জুলাই জাতীয় সনদে নারীর বিষয় উপেক্ষিত
Published: 8th, November 2025 GMT
জুলাই জাতীয় সনদে নারীর বিষয় উপেক্ষিত হয়েছে। নারীবিহীন এই জুলাই সনদ গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া গণভোটের জন্য ৪৮টি প্রস্তাব আছে, এত প্রস্তাব পড়ে জনগণ কোনটায় ‘হ্যাঁ–না’ ভোট দেবেন, সেটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জটিলতার সম্মুখীন হতে পারে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের গুরুত্ব সহজভাবে বোঝালে মানুষ অবশ্যই বুঝবে, কোথায় ‘হ্যাঁ–না’ ভোট দিতে হবে।
এমন নানা রকমের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ছিল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জাতীয় নারী শক্তি শাখার আলোচনা সভায়। আজ শনিবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘নারীর কণ্ঠে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা’ শিরোনামে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্ন্তবর্তী সরকার গঠিত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে রোকেয়া হলের মেয়েরা প্রথম প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল বের করেছিলেন। তাঁদের পরে আর কোথাও রাখা হলো না। নারীবিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের পর তা নিয়ে গালিগালাজ করা হলো, হেনস্তা করা হলো। অথচ এর বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে কোনো আওয়াজ করা হলো না। তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদের পুরো প্রক্রিয়া নারীবিবর্জিত। যতটা না ব্যথিত হয়েছি, বিষয়টি তার চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় ও উদ্বেগে ফেলেছে। এটা কিসের লক্ষণ, দেশ কোন দিকে যাচ্ছে? জুলাই সনদে নারীদের উপেক্ষা করা হয়েছে। তাই এই সনদ গ্রহণ করি না। জুলাই সনদ হলো কি হলো না, সেটা আর আমাদের ব্যাপার না।’ ৪৮টি বিষয়ে কীভাবে গণভোট হবে, সেটা নিয়েও তিনি সংশয় প্রকাশ করেন।
জুলাই সনদের পুরো প্রক্রিয়া নারীবিবর্জিত। যতটা না ব্যথিত হয়েছি, বিষয়টি তার চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় ও উদ্বেগে ফেলেছে। এটা কিসের লক্ষণ, দেশ কোন দিকে যাচ্ছে?শিরীন পারভীন হক, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধানঅনুষ্ঠানে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির প্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, জুলাই সনদ হয়েছে নারীদের বাদ দিয়ে। এর আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় নারীদের রাখা হয়নি। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন ৫০টি থেকে বাড়িয়ে ১০০টি করার দাবি ছিল। সরাসরি নির্বাচনে অন্তত ৩৩ শতাংশ নারীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি ছিল। রাজনৈতিক দলগুলো সেটাকে শেষ পর্যন্ত ৫ শতাংশে এসে নামিয়েছে।
জেন-জি বা তরুণ প্রজন্মের রক্তের ওপর দিয়ে এ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, এই জেন-জিদের এখন ‘অপরাধী’ করে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। জুলাই সনদ যদি আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়িত না হয়, যদি আইনি প্রক্রিয়ায় এটা নিশ্চিত না হয়, তাহলে তরুণদের এই অপরাধী করার চেষ্টা আদালত পর্যন্ত যাবে। এনসিপি শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বলে আসছে গণপরিষদ নির্বাচন হচ্ছে বাংলাদেশকে উত্তরণের একমাত্র পথ।
অনুষ্ঠানে মূল ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন। এতে বলা হয়, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে যে আইনি দলিল জারি করা হবে, তা যেন একটি ‘আদেশ’ আকারে হয়। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে প্রধান উপদেষ্টা স্বাক্ষর করবেন। ইতিমধ্যে সারা দেশে নির্বাচনী ডামাডোল শুরু হয়ে গেছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল গণভোটের ব্যাপারে সম্মতি দিয়ে এসে এখন অস্বীকারের দুরভিসন্ধি করছে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের এক বছরের কিছু সময় পেরিয়ে গেছে। এখন আলোচনাটা এসে ঠেকেছে সংস্কার প্রয়োজন নাকি সংস্কার প্রয়োজন না? এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ২০০১ সালে বিএনপি তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছিল, সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন হবে। ২০২৫–এ এসে দলটি বলছে, সেই বাস্তবতা নেই। নারীর জন্য সরাসরি মনোনয়ন মাত্র ৫ শতাংশে সম্মত হয়েছে। অনেক সনদ হয়, আলোচনা হয়। পরে সেগুলো আর আলোর মুখ দেখে না। তাই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখার বিষয়ে এনসিপি শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে, যাতে জনগণ জানতে পারে তাঁদের সঙ্গে কী হলো।
জুলাই সনদকে নারীবিহীন বলে মন্তব্য করেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব কাজী জেসিন। তিনি বলেন, নারীবিয়ষক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সদস্যদের কোনো রাজনৈতিক নেতা যখন গালি দিয়েছেন, তখন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেখা গেল না। নারীদের অনলাইনে ঘায়েল করা হচ্ছে। গণভোটে এতগুলো বিষয়ে ভোটাররা নিজের সিদ্ধান্ত অনুসারে ভোট দেবেন কি না, সেটা নিয়েও তিনি সংশয় প্রকাশ করেন।
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব হুমায়রা নূর বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা বলে যে সহজভাবে বোঝালে মানুষ অবশ্যই বুঝবে, কোথায় ‘হ্যাঁ-না’ ভোট দিতে হবে।’
আরও বক্তব্য দেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন, এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক মনজিলা ঝুমা, জাতীয় যুবশক্তির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী, লেখক ও শিক্ষক মারদিয়া মমতাজ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নারীবিষয়ক সম্পাদক জাকিয়া শিশির, আপ বাংলাদেশ–এর মুখপাত্র শাহরিন ইরা, চ্যানেল ২৪–এর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জুম্মাতুল বিদা প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ব ষয়ক এনস প র ত হয় ছ গণভ ট
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই জাতীয় সনদে নারীর বিষয় উপেক্ষিত
জুলাই জাতীয় সনদে নারীর বিষয় উপেক্ষিত হয়েছে। নারীবিহীন এই জুলাই সনদ গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া গণভোটের জন্য ৪৮টি প্রস্তাব আছে, এত প্রস্তাব পড়ে জনগণ কোনটায় ‘হ্যাঁ–না’ ভোট দেবেন, সেটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জটিলতার সম্মুখীন হতে পারে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের গুরুত্ব সহজভাবে বোঝালে মানুষ অবশ্যই বুঝবে, কোথায় ‘হ্যাঁ–না’ ভোট দিতে হবে।
এমন নানা রকমের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ছিল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জাতীয় নারী শক্তি শাখার আলোচনা সভায়। আজ শনিবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘নারীর কণ্ঠে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা’ শিরোনামে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্ন্তবর্তী সরকার গঠিত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে রোকেয়া হলের মেয়েরা প্রথম প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল বের করেছিলেন। তাঁদের পরে আর কোথাও রাখা হলো না। নারীবিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের পর তা নিয়ে গালিগালাজ করা হলো, হেনস্তা করা হলো। অথচ এর বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে কোনো আওয়াজ করা হলো না। তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদের পুরো প্রক্রিয়া নারীবিবর্জিত। যতটা না ব্যথিত হয়েছি, বিষয়টি তার চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় ও উদ্বেগে ফেলেছে। এটা কিসের লক্ষণ, দেশ কোন দিকে যাচ্ছে? জুলাই সনদে নারীদের উপেক্ষা করা হয়েছে। তাই এই সনদ গ্রহণ করি না। জুলাই সনদ হলো কি হলো না, সেটা আর আমাদের ব্যাপার না।’ ৪৮টি বিষয়ে কীভাবে গণভোট হবে, সেটা নিয়েও তিনি সংশয় প্রকাশ করেন।
