৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে গুলিতে নিহত হয় মারুফ
Published: 5th, August 2025 GMT
“তিনটি সন্তান নষ্ট হওয়ার পর চিকিৎসকের পরামর্শে অনেক সাধনা করে আমরা মারুফকে পেয়েছিলাম। তাকে সুশিক্ষিত করতে গ্রাম ছেড়ে টাঙ্গাইল শহরে এসেছিলাম। সে পড়াশোনাতেও অনেক ভাল ছিল। গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনা পালানোর পর বিজয় মিছিল থেকে সবার সন্তান বাড়ি ফিরলেও আমার মারুফ ফিরেনি। সবার বুক ভরে গেলেও আমার বুকে যন্ত্রণা। আমার মারুফ দেশের জন্য জীবন দিলেও আমরা কিছুই পাইনি। মারুফের বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছি।”
গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের বর্ষপূর্তির দিন ৫ আগস্ট (মঙ্গলবার) রাইজিংবিডি ডটকমের এ প্রতিবেদককে এসব কথা বলেছেন শহীদ মারুফের মা মোছা.
মারুফ হত্যা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত বছরের ৫ আগস্ট দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করেন। বিকেলে ছাত্র-জনতা বিজয় মিছিল বের করে। টাঙ্গাইল শহরে বিজয় মিছিলে অংশ নেয় শাহীন স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র মারুফ মিয়া। সন্ধ্যার দিকে বিজয় মিছিলটি শহরের মেইন রোডে পৌঁছালে তাদের ওপর রাইফেল, পিস্তল, শটগান ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়। একপর্যায়ে মারুফ সিটি ব্যাংক ভবনের দ্বিতীয় তলায় আশ্রয় নেয়। সেখানে কেউ শটগান দিয়ে মারুফকে গুলি করে। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মারুফকে মৃত ঘোষণা করেন।
মারুফের মা মোছা. মারুফা বেগম বাদী হয়ে ১৮ আগস্ট টাঙ্গাইল সদর থানায় সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম ও আট সাবেক সংসদ সদস্যসহ ৫৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় জেলা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংঠনের শীর্ষ নেতাসহ অজ্ঞাতপরিচয় ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলা সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন কারাগারে আছেন।
মারুফা বেগম বলেছেন, “সকলেই এসএসসি পরীক্ষা দিল। আমার ছেলে বেঁচে থাকলে এবার এ পরীক্ষায় অংশ নিত। আমি যখন পরীক্ষার কেন্দ্রের সামনে গেছি, তখন আমার বুকটা ফেটে গেছে। আমার বুকটা সব সময় হাহাকার করে। মারুফের সমবয়সীরা যখন আমার পাশে আসে, তখনো খুব খারাপ লাগে।”
তিনি বলেন, “মারুফের বাবাও তাকে মাটি দিতে পারেননি। তিনিও ফোন করে অনেক কান্না করেন। বিদেশে তারও অবস্থা ভাল না। আমাদের সংসার কীভাবে চলবে, সে চিন্তা হয় সব সময়। যারাই ক্ষমতায় থাকুক, একটু সহযোগিতা করলে আমাদের অনেক উপকার হবে।”
তিনি বলেন, “ছেলে হত্যার মামলা করেছি প্রায় এক বছর আগে। মামলায় তেমন অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না। আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। যারা এ হত্যার সাথে জড়িত, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”
মারুফা বেগম আরো বলেন, “আমার তো সব শেষ। ছেলে হত্যার বিচার পেলে তাও নিজেকে একটু সান্ত্বনা দিতে পারব। আমার ছেলে তো কোন রাজনৈতিক দলের না। তারপরও বিচার পেতে কেন এত বিলম্ব হচ্ছে? কয়েকজন আসামি গ্রেপ্তার হলেও বাকিরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।”
টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সময়ন্বয়ক ও জেলা শাখার আহ্বায়ক আল আমিন বলেন, “মারুফ হত্যা মামলার বিচারের বিষয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, তদন্ত কর্মকর্তার সাথে একাধিকবার কথা হয়েছে। প্রকৃত আসামিদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে মারুফ হত্যা মামলা শেষ করার দাবি জানাই।”
টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তানবীর আহাম্মেদ বলেছেন, “এখন পর্যন্ত মারুফ হত্যা মামলায় এজহারনামীয় ছয়জনকে গ্রেপ্তার হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত আছে। মামলাটির তদন্ত চলছে।”
ঢাকা/কাওছার/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম র ফ হত য ব জয় ম ছ ল ৫ আগস ট মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
রাশিয়ার তিনটি মিগ-৩১ রুখে দেওয়ার দাবি ন্যাটোর
ইউরোপের বাল্টিক অঞ্চলের দেশ এস্তোনিয়ার আকাশসীমায় রাশিয়ার তিনটি যুদ্ধবিমান অনুপ্রবেশ করেছে বলে দাবি করেছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো। শুক্রবার অনুপ্রবেশের ঘটনার পর সেগুলো রুখে দেওয়া হয় বলে জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ন্যাটো বলেছে, এটি রাশিয়ার ‘বেপরোয়া আচরণ’।
ন্যাটোর সদস্যদেশ এস্তোনিয়া। রুশ যুদ্ধবিমান অনুপ্রবেশকে ‘নির্লজ্জ’ পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শুক্রবার মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনুমতি না নিয়েই রাশিয়ার তিনটি মিগ–৩১ যুদ্ধবিমান ন্যাটোর সদস্য এস্তোনিয়ার আকাশে প্রবেশ করে। ফিনল্যান্ড উপসাগরের ওপর সেগুলো মোট ১২ মিনিট ছিল।
রুশ যুদ্ধবিমানের ‘অনুপ্রবেশ’ নিয়ে ন্যাটোর মুখপাত্র অ্যালিসন হার্ট বলেন, যুদ্ধবিমানগুলো শনাক্ত করার পর দ্রুত পদক্ষেপ নেন তাঁরা। সেগুলোকে পথিমধ্যে আটকে দেওয়া হয়। বিস্তারিত না জানিয়ে তিনি বলেন, এটি রাশিয়ার বেপরোয়া আচরণ এবং ন্যাটোর জবাব দেওয়ার সক্ষমতার আরও একটি উদাহরণ।
এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি মস্কো। তবে ২০২২ সালে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ন্যাটো ও মস্কোর মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। এরই মধ্যে গত সপ্তাহে ন্যাটোর আরও দুই সদস্যদেশ—পোল্যান্ড ও রোমানিয়া তাদের আকাশে রাশিয়ার ড্রোন অনুপ্রবেশের দাবি করেছে।
ন্যাটো রুশ যুদ্ধবিমান তাড়ানোর দাবি করার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান কাজা কালাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেছেন, ইউরোপের সম্পদ ব্যবহার করে সদস্যদেশগুলোর প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করতে সহায়তা দিয়ে যাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমাদের সংকল্প কতটা দৃঢ়, তা পরীক্ষা করে দেখছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আমাদের দুর্বলতা প্রকাশ করা উচিত হবে না।’
একই সুরে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেন এক্সে লিখেছেন, ‘আমরা প্রতিটি উসকানির জবাব দৃঢ়তার সঙ্গে দেব, পাশাপাশি পূর্ব সীমান্তকে আরও শক্তিশালী করতে বিনিয়োগ করব।’