গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে ফরিদপুর জেলা বিএনপির দুপক্ষের পৃথক বিজয় মিছিল, সংঘাতের শঙ্কা
Published: 5th, August 2025 GMT
গণ–অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে বিজয় মিছিল করার উদ্যোগ নিয়েছে ফরিদপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে জেলা বিএনপির বিভক্তি আবার প্রকাশ্যে এল। আগামীকাল বুধবার বিকেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ বিজয় মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে। প্রায় একই সময়ে জেলা বিএনপির দুই পক্ষের দুটি মিছিল একই পথ দিয়ে যাওয়ায় সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিএনপির উভয় অংশের নেতা-কর্মীরা।
একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেবেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ও সদস্যসচিব এ কে এম কিবরিয়া। অপর মিছিলের নেতৃত্ব দেবেন জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন খানসহ আহ্বায়ক কমিটির পাঁচ যুগ্ম আহ্বায়ক।
বুধবার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের নেতৃত্বে একটি মিছিল জেলা ও মহানগর বিএনপির ব্যানারে বিকেল চারটার দিকে শহরের ব্রহ্মসমাজ সড়কে অবস্থিত সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে মুজিব সড়ক ধরে ইমাম উদ্দিন আহমাদ স্কয়ার হয়ে গোরস্তানের মোড়, হাজরাতলার মোড়, ভাঙ্গা রাস্তার মোড় দিয়ে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে একাত্তরের শহীদদের নামসংবলিত বেদির সামনে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা।
অন্যদিকে পাঁচ যুগ্ম আহ্বায়কের নেতৃত্বের মিছিলটিও হবে জেলা ও মহানগর বিএনপির ব্যানারে। এটি বেলা তিনটার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট স্কুলের সামনে থেকে শুরু হওয়ার কথা। মিছিলটি মুজিব সড়ক ধরে জেনারেল হাসপাতালের সামনে দিয়ে জনতা ব্যাংকের মোড় হয়ে ইমামউদ্দিন আহমাদ স্কয়ারে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা।
আয়োজনকারী দুটি মিছিলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুটি মিছিলেই কয়েক হাজার মানুষের সমাগম ঘটবে। প্রায় একই সময়ে বিএনপির দুই পক্ষের দুটি মিছিল নিয়ে সংঘর্ষ কিংবা সংঘাতের পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে বলে নেতা–কর্মীরা আশঙ্কা করছেন।
জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর জেলা বিএনপির বিভক্তির ইতিহাস অনেক পুরোনো। তবে কেন্দ্রীয় নির্দেশে গত ১২ জুলাইয়ের মধ্যে জেলার সম্মেলন আয়োজন করতে না পারায় এ বিরোধ আবার নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
গত ২ জুন কেন্দ্রীয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ফরিদপুর জেলা ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবকে চিঠি দিয়ে ইউনিটগুলোর সমন্বয়ে ১২ জুলাইয়ের মধ্যে জেলার সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশ দেন। এবং এ আয়োজন ব্যর্থ হলে জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। তবে ১২ জুলাইয়ের মধ্যে সম্মেলন আয়োজন করা যায়নি।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ৩ আগস্ট জেলার সম্মেলন আয়োজনের জন্য তিন মাস সময় চেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে আবেদন জানান আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ও সদস্যসচিব এ কে এম কিবরিয়া। এর আগে গত ৬ জুলাই জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির পাঁচ যুগ্ম আহ্বায়কসহ ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির ১৫ জন সদস্য বিএনপির কমিটিকে ‘মেয়াদোত্তীর্ণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে জেলার আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির মাধ্যমে জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের অনুরোধ জানান। তবে কেন্দ্রীয় বিএনপি এ দুটি বিষয়ে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।
