আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ভূমিকা এখনো দুর্বল: নজরুল ইসলাম খান
Published: 17th, August 2025 GMT
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ভূমিকা এখনো অপেক্ষাকৃত দুর্বল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে সাক্ষাতের পর ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আলোচনায় যতটুকু বুঝেছি যে তারা (ইসি) নির্বাচনের প্রস্তুতি যথাযথভাবে নিচ্ছে। এখনো তাদের কিছুটা উদ্বেগ আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে। তবে তারা মনে করে এবং আমরাও মনে করি, দেশে এখন পুলিশের যে ভূমিকা, সেই ভূমিকা অপেক্ষাকৃত দুর্বল।’
এই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আরও কয়েক মাস দেরি আছে। কাজেই এ সময়ের মধ্যে এটারও কিছু পরিবর্তন হবে।’
বিএনপির প্রতিনিধিদল জানায়, কমিশন তাদের জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে এখন যেভাবে সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করছে, নির্বাচনের সময়ে প্রয়োজনের আলোকে আরও বেশিসংখ্যক সেনাসদস্য মোতায়েনের জন্য কমিশন সরকারকে অনুরোধ করবে। পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকায় নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সদস্যদেরও দায়িত্বপালনের অনুরোধ জানানো হবে।
আগামী নির্বাচনে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলেও যেসব প্রবাসীর সাধারণ পাসপোর্ট আছে, তাঁদেরও ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেছে বিএনপি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে সাধারণ পাসপোর্টধারী ব্যক্তিদেরও এই সুযোগ দেওয়া হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানি, কিছু ভুয়া পাসপোর্টধারীও রয়েছেন। তাঁরা আসলেই আমাদের নাগরিক নন। সে ক্ষেত্রে আমরা অনুরোধ করেছি, তাঁদের মা–বাবা ও পরিচয় শনাক্ত করে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। সময় খুব বেশি নেই।’ তবে কমিশন সাধারণ পাসপোর্টধারী ব্যক্তিদের ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়ে কাজ করবে বলে বিএনপির প্রতিনিধিদলকে আশ্বাস দিয়েছে। এমনটি জানান নজরুল ইসলাম খান।
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণের পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা করেছে বিএনপির প্রতিনিধিদল। নজরুল ইসলাম খান বলেন, কমিশন তাঁদের জানিয়েছে, ভৌগোলিক, জেলা ও উপজেলার অখণ্ডতা বিবেচনায় নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভোটার তালিকাও বিবেচনায় রেখেছে নির্বাচন কমিশন।
এ বিষয়ে বিএনপি কোনো অভিযোগ জানায়নি। নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘কোনো ব্যত্যয় হলে কমিশন অবশ্যই জবাব দেবে। তবে যেহেতু এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ গ্রহণের সুযোগ রাখা হয়নি, তাই আমরা কোনো অভিযোগ দিইনি।’ তবে বিএনপির নেতা–কর্মীরা তাঁদের নিজস্ব আসনের বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন।
সিইসির সঙ্গে নির্বাচনী আচরণবিধি নিয়েও আলোচনা করেছে বিএনপির প্রতিনিধিদল। নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এ প্রসঙ্গে তারা আমাদের কাছে মতামত চেয়েছে। আমরা মতামত দিয়েছি। তাই এই মুহূর্তে আলোচনা হয়নি।’
বিএনপির প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাঈল জবিউল্লাহ। প্রতিনিধিদলটি বিকেল চারটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত আলোচনায় অংশ নেয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নাশকতাকারীদের ঢাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে: ডিএমপি কমিশনার
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, “আইন অনুযায়ী নাশকতাকারীদের ঢাকা মহানগরীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে। যারা পরিকল্পিতভাবে ককটেল বিস্ফোরণ ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ করছে পুলিশ।”
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীর রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে ডিএমপির মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় এ কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার।
শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, “আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে জনগণের স্বার্থে কাজ করতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দল, আদর্শ বা ব্যক্তির প্রতি দুর্বলতা বা পক্ষপাত দেখানো যাবে না।”
তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য পুলিশ আইন অনুযায়ী দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ বল প্রয়োগ করতেও দ্বিধাবোধ করবে না।”
থানা এলাকায় অপরাধ প্রতিরোধে টহল কার্যক্রম আরো জোরদারের নির্দেশ দেন তিনি।
সভায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) মো. সরওয়ার বলেন, “পুলিশ সদস্যদের সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া দৈনন্দিন কার্যক্রমে ডি-নথির ব্যবহার বাড়াতে হবে।”
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “মামলা রুজুর পর দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা যায়।”
তিনি গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে সর্বোচ্চ পেশাগত নৈতিক মানদণ্ড প্রদর্শন করে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের মামলার রায় ঘিরে কেউ যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করতে না পারে সেদিকে খেয়াল থাকতে হবে।”
সভায় যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মো. ফারুক হোসেন অক্টোবর-২০২৫ মাসের সার্বিক অপরাধ পরিস্থিতি যেমন-ডাকাতি, দস্যুতা, চুরি, সিঁধেল চুরি, খুন, অপমৃত্যু, সড়ক দুর্ঘটনা, নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র উদ্ধারসহ বিভিন্ন মামলা সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করেন।
এ সময় ডিএমপি কমিশনার উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেন।
মাসিক অপরাধ সভায় অক্টোবর মাসে ঢাকা মহানগরের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, অপরাধ দমন ও জননিরাপত্তা বিধানসহ উত্তম কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ডিএমপির বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করেন ডিএমপি কমিশনার।
অপরাধ পর্যালোচনা সভায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. মাসুদ করিম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স এবং প্রকিউরমেন্ট) হাসান মো. শওকত আলী, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. জিললুর রহমান, যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার, উপ-পুলিশ কমিশনার, ডিএমপির সব থানার ওসি ও বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