আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৫-৯৬ সেশনে ভর্তি হই। চার বছরের বিবিএ ও এক বছরের এমবিএ করতে সাত বছর লেগে যায়। কারণ সেশনজট, যার উৎপত্তি ছিল মূলত রাজনীতি।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে প্রথম দিন থেকেই আমাকে হলে থাকতে হয়েছে, যদিও প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের বৈধভাবে হলে থাকার বিধান ছিল না। প্রায় সাত বছরের হল–জীবনে আমার সুয়োগ হয়েছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ, দুই আমলের ছাত্ররাজনীতি প্রত্যক্ষ করার। ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ যা করেছে, তার মধ্যে ভালো কাজের উদাহরণ একেবারেই কম।

জোরপূর্বক মিছিলে নিয়ে যাওয়া ছিল অতি স্বাভাবিক। আমাকেও অনেকবার যেতে হয়েছে। মিছিলের আগে হলের প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দিত এবং সবাইকে গেটে একত্র করে মিছিলে নিয়ে যেত। মিছিলে না গেলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটত। আমারও একদিন মিছিলে যোগ দিতে দেরি হওয়ায় এক নেতার মুখ থেকে গালি শুনতে হয়েছে। একবার মিছিলে গিয়ে পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গাস থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যাই। এ রকম ঘটনার মুখোমুখি হয়ে মাঝেমধ্যে হলের ছাদে গিয়ে কান্না করতাম।

ছাত্রনেতারা তাদের সিটে একা থাকত অথচ অন্যদের কক্ষে জোরপূর্বক ডাবলার উঠিয়ে দিত। হলের ক্যানটিনে ফাও খাওয়া ছিল একেবারেই স্বাভাবিক। বড় নেতাদের রুমে ক্যানটিন থেকে খাবার পৌঁছে দিতে হতো। তারা কখনো ক্যানটিনে খেতে এলে তাদের টেবিলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বসতে সাহস পেত না।

আমাদের সময়ে এক হলের সঙ্গে আরেক হলের মারামারি ও হল দখলের ঘটনাও ছিল স্বাভাবিক। হলগুলো দখলে রাখতে সারা রাত অস্ত্র নিয়ে পাহারা দিতে হতো। যেসব শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষে রাজনৈতিকভাবে হলে উঠত, তারাই মূলত এসব কাজ করত। তাদের মিছিলে যাওয়াও ছিল বাধ্যতামূলক। হলে ডাবলার হওয়ার বিনিময়ে অনেককেই তাদের প্রথম বর্ষের অনেকটা সময় এসব কাজ করে কাটাতে হয়েছে। এ কারণে অনেকেই প্রথম বর্ষে অকৃতকার্য হয়েছে কিংবা ভালো ফল নিয়ে পাস করতে পারেনি। এই রাজনীতি করেই আমাদের কয়েকজন ক্লাসমেট অকৃতকার্য হয়েছে। তাদের মধ্যে মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া শিক্ষার্থীও ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রতিটি বিভাগের পাঠ্যসূচি এমনভাবে তৈরি করা, যাতে একজন শিক্ষার্থীকে মোটামুটিভাবে পাস করতে হলেও দৈনিক চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পড়াশোনা করতে হয়। অনেকগুলো বিভাগে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার চাপ এতই কম যে তারা মাসেও একবার বই ছুঁয়ে দেখে না। এসব শিক্ষার্থী তাহলে বাকি সময়ে কী করবে?

যখন হলে বৈধ সিট পাই, আমি আমার সিটে একা থাকতে পারিনি। আগে থেকেই একজন আমার সিটে থাকত এবং অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে ডাবলার হিসেবে নিয়েছি। দুই সিটের রুমের অন্য সিটে একজন ছাত্রনেতা থাকত। ওই নেতার কারণেই আমাকে ডাবলার নিতে হয়েছে। আমার ডাবলার হওয়ার বিনিময়ে সে ওই নেতার ফুটফরমাশ খাটত। পরবর্তী সময়ে সে বড় সাংবাদিক হয়েছে এবং বর্তমানে বিদেশে থাকে।

আমার রুমে নেতা থাকার কারণে পাতি নেতারা এসে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে আমার পড়ার ব্যাঘাত ঘটাত। অল্প সময়ের ব্যবধানে সিঙ্গেল রুমের জন্য আবেদন করি। এইচএসসি পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করায় ও এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলের কারণে তৃতীয় বর্ষের শুরুতেই সিঙ্গেল রুম পেয়ে যাই। সিঙ্গেল রুম পেলেও কখনোই একা থাকতে পারিনি। জোর করে উঠিয়ে দেওয়া ডাবলার নিয়েই হল–জীবন কাটিয়ে দিতে হয়েছে।

এই নেতারা কেউ কেউ আবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে আর ফেরত দিত না। পরবর্তী জীবনে ব্যাংকের বড় ঋণখেলাপি হওয়ার হাতেখড়ি এখানেই হয়ে যেত। তাদের জন্য রুমমেটের সাবান, টুথপেস্ট, টাওয়েল ব্যবহার ছিল প্রায় অধিকারের মতো। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে যখন হল ছাড়ি, তখন মনে হয়েছে, এই পাপিষ্ঠদের হাত থেকে বোধ হয় মুক্তি মিলেছে।

