প্রায় ৪০ বছর পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের শেরপুর কোঠাডাঙ্গা গ্রামে শুরু হয়েছে ওঁরাও সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব বা ডালপূজা। গ্রামের নারীদের উদ্যোগে আবার চালু হওয়া এ উৎসব ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে সম্প্রীতি, আনন্দ আর নাচ–গানের আবহ।

গত বুধবার সন্ধ্যায় আখড়ায় কারামগাছের ডাল পুঁতে পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ উৎসব। রাতভর চলে নাচ-গান। বৃহস্পতিবার বিকেলে আখড়া থেকে কারাম ডাল তোলা হয়। এরপর মাদল-বাঁশির তালে নেচে-গেয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরিয়ে পুকুরে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দুই দিনব্যাপী উৎসব। তবে সেদিনও গভীর রাত পর্যন্ত নারী-পুরুষ ও শিশুরা গান ও নাচে অংশ নেন।

আরও পড়ুনশ্রীমঙ্গলে নাচে-গানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর করম উৎসব উদ্‌যাপন০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বুধবার গোধূলিবেলায় দেখা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির তিন কিশোরী স্নান শেষে ভেজা কাপড়ে ধানগাছ, দূর্বাঘাস, কাদো ফুল ও সুতা দিয়ে কারাম ডাল সাজাচ্ছে। আগের রাত থেকে তারা নির্জলা উপোসে ছিল। অন্যদিকে তিন কিশোর দূরের গ্রাম থেকে খিলকদমের ডাল কেটে নিয়ে আসে। তারাও উপোস করেছিল। নতুন ধুতি পরে তারা ডাল নিয়ে এলে কিশোরীরা ফুল ছিটিয়ে বরণ করে। এরপর নারীদের সঙ্গে নেচে গেয়ে আখড়ায় তিনটি ডাল পাশাপাশি পুঁতে দেওয়া হয়। পূজা শেষে কিশোর-কিশোরীরা বাড়ি গিয়ে উপোস ভেঙে সেজেগুজে আখড়ায় ফিরে আসে।

বরণ করার পরে নেচে-গেয়ে গ্রামে আখড়ায় নিয়ে আসছে কারাম ডাল। বুধবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের শেরপুর কোঠাডঙ্গা গ্রামে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আখড় য়

এছাড়াও পড়ুন:

রোবটদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের গল্প 

আজ আমার প্রিয় পত্রিকা প্রথম আলোর জন্মদিন। এটি আমার জন্য শুধু একটি তারিখ নয়, এটি অনুপ্রেরণার দিন। আমি ঠিক করেছি, শুধু শুভেচ্ছা নয়; আমার রোবটদের সঙ্গে বন্ধুত্বের গল্প, গল্প লেখার গল্প আর ভবিষ্যতের স্বপ্নের গল্প বলব। এখন আমার বয়স ৯ বছর, প্রথম আলো আমার কাছে শুধু একটি খবরের কাগজ নয়, বরং আমার প্রতিদিনের সঙ্গী, কৌতূহল মেটানোর বন্ধু, স্বপ্ন দেখার ক্যানভাস এবং স্বপ্নপূরণের অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখি।

আমি অনেক ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি শুরু করি। পত্রিকার পাতায় আমার প্রথম গল্প ছাপা হয়, যখন আমার বয়স পাঁচ বছরের কম। খোঁজ নিতে থাকি ছোটরা আর কোথায় লেখালেখি করে। খোঁজ পাই কিশোর আলোর। প্রতি মাসে যখন কিশোর আলো হাতে পেতাম, এর গল্প, কমিকস আর ফিচারগুলো আমাকে এক অন্য জগতে নিয়ে যেত। পড়তে পড়তে আমার আরও লিখতে ইচ্ছা করত। নিয়মিত পত্রিকায় লিখতে থাকি। এই গল্পগুলো একত্র করেই গত বইমেলায় আমার প্রথম বই আরিয়েত্তির ছোট্ট ছোট্ট গল্পেরা প্রকাশিত হয়।

আর বিজ্ঞানচিন্তা? ওটা আমার কৌতূহলের খোরাক। আমি যেহেতু রোবট বানাই, গণিত নিয়ে পড়াশোনা করি, তাই বিজ্ঞানের প্রতি আমার ঝোঁকটা একটু বেশিই। বিজ্ঞানচিন্তা আমার সেই কৌতূহলের আগুনটাকে আরও উসকে দেয়। 

স্বপ্নের শুরু

আমার রোবোটিকসের এই পথচলাটা কিন্তু প্রথম আলোর পাতা দেখেই শুরু হয়েছিল। আগে যখন প্রথম আলোতে দেখতাম রোবট অলিম্পিয়াডের বিজয়ীদের ছবি ছাপা হয়েছে, ওরা গলায় মেডেল ঝুলিয়ে হাসছে, তখন আমার ছোট্ট মনে একটা বড় প্রশ্ন জেগেছিল।

‘আচ্ছা, এরা পারলে আমি পারব না কেন? আমিও কি চাইলে এমন কোনো অলিম্পিয়াডে যোগ দিতে পারি?’

