জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জাতীয় পার্টির
Published: 6th, August 2025 GMT
গতকাল ৫ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থাপন করা ঐতিহাসিক ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’র প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে জাতীয় পার্টি।
দলটি বলেছে, জুলাই ঘোষণাপত্র বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে।
বুধবার (৬ আগস্ট) জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু যৌথ বিবৃতিতে এ সমর্থনের কথা জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, “জাতীয় পার্টি মনে করে, এই ঘোষণাপত্রে জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার, ভোটাধিকার, আইনের শাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক নিশ্চয়তার মতো মৌলিক দাবিগুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা আমাদের দলের মৌলিক আদর্শের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।”
“জাতীয় পার্টি এই ঘোষণা অনুযায়ী গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আস্থা প্রকাশ করছে এবং প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার ও একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ,” যোগ করেন নেতারা।
জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা বলেন, “জাতীয় পার্টি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছে যে, শহীদদের আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যেতে পারে না। আমরা তাদের জাতীয় বীর হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান, আহত ও নিহতদের আইনি সুরক্ষা এবং দোষীদের বিচারের দাবির সাথে একমত।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “জাতীয় পার্টি বিশ্বাস করে, এই ঘোষণাপত্র আগামী দিনে গণতান্ত্রিক, সহনশীল ও টেকসই রাষ্ট্রের ভিত্তি রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এই ঘোষণাপত্রের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও একাত্মতা ঘোষণা করা হলো।”
আরো বলা হয়, “জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাজনৈতিক দর্শনের আলোকে বর্তমান জাতীয় পার্টি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, গণতান্ত্রিক, সুশাসিত ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের জন্য এই ঘোষণাপত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সংবাদমাধ্যম সরকারের চেয়ে জনগণের কাছে বেশি দায়বদ্ধ: তথ্য উপদেষ্টা
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, সংবাদমাধ্যম সরকারের চেয়ে জনগণের কাছে বেশি দায়বদ্ধ। জনগণের মধ্যে আস্থা ফেরাতে সংবাদমাধ্যমগুলোকে সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।
রোববার রাজধানীর তথ্য ভবনের ডিএফপি অডিটরিয়ামে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের আয়োজনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিক পরিবার ও আহত এবং সাহসী সাংবাদিকদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তথ্য উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
মাহফুজ আলম বলেন, মিডিয়ার ওপর জনগণের আস্থা ফেরাতে সংবাদমাধ্যমকে হতে হবে জবাবদিহিমূলক। সংবাদমাধ্যম যদি স্বাধীনতা চায়, তাকে জবাবদিহি করতেই হবে। যারা ১৬ বছর ধরে স্বৈরাচারের দালালি করেছে, তাদের কেউ জনগণের কাছে ক্ষমা চায়নি।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কোনো হাউসকে (সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠান) বাধ্য করিনি কিছু প্রচার করতে। তবে গত ছয় মাসে দেশের অনেকগুলো হাউস গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা ও ঐক্যকে ভণ্ডুল করতে কাজ করেছে।’
মাহফুজ আলম বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের ১২ দফা নিয়ে কাজ করছি। সাংবাদিক সুরক্ষা আইন, নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন—এসব নিয়ে এগোচ্ছি। আমরা আহত সাংবাদিকদের জন্য প্রশিক্ষণ, পুনর্বাসনের চেষ্টা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সম্প্রচার নীতিমালার কথা ভাবছি এবং অনলাইন নীতিমালাও তৈরি হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এগুলো বাস্তবায়িত হবে।’
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘কারফিউর সময়ে যে সাংবাদিকতা, বিশেষ করে টেলিভিশনের সাংবাদিকতা, আপনারা জানেন খুবই একপক্ষীয় ছিল। একটা রিলস বারবার দেখানো হচ্ছিল। বিটিভির ওখানে “পুড়ে গেছে সব”, “সব ধ্বংস”, “আগুন সন্ত্রাস”। হাসিনা যা বলত, ওই কথাগুলো বারবার টিভিতে দেখানো হচ্ছিল।’
তবে মাহফুজ আলম বলেন, ‘আন্দোলনের সময় কয়েকটি হাউস খুব ভালো ভূমিকা রেখেছে। অনেক সাংবাদিক ব্যক্তি হিসেবে সাহস দেখিয়েছেন। পুরো কৃতিত্ব হাউসের নয়, সাংবাদিকদের। কিন্তু এই সুযোগ বারবার আসবে না। বারবার মানুষ জীবন দিতে পারে না। প্রতি ২০ বছর পরপর রক্ত দেওয়ার কোনো মানে হয় না।’
তথ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান এটা মাত্র শুরু। একটা নতুন বাংলাদেশের শুরু। কিন্তু নতুন বাংলাদেশ এক বছরেই বা দুই বছরে সম্ভব নয়। বরং এটা যদি অব্যাহত লড়াই থাকে, তাহলে সম্ভব।’
অনুষ্ঠানে মাঠের সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই ছিল বাংলাদেশে সাংবাদিকতার সেরা সময়। আবার গত বছরের জুলাইয়ে আমরা সবচেয়ে খারাপ সাংবাদিকতাও দেখেছি।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘মেহেদী হাসান, তাহের জামান, আবু তাহের মো. তুরাব—এঁরা মাঠে নেমে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু অন্যদিকে কিছু সাংবাদিক গণভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপ্রধানকে প্রশ্ন করেছেন, আপনি এখনো এদেরকে শায়েস্তা করছেন না কেন? খুন করছেন না কেন?’ এটি পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. কাউসার আহাম্মদ, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা শামসি আরা জামান, শহীদ আবু সাঈদ হত্যার ভিডিও ধারণকারী সাংবাদিক তাওহীদুল হক সিয়াম ও দ্য ডেইলি স্টারের ফটো সাংবাদিক ইমরান হোসেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামূল কবীর, গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফায়জুল হক, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদা বেগম।
অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পাঁচ সাংবাদিকের পরিবার এবং আহত ও সাহসী ১৯২ জন সাংবাদিককে সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননার পাশাপাশি আর্থিক সম্মানী হিসেবে মোট ৫৬ লাখ টাকা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।