সৌদি আরবের স্থপতি ও প্রকৌশলীরা ‘দ্য লাইন’ নামে তাঁদের ভবিষ্যতের নগর গড়ে তোলার পরিকল্পনায় ব্যাপক কাটছাঁট করছেন। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের (এফটি) নতুন এক অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
 
প্রস্তাবিত ১৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ নগরটি লোহিত সাগরের উপকূলে তৈরি হওয়ার কথা রয়েছে। এটি সৌদি আরবের মেগা প্রকল্প নিওমের প্রধান অংশ।

এফটি–সংশ্লিষ্ট ২০ জনের বেশি মানুষের সঙ্গে কথা বলে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা সৌদি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের উচ্চাভিলাষী এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। কারণ, তাঁর পরিকল্পনাগুলো বাস্তবসম্মত নয় এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল। অনেক দিক থেকেই এগুলো সমালোচনা ও আপত্তির মুখে পড়েছে।

একজন পরিকল্পনাকারী ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, মোহাম্মদ বিন সালমান জোর দিয়ে বলেছিলেন, দ্য লাইনের উচ্চতা অবশ্যই ৫০০ মিটার এবং প্রস্থ ২০০ মিটার হতে হবে। যদিও বিশেষজ্ঞরা তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, ১০০ মিটার উঁচু কাঠামোই সবচেয়ে বাস্তবসম্মত হবে।

ওই পরিকল্পনাকারী আরও বলেন, প্রকল্পের একদম শুরুর দিকে কেউ একজন যুবরাজকে বলেছিলেন, তিনি চাইলে মাত্র ২০ মিনিটে বিমানবন্দর থেকে উপকূলে পৌঁছাতে পারেন—এমন একটি দ্রুতগতির রেল স্থাপন করা যেতে যাবে। যুবরাজ সঙ্গে সঙ্গে তাতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন।

প্রকল্পের প্রথম দিকে ২০টি মডিউল তৈরির কথা ছিল। কিন্তু ২০২৩ সাল নাগাদ তা কমিয়ে তিনটিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। একজন জ্যেষ্ঠ নির্মাণ ব্যবস্থাপক এই প্রকল্পকে ‘বিনিয়োগযোগ্য নয়’ বলে উল্লেখ করেছেন। প্রকল্পে ইতিমধ্যে কমপক্ষে ৫ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে। নির্মাণকাজ চলছে তিন বছর ধরে।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে নিওমের কর্মচারীরা বলেছেন, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান প্রকল্পের ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং অবাস্তব সময়সীমা নিয়ে কোনো উদ্বেগকে গুরুত্ব দেননি। মূল পরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে ১৬ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। ২০২৫ সালেই প্রথম ধাপের বাসিন্দারা নগরে প্রবেশ করার কথা ছিল।

একজন পরিকল্পনাকারী এফটিকে বলেন, যুবরাজের জন্য আয়োজিত নগরীর নকশা প্রদর্শনীগুলোতে ‘ভয়ের’ পরিবেশ বিরাজ করত। তিনি যা বলতেন, সবাই চোখ বন্ধ করে তা–ই করতেন।

শুরু থেকেই বিতর্ক

পরিবেশ ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাবের কারণে বিতর্কের মুখে পড়েছে এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা। প্রকল্প নির্মাণের জন্য গ্রামের পর গ্রাম উচ্ছেদ করার খবরও পাওয়া গেছে।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের অনুসন্ধানে এমন অন্তত দুটি গ্রামের নাম উঠে এসেছে। এগুলো হলো কায়াল ও আল-খুরাইবা।

২০২৩ সালে মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানায়, গ্রাম থেকে মানুষকে জোরপূর্বক উচ্ছেদের প্রতিবাদ করায় হুয়াইতাত গোত্রের প্রায় ৫০ সদস্যকে আটক করা হয়। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনকে পরে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

গত বছর সাবেক এক সৌদি গোয়েন্দা কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দমন করতে নিরাপত্তা বাহিনীকে সৌদি সরকার ‘হত্যার আদেশ’ দিয়েছিল।