আমার বাবা যখন আমাকে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি এবং আরডুইনোর মতো ডেভেলপমেন্ট বোর্ড দেখাতেন, তখন আমার খুব কৌতূহল জাগত। কীভাবে এগুলো কাজ করে? তারের ভেতর দিয়ে কীভাবে আলো জ্বলে বা মোটর ঘোরে? কীভাবে এগুলোকে লজিক দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়? এই কৌতূহলই আমাকে রোবোটিকসের দিকে আগ্রহী করে তোলে। আমি ছোট ছোট প্রজেক্ট তৈরি করা শুরু করি আর বুঝতে পারি যে এর জন্য লজিক প্রয়োজন, যা প্রোগ্রামিং দিয়ে দেওয়া যায়। এরপর আমি সি প্লাস প্লাস, জাভাস্ক্রিপ্ট আর পাইথন শেখা শুরু করি।

আমার রোবোটিকস যাত্রা

২০২৪ সালে আমি প্রথম বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড (বিডিআরও) আয়োজিত একটি ওয়ার্কশপে অংশ নিয়েছিলাম। সেখানে রোবট তৈরির প্রাথমিক ধারণাগুলোর পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের নিয়মাবলি সম্পর্কে জানতে পারি।

একই বছরের অক্টোবরে ন্যাশনাল রোবট অলিম্পিয়াডের জাতীয় পর্যায়ের রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়। দুটি অনলাইন বাছাইপর্ব সফলভাবে অতিক্রম করে আমি জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিই এবং জুনিয়র গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকার করি। সেখানে বিচারকদের প্রশংসা আমার জন্য অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক ছিল।

এই প্রতিযোগিতাই আমার জন্য আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডের দরজা খুলে দেয়। এর ফলস্বরূপ, আমি আন্তর্জাতিক নির্বাচনী ক্যাম্পে অংশগ্রহণের সুযোগ পাই। দুই দিনের কঠোর নির্বাচনী প্রক্রিয়া শেষে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে (১৭-২০ জানুয়ারি) ২৬তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের (আইআরও) জন্য বাংলাদেশ দলের সদস্য হিসেবে আমি নির্বাচিত হই।

এরপর শুরু হয় ‘হাই-পারফরম্যান্স ক্যাম্প’, যা ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। টানা ২১টি সেশনের এই ক্যাম্পে রোবট তৈরি, প্রোগ্রামিং এবং প্রেজেন্টেশন—সবকিছু নিখুঁত করার জন্য আমাদের অনেক চাপ নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় আমার কোচ ও মেন্টরদের অবদানের জন্য আমি তাঁদের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।

আমার জীবনের প্রথম বিদেশযাত্রা! পাসপোর্ট, ভিসা—কত নতুন নতুন অভিজ্ঞতা। অবশেষে সেই দিন এল। আমরা ঢাকা এয়ারপোর্টে। প্লেনে চড়ে বসলাম। থাইল্যান্ডের এয়ারপোর্টে ট্রানজিটের সময় এর বিশালতা আর সৌন্দর্য দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। এরপর আবার প্লেনে করে দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচন এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম, যা ছিল আরও আধুনিক ও সুন্দর। সেখান থেকে আয়োজকদের পাঠানো বাসে করে মাইনাস ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা আর তুষারপাত দেখতে দেখতে আমরা বিশ্বের অন্যতম পর্যটন নগরী বুসানের দিকে এগিয়ে চললাম। এই যাত্রা ছিল আমার জীবনের এক অসাধারণ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।

বুসানে পৌঁছে আমরা হোটেলে উঠলাম। আমাদের কোচ, বিশেষ করে মিশাল ভাইয়া ও লাফিফা জামাল ম্যাম আমাদের সব সময় গাইড করছিলেন। 

