স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, মাদক পাচার সমূলে বিনষ্ট করার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার।

রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা জানান। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মাদককে দেশের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, মাদক আসে এবং এর বিনিময়ে আমাদের দেশ থেকে চাল, সার এবং ওষুধসহ অন্যান্য সামগ্রী পাচার হয়ে যায়। 

তিনি বলেন, মাদক পাচার শুধু কক্সবাজার বা চট্টগ্রাম থেকেই হচ্ছে না বরং বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা- এসব এলাকা থেকেও চাল ও সার পাচার হয়ে যাচ্ছে। 

আরাকান আর্মির যোগসূত্র উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মিয়ানমারের আরাকান আর্মি মূলত মাদকের উপরেই বেঁচে আছে। এই পাচার বন্ধ করার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে নৌ বাহিনী এবং কোস্টগার্ডকে সাগরে নিয়োজিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন তারা পাচার বন্ধ করতে পারে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, একটি ভালো খবর হলো, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান বেড়েছে। মাদকদ্রব্য আটকের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় মাদকের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের নিজস্ব সম্পদ রক্ষায় কোনো অবস্থাতেই যেন সার, চাল ও অন্যান্য সামগ্রী দেশ থেকে পাচার না হতে পারে, সেজন্য সরকার সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।

তিনি জানান, সভায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়েও আলোচনা হয়। নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যানের সম্পত্তি বিক্রি সংক্রান্ত একটি সমস্যার সমাধান হয়েছে। নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রায় ২৫০ কোটি টাকা সমস্যার সমাধানে তার সম্পত্তি বিক্রি করার জন্য স্বাক্ষর করে দিয়েছেন। এর আগে তিনি বিক্রি করতে রাজি হননি, তবে গতকাল তিনি রাজি হয়েছেন। এর ফলে শ্রমিক ভাইদের সমস্যা সমাধান হবে এবং তারা তাদের বকেয়া টাকা পেয়ে যাবেন।

পূজায় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি বলেন, আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে পূজামণ্ডবগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন শুরু হবে। এবার মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় ৮০ হাজার নারী কর্মীকেও কাজে লাগানো হবে।

তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, এবার দেশের সব জায়গায় পূজা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন এবং গণমাধ্যমও স্বাধীন। নির্বাচন খুব শান্তিপূর্ণভাবে এবং উৎসবমুখর হবে। 

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কৃষকরা আলুর ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না, যা সংবাদপত্রে সেভাবে আসছে না। যদি কৃষকরা আলুর দাম না পান এবং তাদের খরচ না উঠাতে পারেন, তবে আগামী বছর তারা আলু চাষাবাদ নাও করতে পারে, যার ফলে ভবিষ্যতে আলুর দাম আবার বেড়ে যেতে পারে। 

তিনি জানান, কোল্ড স্টোরগুলোর জন্য একটি মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও তা খুব একটা কার্যকরী হচ্ছে না । এজন্য সাধারণ মানুষকে আলু খাওয়াটাও বাড়াতে হবে বলে পরামর্শ দেন তিনি।

ঢাকা/এএএম/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস থ জন য স সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

তৈরি পোশাক খাতের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে চায় আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সঙ্গে বৈঠক করেছে। এতে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তৈরি পোশাক খাতের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যতের ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে অবহিত হওয়ার চেষ্টা করে আইএমএফের প্রতিনিধিদল।

পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। এতে বলা হয়, রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএর কার্যালয়ে আজ বুধবার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিজিএমইএর নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইনামুল হক খান, সহসভাপতি মো. রেজোয়ান সেলিম, ভিদিয়া অমৃত খান, পরিচালক নাফিস-উদ-দৌলা, রশিদ আহমেদ হোসাইনী প্রমুখ। অন্যদিকে আইএমএফের প্রতিনিধিদলে ছিলেন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ কিয়াও চেন, জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ রুইফেং ঝাং ও অর্থনীতিবিদ আয়া সাইদ।

উভয় পক্ষের আলোচনায় পোশাক রপ্তানিতে মার্কিন শুল্কের সম্ভাব্য প্রভাব, বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের প্রভাব, শিল্পের টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং মূল্য সংযোজিত পণ্য বৈচিত্র্যকরণের কৌশল গুরুত্ব পায়। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সম্ভাব্য প্রভাব, ব্যবসায়ের পরিচালন ব্যয় কমানো ও ব্যবসা সহজীকরণের জন্য করণীয় বিষয়েও আলোচনা হয়।

আইএমএফের প্রতিনিধিদের কাছে জাতীয় অর্থনীতিতে তৈরি পোশাকশিল্পের অবদানসহ শিল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিজিএমইএর নেতারা। তাঁরা শিল্পের কৌশলগত রূপকল্প তুলে ধরে জানান, পোশাকশিল্প বর্তমানে শ্রমনির্ভর মডেল থেকে বেরিয়ে এসে মূল্য সংযোজিত পণ্য, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত মানোন্নয়নের মাধ্যমে রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করছে। তারই অংশ হিসেবে কৃত্রিম তন্তু ও টেকনিক্যাল টেক্সটাইলভিত্তিক পোশাক তৈরির সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।

বিজিএমইএ নেতারা জানান, তাঁদের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ইতিমধ্যে তৈরি পোশাকশিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ, বন্দর ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার উন্নয়ন, কাস্টমস ও বন্ড প্রক্রিয়া সহজীকরণ, সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনা, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেছেন। এ ছাড়া এলডিসি থেকে উত্তরণের পর শুল্কসুবিধা বজায় রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ), যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) সই করার বিষয়ে সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