খোদ কোরিয়াতেই কমছে কে পপের জনপ্রিয়তা
Published: 6th, August 2025 GMT
দশকের পর দশক ধরে বিশ্বজুড়ে তরতরিয়ে বাড়ছে কে পপের জনপ্রিয়তা। বিলবোর্ড তালিকা রীতিমতো শাসন করছে বিটিএস, ব্ল্যাকপিঙ্ক, সেভেনটিন বা স্ট্রে কিডসের মতো কে পপ গ্রুপ। অ্যালবাম বিক্রিতে বিশ্বখ্যাত শিল্পীদেরও টেক্কা দিচ্ছে তারা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপ—সর্বত্র মুহূর্তেই ফুরিয়ে যায় কে পপ কনসার্টের টিকিট; কনসার্টে নামে লাখো শ্রোতার ঢল। তবে বিশ্বজুড়ে প্রভাব বাড়লেও স্বদেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় রীতিমতো হোঁচট খাচ্ছে কে পপ। দেশটিতে ক্রমেই তলানিতে গিয়ে ঠেকছে কে পপের প্রভাব।
২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসের পরিসংখ্যান নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মিউজিক চার্ট সার্কেল চার্ট। তাতে বলা হয়, গত বছরের তুলনায় এই বছর প্রকাশিত শীর্ষ ৪০০ গানের ডিজিটাল স্ট্রিমিং ৬ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। ২০১৯ সালের তুলনায় এই পতনের হার প্রায় ৫০ শতাংশ। অ্যালবাম বিক্রিও ৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪২ দশমিক ৪ মিলিয়নে, যেখানে গত বছর তা ছিল ৪৬ দশমিক ৭ মিলিয়ন।
সার্কেল চার্ট বলছে, গত বছর ৯টির মতো অ্যালবাম প্রতিটি ১ মিলিয়নের বেশি করে বিক্রি হয়েছিল, এবার সেই সংখ্যা ৭–তে নেমে এসেছে । গত বছর সেভেনটিনের অ্যালবাম তিন মিলিয়নের মাইলফলক ছুঁয়েছিল। তবে এই বছর কোনো অ্যালবাম বিক্রির হিসাবে তিন মিলিয়নের ধারেকাছে যায়নি।
কমছে কেন
বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা বাড়লেও দক্ষিণ কোরিয়ায় কমছে কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সার্কেল চার্টের ডেটা সাংবাদিক কিম জিন-উ মনে করেন, বিদেশি শ্রোতা ধরতে গিয়ে কে-শিল্পীরা ইংরেজি গান গাইছেন বেশি। ইংরেজি গানের প্রতি ঝোঁক আর একঘেয়ে সাউন্ডের কারণে স্থানীয় শ্রোতারা কে পপে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
কে পপ ব্যান্ডের বাইরে একক শিল্পীর উত্থান ঘটেছে। বিভিন্ন চার্টে সাফল্য পাচ্ছেন একক শিল্পীরা। চলতি বছর শীর্ষ ১০-এর মধ্যে ৭ জনই একক শিল্পী, যা আগে ব্যান্ডগুলোর জন্য বরাদ্দ ছিল। সংগীত সমালোচক লিম হি-ইয়ুনের ভাষ্য, আইডলদের (গ্রুপ) গানগুলো শুনতে দারুণ, তবে অনেক সময় শ্রোতাদের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারছে না।
আরও পড়ুনপ্রচ্ছদকন্যা ব্ল্যাকপিঙ্ক তারকা রোজে২০ নভেম্বর ২০২৪নতুন গ্রুপগুলো হতাশ করছে
কে পপের জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে মেয়েদের নতুন গ্রুপগুলো বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নতুন গ্রুপকে বলা হয় ‘রুকি’ গ্রুপ। ২০২৫ সালের প্রথম ভাগে নতুন কোনো গ্রুপের সাফল্য দেখা যায়নি। অথচ এই গ্রুপগুলো সাধারণত নতুন ভক্ত তৈরি করে এবং বাজারকে চাঙা রাখে। এই বছর শীর্ষ ১০–এ জায়গা পেয়েছে কেবল তিনটি গার্ল গ্রুপ-এসপা, আইভ ও নিউজিনস; তবে এগুলো কোনোটিই ‘রুকি’ নয়।
ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা
এক বিনোদন সংস্থার কর্মকর্তা (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে মূলধারায় প্রবেশ করতে গিয়ে অনেক গ্রুপ এমন গান করছে, যা কোরিয়ান শ্রোতাদের টানছে না।’ শিল্প–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, কে পপ যদি ঘরোয়া বাজারে জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে, তবে সেটি পুরো ইন্ডাস্ট্রির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্যসূত্র: কোরিয়া হেরাল্ড
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গত বছর
এছাড়াও পড়ুন:
নাইরোবিতে উইকিপিডিয়ার সম্মেলনে যাচ্ছেন ৫ বাংলাদেশি তরুণ
এ বছর উকিপিডিয়ানদের নিয়ে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে উইকিম্যানিয়া ২০২৫ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে ও পূর্ণ স্কলারশিপে এ অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন পাঁচ বাংলাদেশি উইকিপিডিয়ান।
প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে নির্বাচিত উইকিমিডিয়ানদের নিয়ে নিজস্ব খরচে এ সম্মেলনের আয়োজন করে উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন।