আগামীকাল বুধবার দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে বিজয় মিছিল করার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে এম কিবরিয়া বলেন, ‘এ বিজয় মিছিলের জন্য প্রস্তুতি সভা করেছি। সেখানে বিএনপির সব সহযোগী সংগঠনকে যোগ দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি। তারপরও একই নামে আরেকটি বিজয় মিছিলের আয়োজন কেন করা হলো তা আমার বোধগম্য নয়।’ তবে প্রায় একই সময়ে একই ব্যানারে দুটি মিছিলের আয়োজন করা হলেও কোনো সংঘাত কিংবা সহিংসতা ঘটবে না বলে তিনি মনে করেন।
পাঁচ যুগ্ম আহ্বায়কের একজন সৈয়দ জুলফিকার হোসেন বলেন, ‘বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর ২ জুনের চিঠি অনুযায়ী ১২ জুলাইয়ের মধ্যে জেলা সম্মেলন আয়োজনে ব্যর্থ হওয়ায় জেলা বিএনপির কোনো অস্তিত্ব নেই। আমরা জেলা বিএনপির কমিটিকে বৈধ মনে করি না বিধায় পৃথক এ আয়োজন করেছি।’ প্রায় একই সময়ে দুটি মিছিল শহরের এক পথ দিয়ে গেলে সংঘাত হওয়ার সুযোগ থাকলেও সংঘাত হবে না বলে তিনি আশাবাদী।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র য় একই সময় ও সদস যসচ ব ব জয় ম ছ ল ব এনপ র ক ব এনপ র ব র স মন কম ট র হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
বন নিধনের জন্য বন বিভাগও দায়ী: উপদেষ্টা
পার্বত্য চট্টগ্রাসহ সারা দেশে বন নিধনের জন্য বন বিভাগও দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। তিনি বলেন, ‘‘বন নিধনের জন্য বন বিভাগও কম দায়ী নয়। তবে কেন বন নিধন হয়েছে, সেটা ভাবতে হবে। সেটা থেকে উত্তরণের জন্য দায়িত্ব নিতে হবে। বনগুলো বাঁচাতে হবে।’’
শনিবার (২ আগস্ট) সকালে রাঙামাটিতে সপ্তাহব্যাপী বৃক্ষমেলা উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘কোন গাছ কোন প্রকৃতির এবং অর্থনৈতিকভাবে যেসব গাছ আছে তা নিয়ে একটি সার্ভে করা দরকার। কোনো গাছের বিকল্প নির্ধারণ না করে নিষিদ্ধ করা ঠিক নয়। শুধু আম, কাঁঠাল নয়, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রাখার জন্য কী কী গাছ লাগানো যায়, তা নির্ধারণ করা উচিত।’’
আরো পড়ুন:
৪ লাখ টাকার অবৈধ কাঠসহ ট্রাক আটক
বনরক্ষীদের ওপর হামলা, জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: পরিবেশ সচিব
পরিবেশ বিষয়ে পার্বত্য অঞ্চলের আদিকাল থেকে বসবাসকারীরা অনেক বেশি সচেতন দাবি করে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘পাহাড়ধস এসব মানুষের বাড়িঘরে হয় না। প্রকৃতিকে যারা চেনেন না, তারাই পাহাড়ধসের শিকার হন।’’
‘পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি’ এই প্রতিপাদ্যে শনিবার সকালে রাঙামাটিতে শুরু হয়েছে সাত দিনব্যাপী বৃক্ষমেলা। বৃক্ষমেলা উপলক্ষে সকালে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে একটি র্যালি বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জিমনেশিয়ামে মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের আয়োজনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ, পুলিশ সুপার এস এম ফরহাদ হোসেন, সিভিল সার্জন নুয়েন খীসা, পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম সাজ্জাদ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের রাঙামাটি সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম।
এ সময় বক্তারা বলেন, ‘‘প্রতিনিয়ত নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে, বন ধ্বংস করা হচ্ছে। অথচ এসব গাছ, বন মানবজাতির জন্য খাবার তৈরি করছে। বিপরীতে আমরা কিছু তৈরি করতে পারি না। ঔষধি গাছগুলো মানুষের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে। গাছকে অবহেলা করলে মানবজাতি টিকে থাকতে পারবে না। তাই প্রত্যেকের অন্তত প্রতি বছর তিনটি গাছ লাগানো উচিত। একইসঙ্গে সেইসব গাছের রক্ষণাবেক্ষণ, যত্নও নেয়া উচিত। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে গাছ লাগানোর ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়া দরকার।’’
পরে জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করেন উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন জাতের ফলদ, বনজ ও ঔষধি চারা বিক্রি করা হচ্ছে।
ঢাকা/শংকর/বকুল