‘আমার সোনার বাংলা’ গেয়ে এবার বিপাকে বিশ্বভারতীর শিক্ষার্থীরা
Published: 5th, November 2025 GMT
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গান গেয়ে এবার বিপাকে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সম্প্রতি আসামের শ্রীভূমি জেলার ইন্দিরা ভবনে কংগ্রেস সেবা দলের বৈঠকে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি গেয়েছিলেন বিধুভূষণ দাস নামে এক সিনিয়র কংগ্রেস কর্মী। এরপরই আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা তার বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’র মামলা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
আরো পড়ুন:
ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি
পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধন আতঙ্কে ফের মৃত্যুর অভিযোগ
ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সরব হতেই কার্যত হুমকির মুখে বিশ্বভারতীর শিক্ষার্থীরা। এমনটাই অভিযোগ করেছে বিশ্বভারতীর বাম ছাত্র সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া’ (এসএফআই)৷ আসাম সরকারের ওই নির্দেশের প্রতিবাদে সম্প্রতি বিশ্বভারতীর চত্বরে প্রতিবাদে নামে এসএফআই-এর সদস্যরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের গলাতেও ছিল ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি। আর তাতেই বিপত্তি!
এসএফআইয়ের বক্তব্য, আসামের ঘটনার প্রতিবাদেই বিশ্বভারতীর শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ ও মিছিলে সামিল হয়েছিলেন। ওই আন্দোলনের পর উপাচার্যের নির্দেশে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে, যেখানে লেখা হয়েছে, ‘শিক্ষার্থীরা যেন শুধুমাত্র পড়াশোনায় মন দেয়, আন্দোলনে বা গান-বাজনায় যুক্ত না হয়।’
এ বিষয়ে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) এসএফআইয়ের রাজ্য কমিটির সদস্য প্রত্যুষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “শিক্ষার্থীরা মুক্তকণ্ঠে একসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের গান ‘আমার সোনার বাংলা’ গেয়েছে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিজস্ব দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এর জন্য চিঠি পাঠিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে অভিভাবকদের। বলা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কাজ হচ্ছে পড়াশোনা করা। রবীন্দ্রনাথের ওই গান গাওয়া যাবে না। তার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছে বিজেপি সরকার। বলছে- যদি কোনো প্রতিবাদ হয়, গান গাওয়া হলে তার বিরুদ্ধে বাড়িতে বাড়িতে চিঠি যাবে।”
তার বক্তব্য “এটা স্পষ্টতই থ্রেট সিন্ডিকেট।” উপাচার্যের তরফে বাড়ি বাড়ি চিঠি দিয়ে বলা হচ্ছে তাদের সন্তানরা অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। তাকে আপনারা সামলান, না হলে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।”
বীরভূম জেলা এসএফআই সম্পাদক সৌভিক দাস বক্সীর অভিযোগ, “বিশ্বভারতী একটা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এখানে ‘আমার সোনার বাংলা’ গান গাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের বাড়িতে চিঠি পাঠিয়ে বলা হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেয়া হবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন কি কড়া পদক্ষেপ নেয়া হবে?”
তিনি আরো বলেন, “বিশ্বভারতীর আচার্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নির্বাচনী প্রচারণায় বাংলা গান গেয়ে বাংলা প্রেম দেখান, অথচ আজ রবীন্দ্রনাথের গান গাইলে দেশদ্রোহী বলা হচ্ছে! আসলে বিজেপি ও আরএসএস রবীন্দ্রনাথের ঐক্যের বার্তা সহ্য করতে পারে না বলেই এই ভয় ও সেন্সরশিপ।”
এদিকে, বিশ্বভারতীর তরফে অভিভাবকদের কাছে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি সামনে আসায় প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
এসএফআই-এর বক্তব্য, “রবীন্দ্রনাথের গান গাইলে যদি দেশদ্রোহী হতে হয়, তবে বিশ্বভারতী তার মূল আদর্শকেই অস্বীকার করছে।”
তারা জানিয়েছে, এর প্রতিবাদে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে এবং উপাচার্যের কাছে লিখিতভাবে জবাব চেয়ে দাবি জানানো হবে।
শুধু তাই নয়, আসাম রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ইতিমধ্যেই ‘হাস্যকর’ বলে অভিহিত করেছেন শান্তিনিকেতনের সিনিয়র আশ্রমিকেরা। রবি ঠাকুরের পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুরের প্রশ্ন, “আমরাও কি তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহী?”
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম র স ন র ব আস ম র
এছাড়াও পড়ুন:
ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় ঢাবিতে মানবেন্দ্র লারমাকে স্মরণ
সাবেক আইনপ্রণেতা ও বিপ্লবী নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় এক স্মরণসভায় তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
স্মরণসভার শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এম এন লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা।
মানবেন্দ্র লারমা গরিব মেহনতি মানুষের নেতা উল্লেখ করে স্মরণসভায় সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, ‘তিনি কেবল পাহাড়ি মানুষের নেতা ছিলেন না। বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সমগ্র নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছেন। তিনি বাহাত্তরের সংবিধানে আদিবাসী, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি সে সময় সংসদে দাড়িয়ে দৃঢ় কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছিলেন যে তিনি একজন চাকমা, একজন চাকমা কোনো দিন বাঙালি হতে পারেন না।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, ‘জুলাই সনদে আজকে আদিবাসী মানুষের কথা বলা নেই। অথচ কেবল মুখে বহুত্ববাদী, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে। বিগত সময়ের দলীয় সরকার নাহয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেনি। কিন্তু গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় পাহাড়ি আদিবাসীরা কমপক্ষে দুটি সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিভাবে সমাধানের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কথা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো উচ্চারণ করেনি।’
ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক বলেন, ‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান যে চেতনা নিয়ে শুরু হয়েছিল, আজ সেই চেতনা মৌলবাদী শক্তির কাছে লুট হয়ে গেছে। সত্তরের দশকে নতুন বাংলাদেশে মহান নেতা মানবেন্দ্র লারমা সেই স্বপ্ন দেখছিলেন, যে স্বপ্ন একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার, গরিব মেহনতি তথা নিপীড়িত পাহাড়ি আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বুনেছিলেন।’
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানে নিপীড়িত মানুষের অধিকারের কথা বলা হয়নি, নারী-পুরুষের বৈষম্য বিলোপ এবং মেহনতি মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা তুলে ধরা হয়নি। সে সময় শোষিত মানুষের বন্ধু মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তাঁদের হয়ে কথা বলেছেন। তিনি সংবিধান প্রণয়নের সময় শ্রমিক, গরিব ও আদিবাসী নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছিলেন।
সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশের যত রাজনৈতিক দল আছে, তারা অন্য জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার মতো মানসিকতা এখনো তৈরি করতে পারেনি। ভোটের আগে মুখে বললেও তা বাস্তবে বাস্তবায়ন করে না।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল কাফি রতন বলেন, ‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জুম্ম জাতির জন্য ছাত্রজীবন থেকে অধিকারের কথা বলেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সংবিধান যখন বাঙালি বলে আদিবাসী মানুষের পরিচয় করে দিতে চেয়েছিল, সেই সময় গণপরিষদে এম এন লারমা প্রতিবাদ করেছিলেন।’
স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন লেখক ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, সাংবাদিক সাইফুর রহমান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা ও নারীনেত্রী শিরিন হক। স্মরণসভা শেষে গান, কবিতা পাঠ ও প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।