সংস্কার মানে এরশাদ, ভাসুরের নাম মুখে লইতে কি লজ্জা হয়?
Published: 20th, September 2025 GMT
দেশের সংস্কারের কথা বললে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কথা বলতে হবে। তাকে বাদ দিয়ে সংস্কারের ইতিহাস লেখা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।
তিনি বলেন, “এই যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, সংস্কার মানে এরশাদ। সংস্কার নামটি তিনিই প্রথম করে গেছেন। এখন সংস্কারের জন্য দেশি-বিদেশি বহু মানুষ সময় দিচ্ছেন। কিন্তু তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, অনেক কথা বলেন, টেলিভিশনে দেখি, পত্রিকাও দেখি, এরশাদ সাহেবের কথা বলেন না কেন? ভাসুরের নাম মুখে লইতে কি লজ্জা হয়।”
আরো পড়ুন:
পার্লামেন্ট ছাড়া পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের প্রশ্ন তোলা অবান্তর: আনিস
বর্তমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কিনা প্রশ্ন আনিসের
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানে হাওলাদার টাওয়ারে এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
রাজনৈতিক দল কর্তৃক জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করণ ও চলমান জাতীয় রাজনীতি নিয়ে জাতীয় পার্টির অবস্থান জাতির সামনে তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দলটি।
হাওলাদার বলেন,“পাঁচ আগষ্ট যে বিপ্লব হয়েছে, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, রাজনীতিবিদদের জন্য আমি মনে করি একটি শিক্ষা। কাজটি যারা করেছেন তারা বলেছেন, দেশটা আবার স্বাধীন হয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি বলি, একাত্তর সনের সঙ্গে তুলনা না করাই ভালো।”
“যারা বিপ্লব করেছেন তারাও আমাদের সন্তান। কিন্তু বিপ্লবের মধ্যদিয়ে যে পরিবর্তন হতে পারে। অপসারণ হতে পারে, এটা আমাদের জন্য একটা শিক্ষা হলো”, যোগ করেন তিনি।
জাতীয় পার্টি গণতান্ত্রিক দল উল্লেখ করে হাওলাদার বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ সহবস্থানে বিশ্বাস করি। নব্বই এ তিনি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দিলেন, সবাই আশা করেছিলাম, দেশ সংস্কার হবে, আরো এগিয়ে যাবে। না, উপজেলা পদ্ধতি বাতিল করা হলো। হাইকোর্ট বেঞ্চ বিভাগীয় শহর থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হলো। সংস্কারের কিছুই হয়নি।”
তিনি বলেন, “বিজয় স্মরণী, রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্ট এরশাদ করেছিলেন। উপজেলা পদ্ধতি, বিচারিক আদালত বিকেন্দ্রিকরণ, যোগাযোগ খাত, স্বাস্থ্য খাত, প্রশাসন, আইন-আদালত যাই বলেন না কেন সংস্কারের কথা বললে তিনিই তো সব করেছেন। তিনি যখন যে পথে চলেছেন সে পথেই সংস্কার হয়েছে। আমরা মন্ত্রিসভায় ছিলাম ঘুমাতে পারিনি। সংস্কারের জন্য গ্রামে-গঞ্জে ছুটে যেতে হয়েছে। ফজরের নামাজ দিয়ে দিন শুরু, আবার নামাজ দিয়ে শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, শুক্রবারে বন্ধ, মসজিদ মন্দিরের বিদ্যুৎ ও পানির বিল মওকুফ, ধর্মীয় শিক্ষা চালু, কর্মচারীদের জন্য দুটি বোনাস। কি করে নাই এই সাবেক রাষ্ট্রপতি।”
‘‘আপনারা শিক্ষিত মানুষ, ইতিহাসের দিকে তাকাবেন। দেশের উল্লেখযোগ্য সংস্কারের কথা যদি আসে তাহলে এরশাদের কথা বলতে হবে। সংস্কার মানে এরশাদ, সংস্কার মানে জাতীয় পার্টি। আজকে যারা সংস্কারের কথা বলছেন, তাদের বিনীতভাবে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে কোনো সংস্কারের ইতিহাস লেখা সম্ভব হবে না।”
সংস্কার আদৌ হবে কিনা-এ নিয়ে সংশয়, উদ্বেগ প্রকাশ করে হাওলাদার বলেন, “এখন সংস্কার নিয়ে যে কথাগুলো আসে, কাগজের পাতায় লেখা হবে, এটা বাস্তবায়ন হবে কিনা সেটা নির্ভর করে আগামী নির্বচান যদি সুষ্ঠু হয়, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে যদি কোনো সরকার গঠন হয় তাহলে হবে। কিন্তু একটি হার্ম পার্লামেন্ট সংস্কার-উন্নয়ন করতে পারবে না।”
“এ সংস্কার আদৌ বাস্তবায়ন হবে কিনা জানি না। পাশের দেশ নেপালে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন করে প্রায় চৌদ্দবার সরকার পরিবর্তন হয়ে গেছে। এই যে পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো মধ্যকার যে অনৈক্য তাতে রাজনীতির আকাশে মেঘ সৃষ্টি করেছে। অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে এই নির্বাচন আদৌ হবে কি হবে না। বাজারে, অলি-গলিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। একটা অস্থিরতা বিরাজ করছে,” যোগ করেন তিনি।