জুলাই সনদের পুরো প্রক্রিয়া নারীবিবর্জিত। যতটা না ব্যথিত হয়েছি, বিষয়টি তার চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় ও উদ্বেগে ফেলেছে। এটা কিসের লক্ষণ, দেশ কোন দিকে যাচ্ছে?শিরীন পারভীন হক, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধানঅনুষ্ঠানে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির প্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, জুলাই সনদ হয়েছে নারীদের বাদ দিয়ে। এর আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় নারীদের রাখা হয়নি। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন ৫০টি থেকে বাড়িয়ে ১০০টি করার দাবি ছিল। সরাসরি নির্বাচনে অন্তত ৩৩ শতাংশ নারীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি ছিল। রাজনৈতিক দলগুলো সেটাকে শেষ পর্যন্ত ৫ শতাংশে এসে নামিয়েছে।
জেন-জি বা তরুণ প্রজন্মের রক্তের ওপর দিয়ে এ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, এই জেন-জিদের এখন ‘অপরাধী’ করে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। জুলাই সনদ যদি আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়িত না হয়, যদি আইনি প্রক্রিয়ায় এটা নিশ্চিত না হয়, তাহলে তরুণদের এই অপরাধী করার চেষ্টা আদালত পর্যন্ত যাবে। এনসিপি শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বলে আসছে গণপরিষদ নির্বাচন হচ্ছে বাংলাদেশকে উত্তরণের একমাত্র পথ।
অনুষ্ঠানে মূল ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন। এতে বলা হয়, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে যে আইনি দলিল জারি করা হবে, তা যেন একটি ‘আদেশ’ আকারে হয়। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে প্রধান উপদেষ্টা স্বাক্ষর করবেন। ইতিমধ্যে সারা দেশে নির্বাচনী ডামাডোল শুরু হয়ে গেছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল গণভোটের ব্যাপারে সম্মতি দিয়ে এসে এখন অস্বীকারের দুরভিসন্ধি করছে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের এক বছরের কিছু সময় পেরিয়ে গেছে। এখন আলোচনাটা এসে ঠেকেছে সংস্কার প্রয়োজন নাকি সংস্কার প্রয়োজন না? এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ২০০১ সালে বিএনপি তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছিল, সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন হবে। ২০২৫–এ এসে দলটি বলছে, সেই বাস্তবতা নেই। নারীর জন্য সরাসরি মনোনয়ন মাত্র ৫ শতাংশে সম্মত হয়েছে। অনেক সনদ হয়, আলোচনা হয়। পরে সেগুলো আর আলোর মুখ দেখে না। তাই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখার বিষয়ে এনসিপি শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে, যাতে জনগণ জানতে পারে তাঁদের সঙ্গে কী হলো।
জুলাই সনদকে নারীবিহীন বলে মন্তব্য করেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব কাজী জেসিন। তিনি বলেন, নারীবিয়ষক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সদস্যদের কোনো রাজনৈতিক নেতা যখন গালি দিয়েছেন, তখন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেখা গেল না। নারীদের অনলাইনে ঘায়েল করা হচ্ছে। গণভোটে এতগুলো বিষয়ে ভোটাররা নিজের সিদ্ধান্ত অনুসারে ভোট দেবেন কি না, সেটা নিয়েও তিনি সংশয় প্রকাশ করেন।
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব হুমায়রা নূর বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা বলে যে সহজভাবে বোঝালে মানুষ অবশ্যই বুঝবে, কোথায় ‘হ্যাঁ-না’ ভোট দিতে হবে।’
আরও বক্তব্য দেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন, এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক মনজিলা ঝুমা, জাতীয় যুবশক্তির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী, লেখক ও শিক্ষক মারদিয়া মমতাজ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নারীবিষয়ক সম্পাদক জাকিয়া শিশির, আপ বাংলাদেশ–এর মুখপাত্র শাহরিন ইরা, চ্যানেল ২৪–এর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জুম্মাতুল বিদা প্রমুখ।