এই সময় আল-মুসাওয়ারা অঞ্চলে কয়েকজন সাধারণ নাগরিক নিহত হন, যার মধ্যে তিন বছর বয়সী একটি শিশুও ছিল।

আরও পড়ুনসৌদি আরবের স্বপ্নের ‘নিওম’ মেগা প্রকল্পে কি তাহলে কাটছাঁট হচ্ছে১৭ জুলাই ২০২৫

মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এই প্রকল্পে নির্মম কর্মপরিবেশ এবং শ্রমিকদের শোষণের অভিযোগ তুলেছে। গত বছর একটি নির্মাণকেন্দ্রে গার্ডরেল ধসে পাকিস্তানি প্রকৌশলী আবদুল ওয়ালি ইস্কান্দার খান মারা যান।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সৌদি কর্তৃপক্ষ এবং নিওমের নেতৃত্ব এ ঘটনার যথাযথ তদন্ত করেননি এবং ওই প্রকৌশলীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণও দেননি। এর আগে প্রকল্পের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ, নারীবিদ্বেষ এবং দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ উঠেছিল।

গত সপ্তাহে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরব তাদের ৯২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের বিনিয়োগ কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। এক দশক ধরে দেশটির উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বিশাল রিয়েল এস্টেট গিগা প্রকল্প। এবার সেই দিক থেকে সরে এসে সৌদি সরকার এই তহবিলের বিনিয়োগকে আরও বিস্তৃত ও টেকসই খাতে পুনর্গঠন করতে চাইছে।

আরও পড়ুনপরিবর্তন হচ্ছে মোহাম্মদ বিন সালমানের সৌদি আরবের১২ মে ২০২৪

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিওমের মতো মেগা প্রকল্পগুলো ক্রমবর্ধমান বিলম্ব এবং চ্যালেঞ্জের কারণে অগ্রাধিকার হারাচ্ছে। এমন অবস্থায় লজিস্টিকস, খনিজ সম্পদ, ধর্মীয় পর্যটন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডেটা সেন্টার নির্মাণসহ বিদ্যমান অর্থনৈতিক খাতে মনোযোগ বাড়ছে।

গত জুলাই মাসে জানা যায়, নিওম এক হাজার কর্মী ছাঁটাই করার কথা ভাবছে, যা মোট কর্মীর প্রায় ২০ শতাংশ। এটিও ইঙ্গিত দিচ্ছে যে সৌদি আরব দ্য লাইন ও নিওম প্রকল্পে কাটছাঁট করছে।

আরও পড়ুনসাড়ে ৯২ হাজার কোটি ডলার তহবিলের বিনিয়োগ পরিকল্পনায় কেন বড় পরিবর্তন আনছে সৌদি আরব৩০ অক্টোবর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প র য বর জ আরব র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রসূনের কাছে পরীমণির দুঃখ প্রকাশ

জন্মদিন উপলক্ষে টানা উৎসবের মেজাজে রয়েছেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমণি। মালয়েশিয়া সফর শেষে ঢাকায় ফিরেই রাজধানীর পল্লবীতে সাংবাদিক ও সহকর্মীদের জন্য পার্টির আয়োজন করেন পরীমণি। দাওয়াত পেয়ে পার্টিতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন বলে জানান লাক্স তারকা অভিনেত্রী প্রসূন আজাদ। 

গতকাল থেকে বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় জোর চর্চা চললেও নীরব ছিলেন পরীমণি। অবশেষে নীরবতা ভাঙলেন আলোচিত এই নায়িকা। শুক্রবার (৭ নভেম্বর) রাতে তার ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন পরীমণি। 

আরো পড়ুন:

পরীমণির পার্টিতে গিয়ে প্রসূনের ‘তিক্ত’ অভিজ্ঞতা

প্রশ্ন করবেন না, সব বলে দেব: পরীমণি

লেখার শুরুতে পরীমণি বলেন, “প্রিয় প্রসূন আজাদ, আপনি আমাকে নিয়ে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন যে, ‘আমি আমার লোক দেখানো পার্টিতে আপনাকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসে অপমান করেছি!’ আপনি এ-ও বলেছেন, ‘আমি আমার নাম রৌশন করতে টাকা দিয়ে কতগুলো সান্ডা সান্ডা পান্ডা লোক রাখি, তারা অনুষ্ঠানে আসা গেস্টদের জিজ্ঞেস করেন যে, তারা কারা!’ 

