বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গান গেয়ে এবার বিপাকে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

সম্প্রতি আসামের শ্রীভূমি জেলার ইন্দিরা ভবনে কংগ্রেস সেবা দলের বৈঠকে  ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি গেয়েছিলেন বিধুভূষণ দাস নামে এক সিনিয়র কংগ্রেস কর্মী। এরপরই আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা তার বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’র মামলা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

আরো পড়ুন:

ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি

পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধন আতঙ্কে ফের মৃত্যুর অভিযোগ

ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সরব হতেই কার্যত হুমকির মুখে বিশ্বভারতীর শিক্ষার্থীরা। এমনটাই অভিযোগ করেছে বিশ্বভারতীর বাম ছাত্র সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া’ (এসএফআই)৷ আসাম সরকারের ওই নির্দেশের প্রতিবাদে সম্প্রতি বিশ্বভারতীর চত্বরে প্রতিবাদে নামে এসএফআই-এর সদস্যরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের গলাতেও ছিল ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি। আর তাতেই বিপত্তি! 

এসএফআইয়ের বক্তব্য, আসামের ঘটনার প্রতিবাদেই বিশ্বভারতীর শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ ও মিছিলে সামিল হয়েছিলেন। ওই আন্দোলনের পর উপাচার্যের নির্দেশে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে, যেখানে লেখা হয়েছে, ‘শিক্ষার্থীরা যেন শুধুমাত্র পড়াশোনায় মন দেয়, আন্দোলনে বা গান-বাজনায় যুক্ত না হয়।’ 

এ বিষয়ে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) এসএফআইয়ের রাজ্য কমিটির সদস্য প্রত্যুষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “শিক্ষার্থীরা মুক্তকণ্ঠে একসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের গান ‘আমার সোনার বাংলা’ গেয়েছে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিজস্ব দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এর জন্য চিঠি পাঠিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে অভিভাবকদের। বলা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কাজ হচ্ছে পড়াশোনা করা। রবীন্দ্রনাথের ওই গান গাওয়া যাবে না। তার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছে বিজেপি সরকার। বলছে- যদি কোনো প্রতিবাদ হয়, গান গাওয়া হলে তার বিরুদ্ধে বাড়িতে বাড়িতে চিঠি যাবে।” 

তার বক্তব্য “এটা স্পষ্টতই থ্রেট সিন্ডিকেট।” উপাচার্যের তরফে বাড়ি বাড়ি চিঠি দিয়ে বলা হচ্ছে তাদের সন্তানরা অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। তাকে আপনারা সামলান, না হলে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।” 

বীরভূম জেলা এসএফআই সম্পাদক সৌভিক দাস বক্সীর অভিযোগ, “বিশ্বভারতী একটা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এখানে ‘আমার সোনার বাংলা’ গান গাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের বাড়িতে চিঠি পাঠিয়ে বলা হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেয়া হবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন কি কড়া পদক্ষেপ নেয়া হবে?” 

তিনি আরো বলেন, “বিশ্বভারতীর আচার্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নির্বাচনী প্রচারণায় বাংলা গান গেয়ে বাংলা প্রেম দেখান, অথচ আজ রবীন্দ্রনাথের গান গাইলে দেশদ্রোহী বলা হচ্ছে! আসলে বিজেপি ও আরএসএস রবীন্দ্রনাথের ঐক্যের বার্তা সহ্য করতে পারে না বলেই এই ভয় ও সেন্সরশিপ।”

এদিকে, বিশ্বভারতীর তরফে অভিভাবকদের কাছে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি সামনে আসায় প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

এসএফআই-এর বক্তব্য, “রবীন্দ্রনাথের গান গাইলে যদি দেশদ্রোহী হতে হয়, তবে বিশ্বভারতী তার মূল আদর্শকেই অস্বীকার করছে।” 

তারা জানিয়েছে, এর প্রতিবাদে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে এবং উপাচার্যের কাছে লিখিতভাবে জবাব চেয়ে দাবি জানানো হবে। 

শুধু তাই নয়, আসাম রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ইতিমধ্যেই ‘হাস্যকর’ বলে অভিহিত করেছেন শান্তিনিকেতনের সিনিয়র আশ্রমিকেরা। রবি ঠাকুরের পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুরের প্রশ্ন, “আমরাও কি তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহী?”

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম র স ন র ব আস ম র

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার তীব্র সমালোচনা

‘আমার সোনার বাংলা...’ গাওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার নির্দেশ দিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। রাজ্যের এক সিনিয়র কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে এই মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় তীব্র সমালোচনা করেছেন রবীন্দ্রপ্রেমীরা। রবিবার আসমের এই ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছে বিশ্বভারতীর এসএফআই ইউনিটের সদস্যরা। 

গত সোমবার আসামের শ্রীভূমি জেলার ইন্দিরা ভবনে কংগ্রেস সেবা দলের বৈঠকের সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি গেয়েছিলেন বিধুভূষণ দাস নামে এক সিনিয়র কংগ্রেস কর্মী। এরপরই বিতর্ক ছড়ায়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি বিভিন্ন সময় গেয়েছেন প্রখ্যাত শিল্পী সুচিত্রা মিত্র, মান্না দে, শান্তিদেব ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, লোপামুদ্রা মিত্র, নচিকেতাসহ আরো অনেক প্রথিতযশা শিল্পীরা। কিন্তু সেই গান নিয়েই এত বিতর্ক মেনে নিতে পারছেন না শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক, শিক্ষার্থী থেকে বিদ্বজনেরা। 

রাজ্যটির বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে সিনিয়র আশ্রমিকেরা বলছেন এ তো একেবারে ‘হাস্যকর’! রবি ঠাকুরের পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুরের প্রশ্ন ‘আমরাও কি তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহী?’ 

