আলোচনা ছেড়ে দলগুলো রাজপথে, নভেম্বর কি উত্তপ্ত হতে যাচ্ছে
Published: 9th, November 2025 GMT
সংস্কার প্রশ্নে গত প্রায় সাড়ে আট মাস রাজনৈতিক দলগুলো ছিল আলোচনার টেবিলে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে সবকিছু। কিন্তু নভেম্বরে আবার রাজপথে কর্মসূচি নিয়ে নেমেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলো। একদিকে সংস্কার বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে ভিন্নমত, অন্যদিকে দ্রুত এগিয়ে আসছে নির্বাচনের সময়। এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঠের কর্মসূচি নিয়ে নামার পেছনে নির্বাচনের প্রস্তুতি, নাকি রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত করার ইঙ্গিত—এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংস্কারসহ নানা বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের অবস্থান অনেক ক্ষেত্রেই বিপরীতমুখী। এর মধ্যে ১১ নভেম্বর জামায়াতসহ আটটি ইসলামপন্থী দল ঢাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। তাদের মূল দাবি হচ্ছে—জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং ওই আদেশের ওপর নভেম্বর মাসের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে বা উচ্চকক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু করা।
সাড়ে ৮ মাসে ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে টানা বৈঠক করে জুলাই সনদ প্রণয়ন করে কমিশন। অধিকাংশ দলই তাতে সই করে। কিন্তু এই জুলাই সনদের আলোকে কীভাবে সংস্কার বাস্তবায়িত হবে—এ বিষয়ে একমত হতে পারেনি দলগুলো।অন্যদিকে গণভোট ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের দিনই করার পক্ষে বিএনপি। দলটি ইতিমধ্যে ২৩৭ আসনে তাদের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। গত শুক্রবার থেকে একধরনের নির্বাচনী আমেজে মাঠের কর্মসূচিতে নেমেছে দলটি। উপলক্ষ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, কুমিল্লা, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ, বগুড়াসহ সব বিভাগ ও জেলায় সমাবেশ ও শোভাযাত্রা করেছে দলটি। এসব কর্মসূচিতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ধানের শীষের নির্বাচনী পোস্টার, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শিত হয়।
গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। এরপর দেশের রাজনীতিতে বিএনপি, জামায়াত, অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বড় শক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জামায়াত ও বিএনপি মাঠের কর্মসূচি দিলেও এনসিপি এখনো তেমনটা ঘোষণা করেনি।
বিএনপির মহাসচিবকে আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু ওনারা বলেছেন, জামায়াতের আহ্বানে তাঁরা সাড়া দেবেন না। বিগত রেজিম কিন্তু এ ধরনের সুর সব সময় বাজাত যে ওমুকের সঙ্গে বসবে না।হামিদুর রহমান আযাদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, জামায়াতে ইসলামীগত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ এই কমিশনের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। প্রায় সাড়ে ৮ মাসে ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে টানা বৈঠক করে জুলাই সনদ প্রণয়ন করে কমিশন। অধিকাংশ দলই তাতে সই করে। কিন্তু এই জুলাই সনদের আলোকে কীভাবে সংস্কার বাস্তবায়িত হবে—এ বিষয়ে একমত হতে পারেনি দলগুলো। ৩ নভেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। তবে আলোচনার পথে না গিয়ে রাজপথের কর্মসূচির দিকে ঝুঁকছে দলগুলো।
এর মধ্যে কার্যক্রম–নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ অনলাইন মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছে, ১৩ নভেম্বর ঢাকা ‘লকডাউন’ কর্মসূচি পালন করবে। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচারকাজ শেষ। রায় কবে ঘোষণা করা হবে, তা জানাতে ১৩ নভেম্বর তারিখ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগও দলটির পতিত শাসকের রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজপথে নামতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আরও পড়ুনজুলাই সনদ বাস্তবায়ন: সমঝোতার সম্ভাবনা ক্ষীণ, সিদ্ধান্ত এখন সরকারের হাতে ৬ ঘণ্টা আগেএ সবকিছু মিলিয়েই রাজনীতি আবার উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। একের পর এক দল নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কেউ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, কেউ সংস্কারে জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছে, কেউ নিষেধাজ্ঞা ভেঙে প্রতিরোধের বার্তা দিতে চাইছে। বিএনপি ও জামায়াতের নেতৃত্বাধীন পক্ষগুলোর বিপরীতমুখী অবস্থানের সুযোগ আওয়ামী লীগ নিতে চাইবে—এটাই স্বাভাবিক বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
