবদুল গফফার। ‘এই পেপার লাগবে, এই পেপার’—গফফারের কণ্ঠস্বর মিলিয়ে যায় ট্রেনের চিরচেনা ধ্বনির সঙ্গে।

এমন সময়ে দৌড়ে ট্রেনে উঠতে যান গফফার। কিন্তু শরীর সায় দেয় না। ট্রেনের গতির কাছে হার মানেন। একপর্যায়ে থেমে হাঁপাতে থাকেন। ততক্ষণে ট্রেনটি ছুটতে থাকে পরের স্টেশন পার্বতীপুরের দিকে। সম্প্রতি নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলস্টেশনে আবদুল গফফারের সঙ্গে দেখা হয়।

আবদুল গফফারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭৪ সাল থেকে তিনি পত্রিকা বিক্রি করেন। তখন পত্রিকার দাম ছিল মাত্র ৬০ পয়সা, আর এখন ১২ টাকা। সৈয়দপুর, পার্বতীপুর, নীলফামারী, ডোমার, চিলাহাটি—এসব স্টেশন গফফারের বিচরণক্ষেত্র। প্রায় ৫১ বছর ধরে এসব এলাকায় সংবাদপত্র বিক্রি করছেন তিনি। ট্রেন থেকে নেমে তিনি কখনো কখনো হেঁটে সংবাদপত্র বিক্রি করেন। সৈয়দপুর শহরে সংবাদপত্রের এজেন্ট ‘নিউজ কেবিন’ থেকে পত্রিকা সংগ্রহ করে গফফার ছুটে চলেন গ্রাহকদের দুয়ারে দুয়ারে। পথে-ঘাটে কোনো পাঠক পত্রিকা কিনতে চাইলে তাঁর কাছেও বিক্রি করেন তিনি।

আবদুল গফফারের বাড়ি সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়া মহল্লায়। রেলওয়ের একটি পরিত্যক্ত কোয়ার্টারে সপরিবার তাঁর বসবাস। তিনি বলেন, তাঁর বাবা আবদুস সাত্তার ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় সৈয়দপুরে চলে যান। তখন অবশ্য তাঁর জন্ম হয়নি। তাঁদের পারিবারিক ভাষা উর্দু। পরিবারে ২ ছেলে ও ২ মেয়ে। ছেলেরা এমব্রয়ডারির কাজ করেন। তাঁদের সবাই বিবাহিত। ছেলেমেয়েরা আলাদা থাকেন। এখন শুধু স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সংসার। কষ্টের মধ্যেও ভালো আছেন, এমনটাই বললেন তিনি।

বাবা বেঁচে থাকতে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন গফফার। তাঁর বাবা রেলওয়ে কারখানায় চাকরি করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরতে ১৯৭৪ সালে গফফার সংবাদপত্র বিক্রি শুরু করেন।

সদালাপী ও ভালো ব্যবহারকারী হকার হিসেবে বেশ সুনাম আছে আবদুল গফফারের। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে কথা হয় সৈয়দপুর শহরের রেলওয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে। অনেক স্মৃতিকথা হাতড়ে আলাপ চালিয়ে যান তিনি। একপর্যায়ে গর্ব নিয়ে বলেন, ‘আমাকে ডিসি, এসপি—সবাই চেনে; সম্মান করেন। অথচ আমি স্রেফ একজন হকার। দলবাজি করি না। সব দলের এমপি, জনপ্রতিনিধি—সবাই আমার গ্রাহক।’

আবদুল গফফারের ভাষ্য, দিনে এখন ৩০০ পত্রিকা বিলি করেন। এখন অনলাইনের জামানা, ছাপা কাগজ আগের মতো মানুষ আর কিনে না। মাঝেমধ্যে রাজনৈতিক ও নানা বিষয়ের গরম খবর থাকলে পাঠক চেয়ে চেয়ে পত্রিকা কেনেন। পাঠক বেশি চায় প্রথম আলো সংবাদপত্রটি, এটি বিক্রি করতে বেগ পেতে হয় না। অন্য পেপারগুলোও কমবেশি চলে।

বছর দু-এক আগে স্ট্রোক করেছিলেন জানিয়ে আবদুল গফফার বলেন, ‘এজেন্ট সহযোগিতা করেন বলে এখনো এ পেশায় আছি। তবে শরীর আর আগের মতো চলে না।’

