‘খেয়াল খেলা কাজ’, ‘পড়বার নিয়ম’ অথবা ‘পাশের কামরার লোকটি’ এসব শিরোনামের লেখা প্রকাশিত হয়েছিল চল্লিশের দশকে। আজাদ, মুকুলের মহফিল, ইত্তেহাদ বা অগত্যা পত্রিকায় প্রকাশিত পাঠক সমাদৃত এসব বিষয়ের লেখক প্রয়াত আনিস চৌধুরী। সেসব লেখা একসঙ্গে করে প্রকাশিত হয়েছে ‘আনিস চৌধুরী হয়ে ওঠার লেখাজোখা’ বইটি। তাঁর লেখায় ধরা আছে সময় পরিক্রমার ইতিহাস। বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উঠে এল এসব কথা। শনিবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির বেঙ্গল ফাউন্ডেশনে আয়োজিত হয় মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানটি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লেখক ও শিল্পসমালোচক হাসনাত আবদুল হাই। তিনি বলেন, ‘আনিস চৌধুরী আমাদের সাহিত্যিকদের পূর্বসূরি। একসময় উপন্যাস বের হওয়া ছিল আলোড়ন তোলা। তখনই তিনি আমাদের কাছে জনপ্রিয় লেখক ছিলেন।’ হাসনাত আবদুল হাই আরও বলেন, আনিস চৌধুরীর লেখায় শিল্পবোধ ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ ছিল। ডকুমেন্টেশনের ক্ষেত্রে এ বই এক দৃষ্টান্তমূলক প্রকাশনা।

কথাসাহিত্যিক পিয়াস মজিদ আনিস চৌধুরীর বইয়ের বিভিন্ন অংশ থেকে পাঠ ও আলোচনা করেন। তিনি রমনীয়তা ও রম্যতার বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরেন। আনিস চৌধুরীর কবিতা নিয়ে কম আলোচনা থাকলেও তিনি যথেষ্ট সিরিয়াস কবি ছিলেন বলে উল্লেখ করেন এই আলোচক।

প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক আলম খোরশেদ বলেন, পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে যে মানুষেরা সাহিত্য দিয়ে সমাজ নির্মাণ করে দেশকে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন, আনিস চৌধুরী তাঁদেরই একজন। তাঁরা স্বাধীন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য সম্মিলিত লড়াই করেছেন। আনিস চৌধুরীর লেখার প্রসঙ্গ ধরে আলম খোরশেদ স্মরণ করেন সদ্য প্রয়াত ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে।

আলোচনা পর্ব শেষে মোড়ক উন্মোচন হয় ‘আনিস চৌধুরী হয়ে ওঠার লেখাজোখা’ বইটির। পুরো আয়োজনের সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। প্রয়াত আনিস চৌধুরী তাঁর বাবা।

আনিস চৌধুরী প্রয়াত হয়েছেন ১৯৯০ সালে। নাট্যকার, গল্পকার, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক এবং কবি আনিস চৌধুরী রেডিও, টেলিভিশনে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন।

১৯২৯ সালে জন্মগ্রহণকারী আনিস চৌধুরী নিজের সময়কালের টুকরো টুকরো ইতিহাস ধরে রেখেছিলেন সে সময়কার বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ও সাময়িকীতে নিজের লেখা দিয়ে। সেসব লেখাই তিনি সংরক্ষণ করতেন সযত্নে। সেই সব লেখা নিয়েই ‘আনিস চৌধুরী হয়ে ওঠার লেখাজোখা’ নামক গ্রন্থটি। বইটি প্রকাশ করেছে বেঙ্গল পাবলিকেশনস।

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু, প্রয়াত ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সহধর্মিণী সিদ্দিকা জামান, শিল্পী ঢালী আল মামুন, সাংবাদিক নাসিমুন আরা হক, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফসহ আরও অনেক বিশিষ্টজন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন প রক শ ব ঙ গল

এছাড়াও পড়ুন:

বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে শিশু–কিশোরদের মানসিক সুস্থতা জরুরি কেন

শিশু–কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যে আমরা আদতে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছি? এই প্রশ্নের উত্তরের আগে আরেকটি প্রশ্ন ছুড়ে দিই। মানসিক স্বাস্থ্য মানে কী? অধিকাংশই বলবেন, ‘মানসিক রোগ না থাকা।’ কিন্তু এটি আরও অনেক বড় বিষয়। এটি ব্যক্তির আবেগীয়, মানসিক ও সামাজিকভাবে ভালো থাকা বোঝায়, যা প্রভাবিত করে তার চিন্তা, অনুভূতি ও আচরণকে। অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক, চাপ মোকাবিলার দক্ষতা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও এর সঙ্গে সম্পর্কিত।

শৈশবের পরের ধাপটাই কৈশোরকাল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বয়ঃসন্ধিকাল ১০ বছর বয়স থেকে শুরু করে ১৯ বছর পর্যন্ত চলে। সময়টা অফুরান প্রাণশক্তি, উদ্দাম আবেগ আর সীমাহীন সম্ভাবনার। সবকিছুতে কৌতূহল, শরীরে নতুন অনুভূতির রোমাঞ্চ, স্বাধীনচেতা মনোভাব অথবা বিদ্যমান নিয়মরীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা—এ রকম আরও অনেক বৈশিষ্ট্য কৈশোরকালকে করে তোলে অনন্য।

‘আমি কে, কী চাই, কীভাবে দেখব আমার জীবন’—আত্মপরিচয়ের এই অনুসন্ধানের পথ ধরেই কৈশোরের চারিত্রিক বিকাশ ঘটতে থাকে। মস্তিষ্কের দ্রুত স্নায়বিক বিকাশ ও হরমোনের প্রভাবে শরীরের যেমন পরিবর্তন হয়, তেমনই মন দ্রুত বদলায়। এ বিকাশ নির্ভর করে তার জিনগত বৈশিষ্ট্য, পারিবারিক পরিবেশ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও চারপাশের ওপর।

আরও পড়ুনমন ও মস্তিষ্কের ১২টি গোপন সত্য, আপনি কয়টা মানেন?০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫সাফল্য ও ঝুঁকির দ্বন্দ্ব

শিশু–কিশোরের সাফল্য অনেকাংশেই নির্ভর করে মানসিক সুস্থতার ওপর। আবার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের চিন্তাপদ্ধতি, আবেগীয় রূপ ও সামাজিক ভূমিকা অনেকাংশেই নির্ধারিত হয় শৈশব ও কৈশোরকালীন মনের যত্নের ভিত্তিতে। আবেগের প্রবলতা, অনুসন্ধিৎসু মন, নিজেকে প্রকাশের চেষ্টা এ সময়কে যেমন বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করে, তেমনই অপরিপক্বতা ও ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা এই সময়কে করে তোলে নাজুক।

সারা বিশ্বে বর্তমান প্রজন্ম বেড়ে উঠছে এক পরিবর্তনশীল ও অস্থির সময়ের সন্ধিক্ষণে। ভোগবাদী ব্যবস্থা নির্ধারণ করছে দৈনন্দিন জীবনযাপন, ইচ্ছা-অনিচ্ছা ও সম্পর্ক। শক্তি আর প্রতিযোগিতার খেলায় সবাই জয়ী হতে চাইছে। আমদের ভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাপদ্ধতি, এমনকি অনুভূতিও নিয়ন্ত্রণ করছে মুঠোফোন বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

শিশুরা বাস্তব জগতের বদলে মোহাচ্ছন্ন হয়ে বেড়ে উঠছে ভার্চ্যুয়াল জগতের অবাস্তব স্বপ্নমায়ায়। ছোটবেলা থেকেই পরিচিত হচ্ছে সাইবার ক্রাইম, সহিংস ভিডিও গেম, মাদকাসক্তি ও আত্মহত্যার মতো বিপজ্জনক বিষয়গুলোর সঙ্গে।

বর্তমান সময় শিশু–কিশোরদের মানসিক বিকাশে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে প্রযুক্তি ও সমাজ। জীবনকে সহজ করার নামে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইকে মানুষের জায়গায় প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। এতে মানুষ থেকে দ্রুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে মানুষ। শিশু–কিশোরেরা বন্ধুদের সময় দেওয়ার বদলে সময় কাটাচ্ছে এআই বা অনলাইন গেমে। এতে সামাজিক মেলামেশা ও খেলাধুলা থেকে যে আবেগীয় গঠন ও জীবনদক্ষতা তৈরি হওয়ার কথা, তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিচ্ছিন্নতা ও আত্মকেন্দ্রিকতায়। মানসিক রোগের ঝুঁকি উঠতি বয়সে সব সময় বেশি হলেও বর্তমান যুগের এসব উপাদান বাড়তি ঝুঁকি যোগ করছে।

বর্তমান সময় শিশু–কিশোরদের মানসিক বিকাশে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে প্রযুক্তি ও সমাজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে শিশু–কিশোরদের মানসিক সুস্থতা জরুরি কেন