কক্সবাজারে ১০ বছর আগে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৪২ মেগাওয়াট। আর এখন ১৫০ মেগাওয়াট। দিন দিন জীবাশ্ম জ্বালানির চাহিদা বাড়লেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তি উৎপাদনে তেমন অগ্রগতি নেই। অতীতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও সম্ভাব্যতা যাচাই না করে প্রকল্প গ্রহণ, অনিয়ম-দুর্নীতি ও তদারকির অভাবে প্রকল্পগুলো মুখ থুবড়ে পড়ছে। কুতুবদিয়ার দুটি বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প কয়েক বছর ধরে অচল পড়ে আছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বাড়ানো দরকার। কারণ, এটি পরিবেশদূষণ ও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমায়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাস করে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমায়।

সরকার ২০২৫ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা তৈরি করে, তাতে ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

কুতুবদিয়ার বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পটি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। প্রকল্পটি কেন বিফল হলো, তার কোনো তদন্ত বা গবেষণা হয়নি। পর্যটন শহর হিসেবে কক্সবাজারে নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তির উৎপাদন বাড়াতে গেলে একটা রোডম্যাপ দরকার।—আবু মোর্শেদ চৌধুরী, সভাপতি, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ

এ ক্ষেত্রে কক্সবাজারে তেমন অগ্রগতি নেই জানিয়ে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কক্সবাজারে সমুদ্র উপকূলে বায়ু, পানি ও সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তির উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। কুতুবদিয়ার বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পটি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। প্রকল্পটি কেন বিফল হলো, তার কোনো তদন্ত বা গবেষণা হয়নি। পর্যটন শহর হিসেবে কক্সবাজারে নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তির উৎপাদন বাড়াতে গেলে একটা রোডম্যাপ দরকার।

বর্তমান প্রকল্পগুলোর যে অবস্থা

২০০৭ সালে কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইলের সমুদ্র উপকূলে দেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করা হয়। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে সেটি বিলীন হলে ২০১৬ সালে কাছাকাছি আরেকটি বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। দুই প্রকল্পে ব্যয় করা হয় ৩৮ কোটি টাকা। কেন্দ্র দুটি কয়েক বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের কুতুবদিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, প্রকল্প দুটি জনগণের কোনো কাজে আসেনি। প্রকল্প কেন বন্ধ হলো, তা নিয়ে কোনো তদন্ত বা অনুসন্ধান হয়নি।

২০১৮ সালে টেকনাফে হ্নীলা ইউনিয়নের আলীখালীতে ১১৬ একর জায়গায় নির্মাণ করা হয় একটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র। বলা হয়েছিল, এই কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিয়ে টেকনাফের ৮০ শতাংশ গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করা হবে। ২০২৩ সালে কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল-ভারুয়াখালী এলাকায় ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরেকটি বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়।

২০১৮ সালে টেকনাফে হ্নীলা ইউনিয়নের আলীখালীতে ১১৬ একর জায়গায় নির্মাণ করা হয় একটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র। বলা হয়েছিল, এই কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিয়ে টেকনাফের ৮০ শতাংশ গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করা হবে। ২০২৩ সালে কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল-ভারুয়াখালী এলাকায় ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরেকটি বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, এসব কেন্দ্রের উৎপাদন বাতাসের ওপর নির্ভর করে। বাতাস বেশি থাকলে উৎপাদন বাড়ে। কম থাকলে কমে যায়।

খুরুশকুল বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং টেকনাফের সোলার প্যানেলে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে জানিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিতরণ) আবদুল কাদের গণি প্রথম আলোকে বলেন, জেলায় বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা ১৫০ মেগাওয়াট। সিস্টেমের কারণে মাঝেমধ্যে ২০ থেকে ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম পাওয়া গেলে কয়েক দফায় লোডশেডিং করতে হয়। সংকট নিরসনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বাড়ানোর কাজ চলছে।

আবদুল কাদের আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে শহরের টমটম-মিশুক গাড়ির গ্যারেজ, সরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল বসানোর প্রস্তুতি চলছে। হোটেল ভবনের ছাদে আগে থেকেই নানা অবকাঠামো তৈরি করা আছে, এ কারণে সেখানে প্যানেল বসানোর জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে শহর ও উপজেলাগুলোয় পরিত্যক্ত জমি, নদী-জলাশয়ে সোলার প্যানেল বসিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তির উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে।

কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় ২০ বছর ধরে নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তি উৎপাদনে সোলার প্যানেল সরবরাহ করে আসছে বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ফাউন্ডেশন। কোস্ট ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও কুতুবদিয়ার বাসিন্দা রেজাউল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আগের তুলনায় সোলার প্যানেল ও বায়ুকল অনেক উন্নত হয়েছে এবং দামও অর্ধেক কমে গেছে। আগে সোলার প্যানেল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো, এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে। সোলার প্যানেলের ব্যাটারিও উন্নত হয়েছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, ১০ শতাংশ ভবন বা ছাদে সোলার প্যানেল বসাতে হবে। কক্সবাজারের কিছু হোটেলকে নীতিমালার আওতায় আনা যায়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব য় ব দ য ৎ প রকল প প রথম আল ক প য ন ল বস ন র ম ণ কর ক ত বদ য় র সরক র অবস থ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

হবিগঞ্জের নতুন ডিসি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন

হবিগঞ্জে নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন। তিনি কুষ্টিয়া জেলায় ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

শনিবার (৮ নভেম্বর) রাতে আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীনকে হবিগঞ্জের ডিসি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখার উপসচিব আমিনুল ইসলাম রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছেন। তবে হবিগঞ্জের বর্তমান জেলা প্রশাসক ড. মো. ফরিদুর রহমানকে কোথায় বদলি করা হয়েছে তা প্রজ্ঞাপনে উল্লেথ করা হয়নি।

আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বিসিএস ২৫ ব্যাচের কর্মকর্তা। মাত্র তিনমাস আগে তিনি কুষ্টিয়ায় জেলা প্রশাসক হিসাবে যোগদান করেছিলেন।

ঢাকা/মামুন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