এবারও কেন শিক্ষার্থীরা সময়মতো বই পাবে না
Published: 9th, November 2025 GMT
অতীতের ভুল থেকে আমাদের নীতিনির্ধারক, আমলাতন্ত্র ও প্রতিষ্ঠানগুলো যে কোনো শিক্ষা নেয় না—এটিই ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা। বই ছাপাতে দেরি হওয়ায় চলতি বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছাতে তিন মাস দেরি হয়েছিল। এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন যেমন চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে, সরকারকেও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। আগামী বছরে একই পুনরাবৃত্তি দেখতে পাওয়াটা হবে যারপরনাই হতাশাজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, আগামী বছরের শুরুতে প্রাথমিকের বই বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাবে বলে আশা করা হলেও মাধ্যমিকের বই নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। নবম শ্রেণির বই ছাপানোর জন্য মুদ্রণকারীদের সঙ্গে কেবল চুক্তি হয়েছে। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার কার্যাদেশই দেওয়া হয়নি। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে বাকি যেখানে ৫০ দিনের মতো, সেখানে কবে কার্যাদেশ দেওয়া হবে, কবে বই ছাপা হবে আর কবেই বা বাঁধাই হয়ে সেগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাবে?
শঙ্কার বিষয় হচ্ছে নভেম্বর–ডিসেম্বর মাসে মুদ্রণকারীরা সাধারণত গাইড বই ছাপার কাজে ব্যস্ত থাকে। ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে পোস্টার, লিফলেট ছাপানোর কাজও বাড়বে। এ বাস্তবতায় মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছাতে যে দেরি হবে, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, দেরিতে বই পৌঁছানোর কারণে যে শিখনঘাটতি তৈরি হবে, তার দায় কে নেবে? ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ ও এনসিটিবির কারণে শিক্ষার্থীরা কেন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
করোনা মহামারির কারণে শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ এমনিতেই শিখনঘাটতিতে ভুগছে। এরপরও যদি ফি বছর পাঠ্যবই ছাপাতে দেরি হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের ভুগতে হয়, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। এ বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এনসিটিবি আগভাগেই দরপত্রপ্রক্রিয়া শেষ করে মূল্যায়নের কাজও শেষ করেছিল। কিন্তু ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সেপ্টেম্বর মাসে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র বাতিল করা হয়। নতুন দরপত্র আহ্বানের পর যাচাই–বাছাই শেষ হলেও তিন শ্রেণির বই ছাপার কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি।
দরপত্রের নিয়ম অনুযায়ী চুক্তির পর ৪৫ দিনের মধ্যে তিন শ্রেণির বই ছাপিয়ে সরবরাহের কথা রয়েছে। কিন্তু খোদ এনসিটিবির কর্মকর্তারা সময়মতো বই ছাপানো হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন। বছরের শুরুতেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়াটা যে সরকার ও এনসিটিবির দায়িত্ব, সেই বোঝাপড়ায় ঘাটতি থাকায় বারবার একই সংকট সৃষ্টি হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। এ ক্ষেত্রে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জোরালো অঙ্গীকার প্রয়োজন।
মাধ্যমিকের তিন শ্রেণির বই ছাপানো নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, এনসিটিবিকে দ্রুত তা নিরসন করতে হবে। শুধু কার্যাদেশ দিয়ে বসে থাকলেই চলবে না, সময়মতো বইগুলো ছাপা হচ্ছে কি না, নিয়মিত তার তদারক করতে হবে। পাঠ্যবই ছাপাতে দেরি হওয়ায় প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের ভুগতে হচ্ছে, তাদের শিক্ষাজীবনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেকোনো মূল্যেই এই দুষ্টচক্র থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ র ণ র বই ছ প বই ছ প র প ঠ যবই এনস ট ব দরপত র
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন শিক্ষাবর্ষে তিন শ্রেণির বই ছাপাই শুরু হয়নি
আসন্ন নতুন শিক্ষাবর্ষে বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য প্রাথমিক স্তরের অর্ধেকের বেশি বই ছাপিয়ে মাঠপর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরের কোনো বই এখনো সরবরাহ করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার কার্যাদেশই এখনো দেওয়া হয়নি। আর নবম শ্রেণির বই ছাপার বিষয়ে মুদ্রণকারীদের সঙ্গে মাত্রই চুক্তি হচ্ছে।
এমন অবস্থায় জানুয়ারির শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই, বিশেষ করে মাধ্যমিকের বই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন না এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা। তাঁদের ভাষ্য, এবার ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই আবার দরপত্র দিয়ে ছাপানো হচ্ছে। আবার মাধ্যমিকে বই ছাপার কাজে মন্ত্রণালয় ও ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদন পেতেও দেরি হয়েছে। ফলে বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দেওয়া কঠিনই হবে।
এনসিটিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক বই ছাপায় কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু মাধ্যমিক বই নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের সংকট। এবার মোট বইয়ের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম।চলতি বছরও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই পৌঁছাতে প্রায় তিন মাস দেরি হয়েছিল। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতির মুখে পড়ে এবং বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি সমালোচনার মুখে পড়ে। কিন্তু আসন্ন শিক্ষাবর্ষেও একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।
এনসিটিবির সূত্র জানায়, আগামী বছর বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য প্রাথমিক স্তরের মোট পাঠ্যবই ৮ কোটি ৫৯ লাখ ২৫ হাজার ৩৭৯ কপি। এর মধ্যে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ছাপা ও বাইন্ডিং সম্পন্ন হয়েছে ৬ কোটি ৬৫ লাখের বেশি বই। এর মধ্যে সরবরাহ-পূর্ব পরিদর্শন (পিডিআই) সম্পন্ন হয়েছে ৫ কোটি ৫১ লাখের বেশি বইয়ে। আর মাঠপর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে ৪ কোটি ৮৫ লাখের বেশি বই।
এনসিটিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক বই ছাপায় কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু মাধ্যমিক বই নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের সংকট। এবার মোট বইয়ের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম।
চলতি বছরও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই পৌঁছাতে প্রায় তিন মাস দেরি হয়েছিল। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতির মুখে পড়ে এবং বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি সমালোচনার মুখে পড়ে। কিন্তু আসন্ন শিক্ষাবর্ষেও একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।গত বছর বই সরবরাহে দীর্ঘ দেরির কারণে এবার আগেভাগেই দরপত্র প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করে মূল্যায়নের কাজও সম্পন্ন করেছিল এনসিটিবি। কিন্তু হঠাৎ ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র সেপ্টেম্বর মাসে বাতিল করা হয়। এই তিন শ্রেণির বইয়ের বাতিল হওয়া দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল গত মে ও জুনে। এরপর আবার দরপত্র আহ্বান করে এনসিটিবি। দরপত্র আহ্বানের পর যাচাই-বাছাই শেষ হলেও এখনো এই তিন শ্রেণির বই ছাপার কার্যাদেশ দেওয়া যায়নি।
নবম শ্রেণির বই ছাপানোর জন্য মুদ্রণকারীদের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে এবং ছাপার কাজও চলছে। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার কার্যাদেশও দু-এক দিনের মধ্যেই দেওয়া হবে। প্রাথমিক স্তরের বই ছাপার অগ্রগতি ভালো। আশা করা যায়, বছরের শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়া যাবে।এনসিটিবির বিদায়ী চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরীএবার ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৩ লাখের বেশি, সপ্তম শ্রেণির ৪ কোটি ১৫ লাখের বেশি ও অষ্টম শ্রেণির মোট বই ৪ কোটি ২ লাখের বেশি।
দরপত্রের নিয়ম অনুযায়ী কার্যাদেশের পর চুক্তি হবে, আর চুক্তির পর ৪৫ দিনের মধ্যে ওই তিন শ্রেণির বই ছাপিয়ে সরবরাহের কথা। এমন অবস্থায় কার্যাদেশ ও চুক্তি সম্পন্ন করে জানুয়ারির শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে বই দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা।
এবার ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৩ লাখের বেশি, সপ্তম শ্রেণির ৪ কোটি ১৫ লাখের বেশি ও অষ্টম শ্রেণির মোট বই ৪ কোটি ২ লাখের বেশি।এনসিটিবি সূত্র আরও জানায়, এবার নবম শ্রেণির মোট পাঠ্যবই ৫ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার ২৮ কপি। বুধবার মতিঝিলে এনসিটিবি কার্যালয়ে দেখা যায়, এসব বই ছাপার বিষয়ে মুদ্রণকারীদের সঙ্গে এখন চুক্তি হচ্ছে। চুক্তি করতে আসছেন মুদ্রণকারীরা।
নিয়মানুযায়ী চুক্তির পর ৬০ দিনের মধ্যে নবম শ্রেণির বই সরবরাহের কথা। ইতিমধ্যে নভেম্বরের প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেছে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে মুদ্রণকারীরা সাধারণত নোট ও গাইড ছাপানোয় ব্যস্ত থাকেন। আবার ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে পোস্টার ছাপানোর কাজও বাড়বে। সব মিলিয়ে জানুয়ারির শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
অন্যদিকে ইবতেদায়ি স্তরের মোট বই ৩ কোটি ১১ লাখের বেশি; যার মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ ছাপা হয়েছে।
অবশ্য এনসিটিবির বিদায়ী চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেছেন, নবম শ্রেণির বই ছাপানোর জন্য মুদ্রণকারীদের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে এবং ছাপার কাজও চলছে। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার কার্যাদেশও দু-এক দিনের মধ্যেই দেওয়া হবে। প্রাথমিক স্তরের বই ছাপার অগ্রগতি ভালো। আশা করা যায়, বছরের শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়া যাবে।