শ্রমিকের পাওনা পরিশোধে সম্পত্তি বিক্রি করতে রাজি নাসা গ্রুপ। সরকারের দেওয়া সময়সীমার মধ্যেই নাসা গ্রুপ তার সম্পত্তি বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। কোন কোন সম্পত্তি বিক্রি করবে গ্রুপটি, তা–ও জানিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আজ শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্পত্তি বিক্রির জন্য গ্রুপ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার পাওয়ার অব অ্যাটর্নি–বিষয়ক নথিতে আজ স্বাক্ষর করেছেন। নাসা গ্রুপ কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে।

যেসব সম্পত্তি বিক্রি হবে, সেগুলো হচ্ছে গুলশান ৭ নম্বর রোডের ৬ নম্বর প্লট, আশুলিয়ার তৈয়বপুর মৌজায় ৫ বিঘা জমি ও ৭ তলা ভবন, নারায়ণগঞ্জের চর চেঙ্গাকান্দি মৌজায় ১০ বিঘা জমি এবং প্রায় ৮৬ কোটি টাকার বিভিন্ন শেয়ার এবং রাজউকের প্লট।

নাসা গ্রুপের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়, সম্পত্তি বিক্রির জন্য খসড়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি স্বাক্ষরিত হওয়ায় খুব কম সময়ের মধ্যে তাদের সম্পত্তি বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা হবে।

জানতে চাইলে নাসা গ্রুপের উপদেষ্টা সিরাজুল ইসলাম আজ প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আজ শনিবার ম্যাজিস্ট্রেট, বিভিন্ন সংস্থা ও বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে জেলগেটে নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের স্বাক্ষর নেওয়া হয়।

নজরুল ইসলাম মজুমদার ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। ১৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয় এক সিদ্ধান্ত নিয়ে জানায়, সম্পত্তি বিক্রি করে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা করতে ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিতে হবে। নইলে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং নাসা গ্রুপের মালিক, মালিকের স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের পাসপোর্ট বাতিল করা হবে।

নাসা গ্রুপের সম্পত্তির একটি তালিকা করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রয়েছে গুলশান-১–এ ১২ তলাবিশিষ্ট ২টি ভবন, ৭১ নম্বর প্লটে ১ বিঘা, তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ৩ বিঘা, তেজগাঁও আড়ংয়ের বিপরীতে ৭ বিঘা, মহাখালী ডিওএইচএসে ১০ কাঠা, ঢাকার নিকেতনে ১০ বিঘা, উত্তরায় ১০ বিঘা, ১৩ নম্বর সেক্টরে প্লট এবং দিয়াবাড়িতে ৩ প্লট মিলে ৪০০ কোটি টাকা দামের সুইমিং পুল, পূর্বাচলে ২ বিঘা, ২০টি প্লট ও হাসপাতাল, মেঘনা ঘাটে আরও ১০ বিঘা জমি, ঠাকুরগাঁওয়ে ৩০০ বিঘা জমি, দুবাইয়ে খেজুরবাগান ও দুবাই রিসোর্ট, এক্সিম ব্যাংকে ২৪ কোটি টাকাসহ আরও সম্পত্তি।

জানা গেছে, নাসা গ্রুপের বিভিন্ন কারখানায় ২০ হাজারের বেশি শ্রমিক রয়েছেন। তবে ২২টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে নাসা গ্রুপ এখন ৮ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকার খেলাপি। কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় বেতন-মজুরি পাচ্ছেন না নাসা গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা। অধিকার আদায়ে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করে যাচ্ছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ইসল ম ১০ ব ঘ

এছাড়াও পড়ুন:

উড়োজাহাজ খাতে প্রতিযোগিতায় স্বচ্ছতা ও বৈষম্য বিলোপের তাগিদ ইইউ রাষ্ট্রদূতের

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িং এবং ইউরোপের এয়ারবাসের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে হঠাৎ এয়ারবাসের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছিল। আর চলতি বছর পাল্টা শুল্কের দর–কষাকষির ইস্যুতে বোয়িং অন্যতম শর্ত হিসেবে সামনে এসেছে।

