রাজধানীর উত্তরা এলাকায়, অর্থাৎ ঢাকা-১৮ আসনে সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক বড় বড় মিছিল করছেন বিএনপি এবং এর বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এসব মিছিলের বিশেষত্ব হলো—কোনো কেন্দ্রীয় বা প্রভাবশালী স্থানীয় নেতা মিছিলে থাকেন না। মিছিলের ব্যানার ও স্লোগানেও বিশেষ কোনো নেতার নাম উল্লেখ করা হয় না। এই মিছিল নিয়ে এলাকায় আলোচনা ও কৌতূহল তৈরি হয়েছে।

আজ শনিবার বেলা তিনটায় ঢাকা-১৮ আসনের কাওলার আমতলা থেকে একটি মিছিল বের হয়। কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থকের অংশগ্রহণে মিছিলটি কাওলা বাজার, খিলক্ষেত রেলগেট ও খিলক্ষেত বাজার হয়ে লো মেরিডিয়েন হোটেলের বিপরীতে আবুরটেকে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলের ব্যানারে লেখা ছিল—‘ঐক্য, শান্তি ও পরিবর্তনের অঙ্গীকার’। মিছিলে কোনো ব্যক্তির নামে স্লোগান দেওয়া হয়নি কিংবা প্রার্থী হতে ইচ্ছুক এমন কারও ছবিও দেখা যায়নি। শুধু বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি–সংবলিত প্ল্যাকার্ড, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা নিয়ে মিছিলে অংশ নেন নেতা–কর্মীরা। মিছিলের ব্যানারে লেখা ছিল ‘Change yourself to change Bangladesh’।

এই মিছিলে ছিলেন ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি মেহেদি হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারেক রহমান পরিবর্তনের যে ডাক দিয়েছেন, আমরা সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে মাঠে আছি। আমরা গতানুগতিক রাজনীতির বদলে পরিবর্তনের রাজনীতি চাই।’

স্থানীয় বিএনপির একটি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় ১৩টি মিছিল হয়েছে। এসব মিছিলের নেপথ্যে রয়েছেন বাহাউদ্দিন সাদি নামের একজন নেতা। তিনি বিএনপির কোনো পদে নেই, তবে শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে পরিচিত। তাঁর সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বের যোগাযোগ আছে বলে আলোচনা আছে। অনেকের ধারণা, সাদি ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি মিছিলের শেষভাগে সব সময় থাকেন। তবে বাহাউদ্দিন সাদি প্রথম আলোকে বলেছেন, তিনি সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করবেন না। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীও নন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইতিমধ্যে ২৩৭টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। যেসব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি, সেগুলোর মধ্যে ঢাকা–১৮ আসনটি রয়েছে।

তাহলে এসব মিছিলের লক্ষ্য কী? এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য জানা যায়নি। তবে বিএনপির স্থানীয় অঙ্গসংগঠনগুলোর একাধিক নেতা বলেছেন, বড় কোনো নেতা ছাড়াই উত্তরার এই মিছিলগুলোর বিশেষ বার্তা হচ্ছে, মহানগর উত্তর বিএনপিতে বর্তমানে কয়েকজন নেতাকে ঘিরে ‘গোষ্ঠী’ তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের চাওয়া তুলে ধরতেই নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে এই ধারাবাহিক মিছিল আয়োজন করছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এসব ম ছ ল র ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

‘শিল্পবোধ ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ ঘটেছিল আনিস চৌধুরীর লেখায়’

‘খেয়াল খেলা কাজ’, ‘পড়বার নিয়ম’ অথবা ‘পাশের কামরার লোকটি’ এসব শিরোনামের লেখা প্রকাশিত হয়েছিল চল্লিশের দশকে। আজাদ, মুকুলের মহফিল, ইত্তেহাদ বা অগত্যা পত্রিকায় প্রকাশিত পাঠক সমাদৃত এসব বিষয়ের লেখক প্রয়াত আনিস চৌধুরী। সেসব লেখা একসঙ্গে করে প্রকাশিত হয়েছে ‘আনিস চৌধুরী হয়ে ওঠার লেখাজোখা’ বইটি। তাঁর লেখায় ধরা আছে সময় পরিক্রমার ইতিহাস। বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উঠে এল এসব কথা। শনিবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির বেঙ্গল ফাউন্ডেশনে আয়োজিত হয় মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানটি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লেখক ও শিল্পসমালোচক হাসনাত আবদুল হাই। তিনি বলেন, ‘আনিস চৌধুরী আমাদের সাহিত্যিকদের পূর্বসূরি। একসময় উপন্যাস বের হওয়া ছিল আলোড়ন তোলা। তখনই তিনি আমাদের কাছে জনপ্রিয় লেখক ছিলেন।’ হাসনাত আবদুল হাই আরও বলেন, আনিস চৌধুরীর লেখায় শিল্পবোধ ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ ছিল। ডকুমেন্টেশনের ক্ষেত্রে এ বই এক দৃষ্টান্তমূলক প্রকাশনা।

কথাসাহিত্যিক পিয়াস মজিদ আনিস চৌধুরীর বইয়ের বিভিন্ন অংশ থেকে পাঠ ও আলোচনা করেন। তিনি রমনীয়তা ও রম্যতার বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরেন। আনিস চৌধুরীর কবিতা নিয়ে কম আলোচনা থাকলেও তিনি যথেষ্ট সিরিয়াস কবি ছিলেন বলে উল্লেখ করেন এই আলোচক।

প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক আলম খোরশেদ বলেন, পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে যে মানুষেরা সাহিত্য দিয়ে সমাজ নির্মাণ করে দেশকে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন, আনিস চৌধুরী তাঁদেরই একজন। তাঁরা স্বাধীন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য সম্মিলিত লড়াই করেছেন। আনিস চৌধুরীর লেখার প্রসঙ্গ ধরে আলম খোরশেদ স্মরণ করেন সদ্য প্রয়াত ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে।

আলোচনা পর্ব শেষে মোড়ক উন্মোচন হয় ‘আনিস চৌধুরী হয়ে ওঠার লেখাজোখা’ বইটির। পুরো আয়োজনের সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। প্রয়াত আনিস চৌধুরী তাঁর বাবা।

আনিস চৌধুরী প্রয়াত হয়েছেন ১৯৯০ সালে। নাট্যকার, গল্পকার, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক এবং কবি আনিস চৌধুরী রেডিও, টেলিভিশনে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন।

১৯২৯ সালে জন্মগ্রহণকারী আনিস চৌধুরী নিজের সময়কালের টুকরো টুকরো ইতিহাস ধরে রেখেছিলেন সে সময়কার বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ও সাময়িকীতে নিজের লেখা দিয়ে। সেসব লেখাই তিনি সংরক্ষণ করতেন সযত্নে। সেই সব লেখা নিয়েই ‘আনিস চৌধুরী হয়ে ওঠার লেখাজোখা’ নামক গ্রন্থটি। বইটি প্রকাশ করেছে বেঙ্গল পাবলিকেশনস।

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু, প্রয়াত ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সহধর্মিণী সিদ্দিকা জামান, শিল্পী ঢালী আল মামুন, সাংবাদিক নাসিমুন আরা হক, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফসহ আরও অনেক বিশিষ্টজন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