ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী: কে কেন কীভাবে
Published: 5th, November 2025 GMT
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে মো. আমির হোসেনের। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন তিনি। ভিডিওতে ট্রাইব্যুনাল ও আমির হোসেনের একটি কথোপকথন রয়েছে, তাঁকে হাসতেও দেখা যাচ্ছিল। তা দেখে তাঁর সমালোচনা করেন অনেকে।
আমির হোসেন দাবি করেন, মামলার বিচার কার্যক্রমের একটি অংশকে অসাধু ইউটিউবাররা বাজেভাবে উপস্থাপন করেছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে ‘ক্যাঙারু কোর্ট’ (নিয়ন্ত্রিত আদালত) তিনি মনে করেন না এবং এই ট্রাইব্যুনালের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও নিরপেক্ষতা নিয়েও তাঁর মধ্যে কোনো সংশয় নেই, এমনটাও বলেন এই আইনজীবী।
আমির হোসেনকে নিয়ে এই আলোচনা অনেকের মধ্যে কৌতূহল তৈরি করেছে, জুলাই অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়ে দেশছাড়া শেখ হাসিনার পক্ষে এই আইনজীবী কীভাবে দায়িত্ব পালন করছেন? আসামি শেখ হাসিনা কোন প্রক্রিয়ায় এই আইনি সুবিধা পেলেন? এই আইনজীবীর কাজ কী? তাঁর খরচই–বা কে জোগাচ্ছে?
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় শেখ হাসিনা, তাঁর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের বিচার চলছে।
তাঁদের মধ্যে গ্রেপ্তার আছেন কেবল চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন। তিনি নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। নিজের অর্থে যায়েদ বিন আমজাদকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আমির হোসেন। শেখ হাসিনা কিংবা আসাদুজ্জামান তাঁকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেননি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এই দুই পলাতক আসামির পক্ষে তাঁকে ‘ডিফেন্স কাউন্সেল’ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর এটিই একমাত্র মামলা, যেটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে। ১৩ নভেম্বর জানা যাবে এ মামলার রায় কবে হবে। প্রসিকিউশনের (রাষ্ট্রপক্ষ) পক্ষ থেকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সর্বোচ্চ শাস্তি চাওয়া হয়েছে এবং সাবেক আইজিপি মামুনের বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানকে খালাস দিতে আবেদন করেন তাঁদের পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী আমির।
শেখ হাসিনা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আস দ জ জ ম ন আম র হ স ন আইনজ ব অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে দেশ টিভির আরিফ ও নাসার নজরুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময়ের দুটি মামলায় নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদার ও দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আরিফ হাসানকে সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
রাজধানীর গুলশান থানা এলাকায় কামাল হোসেন প্রকাশ সবুজ হত্যা মামলায় নাসা গ্রুপের কর্ণধার ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন আদালত।
আর গণ–অভ্যুত্থান চলাকালে গত বছরের ৫ আগস্ট কোতোয়ালি থানার সিএমএম কোর্ট এলাকায় রোফায়েদ হাসানসহ ২৫–৩০ জন আন্দোলনকারীর ওপর গুলি চালানোর ঘটনায় হত্যাচেষ্টা মামলায় সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আরিফ হাসানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানার আদালত আজ সোমবার এই আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী জানান, গত ২৮ ও ৩০ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা আরিফ ও কামালকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। ওই দিন আদালত আসামির উপস্থিতিতে শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। আজ শুনানির জন্য তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি নিয়ে আদালত গ্রেপ্তার আবেদন মঞ্জুর করেন। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।
আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হাতকড়া ও হেলমেট পরিয়ে তাঁদের আদালতের হাজতখানায় আনা হয়। আরিফ ও নজরুল আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন।
আজ সকাল ১০টা ৫২ মিনিটের দিকে বিচারক আসেন। আরিফ হাসানকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক অনুপ ঘোষ। তাঁর আইনজীবী জামিন শুনানির জন্য পাওয়ার চান এবং আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার অনুমতি চান। আদালত সেটি মঞ্জুর করেন।
নাসার নজরুলের মামলার শুনানি শুরু হলে তাঁরা দুজন কাঠগড়ার সামনের অংশের দিকে যান। এরপর নাসার নজরুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী আরিফুর রহমান বলেন, ‘জিডির মাধ্যমে এ মামলা হয়েছে। ফরোয়ার্ডিংয়ের সঙ্গে সাপোর্টিভ কোনো ডকুমেন্টস নেই। এ মামলায় কোনো ১৬৪ ও ১৬১ ধারার জবানবন্দি নেই। ঘটনাস্থলে থাকার কোনো ভিডিও ফুটেজ নেই। কেউ বলেনি, উনি আওয়ামী লীগকে টাকা দিয়েছেন। তাহলে এ মামলার সন্দিগ্ধ আসামি কীভাবে হন? এটা গ্রেপ্তার দেখানো আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
ডিএমপি পরিদর্শক আসাদ আদালতকে বলেন, ‘মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সংশ্লিষ্টতার তথ্য পেয়েছেন। আন্দোলনকে দমন করার জন্য তিনি অর্থসহায়তা দিয়েছেন। সে জন্যই গ্রেপ্তারের আবেদন করেছেন।’
পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘কোনো ডকুমেন্টস আছে? তথ্য দেন। এমনিতে বললে তো হবে না।’ এরপর বিচারক নজরুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। তাঁদের দুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গত বছরের ২ অক্টোবর নজরুল ইসলাম মজুমদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর থেকে বিভিন্ন মামলায় তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কারাগারে আছেন।
গত বছরের ১৭ নভেম্বর দেশ টিভির এমডি আরিফকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে।