কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে প্রাথমিক শিক্ষকেরা
Published: 9th, November 2025 GMT
তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমে পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হওয়ার পর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। পাশাপাশি তাঁরা বিদ্যালয়গুলোতে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছেন।
তিন দফা বাস্তবায়ন না করে উল্টো শাহবাগে শিক্ষকদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ। আজ রোববার সংগঠনের পক্ষে শিক্ষক নেতা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।
গতকাল বিকেলে শাহবাগে প্রাথমিক শিক্ষকদের মিছিলে চড়াও হয় পুলিশ। পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেডে শতাধিক শিক্ষক আহত হন।
শিক্ষকদের অভিযোগ, পুলিশ হামলা চালিয়েছে বিনা উসকানিতে। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, শিক্ষকেরা বাধা উপেক্ষা করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে এগোলে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
গতকালের ঘটনার পর আন্দোলনরত শিক্ষকেরা নতুন কর্মসূচি দেন। ঘোষণা অনুযায়ী, তাঁরা আজ রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। পাশাপাশি তাঁরা বিদ্যালয়গুলোতে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করছেন।
বর্তমানে সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৭টি। এগুলোতে মোট শিক্ষার্থী এক কোটি ছয় লাখের বেশি। মোট শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৬২৪ জন। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষক আছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ।
সহকারী শিক্ষকেরা জাতীয় বেতন স্কেলের ১৩ তম গ্রেডে বেতন পান। এখন সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে করার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষকেরা। কিছুদিন আগে তাঁরা সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১১ তম করার দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। তবে সেখান থেকে সরে এসে এসেছেন। তাঁদের অপর দুটি দাবি হলো শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি এবং চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড দেওয়া।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মাথায় রেখে নকশায় গুরুত্ব প্রদান
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবকে মাথায় রেখে স্থাপনার নকশা প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম। স্থাপত্য শাখার নোবেল হিসেবে খ্যাত আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার বিজয়ী এই স্থপতি বলেছেন, “একজন শিল্পী একটি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন, আর তার শিল্পকর্ম তাকে সারা জীবন বাঁচিয়ে রাখে।”
শনিবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে ‘সিরামিক বাংলাদেশ ম্যাগাজিন’ আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধে তিনি এসব কথা বলেন।
‘বিটুইন ইরোশন অ্যান্ড ইমারজেন্সি’ শিরোনামে উপস্থাপনায় মেরিনা তাবাসসুম তার দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “স্থাপত্য কেবল ভবন নির্মাণ নয়, এটি সংস্কৃতি, সমাজ ও মানুষের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত একটি জীবন্ত শিল্প। একজন স্থপতির দায়িত্ব শুধু কাঠামো তৈরি নয়, বরং এমন কিছু সৃষ্টি করা যা মানুষের জীবন, পরিবেশ ও সময়ের সঙ্গে কথা বলে।”
মেরিনা তাবাসসুম বলেন, “আমাদের কাজ যেন এই মাটির বাস্তবতার সঙ্গে মিশে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তন, নগরায়ণ এবং মানুষের জীবনধারার পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্থাপত্যের ভাষা বদলাতে হবে।”
তিনি যোগ করেন, “চরাঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বাঁচে। তাদের জীবনযাপন ও বাসস্থানকে টেকসইভাবে গড়ে তুলতে স্থাপত্যের নতুন ধারণা প্রয়োগ জরুরি।”
মেরিনা তাবাসসুম জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং পুনর্বাসনযোগ্য ঘর তৈরিতে তার দল ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করছে। এসব প্রকল্পে স্থানীয় মানুষকে যুক্ত করে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী নকশা তৈরি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু স্থাপনা নির্মাণ নয়, বরং মানুষের সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য সৃষ্টি করা। চরাঞ্চলের মানুষকে আত্মনির্ভর করে তুললেই প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব।”
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন- সিরামিক বাংলাদেশ ম্যাগাজিনের সিনিয়র অ্যাডভাইজর, আরকিকানেক্টের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্থপতি জালাল আহমেদ। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের স্থাপত্য আজ বিশ্বে নিজস্ব অবস্থান তৈরি করেছে। মেরিনা তাবাসসুমের মতো স্থপতিরা আমাদের গর্ব এবং নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।”
পুরো অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন স্থপতি মৌসুমী আহমেদ। স্থপতি মাহমুদুল আনোয়ার রিয়াদের সঞ্চালনায় পরে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন প্রফেসর জয়নাব ফারুকী আলী, স্থপতি নাহাস আহমেদ খলিল ও প্রফেসর ফুয়াদ হাসান মল্লিক।
সমাপনী বক্তব্যে বিসিএমইএ প্রেসিডেন্ট ও মুন্নু সিরামিকের ভাইস চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম বলেন, “দেশের স্থাপত্য ও সিরামিক শিল্প একে অপরের পরিপূরক। শিল্প, শিক্ষা ও গবেষণার সমন্বয় ঘটিয়ে এই খাতকে আরও এগিয়ে নিতে হবে।”
অনুষ্ঠানে দেশের প্রখ্যাত স্থপতি, প্রকৌশলী, সিরামিক শিল্প উদ্যোক্তা, শীর্ষ কর্মকর্তা ও সিনিয়র সাংবাদিকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/মাসুদ