নতুন এক গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে, আসলে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ তেমন দ্রুত না বেশ ধীরগতিতে হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী কার্লোস ফ্রেংক নতুন গবেষণার ফলাফলকে উল্লেখযোগ্য বলে অভিহিত করেছেন।

কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করছেন, মহাবিশ্ব ক্রমাগত ত্বরিত গতিতে প্রসারিত হচ্ছে। এ ধারণার ওপরে গবেষণা নোবেল পুরস্কারও জিতেছিল। দ্রুত প্রসারণের ভাবনা আধুনিক বিশ্বতত্ত্বের ভাবনাকে নতুন রূপ দিয়েছে। সেই ধারণার প্রতিকূলে আরেকটি নতুন গবেষণা ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে। ইঙ্গিত মিলছে, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ আসলে ধীরগতিতে হচ্ছে।

যদি এই ভাবনা সত্য প্রমাণিত হয়, তবে মহাবিশ্ব ও তার চূড়ান্ত পরিণতি সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে হবে। মনে করা হয়, মহবিশ্ব চিরকাল প্রসারিত হবে না। মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ একদিন থেমে যেতে পারে। সেই ঘটনাকে বিগ ব্যাংয়ের উল্টো বিগ ক্রাঞ্চ বা মহাবিস্ফোরণের বিপরীত মহাসংকোচনের মাধ্যমে ভেঙে পড়তে পারে।

নতুন গবেষণার মাধ্যমে আরও বিশ্বাস করা হচ্ছে, ডার্ক এনার্জি মহাজাগতিক ত্বরণকে চালিত করে বলে মনে করা হয়। এই শক্তি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়নসেই ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইয়ং-উক লি মনে করেন, নতুন পর্যবেক্ষণ বলছে, মহাবিশ্ব ইতিমধ্যেই ধীরগতির সম্প্রসারণের একটি ধাপে প্রবেশ করেছে। ডার্ক এনার্জি আসলে আগে যা ভাবা হয়েছিল, তার চেয়ে দ্রুত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে। নতুন গবেষণার ফলাফল নিশ্চিত হলে ২৭ বছর আগে ডার্ক এনার্জি প্রথম আবিষ্কারের পর থেকে বিশ্বতত্ত্বে একটি বড় পরিবর্তন আসবে।

আশা করা হচ্ছে, নতুন তথ্যের পুরোনো ভাবনাকে আঘাত করবে। এই বছরের শুরুর দিকে ডিসি কনসোর্টিয়াম থেকে প্রকাশিত তথ্য ডার্ক এনার্জির আসল প্রকৃতি ও মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। অধ্যাপক লি বলেন, ডার্ক এনার্জি আবিষ্কারের প্রায় তিন দশক পরও জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এমন একটি অনুমানের ওপর নির্ভর করছিলেন, যা এখন ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিষয়টিকে শার্টের প্রথম বোতাম ভুলভাবে লাগানোর সঙ্গে তুলনা করা যায়। প্রথমটি ভুল ছিল বলে বাকি বোতাম লাগানোর সময় ভুল হয়।

১৯৯০ দশকের আগে বিশ্বাস করা হতো, মহাকর্ষ একটি মহাজাগতিক ব্রেক হিসেবে ধীরে ধীরে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণকে মন্থর করছে। পরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা টাইপ ১এ সুপারনোভার তথ্যের মাধ্যমে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেন। সেই সুপারনোভা থেকে নির্গত আলোকে একই রকম বলে ধরে নিয়ে ‘স্ট্যান্ডার্ড ক্যান্ডেল’ নামের একটি মডেল তৈরি করা হয়। সুপারনোভার উজ্জ্বলতা মহাবিশ্বের দূরত্ব পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়। পর্যবেক্ষণে পরে দেখা যায়, দূরবর্তী সুপারনোভা প্রত্যাশার চেয়ে কম উজ্জ্বল দেখায়। তখন বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ মন্থর না হয়ে ত্বরান্বিত হচ্ছে বলে ঘোষণা দেন।

