জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) পুনরায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চালুর দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। 

বুধবার (২৫ জুন) দুপুরে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’র ব্যানারে তারা এ বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় প্রশাসন ভবনের ভেতরে আটকা পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা কমনওয়েলথ প্রতিনিধি দল, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ এবং কয়েকজন সাংবাদিক।

পরে ভর্তিচ্ছু, কমনওয়েলথ প্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক অনুরোধ করলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

আরো পড়ুন:

কুমিল্লা বোর্ডে এইচএসসি থেকে ঝরে পড়ল ২৫ হাজার শিক্ষার্থী

ষষ্ঠ মেধাতালিকা দিয়েও জবির ‘বি’ ইউনিটে অর্ধশতাধিক আসন ফাঁকা

জানা যায়, গত বছরের নভেম্বরে বেপরোয়া গতির অটোরিকশার ধাক্কায় প্রাণ হারান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা রাচি। এর প্রতিবাদের অটোরিকশা বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের চলাচলের বিকল্প বাহনের ব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীদের একাংশ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই সময় অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয়।

এছাড়া শিক্ষার্থীদের চলাচলের বিকল্প বাহন হিসেবে প্রথমে শাটল বাস সার্ভিস এবং পরবর্তীতে পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক কার্ট চালু করে। তবে ইলেকট্রিক কার্টের সংখ্যা বাড়াতে  বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক সময় চায়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অটোরিকশা চালুর দাবি জানায়। 

শিক্ষার্থীদের এই অংশটির পক্ষে বুধবার দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেন শাশ্বত প্রামাণিক বাবাই নামে এক শিক্ষার্থী। তবে ঘেরাও কর্মসূচিতে এসে তারা হঠাৎই প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন প্রশাসনিক ভবনে আসা সেবা প্রার্থীরা।

এদিকে, বুধবার প্রথম বর্ষের ভর্তিচ্ছুদের ভর্তির শেষ দিন ছিল। আন্দোলকারীরা ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন ভর্তিচ্ছুরা। তারা ও সঙ্গে আসা অভিভাবকরা তাদের ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানালেও আন্দোলনকারীদের নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে কর্ণপাত করেনি। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম আটকে পড়াদের ছেড়ে দিতে অনুরোধ করলে শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন।

এসময় প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে আটকে পড়েন উপাচার্যের সাথে সাক্ষাতে আসা কমনওয়েলথ প্রতিনিধি দল এবং সাংবাদিকদের ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলে বিক্ষোভকারীরা উপস্থিত সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন এবং মারতে তেড়ে আসেন।

মারতে তেড়ে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলেন, ৫১তম ব্যাচের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের তানজির রহমান হিমেল, ইতিহাস ছাত্র সংসদের জিএস একেএম রোকোনুজ্জামান রিমন, ৫০ ব্যাচের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের নাইম আহমেদ সানি অন্যতম। তবে বাকিদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

আন্দোলনকারী নন এমন শিক্ষার্থীরাও প্রশাসনিক ভবনের ভিতরে যেতে দেওয়ার অনুরোধ করলে তাদের ওপরও চড়াও হন বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে প্রক্টর তালা ভেঙ্গে ফেলার কথা জানালে খুলে দেন বিক্ষোভকারীরা।

এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী আকিব সুলতান বলেন, “বিক্ষোভকারীরা ভবনের মধ্যে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের আটকে বিক্ষোভ চলমান রাখেন। সাংবাদিকরা অন্তত তাদের বের করে দেওয়ার অনুরোধ জানালে বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন মব সৃষ্টি করে মারতে তেড়ে আসে। এটা ন্যাক্কারজনক।”

ভিতরে আটকে পড়া ভর্তিচ্ছু আয়েশা আক্তার বলেন, “আমি খুলনা থেকে আসছি। আমাদের কি দোষ? আমরা ভর্তি শেষ না হতেই তারা আমাদের জিম্মি করে রেখেছে। তালা খুলতে বললেও কয়েকজন খারাপ ব্যবহার করেন।”