আগামী ৬ থেকে ৯ আগস্ট কেনিয়ার নাইরোবিতে বার্ষিক সম্মেলন ও উইকিম্যানিয়ার ২০তম বার্ষিকী অনুষ্ঠিত হবে। একইসঙ্গে একটি ভার্চুয়াল সংস্করণও থাকবে। এ সম্মেলনে যোগ দিতে পাঁচ বাংলাদেশি উইকিপিডিয়ান ইতোমধ্যে কেনিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন।
পাঁচ বাংলাদেশি উইকিপিডিয়ান হলেন, বগুড়ার মাসুম আল হাসান রকি, ময়মনসিংহের দোলন প্রভা, বরগুনার মুহাম্মদ ইয়াহিয়া, চাঁদপুরের দেলোয়ার হোসাইন ও আরব আমিরাত প্রবাসী বাংলাদেশি মো. জিল্লুর রহমান।
গত বছর অন্তত ১৪০ দেশের ২ হাজারের বেশি উইকিমিডিয়ান অংশ নিয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, এবার সেই সংখ্যা আরো বাড়বে। সম্মেলনের কনফারেন্স টিম উইকিপিডিয়ার নতুন প্রযুক্তি, ফিচার এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরছে। অংশগ্রহণকারীরাও মতামত দিচ্ছেন সরাসরি।
এবারের সম্মেলনে বাংলাভাষী উইকিমিডিয়ানদের উদ্যোগ বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। তুলে ধরা হচ্ছে ‘বাংলা উইকিমৈত্রী’ ও ‘উইকি ভালোবাসে রমজান’ প্রকল্পের সাফল্য ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা। এসব প্রকল্পে সম্মিলিতভাবে বাংলা উইকিপিডিয়াকে আরো তথ্যসমৃদ্ধ করা হয়েছে, তুলে ধরা হয়েছে রমজান মাসের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। ভবিষ্যতে আরো বেশি মানুষকে সম্পৃক্ত করে, এই উদ্যোগগুলোকে আরও বিস্তৃত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আঞ্চলিক সম্প্রদায় উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের আঞ্চলিক কার্যক্রমের তথ্যচিত্রও উপস্থাপনের কথা রয়েছে।
উইকিপিডিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিশ্বকোষ, যেখানে ৩ শতাধিক ভাষায় সাড়ে ৬ কোটিরও বেশি নিবন্ধ। আর এই বিশাল ভাণ্ডার গড়ে তুলেছেন লাখো স্বেচ্ছাসেবী। বাংলাদেশের উইকিপিডিয়ানরাও দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস আর ঐতিহ্য তুলে ধরছেন বিশ্ব দরবারে। এতে দেশের সম্মান যেমন বাড়ছে, তেমনি তরুণ প্রজন্মের আগ্রহও বাড়ছে।
এবার উইকিম্যানিয়া ২০২৫-এ বৈচিত্র্য, নারীর অংশগ্রহণ ও ভাষাভিত্তিক অবদানকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন শুরু করেছে ‘নোলেজ ইজ হিউম্যান, নোলেজ ইজ হার’ শীর্ষক ক্যাম্পেইন, যেখানে বিশ্বজুড়ে নারীর অবদান তুলে ধরা হচ্ছে। বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছেন উন্নয়নশীল দেশের নারী উইকিপিডিয়ানরা। শুধু সম্পাদক নয়, ইভেন্ট, ওয়ার্কশপ বা ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে অবদান রাখা সবাই এবার স্বীকৃতি পাচ্ছেন।
নাইরোবিতে উইকিম্যানিয়া ২০২৫-এর মূল প্রতিপাদ্য ‘বৈচিত্র্য, অন্তর্ভুক্তি ও টেকসই উন্নয়ন’। এখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা দেশের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও নারীবিষয়ক তথ্যের ঘাটতি পূরণে আলোচনা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন।
আরেকটি তথ্য হলো উইকিপিডিয়া এখন শুধু তথ্যভাণ্ডার নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের প্রধান তথ্যসূত্রও। তাই সবার সহযোগিতায় উইকিপিডিয়াকে আরও নির্ভরযোগ্য ও বৈচিত্র্যময় করতে এই সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এ বিষয়ে উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের সভাপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রযুক্তিবিদ শাবাব মুস্তাফা জানান, উইকিম্যানিয়া হচ্ছে উইকিপিডিয়ান ও উইকিমিডিয়ানদের নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় একটি সম্মেলন। এতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে উইকিপিডিয়ানরা বিশ্বকোষে তাদের অবদান বিষয়ে নানা অভিজ্ঞতা ও আইডিয়া বিনিময় করেন।
তিনি জানান, প্রায় প্রতি বছরই এ সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে উইকিপিডিয়ানরা অংশ নিয়ে থাকেন। আমরা আশা করছি বাংলাদেশি উইকিপিডিয়ানরা সেখান থেকে হৃদ্য হয়ে বাংলা উইকিপিডিয়া সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবেন।
ঢাকা/মেহেদী