কারো দলীয় স্বার্থ দেখা অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়: তারেক রহমান
Published: 8th, November 2025 GMT
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জনগণের ভোটের মাধ্যমে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ ও জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠাই অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান কর্তব্য। অবশ্যই কারো দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করা এ সরকারের কাজ নয়।
শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোটের আয়োজিত ‘হিন্দু প্রতিনিধি সম্মেলন’–এ প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
আরো পড়ুন:
বিএনপির ৩১ দফা: পাঠ ও বিবেচনা
নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হতে হবে: ফখরুল
সম্মেলনে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠন ও মঠ-মন্দির পরিচালনা কমিটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থ বেদ ও গীতা পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর অতিথিরা প্রদীপ প্রজ্বলন করেন।
দেশ অস্থিতিশীল হলে পরাজিত, পলাতক ফ্যাসিবাদী অপশক্তির পুনর্বাসনের পথ সুগম হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘গুপ্ত রাজনীতি’ সম্পর্কে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
তারেক রহমান বলেছেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলে ফ্যাসিবাদের রোষানল থেকে বাঁচতে ফ্যাসিবাদবিরোধীদের কেউ কেউ ‘গুপ্ত কৌশল’ অবলম্বন করেছিল। একইভাবে পতিত-পরাজিত ফ্যাসিবাদী অপশক্তিও বর্তমানে ‘গুপ্ত কৌশল’ অবলম্বন করে দেশের গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করে কি না, এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথের আন্দোলনের সঙ্গী কারো কারো ভূমিকা দেশে ‘আপনার, আমার, আমাদের’ বহু মানুষের অধিকার ও সুযোগকে বিনষ্ট করার হয়ত একটি পরিস্থিতি তৈরি করছে।
পতিত ও পলাতক অপশক্তিকে কোনো সুযোগ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘গুপ্ত বাহিনীর সেই অপকৌশল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অন্যতম প্রধান কৌশল হচ্ছে, একটি ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় ও বহাল রাখা।’ সেজন্য বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকার এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গীদের সহযোগিতা ও সমঝোতার দৃষ্টিভঙ্গি সমুন্নত রেখেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি বরাবরই ‘একটি শান্তিকামী, সহনশীল, গণমুখী’ রাজনৈতিক দল বলে দাবি করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ভিন্ন দল ও মতের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা, এটি বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ। দেশের জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করার স্বার্থেই বিএনপির রাজনীতি।
নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি সরকার গঠন করলে স্বল্প আয়ের মানুষদের সহায়তার জন্য ৫০ লাখ ‘ফ্যামিলি কার্ড’ বিতরণ এবং তরুণদের জন্য চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করা হবে বলে ঘোষণা দেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য তাদেরকে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং একইসঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভাষা শিক্ষা দিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করে দেশে এবং বিদেশে কাজের ব্যবস্থার পরিকল্পনা আমরা এর মধ্যে হাতে নিয়েছি।
বাংলাদেশে ধর্মীয় বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কথা উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বৈচিত্র্যের মধ্যেই ঐক্যের বন্ধনই আমাদের রাষ্ট্র এবং সমাজের সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সৌন্দর্য। এই বৈচিত্র্যময় সমাজে ঐক্যসূত্র বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ।
বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকারের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে এই বাংলাদেশে আপনার যতটুকু অধিকার, আমারও ঠিক ততটুকুই অধিকার। কারো বেশি, কারো কম, তা নয়।
এ সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের উত্থাপিত বিভিন্ন দাবি পূরণের আশ্বাস দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোটের আহ্বায়ক সোমনাথ সেনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবিগুলো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে তুলে ধরেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আরো বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ, মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোটের সদস্য সচিব ও মুখপাত্র কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল, যুগ্ম আহ্বায়ক সমেন সাহা, হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, হিন্দু ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার প্রমুখ।
ঢাকা/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত র ক রহম ন র র জন ত র জন ত ক জনগণ র র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাজনীতি করতে চাই: নাসীরুদ্দীন
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, “আমরা চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাজনীতি করতে চাই। যারা আমাদের সঙ্গে অঙ্গীভূত হবেন, একীভূত হবেন, তাদের জন্য সেখানে একটি নামমাত্র ফি রাখা হয়েছে। আপনারা জানেন, নির্বাচনের জামানত ফি এবার ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। নতুন যে রুলস-রেগুলেশন সেখানে এসেছে, আমরা ন্যূনতম একটা ফি রেখেছি।”
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, “আপনারা দেখেছেন নির্বাচনের ডামাডোল বেজে গিয়েছে। আমাদের যেমন সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে হবে, সাথে সাথে আমাদের একটি সুন্দর পার্লামেন্ট উপহার দেওয়ার জন্য কাজ করতে হবে। তাই আমাদের দল থেকে বা আমাদের দলের খুব একটা সুন্দর টিম আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছেন। মানুষজনের সামনে আমরা কোনো দলের প্রতিনিধি চাপিয়ে দিতে চাই না, জনগণের প্রতিনিধি দিতে চাই।”
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “বর্তমান যে পরিস্থিতি রয়েছে, এই পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে একটি দল নিজস্ব কিছু ব্যক্তিকে মানুষের উপরে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। আমরা এই দুর্বৃত্তায়ন ভাঙতে চাই। আমরা এই টপ টু ডাউন নয়, ডাউন টু টপ সিস্টেমে যেতে চাই। অর্থাৎ সরকার এবং জনগণের মধ্যে যে পার্লামেন্ট রয়েছে, এই পার্লামেন্ট হাউজে আমরা জনগণের প্রতিনিধি পাঠাতে চাই। কোনো দলীয় প্রতিনিধি পাঠাতে চাই না।”
তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পরে আমরা একটি সুন্দর ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য একটি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সংসদ লাগবে। কিন্তু এর পূর্বে আমরা বলেছিলাম যে তারা কোন প্রক্রিয়া চালাবে। গত ৫০ বছরে যে ভিত্তিতে চালিয়েছিল, ভিত্তিমূলটা অনেক দুর্বল ছিল। ওই ভিত্তিমূল ছিল সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি। একদলীয় শাসন বাকশাল থেকে শুরু করে অসংখ্য (দুর্বলতা), যেগুলো বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেওয়ার যাত্রা আমরা দেখেছিলাম।”
এনসিপি’র এই নেতা বলেন, “আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ গঠন করব। যেই নতুন বাংলাদেশের মধ্যে এই ধরনের কার্যকলাপ আর প্রত্যক্ষ করব না। সেই জায়গা থেকে সংস্কার ও ঐকমত্য কমিশন গঠন হয়েছিল। ঐকমত্য কমিশনে ৩০টির অধিক দল মিলে তারা একটা পর্যায়ে এসেছে, একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে, সুপারিশমালা দিয়েছে। সেটার উপরে সরকার একটি আদেশ জারি করার কথা। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের এখন যে পরিস্থিতি রয়েছে, সেখানে জামায়াত এবং বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ও কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি তাসনিম জারা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম মাহির, খালেদ সাইফুল্লাহ, এহতেশাম হক, যুগ্ম সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল আমিন, জহিরুল ইসলাম, আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, হুমায়রা নূর, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লাহ হায়দার এবং জতীয় যুব শক্তির আহ্বায়ক মো. তারিকুল ইসলাম।
ঢাকা/রায়হান/এস