সরকারের এক বছরের চিত্র তুলে ধরে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন,“গত এক বছরে যে পরিমাণ ভূমি দখল হয়েছে, ব্যবসা বাণিজ্য, বাজার, দোকানপাট দখল হয়েছে যেনো চর দখলের মতো। যারা আন্দালন করেছেন, রক্ত দিয়েছেন তাদের আশা ছিল একটা নতুন বাংলাদেশ গড়বে। যেটা এরশাদ এগিয়ে নিয়ে এসেছিল, কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি হয়েছে। বরং মারাত্মক বিপর্যয়, সমাজে হানাহানি, অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।”
হাওলাদার বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় নির্বাচনের একটা টাইম নির্ধারণ করেছেন। ফেব্রুয়ারির কথা তিনি বলেছেন, ইতিমধ্যে কতগুলো দল একত্রে কাজ করা শুরু করেছে। নির্বাচন মানে গণতান্ত্রিক চর্চা। এতে জনগণের মতামতের প্রতিফলন হবে। যারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে তারাই সরকার গঠন করবে। কিন্তু সেটা নির্ভর করছে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ওপর।”
সংবাদ সম্মেলনে দলের অবস্থান তুলে ধরেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, নির্বাহী চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, নাসরিন জাহান রতনা, লিয়াকত হোসেন খোকা, মোস্তফা আল মাহমুদ, নাজমা আকতার, মাসরুর মওলা, জসিম উদ্দিন ভুইয়া, আরিফুর রহমান খান, সরদার শাহজাহান, নূরুল ইসলাম মিলন, মোবারক হোসেন আজাদ, বেলাল হোসেন, জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক, মাতলুব হোসেন লিয়ন, শেখ আলমগীর হোসেন, জামাল রানা, আনোয়ার হোসেন তোতা, হাজী নাসির উদ্দিন সরকার, ডাক্তার সেলিমা খান, শরফুদ্দিন আহমেদ শিপু, আনোয়ার হাওলাদার, মাসুক রহমান, সুজন দে, রেজাউল করিম, গোলাম মোস্তফা, এস এম আমিনুল হক সেলিম, তাসলিমা আকবর রুনা, নাজমুল খান, শাহনাজ পারভীন, জিয়া উর রহমান বিপুল, মিজানুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলী, এস এম হাসেম, আব্দুস সাত্তার, মাসুদুর রহমান মাসুম, আলমগীর হোসেন, আমিনুল হক সাঈদুল, সাইফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র রহম ন ল ইসল ম র জন ত র জন য কর ছ ন সরক র এরশ দ
এছাড়াও পড়ুন:
শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা সাবেক সংসদ সদস্যদের ৩০টি গাড়ি সরকারকে দিচ্ছে এনবিআর
শেখ হাসিনা সরকারের শেষ মেয়াদে দ্বাদশ সংসদ সদস্যদের জন্য আমদানি করা ৩০টি গাড়ি সরকারকে দেওয়া হচ্ছে। নিলামে ভালো দর না পাওয়ায় এসব গাড়ি এখন সরকারকে দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর। সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। আজ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর মিলনায়তনে এক কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান এ কথা জানান।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এসব গাড়ি (সাবেক এমপিদের আনা গাড়ি) সরকারকে দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকার এগুলো ব্যবহার করবে। এসব গাড়ি জনপ্রশাসনের পরিবহন পুলে যাবে। সেখান থেকে সরকারের যারা ব্যবহার করার, সেখানে যাবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি, এগুলো যখন নিলাম করলাম, খুবই অল্প দাম পেয়েছি। এখন নিলামের টাকাটা সরকারি কোষাগারে আসবে। আবার সরকারকেই এসব গাড়ি অনেক দাম দিয়ে কিনতে হবে। তাই জাতীয় স্বার্থ চিন্তা করে ৩০টি গাড়ি সরকারের পরিবহন পুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এই গাড়িগুলো শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করেছিলেন তৎকালীন সংসদ সদস্যরা। সরকারের পটপরিবর্তনের পর গত বছরের ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। শুল্কমুক্ত সুবিধাও বাতিল করে এনবিআর। তাতে এই গাড়িগুলো বন্দর থেকে আর ছাড় করেননি সাবেক সংসদ সদস্যরা।
সাবেক সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ৫১টি গাড়ি আমদানি করেছিলেন। এর মধ্যে সাতটি গাড়ি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে–পরে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। বাকি গাড়িগুলোর মধ্যে ২৪টি গাড়ি গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবার নিলামে তোলে চট্টগ্রাম কাস্টমস। সেই নিলামে অংশ নিয়ে আগ্রহীরা গাড়িভেদে সর্বোচ্চ ১ লাখ থেকে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দর দিয়েছেন এসব গাড়ির জন্য। ১০টি গাড়ির জন্য কোনো দরই জমা পড়েনি। অথচ প্রতিটি গাড়ির সংরক্ষিত মূল্য ছিল ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। ফলে নিলামে যে দর উঠেছে, তাতে কোনো গাড়ি বিক্রি হয়নি। এখন সেগুলো সরকারের মালিকানায় যাচ্ছে।