চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার বললেন, ‘আপা আর আসবে না, কাকা আর হাসবে না’
Published: 5th, August 2025 GMT
বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট ছড়িয়ে জুলাই ঐক্য বিনষ্ট করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরকে ইঙ্গিত বলেন, ‘আপনারা ষড়যন্ত্রকারীদের বলে দেবেন, আপা আর আসবে না, কাকা আর হাসবে না।’ আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রামে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসের এক সভায় তিনি এ কথা বলেন।
দুপুরে নগরের সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত ব্যক্তিদের সংবর্ধনা ও আলোচনা সভার আয়োজন করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন বিভাগীয় কমিশনার মো.
এক পর্যায়ে বক্তব্য দেন জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আপনাদের ঐক্য যে বিনষ্ট করা হচ্ছে, এটা আপনারা খেয়াল করছেন না। আপনারা যদি এটা খেয়াল না করেন, শত্রুরা সুযোগ পেয়ে যাবে। শত্রুরা কিন্তু আবার আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মনে করতে হবে, এটা তাদের সাইবার ওয়ারফেয়ারের একটা অংশ। এই অংশকে আপনাদের প্রতিহত করতে হবে।’
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে আমরা যাঁরা প্রশাসনে রয়েছি, তখন (ঐক্যবদ্ধ না হলে) আমাদেরও কিন্তু একই পরিণতি বরণ করতে হবে। আপনারা যদি আপনাদের পরিণতি সঠিক চান, দেশটাকে যদি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে মুক্ত করতে চান, আপনাকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আপনারা ষড়যন্ত্রকারীদের বলে দেবেন, আপা আর আসবে না, কাকা আর হাসবে না।’
একই সভায় চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) আহসান হাবীব বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে পুলিশকে অনেক সময় অনেক ধরনের কাজ করতে হয়। পুলিশের গুলিতে অতীতে যে লোক মারা যায়নি, তা কিন্তু নয়। কিন্তু মানুষ সেগুলো মেনে নিয়েছে। ভেবেছে, হয়তো পুলিশের কিছু ভুলত্রুটি থাকতে পারে বা আমাদের কিছু ভুলত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু এবারের গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের যে ভূমিকা ছিল, আমরা যাঁরা পুলিশে আছি, আমরাও অত্যন্ত ব্যথিত।’
ডিআইজি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের কারও কারও মধ্যে কিছুটা পথভ্রষ্টতা দেখা গিয়েছিল। স্বাধীনতার পর তাঁরা হয়তো সঠিক পথ পাননি, কাজ পাননি, এ জন্য হয়তো কেউ কেউ পথভ্রষ্ট হয়েছিলেন। আমি এ (জুলাই) আন্দোলনে যাঁরা সম্পৃক্ত ছিলেন, তাঁদের বলব, এখনকার চেতনা কত দিন ধরে রাখতে পারবেন, আমি জানি না। কিন্তু সেটা ধরে রাখেন, একটু পড়াশোনায় সম্পৃক্ত হোন, কিছু করার চেষ্টা করেন।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারছে না: বাম গণতান্ত্রিক জোট
বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বলেছেন, ২০২৪–এর গণ–অভ্যুত্থানের নায়ক ছিলেন সাধারণ ছাত্র-শ্রমিক-জনতা। এক বছর পর এসে দেখা যাচ্ছে, সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারছে না। বেকারত্ব বাড়ছে; প্রতি চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন। এ অবস্থা পরিবর্তনে এ বছরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জুলাই গণ–অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা এ কথা বলেন।
সমাবেশে বাম জোটের নেতারা বলেন, গণ–অভ্যুত্থানে গণতন্ত্র ও বৈষম্যহীন সমাজের স্লোগান সামনে এলেও বৈষম্যমুক্তির পথ নিয়ে কোনো আলোচনা হচ্ছে না। বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের কথা হলেও কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচনসহ জনস্বার্থের বিষয় নিয়ে সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়নি। নারী অধিকার নিয়ে কথা হলেও এর বিরুদ্ধাচারণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গণ–অভ্যুত্থানকে ব্যবহার করে দেশের রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল চক্র সক্রিয় হয়েছে উল্লেখ করে সমাবেশে বক্তারা বলেন, এরা মহান মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করে এর অর্জন, ইতিহাস-ঐতিহ্য মুছে ফেলতে চাইছে। অন্তর্বর্তী সরকার নিজেই নিজেকে বিতর্কিত করে ফেলেছে। বিশেষ দল ও গোষ্ঠীর প্রতি তাদের পক্ষপাত দেখা যাচ্ছে।
গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর, বাসদের (মার্ক্সবাদী) প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী।
সমাবেশ শেষে বাম জোটের নেতা–কর্মীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।