পশ্চিমবঙ্গের পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত সন্ন্যাসী কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ নারীর
Published: 28th, June 2025 GMT
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এক নারী পদ্মশ্রী খেতাবপ্রাপ্ত বিতর্কিত সন্ন্যাসী কার্তিক মহারাজ নামে পরিচিত স্বামী প্রদীপ্তানন্দের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। তিনি দাবি করেছেন, ২০১৩ সাল থেকে বহুবার তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। কার্তিক মহারাজ একটি বিদ্যালয়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তখন থেকে তাঁর ওপর যৌন নির্যাতন শুরু করেন।
কার্তিক মহারাজ মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার ভারত সেবাশ্রম সংঘের সঙ্গে যুক্ত। তবে তিনি নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, ‘আমার সম্মানহানি করতে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’
এ বছর কার্তিক পদ্মশ্রী পুরস্কার পেয়েছেন। এটি ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান।
কার্তিকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এমন এক সময়ে এসেছে, যখন রাজ্যে আরেকটি ধর্ষণের ঘটনায় রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। দক্ষিণ কলকাতার একটি আইন কলেজে এক ছাত্রী দুই সহপাঠী ও এক স্টাফের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর আগের বছর আর জি কর মেডিকেল কলেজে এক শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ওই ঘটনা দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় তোলে।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে নাবগ্রাম থানায় দায়ের করা মামলায় ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে কার্তিক মহারাজের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তখন তাকে ‘চানাক আদিবাসী আবাসিক বালিকা বিদ্যালয়’-এ চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে তাঁকে স্কুলের হোস্টেলে থাকতে দেওয়া হয়।
ওই নারীর অভিযোগ, ‘প্রায় প্রতিদিনই কার্তিক আমাকে স্কুল ভবনের পাঁচতলায় নিয়ে ধর্ষণ করতেন।’
ওই নারী অভিযোগ, একবার তাঁকে পাঁচ দিনের জন্য আশ্রমে থাকতে বলেন কার্তিক মহারাজ। সেখানেও বহুবার ধর্ষণ করেন। পরে তাঁকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন এবং প্রতি মাসে টাকা পাঠানোর আশ্বাস দেন।
ওই নারী আরও অভিযোগ করেন, ২০১৩ সালে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে কার্তিক ও স্কুলের কয়েকজন কর্মী তাঁকে বহরমপুরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে গর্ভপাত করাতে নিয়ে যান। তিনি রাজি না হলে হুমকি দেওয়া হয়। দুই কর্মীর উপস্থিতিতে এক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে জোর করে গর্ভপাত করানো হয়।
ওই নারীর দাবি, এরপরও তিনি চাকরির অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু বারবার যৌন নির্যাতনের শিকার হন।
ওই নারী অভিযোগ করেন, ‘কার্তিক আমাকে মুর্শিদাবাদের নানা আশ্রমে নিয়ে যান। সেখানেও আমি ধর্ষণের শিকার হই। আমি শুধু চাকরির আশায় চুপ ছিলাম। ধীরে ধীরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি।’
ওই নারী দাবি করেন, ১২ জুন তিনি মহারাজের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি তাঁকে ১৩ জুন সন্ধ্যা ৭টায় বহরমপুরের একটি নির্দিষ্ট স্থানে অপেক্ষা করতে বলেন। তখন দুজন লোক এসে তাঁকে গাড়িতে তোলে এবং কার্তিকের সঙ্গে আর যোগাযোগ না করতে হুমকি দেয়। এরপর তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে গাড়ি থেকে ফেলে দেয়।
এ ঘটনার কঠোর বিচার দাবি করেছেন ওই নারী।
তবে কার্তিক দাবি করেন, ‘সবকিছু সময়ই প্রমাণ করে দেবে। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের আশ্রমে অনেক নারী কাজ করেন এবং অনেক নারী শিষ্যও আছেন। তাঁদের জিজ্ঞাসা করুন, সবাই বলবে আমরা নারীদের মাতার মতো সম্মান করি।’
এই কার্তিক বিজেপি ও আরএসএসের পক্ষে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতিতে বিতর্ক সৃষ্টি করছিলেন। ভারতের জাতীয় নির্বাচনের সময় ২০২৪ সালের মে মাসে এক নির্বাচনী প্রচারে মমতা বন্দোপাধ্যায় তাঁর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, ‘সব সাধু সমান হয় না। আমাদের মধ্যেও কি আমরা সবাই সমান? এই যে বহরমপুরের একজন মহারাজ আছে, আমি শুনেছি অনেক দিন ধরে, কার্তিক মহারাজ। ভারত সেবাশ্রম সংঘকে আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় কৃষি ব্যাংকের লকার ভেঙে ১৬ লাখ টাকা লুট
খুলনার রূপসা উপজেলায় কৃষি ব্যাংকের একটি শাখা থেকে ১৬ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে। দুর্বৃত্তরা প্রবেশ গেটের পাঁচটি তালা ও লকার ভেঙে এ অর্থ লুট করে।
তবে, শুক্রবার (১৫ আগস্ট) ব্যাংক বন্ধ থাকায় সেখানে নিজস্ব নিরাপত্তা প্রহরী ছিল না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কৃষি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখার ম্যানেজার (ব্যবস্থাপক) কামরুল ইসলাম বলেন, “ভল্টে ১৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা ছিল, যা দুর্বৃত্তরা লুট করেছে।”
পুলিশ ও ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকটি পূর্ব রূপসা পেট্রোল পাম্প ও পূর্ব রূপসা বাসস্ট্যান্ড পুলিশ ফাঁড়ির কাছে খুলনা-মোংলা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে যেকোনো সময়ে লুটের ঘটনা ঘটতে পারে।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় নিরাপত্তা প্রহরী আবুল কাশেম ব্যাংকে গিয়ে দেখেন মেইন গেটের তালা ভাঙা। ভেতরে ঢুকে তিনি দেখেন মূল গেট ও লকারও ভাঙা অবস্থায় রয়েছে এবং সবকিছু এলোমেলো। তিনি বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানান। পরে ব্যাংকের ক্যাশিয়ার পুলিশের উপস্থিতিতে লেজার ও ক্যাশ মিলিয়ে দেখা যায় ১৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা নেই। লুটপাটের আগে দুর্বৃত্তরা প্রতিটি সিসিটিভি ক্যামেরার ওপর রুমাল দিয়ে ঢেকে দিয়েছিল।
নিরাপত্তা প্রহরী আবুল কাশেম জানান, তার স্ত্রী অসুস্থ থাকার কারণে তিনি শুক্রবার সারাদিন ব্যাংকে ছিলেন না। তবে দুপুর ২টার দিকে তিনি একবার ব্যাংকে গিয়ে দেখেছিলেন সবকিছু ঠিক আছে। তার অনুমান, বিকেলের দিকে এ ঘটনা ঘটেছে।
রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, “বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায়। ওই দিন থেকে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে যেকোনো সময়ে ব্যাংকে লুটের ঘটতে পারে। আমরা ব্যাংক থেকে এবং আশপাশের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেগুলোর বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।”
ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস