বৈষম্যের পিঁপড়া খেয়ে নিচ্ছে সাফল্যের গুড়
Published: 9th, November 2025 GMT
আর্থসামাজিক বিভিন্ন সূচকে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য থাকলেও অর্থনৈতিক বৈষম্য সেটাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য পরিমাপের সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি গিনি গুণাঙ্ক (গিনি কো–এফিশিয়েন্ট) অনুযায়ী অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়েছে। ২০২২-এর খানা জরিপ অনুযায়ী গিনি গুণাঙ্ক বেড়ে হয়েছে দশমিক ৫০ এবং ২০২০ সালে যা ছিল দশমিক ৪৫। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বাড়ার বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয় যখন পরিসংখ্যানে উঠে আসে যে শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনী দেশের প্রায় ৪১ শতাংশ আয়ের অধিকারী, ২০১৬ সালে যা ছিল প্রায় ৩৮ শতাংশ। অপর পক্ষে দরিদ্রতম ১০ শতাংশ খানা মাত্র ১ শতাংশের কিছু বেশি আয়ের মালিক (খানা জরিপ ২০২২, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো)।
তবে আয়বৈষম্য বিবেচনায় আমাদের ভাবনাটা পরিসংখ্যানের বাইরে গিয়ে বাস্তবতার নিরিখে হওয়া উচিত। মনে রাখা জরুরি, খানা জরিপের নমুনা চয়নে সমাজের অতি ধনীদের উপস্থিতি অনেক ক্ষেত্রে একেবারেই নগণ্য। ধনীদের সম্পদের সঠিক হিসাব না থাকা ও অপ্রদর্শিত সম্পদের কারণে জরিপে অর্থনৈতিক বৈষম্যের সঠিক চিত্র উঠে আসে না। তাই বৈষম্যের প্রকৃত চিত্র পরিসংখ্যানের চেয়ে আরও অনেক ব্যাপক।
কর ও রাজস্বব্যবস্থার দুর্বলতাক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রেক্ষাপটে বলা চলে, অবৈধ অর্থনৈতিক লেনদেন, ঋণখেলাপি, কর ফাঁকি, সম্পদ পাচার তথা দুর্নীতির কারণে সমাজের একটি শ্রেণির কাছে বিপুল পরিমাণে অর্থ পুঞ্জীভূত হয়েছে। শ্বেতপত্র কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সময়কালে প্রতিবছর অন্তত ১৬ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খেলাপি ঋণ ও অন্যান্য মাধ্যমে আর্থিক খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ। আয়বৈষম্যে এর প্রতিফলন পড়েছে।
দুর্নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সুশাসনের অভাব ছাড়াও করব্যবস্থার কাঠামোগত দুব৴লতা, কর ফাঁকি ও কর আদায়ে শ্লথগতির কারণে বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত এখনো মাত্র ৯ শতাংশ। এর ফলে প্রগতিশীল করকাঠামোর মাধ্যমে সম্পদের সুষম বণ্টন ও ধনী-দরিদ্রের আর্থিক ব্যবধান কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে তেমন কোনো সুফল আমরা দেখছি না। পাশাপাশি আমাদের রাজস্বব্যবস্থায় প্রত্যক্ষ করের অনুপাত মোট কর আদায়ের এক-তৃতীয়াংশ মাত্র। প্রত্যক্ষ কর যেমন অর্থনৈতিক বৈষম্য কমাতে সহায়তা করে, তেমনি প্রত্যক্ষ করের পরিবর্তে পরোক্ষ করের (যেমন ভ্যাট) বোঝা ধনী ও দরিদ্র উভয়ের ওপরই সমানভাবে পড়ে। তাই পরোক্ষ করনির্ভর দুর্বল রাজস্ব আহরণব্যবস্থা বৈষম্য কমাতে সহায়ক হচ্ছে না। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের সীমাবদ্ধতা সামাজিক নিরাপত্তা খাতসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, বাংলাদেশ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশের কম ব্যয় করে—বৈষম্য নিরসন কিংবা দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য যা নিতান্তই অপ্রতুল। এ ছাড়া রয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অস্বচ্ছতা ও অনিয়ম। মনে রাখা জরুরি, দারিদ্র্য আর অর্থনৈতিক বৈষম্য ভিন্ন ভিন্ন বিষয় হলেও দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপগুলো আয়বৈষম্য কমাতেও সাহায্য করতে পারে। সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত অনুসারে বাংলাদেশে প্রতি চারজনের একজন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। পাশাপাশি একটি বড় জনগোষ্ঠীর নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রেক্ষাপটে এই চিত্র মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়।