শুরু হলো আসল প্রতিযোগিতা। তিন দিনের সেই ইভেন্ট। প্রথম দিন ছিল ফিজিক্যাল কম্পিউটিং। এত বড় ভেন্যু, এত দেশের প্রতিযোগী আর তাদের রোবোটিকসের আধুনিক উপকরণ দেখে প্রথমে আমি কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার টিমের কোচ, মেন্টর ও অভিভাবকদের কথায় আমি সাহস ফিরে পেলাম।

এরপর দুই দিন ধরে চলে ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরির প্রতিযোগিতা, যার জন্য আমার প্রস্তুতি ছিল সবচেয়ে বেশি। আইআরওর প্রতিযোগিতাগুলোতে তাৎক্ষণিকভাবে দেওয়া থিমের ওপর রোবট বানাতে হয়। আমার থিমটি বেশ কঠিন হলেও আমার বাবার কথা মনে পড়ল। তিনি বলেছিলেন, ‘যে থিমটি তোমার জন্য কঠিন হবে, সেটা সম্ভবত অন্যদের জন্যও কঠিন।’ মেন্টর ও বিচারকেরা বারবার আমার রোবট দেখে যাচ্ছিলেন এবং আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছিলেন। তাঁদের আমার প্রতি একটু বেশি আগ্রহ দেখে আমি কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, যদিও আসল ঘটনা ছিল ভিন্ন।

অবশেষে এল ২১ জানুয়ারি, সমাপনী অনুষ্ঠান। আমরা সবাই খুব টেনশনে ছিলাম। একে একে নাম ঘোষণা হচ্ছিল। ‘ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরি জুনিয়র গ্রুপ’-এ গোল্ড মেডেলের জন্য যখন আমার নাম ঘোষণা করা হলো, আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে আমি পোডিয়ামের এক নম্বরে দাঁড়িয়ে আছি আর আমার পাশে দুই ও তিন নম্বরে নিউজিল্যান্ড ও কোরিয়ার মতো দেশের প্রতিযোগীরা! আমি শুধু গোল্ডই নয়, ফিজিক্যাল কম্পিউটিংয়ে সিলভার মেডেলও জিতেছিলাম। দুটো মেডেল গলায় ঝুলিয়ে, বাংলাদেশের পতাকা হাতে নিয়ে যখন আমি স্টেজে দাঁড়িয়েছিলাম, আমার মনে হলো ‘এটা আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ মুহূর্ত!’

দেশে ফেরার পর দেখি প্রথম আলোসহ প্রায় সব পত্রিকাই আমাদের নিয়ে বড় বড় নিউজ করেছে।

আমার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন 

আমি এমন রোবট বানাতে চাই, যা মানুষের উপকারে আসবে।

আমার স্বপ্ন হলো, আমার এই জ্ঞান আর দক্ষতাকে আমি আমার দেশের মানুষের জন্য কাজে লাগাব। আমি এমন প্রযুক্তি তৈরি করতে চাই, যা বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। এ জন্য রোবোটিকসের পাশাপাশি আমি বিজ্ঞান ও গণিত নিয়ে পড়াশোনা করছি। আমি শুধু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চাই না, আমি প্রযুক্তি তৈরি করতে চাই।

প্রথম আলোর এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমার একটাই চাওয়া, তোমরা এভাবেই থাকো। আমাদের মতো হাজারো শিশুর মনে প্রতিদিন নতুন নতুন স্বপ্ন জাগিয়ে তোলো। আমাদের পথ দেখাও।

শুভ জন্মদিন, আমার প্রিয় প্রথম আলো!

আরিয়েত্তি ইসলাম, আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে স্বর্ণ ও রৌপ্যপদক বিজয়ী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অধস্তন আদালতের প্রায় এক হাজার বিচারককে পদোন্নতির প্যানেলভুক্তির সিদ্ধান্ত
  • বগুড়ায় ধানক্ষেত থেকে ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার
  • রোবটদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের গল্প 
  • প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শুরু
  • কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’
  • মঙ্গলবার কুয়াকাটায় রাস উৎসব, গঙ্গা স্নান বুধবার
  • সুন্দরবনে দুবলার চরে রাস উৎসব শুরু আজ, এবারও নেই মেলার আয়োজন
  • শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত
  • প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনগুলোয় প্রথম আলোর জমজমাট আয়োজন
  • ‘মবের’ পিটুনিতে নিহত রূপলাল দাসের মেয়ের বিয়ে আজ