প্রসূনের কাছে প্রশ্ন রেখে পরীমণি বলেন, “আচ্ছা আপু, সত্যিই কি তোমার মনে হয় আমি তোমাকে ছোট ফিল করানোর জন্য তোমাকে আমার একটা স্পেশাল ইভেন্টে ইনভাইট করব? কখনোই না বোন। তুমি নিজেও জানো আমি তোমাকে কতখানি পছন্দ করি। আমাদের কখনো দেখা হয়নি। তোমার একটা টিভি ইন্টারভিউ দেখে মুগ্ধ হয়ে আমি সাংবাদিক ইমু ভাইয়ের কাছ থেকে তোমার ফোন নাম্বার নিয়ে তোমাকে কল করেছিলাম। সেদিন কত কথা হলো আমাদের! তোমার মনে আছে, আমি তোমাকে প্রথম কী বলেছিলাম!” 

“বলেছিলাম, তুমি একজন পিওর সোল। সত্যিকারের একজন খাঁটি মানুষ তুমি। তোমার বাচ্চাদের নিয়ে তোমার এই জার্নি সত্যিই আমাকে মুগ্ধ করে। তুমি একটা ইন্সপারেশন। তোমার খারাপ লেগেছে তুমি আমাকে একটা টেক্সট তো করতে পারতা আপু!” বলেন পরীমণি।

অনুষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মীদের ব্যাপারে পরীমণি বলেন, “যাইহোক, আমার ওই অনুষ্ঠানে আমার হায়ার করা কোনো মানুষ ছিল না; যারা ছিলেন তারা ওই প্রতিষ্ঠানের ম‍্যানেজমেন্ট থেকে ছিলেন। তারা কাউকে অপমান বা অসম্মান করার জন্য অ‍্যাপয়েন ছিলেন না। তারা আমি এবং আমার সমস্ত গেস্টদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতেই গেটে ছিলেন। ভাবুন তো, ওনারা গেটে এই সিকিউরিটি না দিলে ওই জায়গায় কী জনসাধারণের ভীড় ঠেকানো যেত? না কি এত সুন্দর শৃঙ্খল পরিবেশে পুরো অনুষ্ঠানটা শেষ করতে পারতাম! তারা কেবল তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন।”

দুঃখ প্রকাশ করে পরীমণি বলেন, “আপনি নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন, যারা ওই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তারা সবাই নিজ নিজ অবস্থানে কত বড় মানুষ। তারা কিন্তু কেউ ছোট ফিল করেননি। আপনি জানেন না হয়তো তাহলে, এই দেশের প্রচুর মানুষ এখনো আমার নাম জিজ্ঞেস করেন। এই তো সেদিন সিজেএফবির অনুষ্ঠানে আমাকে ইউরোর চেয়ারম্যান বললেন কি নাম তোমার? আমি তাতে মোটেও অবাক হইনি। বরং আমার ভালো লাগে আমার নাম বলতে। আমি পরীমণি। আমি খুবই দুঃখিত আপনার কাছে।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মসজিদে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় আটক ১
  • ‘মেরিনার কাজে প্রকৃত শিল্পীর অভিব্যক্তি দেখা যায়’
  • ভারতের নির্বাচনে ব্রাজিলের মডেল কীভাবে ‘২২ বার ভোট’ দিলেন
  • জাহানারার পাশে বাংলাদেশ, কিন্তু…
  • গাজীপুরের সাফারি পার্ক থেকে লেমুর চুরির ঘটনায় একজন গ্রেপ্তার
  • বিবাহে ‘মোহরে ফাতেমি‘ কী?
  • আলব্যের কামুর দর্শন, চরিত্র ও পাঠক
  • প্রসূনের কাছে পরীমণির দুঃখ প্রকাশ
  • স্বাধীনতা থেকে শর্তমালা: রিকশাচালকদের জন্য সাতটি নতুন শর্ত