কর্মসংস্থান তৈরিতে শ্লথগতিদারিদ্র্য দূরীকরণ ও এর মাধ্যমে সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের অবস্থার উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরেকটি অন্তরায় নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে শ্লথগতি। বিগত এক দশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির তুলনায় নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে অপেক্ষাকৃত কম। অর্থনীতির ভাষায় এমপ্লয়মেন্ট ইলাস্টিসিটি অব গ্রোথ বা জিডিপির কর্মসংস্থানের স্থিতিস্থাপকতার মান ২০১৬-২০২২ সময়কালে মাত্র দশমিক ৩৪। এটা প্রমাণ করে, প্রবৃদ্ধির সুফল সাধারণ মানুষের কাছে সেভাবে পৌঁছাচ্ছে না। এ কারণে বাড়ছে বৈষম্য।
অর্থনৈতিক বৈষম্যের অন্যান্য কারণের বাইরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির ভূমিকাও রয়েছে। চলতি বছরের আগস্ট মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ৮ শতাংশ, যা ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের তুলনায় কম (প্রায় ১০ শতাংশ, বিবিএস ২০২৫) হলেও মজুরি বৃদ্ধির হারের তুলনায় মূল্যস্ফীতি বেশি। এ কারণে প্রকৃত আয়ের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রবণতা লক্ষ করা যায়। দীর্ঘদিন ধরে চলা মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলার জন্য সামাজিক কর্মসূচি, বিশেষ করে টিসিবির খোলাবাজার কর্মসূচির অপ্রতুলতা ও অন্যান্য কর্মসূচির সীমাবদ্ধতার কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না; বাড়ছে ধনী-দরিদ্রের আয়ের ফারাক।
খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি বাড়িয়ে নিম্ন আয়ের মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়া সম্ভব.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স খ য ন ব যবস থ ক ষ কর দর দ র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেলেন ঢাবির ৭৪ শিক্ষক-শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের শিক্ষার্থীদের তিন বছরের (২০২১, ২০২২ ও ২০২৩) এবং শিক্ষকদের পাঁচ বছরের (২০২১, ২০২২, ২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫) ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে।
অনুষদের ৫টি বিভাগের মোট ৪৪ জন শিক্ষার্থী ডিনস অ্যাওয়ার্ড পান। এছাড়া দেশে-বিদেশে প্রকাশিত গবেষণা গ্রন্থ এবং স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত মৌলিক প্রবন্ধের জন্য ৩০ জন শিক্ষককে ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
আরো পড়ুন:
ঢাবিতে শুরু হচ্ছে ইকবাল ও নজরুলকে নিয়ে আন্তর্জাতিক কনফারেন্স
ঢাবি প্রক্টরকে হুমকি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হাতে এ অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হয়।
ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. উপমা কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সোনালী ব্যাগের উদ্ভাবক ও বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের সাবেক বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমেদ খান ডিনস অ্যাওয়ার্ড স্পিকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
