ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মধুমতী নদীর ডান তীর সংরক্ষণ বাঁধের একাংশ ধসে যাওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের ‘মধুমতী নদী ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের অধীন এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই বাঁধের ৩০ মিটার অংশ ধসে পড়া নির্মাণকাজের গুণগত মান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করেছে।
বাঁধ ধসে পড়ার ঘটনায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় অনেক বাসিন্দা ধারদেনা করে নতুন করে বাড়িঘর তৈরি করেছিলেন, এখন তাঁদের আশ্রয় হারানোর ভয় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের উদ্বেগ সম্পূর্ণ যৌক্তিক। যখন একটি সরকারি প্রকল্প জনগণের জানমাল রক্ষার জন্য বাস্তবায়িত হয়, তখন তার মান নিয়ে কোনো আপস করা উচিত নয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী যদিও বলছেন, নদীর স্রোতোধারার পরিবর্তনের কারণে এই ঘটনা ঘটেছে এবং কাজের গুণগত মান ভালো ছিল, তবে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ ভিন্ন। তাঁদের মতে, তদারকি ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং যথাযথ ডাম্পিং ছাড়াই সিসি ব্লক বসানোর কারণে বাঁধটি ভেঙেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্রুত বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে জরুরি মেরামতের কাজ শুরু করলেও এটি কেবল একটি সাময়িক সমাধান। দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষার জন্য বাঁধটি সঠিকভাবে ও মজবুতভাবে পুনর্নির্মাণ করা জরুরি।
৪৮১ কোটি টাকার বিশাল এই প্রকল্পের আওতায় নির্মিত বাঁধটির এই দশা প্রমাণ করে, কেবল বাজেট বরাদ্দ করাই যথেষ্ট নয়; প্রকল্পের প্রতিটি স্তরে কঠোর তদারকি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা না হলে জনগণের অর্থে নির্মিত এমন বহু অবকাঠামোই অকালে ধসে পড়বে। সরকারের উচিত এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা এবং দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব বাঁধটি এমনভাবে মেরামত করা, যাতে তা ভবিষ্যতে নদীর প্রবল স্রোতকেও প্রতিরোধ করতে পারে। মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব সরকারের এবং এই দায়িত্ব পালনে কোনো গাফিলতি কাম্য নয়।
দেশে নদীভাঙন দিন দিন বাড়ছে। এ সমস্যা এখন আর্থসামাজিকভাবে আরও বড় বড় সংকট তৈরি করছে। সচ্ছল মানুষ এক রাতেই নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। ঘরবাড়ি, জায়গাজমি, দোকানপাট, ব্যবসা–বাণিজ্য হারানোর ফলে কর্মসংস্থানহীন হচ্ছে অনেক মানুষ। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়েও তৈরি হচ্ছে অনিশ্চয়তা। নদীভাঙা মানুষের চাপ বাড়ছে শহরগুলোয়। অপরিকল্পিত নগরায়ণেও এর প্রভাব পড়ছে। কিন্তু নদীভাঙন রোধ করতে গতানুগতিক প্রকল্প গ্রহণ, ঠিকাদার নিয়োগ, অর্থ খরচ হয়, তা নিয়ে বরাবরের মতোই সমালোচনা বিদ্যমান।
নদীশাসনের আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ, বাঁধ নির্মাণের আগে এর বৈজ্ঞানিকভাবে কার্যকারিতা, সম্ভাব্যতা যাচাইকরণ ও জনস্বার্থ রক্ষার বিষয়গুলো এখানে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। আমরা আশা করব, সরকারের নীতিনির্ধারকেরা এ ব্যাপারে মনোযোগী হবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প সরক র র রক ষ র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
কোনো দলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হলে জোট হতে পারে: সারজিস আলম
আগামীর বাংলাদেশ এবং জনগণের স্বার্থ সামনে রেখে যদি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়, তাহলে নির্বাচনী জোট হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এসসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ নগরের একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। এনসিপির কমিটি গঠন উপলক্ষে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার আহ্বায়ক এবং সদস্যসচিবের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সারজিস আলম বলেন, ‘যদি তারা (রাজনৈতিক দল) জুলাই সনদ বাস্তবায়নে একমত থাকে, বিচারিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে একমত থাকে, যদি তারা বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী এবং আওয়ামী ফ্যাসিস্টবিরোধী তাদের শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পারে—এ বিষয়গুলোতে যদি আমরা ঐকমত্য হতে পারি, তাহলে জনগণের স্বার্থে অ্যালায়েন্স (নির্বাচনী জোট) হতে পারে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলমান, তবে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
আগামী নির্বাচনে এনসিপি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং নিজেদের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করছে জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে যদি প্রতিটি ওয়ার্ডে এনসিপির আহ্বায়ক কমিটি থাকে, তাহলে ৩০০ আসনে শক্তিশালী প্রার্থী দিতে পারবেন। কমিটি গঠনের বিষয়ে কাজ চলছে।
আগামী সংসদ নির্বাচনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির (জাপা) অংশগ্রহণ করার কোনো অধিকার নেই উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি নেতা সারজিস আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এবং তাদের যারা দোসর জাতীয় পার্টি, তাদেরও আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো অধিকার নেই। এই জাতীয় পার্টির কত বড় সাহস, এই জিএম কাদেররা এবং এঁদের যারা সাঙ্গপাঙ্গ আছে, এরা যে খুনিদের দোসর এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ওই খুনিদের মদদদাতা, তার প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়। তারা যখন বলে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না! তাদের জন্মদাতা যে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ যে তাদের পেলেপুষে বড় করেছে, এর প্রমাণ তারা আবার নতুন করে দিচ্ছে। তাদের জাত চেনাচ্ছে। এই খুনিদের আগামীর বাংলাদেশের কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অধিকার নেই।’
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নে সারজিস আলম বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন আমাদের শাপলা প্রতীক দিতে গিয়ে তারা তাদের জায়গা থেকে একটি লম্বা সময় স্বেচ্ছাচারিতা করেছে এবং কোনো আইনগত বাধা না থাকা সত্ত্বেও আমাদেরকে শাপলা না দিয়ে শাপলা কলি দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে আমাদের জায়গা থেকে আহ্বান করব, তারা যদি ওই একই ধরনের আচরণ আগামী দিনে করে, তাহলে তাদের ওপর আস্থার সংকট তৈরি হবে। আমরা চাই, তারা সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠুভাবে তাদের প্রতিষ্ঠানের স্বাধীন যে সাংবিধানিক অবস্থা, তা যেন বজায় রাখে। তারা যেন পূর্বের মতো কোনো দলীয় নির্বাচন কমিশনে পরিণত না হয়। যদি কারও ভেতর এমন চিন্তা বা চেষ্টা থাকে, তাহলে তাদের পরিণতি তাদের পূর্বসূরিদের মতো হবে।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিদা সারোয়ার, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকিন আলম প্রমুখ।