Prothomalo:
2025-09-19@02:33:35 GMT

১০ বছর পর ফিরেছে সিক্স

Published: 19th, September 2025 GMT

তরুণ রক মিউজিশিয়ানদের রিয়েলিটি শো ‘নেসক্যাফে গেট সেট রক’–এ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাধ্যমে ২০১২ সালে যাত্রা শুরু করে ‘সিক্স’। ২০১৩ সালের মার্চে প্রকাশ পায় ব্যান্ডটির প্রথম অ্যালবাম এইতো সময়। পাঁচ গানের অ্যালবামটি ব্যান্ড শ্রোতাদের মন জয় করে। ২০১৫ সালে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে শেষবারের মতো পারফর্ম করে সিক্স। সদস্যদের পেশাগত ও ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে বিরতিতে যায় তারা। অবশেষে ১০ বছরের বিরতি কাটিয়ে ফিরেছে সিক্স। চলতি মাসের শুরুতে মুক্তি পেয়েছে ব্যান্ডটির নতুন গান ‘এইতো সময় ২’। এটি তাদের প্রথম অ্যালবামের ‘এইতো সময়’ গানের সিকুয়েল।

পুরোনো ছবিতে সিক্স ব্যান্ডের সদস্যরা.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এমন ঘটনা আগে দেখেননি, বিস্মিত–আতঙ্কিত আসাদপুরের বাসিন্দারা

হামলার শিকার মাজারগুলোর কোনোটির সময় ৫৬ বছরের বেশি। কোনোটি তিন দশক আগে গড়ে উঠেছে। কোনোটি পেরিয়েছে এক দশক। তবে কখনোই সেগুলোতে হামলার ঘটনার কথা শোনেননি এলাকার মানুষ। বৃহস্পতিবার হঠাৎ একের পর এক গ্রামের চার মাজারে হামলা দেখে বিস্মিত তাঁরা। একই সঙ্গে আতঙ্কিত নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে কুমিল্লার হোমনা উপজেলার আসাদপুর গ্রামে পৃথক চারটি মাজারে হামলার ঘটনা ঘটে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তিমূলক একটি পোস্ট করার এক দিন পর এই হামলা হয়। যদিও বিতর্কিত পোস্ট করার অভিযোগ ওঠার পরই একটি মাজার পরিচালনায় যুক্ত ওই যুবককে গ্রেপ্তার করে মামলা দায়েরের পর কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

মাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তাঁরা ভেবেছিলেন গ্রেপ্তারের মাধ্যমেই বিষয়টির সুরাহা হয়েছে। কিন্তু ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন উসকানি দিয়ে মাজারে হামলা করা হয়। হামলাকারী শুধু ভাঙচুরই করেনি, ঘটনার সময় লুটপাটও চালিয়েছে। নগদ টাকাসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনটি মাজারের খাদেম এবং আরেকটির ভক্তরা।

হামলার শিকার ওই চারটি মাজার হচ্ছে ওই গ্রামের আলেক শাহের বাড়িতে অবস্থিত তাঁর বাবা কফিল উদ্দিন শাহের মাজার, একই গ্রামের আবদু শাহের মাজার, কালাই (কালু) শাহের মাজার এবং হাওয়ালি শাহের মাজার। এর মধ্যে হাওয়া বেগম নামে এক নারী ‘হাওয়ালি শাহ’ মাজার পরিচালনা করেন। তবে সেখানে কোনো ব্যক্তি সমাহিত নেই, ওই বাড়িতে মাজারসদৃশ বস্তু ও ঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে। কফিল উদ্দিনের ছেলে মহসিনের বিরুদ্ধে বুধবার সকালে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তিমূলক পোস্ট করার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় বুধবার তাঁকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার সকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, কফিল উদ্দিন শাহের মাজারে ভক্তদের ভিড়। হোমনা ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকেও মাজারে আগুনে দেওয়ার খবরে এসেছেন ভক্তরা। আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া আলেক শাহের বসতবাড়ি এবং ভাঙচুর হওয়া মাজারটি দেখতে এসেছেন নারীসহ গ্রামের মানুষজনও। তাঁদের সবাই এমন ঘটনায় হতবাক। তবে এই বাড়ি ও মাজার প্রাঙ্গণে আলেক শাহের পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। বাকি তিনটি মাজারে গিয়েও দেখা গেছে ভক্তদের ভিড়। ওই সব মাজার প্রাঙ্গণে খাদেমসহ সংশ্লিষ্টদের দেখা গেছে। এ ছাড়া চারটি মাজারের সামনের এলাকায় পুলিশের অবস্থান দেখা গেছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের পুরো গ্রামে টহল দিতে দেখা গেছে।

