যশোর সদর উপজেলার নোঙরপুরের মাঠে এ বছর এক কেজি আলু উৎপাদন করতে কৃষকের ৮ থেকে ৯ টাকা খরচ হয়েছে। সেখান থেকে বাছাই করে হিমাগারে রাখার উপযোগী প্রতি কেজি আলুর দাম পড়ে ১৫ টাকার মতো। এর সঙ্গে হিমাগারভাড়া দিতে হয়েছে কেজিতে ৬ টাকা। বস্তা কেনাসহ পরিবহন ও শ্রমিক খরচ মিলিয়ে রয়েছে আরও তিন টাকা। অর্থাৎ হিমাগারে এক কেজি আলু সংরক্ষণ করতে ২৪ টাকা খরচ হয়েছে। সংরক্ষণের পাঁচ মাস পরে এখন হিমাগারে পাইকারিতে সাড়ে ১৫ থেকে ১৬ টাকা কেজি দরে আলু বেচাকেনা হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি কেজি আলুতে কৃষকদের ১০ টাকার মতো লোকসান গুনতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে ব্যাপারীরাও লোকসানে রয়েছেন।

নোঙরপুর গ্রামের আলুচাষি বদরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বছর ৩৩ শতকের ৭ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছিলাম। বিঘাতে খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা মতো। বৃষ্টির কারণে ফলন কম হয়েছে। সেখান থেকে ৫০ কেজি ওজনের ১০০ বস্তা আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করেছি। কিন্তু পাইকারি পর্যায়েই আলুর দরপতন ঘটেছে। মার্চ থেকে ৫ মাস আলু সংরক্ষণের পরেও দেখা যাচ্ছে, কেজিতে ১০ টাকা করে লোকসান হয়ে যাচ্ছে। তাই অভাব থাকলেও আলু বের করতে পারছি না।’

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই জেলায় মোট ১১টি হিমাগারে এ বছর ৪০ হাজার ৪৯৬ মেট্রিক টন খাওয়ার আলু ও ৩ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন বীজ আলু সংরক্ষণ করা হয়। এসব হিমাগার থেকে গত ৫ মাসে ১০ হাজার ২৩২ মেট্রিক টন খাবার আলু বের করা হয়েছে। এখন অবশিষ্ট আছে ৩০ হাজার ২৬৪ মেট্রিক টন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর যশোরের জ্যেষ্ঠ জেলা কৃষি কর্মকর্তা কিশোর কুমার সাহা বলেন, ‘এটা ঠিক যে ১০ টাকা না হলেও প্রতি কেজি আলুতে কৃষকদের ৫ থেকে ৭ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। তবে আগামী এক মাসের মধ্যে আলুর বাজার চাঙা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, ব্যবসায়ীরা মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আলু রপ্তানির চেষ্টা করেছেন। এ ছাড়া অতি বৃষ্টির কারণে এবার সবজি উৎপাদন কম হচ্ছে। এতে আলুর চাহিদা বাড়বে। ফলে এর দাম বেড়ে যাবে।’

স্থানীয় আলুচাষিরা বলছেন, প্রতি বস্তা আলু হিমাগারে রাখতে খরচ হয়েছে ৪০০ টাকা। এখন সেই আলু বিক্রি করে তাঁরা প্রতি বস্তায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনছেন। এই সংকট মোকাবিলায় সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।

আলুতে লোকসান হওয়ায় হিমাগার থেকে আলু বের হচ্ছে কম। যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার গাইটঘাট এলাকার সরদার রোকেয়া কোল্ডস্টোরেজে এ বছর ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে খাওয়ার আলু ৬ হাজার ৫৩১ মেট্রিক টন ও বীজ আলু ৯০০ মেট্রিক টন সংরক্ষণ করা হয়। গত ৫ মাসে মাত্র ৫৪৫ মেট্রিক টন খাওয়ার আলু বের হয়েছে।

হিমাগারটির সিনিয়র সুপারভাইজার বলেন, কেজিতে ৯ থেকে ১০ টাকা লোকসান হচ্ছে কৃষকদের।

এদিকে চাষিদের আশঙ্কা, যদি বর্তমান পরিস্থিতি চলতেই থাকে তাহলে তাঁদের অনেকেই আগামী মৌসুমে আলু চাষে আগ্রহ হারাবেন। ফলে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তার ওপর প্রভাব পড়তে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্থানীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে যশোর জেলায় আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। এই জমি থেকে আলুর ফলন পাওয়া গেছে ৩৬ হাজার ৩৪৮ মেট্রিক টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘যশোরের ভূমি নিচু। তারপরও এই জেলায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদনের সময়ে কৃষকেরা ভালো দাম পেয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ট র ক টন খরচ হয় ছ ১০ ট ক এ বছর

এছাড়াও পড়ুন:

ডিএসইতে ৭৫ শতাংশ শেয়ার-মিউচুয়াল ফান্ডের দরপতন

চলতি সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (৩ নভেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের বড় পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। লেনদেনে শেষে ডিএসইতে এ দিন ৩০০টি বা ৭৫.৩৮ শতাংশের বেশি শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দরপতন হয়েছে।

এ দিন আগের কার্যদিবসের চেয়ে ডিএসইতে লেনদেন কমলেও সিএসইতে কিছুটা বেড়েছে। তবে উভয় পুঁজিবাজারে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম কমেছে।

আরো পড়ুন:

৭ কোটি টাকা সংগ্রহে লিও আইসিটি ক্যাবলসের কিউআইও’র আবেদন

বিএসইসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আইসিএসবির প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ

বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অনেক দিন ধরে পুঁজিবাজারে লেনদেনের শুরুতে সূচকের উত্থান দেখা গেলেও লেনদেন শেষে তা পতনে রূপ নেয়। সোমবার সকাল থেকেই ডিএসইএক্স সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতায় লেনদেনের শুরু হয়। লেনদেনের শেষ হওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। তবে গত কয়েক মাসের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন অনেক কমে গেছে।

ডিএসই ও সিএসই সূত্রে জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৫৪.৮৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৬১ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১২.৩৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৬৬ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ২১.৯৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৬০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

ডিএসইতে মোট ৩৯৮টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৪৫টি কোম্পানির, কমেছে ৩০০টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৫৩টির।

ডিএসইতে মোট ৫১৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৫৪৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ৪৯.৫৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৭৭৬ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৮৭.৯৭ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ২২৫ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ২.১৬ পয়েন্ট কমে ৮৯৬ পয়েন্টে এবং সিএসই ৩০ সূচক ৪.২৫ পয়েন্ট কমে ১২ হাজার ৬৬৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সিএসইতে মোট ১৯৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৪২টি কোম্পানির, কমেছে ১২৬টির এবং অপরিবর্তিত আছে ২৫টির।

সিএসইতে ২৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১৬ কোটি ৫১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
 

ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ডিএসইতে ৭৫ শতাংশ শেয়ার-মিউচুয়াল ফান্ডের দরপতন