১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের ‘বঙ্গভঙ্গ’ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। এর প্রতিবাদে রাখিবন্ধন করে পথে নেমেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই সময় ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি রচনা করেছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার এই গানটিকে ‘জাতীয় সঙ্গীত’ হিসাবে গ্রহণ করে। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “এক্কেবারে হাস্যকর ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথের গান সবার জন্যই, সবাই গেয়ে থাকেন। আমরাও এখনো গেয়ে থাকি। এটা যদি দেশদ্রোহীতা হয়, তাহলে আমরা দেশদ্রোহী। একজন মুখ্যমন্ত্রী (হিমন্ত বিশ্ব শর্মা) যদি এধরনের কথা বলেন, তাকে তাহলে ‘মুখ্য’ বলা যাবে না, অন্য কিছু বলতে হবে।”

বিশ্বভারতীর পাঠভবনের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও সিনিয়র আশ্রমিক সুব্রত সেন মজুমদার বলেন, “ব্যাপারটা আমার কাছে অত্যন্ত হাস্যকর ও লঘু মনে হয়। রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববন্দিত, তাই তার গান সব জায়গায় গাওয়া যায়। কিন্তু, একথা স্বীকার করি ‘আমার সোনার বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং তারা গুরুদেবের এই গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গ্রহণ করেছেন বলে আমরা সম্মান করি। এই গান কোথাও গাওয়া যাবে না এমন বিধিনিষেধ থাকা ভালো নয়। এটা অত্যন্ত ছোট মনের পরিচয়। তাই এই ধরনের ঘটনা দেখে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। তাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে তারা যেন আকাশের মত মন নিয়ে বিষয়গুলি দেখেন। মুখ্যমন্ত্রীকে সবাইকে নিয়ে রাজ্য চালাতে হয়, তাই তার অনেক উদার হওয়া উচিত।”

আরেক সিনিয়র আশ্রমিক অপর্ণা দাস মহাপাত্র বলেন, “জিনিসটা খুব হাস্যকর। রবীন্দ্র সঙ্গীত যে কোনো জায়গায়, যে কোনো পরিস্থিতিতে গাওয়া যায়। তার সঙ্গে দেশদ্রোহীতার সম্পর্ক খুঁজতে যাওয়া অত্যন্ত হাস্যকর। ‘আমার সোনার বাংলা’ এত সুন্দর একটি গান, যা যে-কোন উপযুক্ত পরিস্থিতিতেই গাওয়া যায়। আসামের মুখ্যমন্ত্রীর যদি এইটুকু জ্ঞান না থাকে বা রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা না থাকে সেটা আমাদের কাছে খুব দুঃখের।”

আশ্রমিক সুলগ্না মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমার সোনার বাংলা গানটি একটা জাতীয় সঙ্গীতের ঊর্ধ্বে গিয়ে এটা রবীন্দ্র সঙ্গীত। আর কি বলবো, কিছু বলারই নেই।”

আসামের ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছে বিশ্বভারতীর বাম ছাত্র সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া’ (এসএফআই)। তাদের সদস্যরাও পথে নেমে স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। 

আসমের এই ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার পথে নেমেছে বিশ্বভারতীর এসএফআই ইউনিটের সদস্যরা। এসএফআই ইউনিটের সম্পাদক বান্ধুলি কারার বলেন, “আমরা একটা বড় সমস্যার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। রবীন্দ্রনাথের লেখা গান গাওয়ায় আসামে একজনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। এই গানটা শুধু একটা দেশের জাতীয় সংগীত নয়। এই গানটা মাটির গান, ভালোভাসার গান, মানবতার গান, একতার গান। এই গান গাওয়ায় যারা রাষ্ট্রদ্রোহী বলছেন, আসলে তারা মানবতাবিরোধী। রবীন্দ্রনাথের গান, তার লেখা, তার মুক্ত চিন্তা এগুলো বাঙালির চেতনার একটা অংশ। রবীন্দ্রনাথকে যদি অপমান করা হয় তার অর্থ বাঙালির শিক্ষা, সংস্কৃতির অপমান করা। রবীন্দ্রনাথ কেবলমাত্র বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা নন, তিনি আমাদের বাংলার গর্ব, ভারতের গর্ব। যারা বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতিকে মুছে ফেলতে চাইছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ চলবে।” 
 

সুচরিতা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার তীব্র সমালোচনা