সব মিলিয়ে নভেম্বরের শুরুতেই দেশের রাজনীতির অঙ্গনে ফিরে এসেছে পুরোনো উত্তাপ, পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
এর মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের বক্তৃতায় সেই উত্তাপের টের পাওয়া যাচ্ছে। জামায়াতের সমাবেশের দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘কথায় কথায় আপনি রাস্তায় যাবেন। এখন অন্য দল যদি তার প্রতিবাদে আবার রাস্তায় যায়, তাহলে কী হবে, সংঘর্ষ হবে না? বৃহত্তর দল বাংলাদেশে যদি রাস্তায় নামে এগুলোর প্রতিবাদে, সংঘর্ষ হবে।’
বিএনপি ৭ নভেম্বর ব্যাপক জনসমাগম ঘটানোর পর জামায়াত নেতারা ১১ নভেম্বরে ঢাকার রাজপথে লাখো মানুষ নামানোর ঘোষণা দিচ্ছেন। কার্যক্রম–নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগও সক্রিয় হওয়ার বার্তা দিচ্ছে।গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে প্রযুক্তিনির্ভর নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা নিয়ে এক সংলাপে আমীর খসরু এসব কথা বলেন।
একই অনুষ্ঠানে ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ। বিএনপির এখনকার আচরণে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিল পাওয়া যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। হামিদুর বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিবকে আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু ওনারা বলেছেন, জামায়াতের আহ্বানে তাঁরা সাড়া দেবেন না। বিগত রেজিম কিন্তু এ ধরনের সুর সব সময় বাজাত যে ওমুকের সঙ্গে বসবে না। এই কালচার থেকে কি বের হতে পারি না?’
‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে ৭ নভেম্বর ঢাকায় বিএনপির শোভাযাত্রায় ছিল নির্বাচনী আমেজ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ল ই সনদ সরক র র ব এনপ র আহ ব ন আওয় ম র জপথ
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধিদলের বৈঠক
বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি প্রতিনিধিদল।
আজ রোববার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়। পরে বৈঠকের বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয় বিএনপি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন অ্যাডভাইজার টু দ্য বাংলাদেশ মিশন চিফ ক্রিস পাপাজর্জিউ।
বিএনপি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিএনপির প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, জিয়াউদ্দিন হায়দার ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হলে আর্থিক খাত, করব্যবস্থা ও সামাজিক খাতের সংস্কার জরুরি। বিএনপি বিশ্বাস করে, একটি জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ আর্থিক ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয়।
বৈঠকে আইএমএফের চলমান মিশনের পর্যালোচনামূলক প্রতিবেদনের প্রাথমিক ফলাফল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনার মূল বিষয়গুলো ছিল মূল্য সংযোজন করের হরমোনাইজেশন ও ছাড় হ্রাস বা বিলোপের নতুন টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স, করপোরেট কর বৃদ্ধি করে জিডিপি-টু-ট্যাক্স রেভিনিউ অনুপাত উন্নত করা, ব্যাংকিং খাতের সংস্কার এবং সামাজিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি।
আইএমএফ প্রতিনিধিদল বিএনপির প্রস্তাবিত নীতি-অগ্রাধিকার ও সংস্কারভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করে। বৈঠকটি উভয় পক্ষের মধ্যে ভবিষ্যতে নীতিগত সংলাপ ও সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রত্যাশা জাগিয়ে তোলে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।