এমন এক প্রেক্ষাপটে ঢাকায় এক আলোচনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার উড়োজাহাজ খাতে ব্যবসায় স্বচ্ছতা ও বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি সব পক্ষের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছেন। এই খাতে ‘অন্য অংশীদারদের’ তুলনায় ইউরোপের প্রতিষ্ঠানগুলোকে যাতে কম গুরুত্ব দেওয়া না হয়, সে বিষয়টি বাংলাদেশকে নিশ্চিত করতে বলেছেন।

মঙ্গলবার ঢাকায় ফ্রান্স-জার্মান দূতাবাসে ‘বাংলাদেশের এভিয়েশন গ্রোথ’ শীর্ষক এক আলোচনায় তিনি এ অভিমত দেন। আলোচনায় মাইকেল মিলার ছাড়াও যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জ্যঁ-মার্ক সেরে-শার্লে, জার্মান রাষ্ট্রদূত রুডিগার লটজ এবং এয়ারবাসের কমার্শিয়াল সেলস ডিরেক্টর (চিফ রিপ্রেজেনটেটিভ, বাংলাদেশ) রাফায়েল গোমেজ নয়া অংশ নেন।

ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি এ দেশে এয়ারবাসের উপস্থিতির বিষয়টিকে বিবেচনায় নিতে জোর দিচ্ছি। আমি খুব স্পষ্টভাবে বলতে চাই, স্বচ্ছতা এবং বৈষম্যহীনতার দীর্ঘদিনের আশ্বাস পূরণ করে এটিকে যেন বিমানের বহরকে আধুনিকীকরণ পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ দেশের উড়োজাহাজ খাতে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবশ্যই বিবেচনায় রাখা উচিত।’

ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জ্যঁ-মার্ক সেরে-শার্লে বলেন, ফ্রান্স ও ইউরোপের উড়োজাহাজ শিল্পের কেন্দ্রে অবস্থান করছে এয়ারবাস। প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও উদ্ভাবনের অনন্য সমন্বয়ই এটিকে বিশ্বজুড়ে উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর এক বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই খাতে বাংলাদেশের বিকাশ পর্বে এয়ারবাস হতে পারে এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তাঁর মতে, বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল সংযোগ ও ভৌগোলিক অবস্থান এই দেশকে আকাশপথে যোগাযোগের আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। বিমান বাংলাদেশের বহরে এয়ারবাস যুক্ত হলে এর স্থিতিশীলতা ও প্রতিযোগিতার সক্ষমতা আরও বাড়বে।

জার্মান রাষ্ট্রদূত রুডিগার লটজ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বাড়ছে, মধ্যবিত্ত শ্রেণি সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিমানের এখন প্রয়োজন আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব উড়োজাহাজ, যেখানে এয়ারবাস শক্ত অবস্থানে রয়েছে।

যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আকাশপথে যোগাযোগের আঞ্চলিক কেন্দ্র হওয়ার লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য সব সময় পাশে থাকবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বাণিজ্যিক যোগ্যতার ভিত্তিতে ইইউর অর্থনৈতিক উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সুযোগ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা সবার জন্য সমান সুযোগ প্রত্যাশা করি। এর অর্থ হলো বাংলাদেশকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অপারেটরদের অন্যান্য বাণিজ্যিক অংশীদারদের তুলনায় কম সুবিধা দেওয়া হবে না।
প্রসঙ্গত, বোয়িং ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ২৫টি উড়োজাহাজ বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে, আর এয়ারবাস দিয়েছে ১৪টির। এর মধ্যে রয়েছে ১০টি এ৩৫০ ও ৪টি এ৩২০ নিও।

সম্পর্কিত নিবন্ধ