সমাজে এখনো অনেক শক্তি আছে, যারা সর্বজনীন মানবাধিকারে পূর্ণভাবে আস্থা রাখতে পারে না বলে মনে করেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, সেই শক্তিকে রাজনৈতিক দলগুলো খুবই সম্মান করে। ‘বৈষম্যবিরোধী আইন’ যে এখনো করা গেল না, সেটা এ কারণেই কি না, তা চিন্তা করে দেখতে হবে।

এ সময় বৈষম্যবিরোধী আইনের অধ্যাদেশ জারির দাবি দাবি জানিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, বৈষম্যবিরোধী কথা বলা হবে, কিন্তু কোনো কোনো বৈষম্য নিয়ে কথা বলা হবে আর কোনো কোনো বৈষম্য নিয়ে কথা বলা হবে না, এটা হতে পারে না।

‘একটি কার্যকর বৈষম্যবিরোধী আইন প্রবর্তন’ শীর্ষক একটি নাগরিক সংলাপে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথা বলেন। শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এ সংলাপের আয়োজন করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ। এতে সহ–আয়োজক ছিল বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও নাগরিক উদ্যোগ। আয়োজনে সহযোগিতা করেছে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।

নাগরিক সংলাপে সভাপতি হিসেবে সূচনা বক্তব্যে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ন্যায্য বিচার চাইলে নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে হবে। তাঁদের মৌলিক অধিকারগুলোকে রক্ষা করতে হবে। ন্যায্য বিচার চাওয়া হবে, কিন্তু নাগরিকের সুরক্ষা থাকবে না—এটা হতে পারে না।

নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক বলেন, একইভাবে নির্বাচন চাইলে অবশ্যই এই সর্বজনীন বৈষম্যবিরোধী আইন প্রয়োজন। এই আইনের প্রবর্তন নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি বাতাবরণ পরিবেশ সৃষ্টি করবে। একইভাবে কার্যকর সংস্কার প্রথিত আছে নাগরিকের সর্বজনীন অধিকারে। সর্বজনীন অধিকার না থাকলে সংস্কারটা কার্যকর হবে না।

পছন্দ অনুযায়ী নারীর চলন-বলন ও জীবনযাপনের যে অধিকার, সেটার ওপর খবরদারি করলে তা সর্বজনীন অধিকার হলো না বলেও মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, যে ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আছে, তারা যদি জীবনযাপনের ক্ষেত্রে অসহায়ত্ব বোধ করে, তাহলে তো বৈষম্যবিরোধী চেতনা হলো না। এই ছোট দেশের ভেতরেও যদি আঞ্চলিক বৈষম্য থাকে, তাহলে তো সেই বৈষম্যই রয়ে গেল। শিশু থেকে প্রবীণ, বহু ভাষা, বহু ধর্ম, বহু চিন্তার ভেতরে যে দেশ আছে, তাকে সুরক্ষা দিতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের যেটুকু সময় হাতে আছে, তার ভেতরে বৈষম্যবিরোধী আইনের অধ্যাদেশ জারির দাবি জানান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, তাঁরা এই সরকারের অবশিষ্ট সময়ে সর্বজনীন মানবাধিকারের ভিত্তিতে বৈষম্যবিরোধী আইন দেখতে চান। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে এটাকে (বৈষম্যবিরোধী আইন) অন্তর্ভুক্ত করার দাবিও জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো.

আসাদুজ্জামান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন।

এ সময় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ইউনিভার্সিটি অব আলস্টারের অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ এস আর ওসমানী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান ত. রহমান, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, ইউএনডিপি বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা গভর্ন্যান্স ড্রাগান পোপোভিচ, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আরিফ খান প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইন র

এছাড়াও পড়ুন:

জাতিসংঘে আওয়ামী লীগের চিঠিতে কাজ হবে না: তৌহিদ হোসেন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারিগরি সহযোগিতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ জাতিসংঘে যে চিঠি দিয়েছে, তাতে কোনো কাজ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ঢাকা দপ্তরে পাঠানো চিঠির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি এ কথা বলেন।

তৌহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জাতিসংঘকে দেওয়া আওয়ামী লীগের এ ধরনের চিঠিতে কোনো কাজ হবে না।

প্রসঙ্গত বাংলাদেশে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নয়’ এমন নির্বাচনে সহযোগিতা থেকে সরে আসার অনুরোধ জানিয়ে ১ নভেম্বর বাংলাদেশে ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধিকে চিঠি পাঠান আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি ওই চিঠির অনুলিপি জাতিসংঘের মহাসচিব, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি, জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদসহ জাতিসংঘের কাজে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় দিয়েছেন।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকছে না আওয়ামী লীগের। জাতিসংঘে পাঠানো দলটির ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত হওয়ার আগপর্যন্ত আমরা জাতিসংঘ এবং ইউএনডিপির প্রতি নির্বাচনী সহযোগিতা স্থগিতের আহ্বান জানাই। আমরা বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে জাতীয় সংলাপ ও সমঝোতাকে উৎসাহিত করার এবং যেকোনো নির্বাচনী সম্পৃক্ততার মূল ভিত্তি হিসেবে মানবাধিকার ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’

‘বাংলাদেশে ইউএনডিপির নির্বাচনী সহযোগিতা এবং জাতিসংঘ সনদের নিরপেক্ষতা, রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও মৌলিক অধিকারের মূলনীতি লঙ্ঘনের বিষয়ে উদ্বেগ’ শিরোনামে ইউএনডিপিকে চিঠি পাঠায় আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশে ইউএনডিপির নির্বাচনী সহযোগিতা, ব্যালট প্রজেক্ট এবং আসন্ন নির্বাচনের বিষয়ে সংস্থার প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার বিষয়ে আমরা গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করছি যে নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলকও নয়, বিশ্বাসযোগ্যও নয়। এ ধরনের সম্পৃক্ততা আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘের মূলনীতি এবং অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রসারের ক্ষেত্রে ইউএনডিপির ম্যান্ডেট লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করে।’

প্রসঙ্গত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য হবে কি না, এ প্রশ্ন তোলা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার অভিযোগ রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাতিসংঘে আওয়ামী লীগের চিঠিতে কাজ হবে না: তৌহিদ হোসেন