আবদুল জব্বারের বিষয়ে জানতে চাইলে নিউজ কেবিনের স্বত্বাধিকারী খালেদ নিয়াজী নান্না বলেন, ‘গফফার অত্যন্ত ভালো ও সৎ মানুষ। আমরা তাঁর পাশে আছি। প্রয়োজনে সব রকমের সহযোগিতা দিয়ে থাকি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব দপত র স য়দপ র

এছাড়াও পড়ুন:

চালককে চেতনানাশক খাইয়ে অটোরিকশা ছিনতাই করেন তাঁরা

প্রথমে যাত্রী সেজে ভাড়া নিতেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা। পথে কৌশলে চালককে চেতনানাশক খাওয়াতেন। একপর্যায়ে চালক অচেতন হয়ে পড়লে অটোরিকশা ছিনতাই করে পালিয়ে যেতেন চক্রের সদস্যরা। দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি এভাবে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছিনতাই করে আসছে। এই চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ঢাকা ও মুন্সিগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. করিম মিয়া (৪৩), মো. মান্নান খান (৬৬), মনসুর ওরফে মোশারফ (৪৩), মজিবর (৫৪), জসিম (৩৭), মনির (৪৫), মো. জামাল হোসেন (৬৬), তৌহিদুল ইসলাম রবিন (২৬) ও ইউনুস (৫০)। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ডিবির বরাত দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১ অক্টোবর ভোর সাড়ে চারটার দিকে মোহাম্মদপুরের আল্লাহ করিম বাসস্ট্যান্ডে চা খাচ্ছিলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মো. শাহজালাল। এ সময় ৩০০ টাকায় কেরানীগঞ্জের আটিবাজারে যাওয়ার কথা বলে তাঁর অটোরিকশাটি ভাড়া করেন অপরিচিত এক যাত্রী। একপর্যায়ে ওই যাত্রী কৌশলে অটোরিকশাচালকের চায়ের মধ্যে চেতনানাশক মিশিয়ে দেন।

চা খাওয়া শেষে ওই যাত্রীকে নিয়ে আটিবাজারের উদ্দেশে রওনা করার কিছুক্ষণের মধ্যে প্রচণ্ড ঘুম অনুভব করেন অটোরিকশার চালক। তখন বছিলা মেট্রো হাউজিং গেটের কাছে গাড়ি থামাতেই চালক শাহজালাল অচেতন হয়ে পড়েন। চক্রটি তাঁকে রাস্তায় ফেলে অটোরিকশা, তাঁর মুঠোফোন ও মানিব্যাগে থাকা ৩ হাজার ৫৫০ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পরে চক্রটি চালকের মুঠোফোন থেকে অটোরিকশার মালিক জয়কে ফোনে ৬০ হাজার টাকা দাবি করে। তাদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে জয় ৬০ হাজার টাকা পাঠান। এরপর একই তারিখে রাত ১০টার দিকে চক্রটি জয়কে আবার ফোন দিয়ে অটোরিকশাটি রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের সামনে রাস্তার ওপর রাখা আছে বলে জানায়। পরে জয় গিয়ে সেখান থেকে অটোরিকশাটি নিয়ে আসেন। এ ঘটনায় ৬ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় নিয়মিত মামলা হয়।

ডিবির বরাত দিয়ে আরও বলা হয়, ডিবি তেজগাঁও বিভাগের একটি দল ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর ধোলাইপাড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে করিম মিয়া, মান্নান খান, মনসুর ওরফে মোশারফ, মজিবর, জসিম ও মনিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী একই দিন বেলা পৌনে একটার দিকে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের মূল হোতা মো. জামাল হোসেন, তৌহিদুল ইসলাম ও ইউনুসকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ১ হাজার ৯০০ পিস চেতনানাশক ট্যাবলেট ও এক লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

ডিবি সূত্র আরও জানায়, এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে যাত্রীবেশে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে চালকদের চেতনানাশক ট্যাবলেট খাইয়ে অটোরিকশা ছিনতাই করে আসছে। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চালককে চেতনানাশক খাইয়ে অটোরিকশা ছিনতাই করেন তাঁরা