‘কমপ্লিট শাটডাউনে’ আখাউড়া দিয়ে ভারতে গেল ২৬ পণ্যবাহী ট্রাক
Published: 28th, June 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলছে। এর মধ্যেই আজ শনিবার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে গেল ২৬টি পণ্যবাহী ট্রাক। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, ২৬টি ট্রাকের কাগজপত্র আগের দিন স্বাক্ষর করা হয়েছিল।
আখাউড়া স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ভারতের ত্রিপুরার আগরতলায় আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ২৩টি ট্রাকে করে ৯২ মেট্রিক টন মাছ এবং তিনটি ট্রাকে করে ৬৬ মেট্রিক টন আটা গিয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার হয়েছে যার সংখ্যা প্রায় দুইশ।
সরেজমিনে স্থলবন্দরে দেখা যায়, কর্মচাঞ্চল্য নেই বন্দরে। ব্যবসায়ীদেরও আনাগোনা তেমন একটা চোখে পড়েনি। বন্দরের শূন্যরেখায় আগরতলায় যেতে মাছ ও আটা ভর্তি ট্রাক সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। কাস্টমস অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, কর্মকর্তারা অলস বসে আছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সদরুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘‘আজ শনিবার কর্মবিরতি থাকায় কাস্টমস কর্মকর্তারা নতুন কোনো কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেনি। গতকাল স্বাক্ষরিত কাগজপত্রের ভিত্তিতে আজ কিছু পণ্য ভারতে পাঠানো হয়েছে।’’
স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী নেসার আহমেদ ভূঁইয়া জানান, যেসব পণ্যের কাগজপত্র আগেই সম্পন্ন ছিল, সেগুলোই রপ্তানি করা হয়েছে। তবে কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে নতুন করে আজ কোনো পণ্য ভারতে যায়নি।
এদিকে আখাউড়া স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, শুক্রবারে প্রস্তত কিছু ট্রাক আজ শনিবার সকালে ভারতে গেছে পণ্য নিয়ে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘‘আজ ২৬টি ট্রাক আটা ও হিমায়িত মাছ নিয়ে আগরতলা বন্দরে গেছে। এর মধ্যে ২৩টি ট্রাকে ৯২ মেট্রিক টন হিমায়িত মাছ ও তিনটি ট্রাকে ৬৬ মেট্রিক টন আটা ভারতের আগরতলায় রপ্তানি হয়েছে।’’
পলাশ//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ট র ক টন কর মকর ত ক গজপত র ক স টমস
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্কের উদ্বেগজনক ধারা চলছে
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যে অশুল্ক বাধার ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্কের দুই দেশের জন্য একটি উদ্বেগজনক ধারা চলছে। সম্প্রতি ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া চার ধরনের পাটজাত পণ্যের ক্ষেত্রে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানির পরিবর্তে শুধু মুম্বাইয়ের নাভোসেভা বন্দরে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে।
এতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের প্রবাহে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। কারণ, বর্তমানে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের ৯৯ শতাংশের বেশি রপ্তানি স্থলপথেই ভারতে যায়। এই নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো শুধু খরচ বাড়াবে না, বরং বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য বড় ধরনের লজিস্টিক জটিলতাও তৈরি করবে। যদিও ভারত এসব সিদ্ধান্তকে নিয়মকানুন বা গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে দেখাতে পারে। কিন্তু এসব নিষেধাজ্ঞার হঠাৎ প্রয়োগ ও পুনরাবৃত্তি একটি কৌশলগত উদ্দেশ্যের বিষয়ে সন্দেহ তৈরি করে।
তবে শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশও একই পথে হাঁটছে। ২০২৪ সালের শেষ দিক থেকে বাংলাদেশ ভারতীয় সুতা ও কয়েকটি পণ্যের আমদানিতে স্থলবন্দর দিয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ভারতের সীমান্তবর্তী তিনটি স্থলবন্দর বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, অবকাঠামোর অভাব ও সীমিত বাণিজ্য কার্যক্রম। এসব পদক্ষেপকে দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা ও নিয়ন্ত্রণমূলক প্রবণতার অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে। এসবই একধরনের রক্ষণশীল অর্থনৈতিক নীতির ইঙ্গিত দেয়, যা পারস্পরিক আস্থা ও দ্বিপক্ষীয় স্থিতিশীল বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটায়।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, এত দিন ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে পরিচিত ভারত ও বাংলাদেশ এখন বাণিজ্য সমস্যা সমাধানে স্বচ্ছ সংলাপের পরিবর্তে একতরফা নিষেধাজ্ঞা ও অশুল্ক বাধার দিকে ঝুঁকছে। এসব পদক্ষেপ শুধু দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষতি করছে না (যেখানে ভারতে বাংলাদেশের তুলনায় ভারসাম্যহীনভাবে বেশি রপ্তানি হয়। ভারত থেকে বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয় এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হয় মাত্র ২ বিলিয়ন ডলারের মতো), বরং এটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতির সম্ভাবনাও ধ্বংস করছে। বৈশ্বিক বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা যখন বাড়ছে, তখন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর উচিত পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা দরকার। এর পাশাপাশি সংরক্ষণবাদী নীতি গ্রহণ না করা। এসব সরবরাহ চেইন ভেঙে দেয় এবং শিল্পোন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে।
বর্তমানে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করা উচিত, যা স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ থেকে মুক্ত। বাণিজ্যকে পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহনশীলতার মাধ্যম হিসেবে দেখা, চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার নয়। দুই সরকারকেই কাঠামোগত আলোচনায় অগ্রাধিকার দিতে হবে, অশুল্ক বাধা–সম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তির উপায় খুঁজে বের করতে হবে এবং বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ সহজতর করতে প্রাতিষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে। রাজনৈতিক মতভেদ যেন বৃহত্তর অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুফলকে ছাপিয়ে না যায়। কারণ, দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি অনেকটাই এ সহযোগিতার ওপর নির্ভর করছে।