এলডিসি উত্তরণের স্বাধীন মূল্যায়নে আসছে জাতিসংঘ মিশন
Published: 9th, November 2025 GMT
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের প্রস্তুতির খবর জানতে ঢাকায় আসছে জাতিসংঘের একটি মিশন। জাতিসংঘের এলডিসি–বিষয়ক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রোনাল্ড মোলেরুসের নেতৃত্বাধীন এ মিশনের ১০ থেকে ১৩ নভেম্বর সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।
বৈঠক শেষে জাতিসংঘের মিশনটি এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের বিষয়ে একটি স্বাধীন মূল্যায়ন করবে। বাংলাদেশের সামস্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রভাব বিশ্লেষণ এবং মসৃণ উত্তরণ কৌশল বাস্তবায়ন—এ তিন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে এই মূল্যায়ন করা হবে। সফরকালে অংশীজনদের কাছ থেকেও নানা তথ্য সংগ্রহ করবে এ মিশন।
এই সফরের বিষয়ে জানিয়ে ২ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো.
জাতিসংঘের ক্ষুদ্রতম উন্নয়নশীল দেশ, স্থল ভূমিকেন্দ্রিক উন্নয়নশীল দেশ এবং ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য উচ্চ প্রতিনিধির একটি কার্যালয় রয়েছে। জাতিসংঘ ব্যবস্থার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে সহায়তা দেওয়া এ কার্যালয়ের কাজ। কার্যালয়টি ‘ইউএন-ওএইচআরএলএলএস’ নামে পরিচিত, যার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রোনাল্ড মোলেরুস।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী আট মাস ধরেই বলে আসছেন, ২০২৬ সালের মধ্যেই বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ হবে। গত সেপ্টেম্বরে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘এলডিসি থেকে উত্তরণ ও বাংলাদেশের প্রস্তুতি’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ পেছানোর আবেদন অন্তর্বর্তী সরকার করবে না। আগামী নির্বাচিত সরকার চাইলে এ আবেদন করতে পারে।
বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা জানতে জাতিসংঘের মিশনটি আসছে। আমরা বলছি না, উত্তরণ পিছিয়ে যাক। আবার এ–ও বলছি না, উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়া ভালো হবে। বিষয়টা জাতিসংঘের ওপরই নির্ভর করছেমাহবুবুর রহমান, বাণিজ্যসচিবসরকারের দিক থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এলডিসি থেকে উত্তরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে দেশের শীর্ষস্থানীয় সব ব্যবসায়ী সংগঠন এলডিসি উত্তরণ ৩ থেকে ৫ বছর পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। এ জন্য সরকারকে জাতিসংঘে আবেদনেরও পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তবে সরকার উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরীর গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘উত্তরণ পিছিয়ে দিতে হলে ৯৭ শতাংশ ভোট পেতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রেরই তো এলডিসির প্রতি ইতিবাচক মনোভাব নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) ২৭ দেশের একটাও যদি বিরোধিতা করে, তা সবার বিরোধিতা হিসেবে গণ্য হবে। আমার মনে হয়, পেছানোর কথা না বলে কীভাবে সবাই মিলে সম্ভাব্য সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে পারি, সেই চিন্তা করা উচিত।’
এদিকে এলডিসি উত্তরণ প্রক্রিয়া ও প্রস্তুতির মূল্যায়ন প্রক্রিয়াকে ফলপ্রসূ করতে সরকারের কাছে বেশ কিছু তথ্য–উপাত্ত চেয়ে চিঠি দিয়েছে জাতিসংঘ। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাগুলোর কাছ থেকে মতামত ও নথিপত্র সংগ্রহ করে সেগুলো আজ রোববারের মধ্যে দুটি ই–মেইল ঠিকানায় পাঠানোর কথা উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানালে ঢাকায় বৈঠকগুলো সফলভাবে শেষ করা যাবে এবং চূড়ান্ত প্রস্তুতি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রণয়নও সহজ হবে।
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও হাই রিপ্রেজেনটেটিভ এবং পঞ্চম এলডিসি সম্মেলনের সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমার কাছে ইআরডি সচিব গত ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর স্বাধীন পর্যালোচনা করতে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। ইআরডি সচিবকে সেই চিঠির কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় ২ নভেম্বরের জাতিসংঘের চিঠিতে।
এদিকে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, আইসিসি বাংলাদেশসহ ১৬ ব্যবসায়ী সংগঠন গত ২৪ আগস্ট একযোগে সংবাদ সম্মেলন করে এলডিসি থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার দাবি করে। জাতিসংঘকে ব্যবসায়ীদের এ দাবির কথাও জানিয়েছে সরকার।
জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা জানতে জাতিসংঘের মিশনটি আসছে। আমরা বলছি না, উত্তরণ পিছিয়ে যাক। আবার এ–ও বলছি না, উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়া ভালো হবে। বিষয়টা জাতিসংঘের ওপরই নির্ভর করছে। তবে এর আগে ভুটানের উত্তরণ জাতিসংঘ নিজেই পিছিয়ে দিয়েছিল।’ ১২ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিশনটির বৈঠক রয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশের প্রস্তুতির ঘাটতি আছে বলেই আমরা উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার দাবি করছি। সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের দিক থেকেও প্রস্তুতির ঘাটতি আছে। আমাদের উৎপাদনশীলতা কমমো.ফজলুল হক, সাবেক সভাপতি, বিকেএমইএজাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অনুমোদন পেলে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এলডিসি শ্রেণি থেকে বেরিয়ে যাবে। এর আগে ২০১৮ সালে মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা—এই তিন সূচকে উত্তীর্ণ হয়ে জাতিসংঘের মানদণ্ডে এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। এরপর ২০২১ সালে আরেকবার পর্যালোচনা করা হয়। ২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ করে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)।
উত্তরণ–পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতির অভাবের কথা বলে এলডিসি থেকে উত্তরণ পেছানোর কথা বলে আসছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ, এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত বাণিজ্যসুবিধা হারাবে। এতে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রস্তুতির ঘাটতি আছে বলেই আমরা উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার দাবি করছি। সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের দিক থেকেও প্রস্তুতির ঘাটতি আছে। আমাদের উৎপাদনশীলতা কম। আমরা এলডিসি থেকে এমন একটা ভিআইপি গ্রুপে উঠতে যাচ্ছি, যে গ্রুপের অন্য সদস্যরা ৩ শতাংশ ব্যাংক সুদে ব্যবসা করে, আর আমরা করি ১৫ শতাংশ সুদে। অন্যরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ পায় আর আমাদের গ্যাস–বিদ্যুৎ খালি যায় আর আসে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল দ শ র প রস ত ত র প রস ত ত র ব যবস য় দ র সরক র র এলড স ম শনট
এছাড়াও পড়ুন:
‘সম্পর্ক দু’মিনিটে তৈরি হওয়া নুডলস নয়’
ভারতীয় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক। তার একমাত্র কন্যা কোয়েল মল্লিকও টলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় মুখ। ব্যক্তিগত জীবনে প্রযোজক নিসপাল সিং রানের সঙ্গে ঘর বেঁধেছেন তিনি। তাদের সংসারে একটি পুত্র ও একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। পারিবারিক আয়োজনে বিয়ে করলেও ভালোবেসে সংসার বাঁধার সিদ্ধান্ত নেন এই যুগল।
শোবিজ অঙ্গনের তারকারা প্রেম জীবন নিয়ে প্রায়ই খবরের শিরোনাম হন। তবে কোয়েল মল্লিকের ব্যাপারে ঠিক তেমনটা বলা যায় না। ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এই অভিনেত্রী। এ আলাপচারিতায় নতুন প্রজন্মকে ‘ডেটিং টিপস’ দিয়েছেন কোয়েল।
আরো পড়ুন:
হাসপাতালে জিতু কমল
জুবিনের মৃত্যু নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিস্ফোরক মন্তব্য
কোয়েল মল্লিক বলেন, “সম্পর্ক দু’মিনিটে তৈরি হওয়া নুডলস নয়। এরকম নয় যে, প্রতিটা সময়, প্রতিটা মুহূর্ত খুব সুন্দর হবে, খুব খুশির হবে বা হ্যাপেনিং হবে। একটা সম্পর্ক মানে একটা কথা দেওয়া, কমিটমেন্ট। সেই কমিটমেন্টের মধ্যে একটা পবিত্রতা থাকে, একটা লয়ালটি থাকে।”
উদাহরণ টেনে কোয়েল মল্লিক বলেন, “তাই জামা-কাপড় বদলানোর মতো এটা ভালো লাগছে না, তো ওটা। লাল জামাটা অনেক দিন পরা হয়েছে আর ভালো লাগছে না, তো নীল জামাটা পরি, সম্পর্ক বিষয়টা কিন্তু সে রকম নয়। আমি হয়তো একটু পুরোনোপন্থি। কিন্তু আমি এভাবেই ভালোবাসতে ভালোবাসি।”
কোয়েল মল্লিকের এসব বক্তব্য ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যল মিডিয়ায়। তারি ভাবনাকে সমর্থন জানিয়ে অনেকে মন্তব্য করেছেন। একজন লিখেছেন, “একদম সঠিক কথা।” অন্যজন লেখেন, “তুমি ওভাবে ভালোবাসতে ভালোবাসো, আর তাই আমরা তোমাকে সব সময় ভালোবাসি।” আরেক ভক্ত লেখেন, “অনেক কারণেই তুমি টলি-কুইন।”
২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রযোজক নিসপাল সিংয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন কোয়েল মল্লিক। ২০২০ সালের ৫ মে অর্থাৎ বিয়ের সাত বছর পর এ দম্পতির সংসার আলো করে আসে পুত্র কবীর। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর কন্যাসন্তানের মা হন এই অভিনেত্রী।
ঢাকা/শান্ত