কফিল উদ্দিন শাহের মাজারে প্রায় ১৫ বছর কাজ করেন সিলেট সদরের বাসিন্দা শাহজাহান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এটি প্রায় ৩০ বছরের পুরোনো মাজার। আলেক শাহ ও তাঁর তিন ছেলে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে একই বাড়িতে বসবাস করেন। ভক্তদের থাকার জন্য কক্ষও রয়েছে। তিনটি বসতঘর, একটি মোটরসাইকেল, খরের গাদাসহ সবকিছু পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মাজারে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। দানবাক্সে থাকা টাকাসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই পরিবারের সদস্যরা এলাকা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মোশারফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হামলাকারীদের মধ্যে এলাকার বাইরের অনেক লোকও ছিল। আমাদের এলাকায় এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। কেউ অন্যায় করলে তাঁর বিচার হবে। এখানে মাজার ও বসতবাড়ির কী অপরাধ?’
হাওয়ালি শাহ নামে পরিচিত মাজারটির পরিচালনাকারী হাওয়া বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায় ১৫ বছর ধরে বছরে একবার আসাদপুর বাজারসংলগ্ন স্থানে তৈরিকৃত এই ভান্ডারি আস্তানায় ভক্তদের জমায়েত হয়। দুর্বৃত্তরা আস্তানাটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। হামলাকারীরা আস্তানা থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে। চার লাখ টাকার বেশি রেখেছিলাম আস্তানার পাশে জায়গা কেনার জন্য। হামলাকারীরা কিছুই রেখে যায়নি।’

কালু শাহ মাজারের খাদেম এবং কালু শাহের নাতি এমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছর এই মাজারের ৫৬তম বার্ষিক ওরস হয়েছে। কোনো অপরাধ ছাড়াই এ মাজারে সবকিছু ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে তারা। দানবাক্স, স্টিলের আলমারি, ফ্যান, বড় ডেগ কিছুই রাখেনি। সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে গেছে।’

আরও পড়ুনমাইকে ঘোষণা দিয়ে কুমিল্লার ৪ মাজারে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ১২ ঘণ্টা আগে

হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছিলেন উপজেলার বড় ঘারমোড়া গ্রামের কৃষক আবদুল আউয়াল। তিনি বলেন, এই গ্রামে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে মাজারে আসেন ভক্তরা। যে যার মতো করে ধর্ম পালন করে। এমন ঘটনা এর আগে কখনোই ঘটেনি।
আবদু শাহ মাজারের ৭০ বছর বয়সী খাদেম ওহাব মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, হামলাকারীদের তাণ্ডবে এক দশকের বেশি পুরোনো মাজারটির কিছুই রক্ষা হয়নি। এমন তাণ্ডব জীবনেও দেখেননি।

স্থানীয় আসাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. ডালিম মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, দুই শতাধিক লোকজন চারটি মাজারে ভাঙচুর চালিয়েছে। এঁদের বেশির ভাগই তরুণ। যাওয়ার সময় খালি হাত দেখা গেলেও ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর দা, বঁটি, লোহার পাইপ যে যা পেয়েছে, তা দিয়েই তাণ্ডব চালিয়েছে। এতে আশপাশের নারী ও শিশুরা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সবাই পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চান।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তিমূলক পোস্ট করা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরপরও এমন ঘটনা একেবারেই অপ্রত্যাশিত ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ঘটনায় কারা উসকানি ও ইন্ধন দিয়েছে, তাদেরও চিহ্নিত করা হবে। এসব ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