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম বলেন, “তারা ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করছিল। তাদের বলা হয়েছে লিখিত আবেদন দিতে, সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে অংশীজনদের মতামত নিয়ে সাতদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া কিছু শিক্ষার্থী অতিউৎসাহী হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে অসদাচরণ করেছে। সেগুলোর ফুটেজ সংগ্রহ করে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভবন র অন র ধ ভর ত চ ছ ভবন র

এছাড়াও পড়ুন:

চালককে চেতনানাশক খাইয়ে অটোরিকশা ছিনতাই করেন তাঁরা

প্রথমে যাত্রী সেজে ভাড়া নিতেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা। পথে কৌশলে চালককে চেতনানাশক খাওয়াতেন। একপর্যায়ে চালক অচেতন হয়ে পড়লে অটোরিকশা ছিনতাই করে পালিয়ে যেতেন চক্রের সদস্যরা। দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি এভাবে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছিনতাই করে আসছে। এই চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ঢাকা ও মুন্সিগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. করিম মিয়া (৪৩), মো. মান্নান খান (৬৬), মনসুর ওরফে মোশারফ (৪৩), মজিবর (৫৪), জসিম (৩৭), মনির (৪৫), মো. জামাল হোসেন (৬৬), তৌহিদুল ইসলাম রবিন (২৬) ও ইউনুস (৫০)। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ডিবির বরাত দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১ অক্টোবর ভোর সাড়ে চারটার দিকে মোহাম্মদপুরের আল্লাহ করিম বাসস্ট্যান্ডে চা খাচ্ছিলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মো. শাহজালাল। এ সময় ৩০০ টাকায় কেরানীগঞ্জের আটিবাজারে যাওয়ার কথা বলে তাঁর অটোরিকশাটি ভাড়া করেন অপরিচিত এক যাত্রী। একপর্যায়ে ওই যাত্রী কৌশলে অটোরিকশাচালকের চায়ের মধ্যে চেতনানাশক মিশিয়ে দেন।

চা খাওয়া শেষে ওই যাত্রীকে নিয়ে আটিবাজারের উদ্দেশে রওনা করার কিছুক্ষণের মধ্যে প্রচণ্ড ঘুম অনুভব করেন অটোরিকশার চালক। তখন বছিলা মেট্রো হাউজিং গেটের কাছে গাড়ি থামাতেই চালক শাহজালাল অচেতন হয়ে পড়েন। চক্রটি তাঁকে রাস্তায় ফেলে অটোরিকশা, তাঁর মুঠোফোন ও মানিব্যাগে থাকা ৩ হাজার ৫৫০ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পরে চক্রটি চালকের মুঠোফোন থেকে অটোরিকশার মালিক জয়কে ফোনে ৬০ হাজার টাকা দাবি করে। তাদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে জয় ৬০ হাজার টাকা পাঠান। এরপর একই তারিখে রাত ১০টার দিকে চক্রটি জয়কে আবার ফোন দিয়ে অটোরিকশাটি রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের সামনে রাস্তার ওপর রাখা আছে বলে জানায়। পরে জয় গিয়ে সেখান থেকে অটোরিকশাটি নিয়ে আসেন। এ ঘটনায় ৬ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় নিয়মিত মামলা হয়।

ডিবির বরাত দিয়ে আরও বলা হয়, ডিবি তেজগাঁও বিভাগের একটি দল ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর ধোলাইপাড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে করিম মিয়া, মান্নান খান, মনসুর ওরফে মোশারফ, মজিবর, জসিম ও মনিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী একই দিন বেলা পৌনে একটার দিকে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের মূল হোতা মো. জামাল হোসেন, তৌহিদুল ইসলাম ও ইউনুসকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ১ হাজার ৯০০ পিস চেতনানাশক ট্যাবলেট ও এক লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

ডিবি সূত্র আরও জানায়, এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে যাত্রীবেশে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে চালকদের চেতনানাশক ট্যাবলেট খাইয়ে অটোরিকশা ছিনতাই করে আসছে। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫১ বছর ধরে পত্রিকা পৌঁছে দিচ্ছেন সৈয়দপুরের গফফার
  • চালককে চেতনানাশক খাইয়ে অটোরিকশা ছিনতাই করেন তাঁরা