বিভাগীয় চেয়ারম্যানরা ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত শিক্ষকদের নাম ঘোষণা করেন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. উপমা কবির।
এ সময় বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, প্রাধ্যক্ষ, অনুষদের শিক্ষক ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ করা হয়।
ডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলেন-জগন্নাথ বিশ্বাস, মো. নিজাম উদ্দিন তানিম, শ্রাবণী সরকার, নাজমুল হাসান নাঈম, আফসানা আনজুম আঁখি, নুসাইবা এহসান, আসমা ইয়াসমিন খান রিমু, মেহরিন ফাত্তাহা, কায়সারী ফেরদৌস, মোহাম্মদ আজমাঈন ফাতিন (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং), নিশাত তামান্না আদিবা, এহসানুল হক, মো. শাহিদুল ইসলাম, মো. আহসানুল হক মামুন, মো. আব্দুল হাসনাত, সাহাল জুবায়ের, তাইমিমা মাহবুব, ফাইরুজ তাহিয়া, ফাতেমা-তুজ-জহুরা (ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল), মো. আমিনুল কাদের বুলবুল, শাবাব মুর্শেদ, রাহিব হাসান, জহির সাদিক মনন, তাহমিদ মোসাদ্দেক, মহিদুল হক মৃদুল, আবদুল্লাহ ইবনে হানিফ আরিয়ান, মাবসুর ফাতিন বিন হোসাইন, ইত্তেহাদ সালেহ চৌধুরী, সৌমিক শাফকাত অভ্র (কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল), এইচ রাইনাদ খান রোহান, কে. এম. সৌরভ, মো. নবীর হোসেন, মো. ফাহিম ফরায়েজি, তাসফিয়া রহমান রিভা, মাহমুদুল হাসান তামিম, জেরিন তাহসিন আনজুম, তাসনুভা তামিসা অর্পি, ফারহান লাবিব অর্ণব (নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং), মিকদাম-আল-মাদ রৌন, আব্দুল মোনাফ চৌধুরী, হুমায়রা রশিদ, সানিয়া কায়েনাত চৌধুরী, মো. এহতেশামুল হক, আতিক তাজওয়ার (রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং)।
ডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেন- অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক (২০২১, ২০২৩, ২০২৫), মো. তানভীর আলম (২০২৪) (কম্পিউটার বিজ্ঞান অ্যান্ড প্রকৌশল), ড. আবুল খায়ের মল্লিক (২০২১, ২০২৩), অধ্যাপক ড. মো. নুরনবী (২০২৪), ড. তাসলিম উর রশিদ (২০২২, ২০২৩), অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল ইসলাম মোল্লা (২০২৪), সাদিত বিহঙ্গ মালিথা (২০২১) (ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল), ড. সেঁজুতি রহমান (২০২১, ২০২৩, ২০২৪) (রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং), মো. আরিফুল ইসলাম (২০২৩), মো. সিফাত-ই-আরমান ভূঁইয়া (২০২৩, ২০২৫), ড. মো. মেহেদী হাসান (২০২৪), মো. হোসাইন শাহাদাত (২০২১), ড. অনিমেষ পাল (২০২১, ২০২৫), অধ্যাপক ড. আফরোজা শেলি (২০২২, ২০২৫) (নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং), ড. মাইনুল হোসেন (২০২২, ২০২৪, ২০২৫), ড. শেখ মো. মাহমুদুল ইসলাম (২০২২, ২০২৩), ড. মো. আহসান হাবীব (২০২৫), ইমতিয়াজ আহমেদ (২০২৪) (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং)।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, “মেধাকে মূল্যায়ন করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। একই সঙ্গে অভিভাবকদেরও আমরা সঙ্গে রাখতে পেরেছি। আসলে আপনারাও আমাদেরই অংশ।”
উপাচার্য বলেন, “মেধার অন্যতম ভিত্তি হলো পরিশ্রম। মনে রাখতে হবে, সাফল্যের পেছনে অনেকের অবদান থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের যে পরম্পরা তা তোমরা ধরে রেখেছো। এটাই আমাদের গর্ব। তবে মনে রাখতে হবে অহংবোধ যেন আমাদের মধ্যে জাগ্রত না হয়।”
ঢাকা/সৌরভ/সাইফ