নতুন গবেষণা সেই ঘটনার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিচ্ছে। অধ্যাপক লির দল ৩০০ হোস্ট গ্যালাক্সি অধ্যয়ন করে নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে সুপারনোভার বয়স অনুমান করছেন। তাঁরা দেখছেন, প্রাথমিক মহাবিশ্বের তারা থেকে জন্ম নেওয়া সুপারনোভা সামান্য কম উজ্জ্বল হতে পারে। সংশোধিত ডেটা বলছে, মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে, যদিও তা বেশ ধীরগতিতে। গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ডার্ক এনার্জি দুর্বল হচ্ছে। যদি এই শক্তি নেতিবাচক হয়ে যায়, তবে মহাবিশ্ব শেষ পর্যন্ত একটি বিগ ক্রাঞ্চ বা সংকোচনে পৌঁছাতে পারে।

সূত্র: এনডিটিভি

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড র ক এন র জ স প রন ভ ধ রগত

এছাড়াও পড়ুন:

শান্তি আলোচনায় অচলাবস্থার জন্য পাকিস্তানের ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ আচরণকে দায়ী করল তালেবান সরকার

কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনায় অচলাবস্থার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে আফগানিস্তানের শাসকগোষ্ঠী তালেবান। তবে তারা জোর দিয়ে বলেছে, সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘাত সত্ত্বেও কাতারের মধ্যস্থতায় হওয়া অস্ত্রবিরতি চুক্তি বহাল থাকবে।

সীমান্ত সংঘাত নিয়ে ইস্তাম্বুলে দফায় দফায় শান্তি আলোচনা করছিল পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। গতকাল শুক্রবারও আলোচনা চলছিল। কিন্তু কোনো সমাধান ছাড়াই আলোচনা শেষ হয়। এর কিছুক্ষণ পর তালেবান জানায়, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সীমান্তে নতুন করে সংঘাত হয়েছে। এতে কয়েকজন আফগান বেসামরিক নাগরিক নিহত ও অনেকে আহত হয়েছেন।

দুই দিনের আলোচনা আন্তরিকতার সঙ্গে হয়েছে দাবি করে আজ শনিবার সকালে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে বলেন, কাবুলের প্রত্যাশা ছিল ‘সমাধানে পৌঁছানোর জন্য বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব উপস্থাপন করবে ইসলামাবাদ।’

মুজাহিদ আরও বলেন, ‘আলোচনার সময় পাকিস্তানি পক্ষ নিজেদের নিরাপত্তাসংক্রান্ত সব দায়দায়িত্ব আফগান সরকারের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। অথচ একই সঙ্গে তারা আফগানিস্তান কিংবা নিজেদের নিরাপত্তা, কোনোটিরই দায়দায়িত্ব নিতে আগ্রহ দেখায়নি।’

মুজাহিদ অভিযোগ করেন, পাকিস্তান আলোচনায় ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অসহযোগিতামূলক মনোভাব’ দেখিয়েছে। এর ফলে আলোচনায় ‘কোনো ফলাফল আসেনি।’

পরে এক সংবাদ সম্মেলনে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জোর দিয়ে বলেন, তালেবান অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করেনি এবং তা আগের মতোই বহাল থাকবে।
পাকিস্তান সরকার মুজাহিদের এই বক্তব্য নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

তবে আলোচনায় স্থবিরতার কথা গতকালই নিশ্চিত করেছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদ জানায়, শান্তি আলোচনায় কোনো অগ্রগতি না হলেও কাতারের মধ্যস্থতায় হওয়া অস্ত্রবিরতি চুক্তি বহাল থাকবে।

গতকাল পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার এক বিবৃতিতে বলেন, পাকিস্তান আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপকে সমর্থন করবে না, যা আফগান জনগণ বা প্রতিবেশী দেশগুলোর স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে।

পাকিস্তানের দাবি, আফগান তালেবান ২০২১ সালের দোহা শান্তিচুক্তি অনুযায়ী ‘সন্ত্রাসবাদ’ রোধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ অক্টোবর শুরু হওয়া সংঘর্ষে আফগানিস্তান সীমান্তে এ পর্যন্ত ৫০ বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৪৪৭ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া কাবুলে বিস্ফোরণে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হন। ওই বিস্ফোরণের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে আফগানিস্তান।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বলেছে, সংঘর্ষে তাদের ২৩ সেনা নিহত ও ২৯ জন আহত হয়েছেন। তবে বেসামরিক লোকজনের হতাহত হওয়ার কোনো তথ্য তারা উল্লেখ করেনি।

আরও পড়ুননতুন সংঘাতের পর পাকিস্তান–আফগানিস্তানের মধ্যে আলোচনায় আবারও অচলাবস্থা৮ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