এরপর ২০০৬ সালের প্রথম দিকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে অল্প সময়ের জন্য বিএনপি ও দীর্ঘ সময়ের জন্য আওয়ামী লীগের শাসন দেখেছি। যে বেতনে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করি, তাতে ক্যাম্পাসের বাইরে ভাড়া বাসায় থেকে জীবনযাপন কঠিন বিধায় হাউস টিউটর হওয়ার জন্য আবেদন করি। কারণ, হাউস টিউটর হলে একটু কম ভাড়ায় হলের বাসায় থাকা যায়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা আবেদন করতে থাকি, কিন্তু হাউস টিউটর হতে পরিনি। তারপর পিএইচডি করে বিদেশ থেকে এসে আবার ২০১২ সাল থেকে আবেদন করতে থাকি। আমার আর হাউস টিউটর হওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। সাদা দলের (বিএনপি) কাছে আমার রাজনৈতিক মতাদর্শ স্পষ্ট ছিল না। আর নীল দল (আওয়ামী লীগ) বলেছে, আমার কথাবার্তা সরকার ও উন্নয়নবিরোধী।

আরও পড়ুনকুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের নামে এ কোন রাজনীতি১৭ এপ্রিল ২০২৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জন্য কিছু কম মানসম্পন্ন বাসা আছে। এগুলো সাইজে একটু ছোট এবং ভাড়াও কম। একজনকে দুই বছরের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। সঠিক নিয়মে বরাদ্দ হলে চাকরিজীবনে সবারই ওই বাসা পাওয়ার কথা। কিন্তু অনেকের মতো আমিও পাইনি। তাহলে অন্যরা কীভাবে পেয়েছেন? রাজনৈতিক বিবেচনাই ছিল প্রধান। নামকরা অনেক শিক্ষকও এসব বাসায় থেকেছেন। বরাদ্দ পেয়ে দুই বছরের মধ্যে বাসা ছেড়ে দিয়েছেন—এ রকম উদাহরণ বিরল।

অনুষদের ডিন একটি নির্বাচিত পদ। একজন ডিন তাঁর পরবর্তী নির্বাচনে জয়লাভ নিরঙ্কুশ করার জন্য অনেক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ কারণেই গত দুই দশকে অনেকগুলো অপ্রয়োজনীয় বিভাগ খুলে সেখানে প্রচুর ভোটার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো অনুষদে ডিন জার্নালের প্রধান সম্পাদকও। তাই জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ করার ক্ষেত্রে ডিনের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ থাকে। শিক্ষকদের পদন্নোতির বিষয়টিও তাঁর মাধ্যমে করা হয় বলে তিনি এ ক্ষেত্রেও হস্তক্ষেপ করতে পারেন। আবার পদোন্নতির বোর্ডেও তিনি একজন সদস্য। সব মিলিয়ে এ রকম একজন রাজনৈতিক ডিনের কাছে শিক্ষকদের নতজানু হওয়ার অনেক কারণ থাকে।

শিক্ষকদের রাজনৈতিক দলাদলি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বেশির ভাগ শিক্ষক তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শের শিক্ষকদের সঙ্গেই মেশেন। শিক্ষক লাউঞ্জ বা ক্লাবে শিক্ষকদের বসার অবস্থা দেখেই এ বিভাজন স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের সময় ভোট শেষে যে লাঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়, তা–ও বিতরণ করা হতো দুটি ভিন্ন জায়গা থেকে—একটি নীল দলের, অন্যটি সাদা দলের। এভাবে খাবার আনতে যাওয়া খুব বিব্রতকর হওয়ায় কেউ কেউ খাবার না নিয়েই চলে যেতেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ–উপাচার্য, ট্রেজারার পদগুলোয় সরাসরি রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টরসহ অন্যান্য প্রশাসনিক পদেও একই বিবেচনায় নিয়োগ হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডেপুটেশনে যখন বাংলাদেশ ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশিন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া হয়, তা–ও হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। শিক্ষকদের কমনওয়েলথ বৃত্তির জন্য যে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়, সেটাও রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে নয়।

ক্লাসে কম যাওয়া, ফলাফল দেরিতে প্রকাশ করা, এমনকি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা শিক্ষকদের একটা বড় অংশ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কেউ কেউ আবার শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত খণ্ডকালীন শিক্ষক এবং পূর্ণকালীন রাজনীতিবিদ হিসেবে।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় ছাত্ররাজনীতি থাকবে কি না, তা নিয়ে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে। আমার ছাত্রজীবনেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি খুন হয়েছিল। হলগুলোয় বসবাসের ও শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ছিল না। খাবার ছিল নিম্নমানের।

এ সমাজের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত ঘরের সন্তানেরা হলে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে না। যারা একসময় হলে রাজনীতি করত, তাদের সন্তানেরা এখানে পড়াশোনা করলেও কেউ হলে থাকে না। এমনকি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তানদেরও হলে থেকে পড়াশোনা করার নজির নেই বললেই চলে। যদি ছাত্ররাজনীতি এতই পরিশীলিত হতো, তাহলে আমাদের নেতা ও শিক্ষকেরা তাঁদের সন্তানদের হলে রেখে রাজনীতির চর্চা করিয়ে ভবিষ্যতের নেতা বানাতেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি হল দ্বারাই বেশির ভাগ পরিচালিত হয়। এর যত মন্দ দিক আছে, তার প্রায়ই সবই হলের শিক্ষার্থীদেরই আঘাত করে। যাদের সন্তানেরা হলে থাকে না, তারা হলের শিক্ষার্থীদের দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি জারি রাখতে চায়। হলের শিক্ষার্থীদের এ ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কারণ, হলগুলোয় আবার আগের ধারার রাজনীতি শুরু হলে তারাই প্রথম এর শিকার হবে। অন্যায়ের প্রতিবাদের জন্য যে দীর্ঘ রাজনীতিচর্চার দরকার হয় না, তার প্রমাণ আমরা ২০২৪ সালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্ররাজনীতিহীন শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেখেছি।

যাঁরা অক্সফোর্ড কিংবা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতির কথা তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্ররাজনীতি চালু রাখার পক্ষে কথা বলেন, তাঁরা হয়তো জানেন না, ওদের রাজনীতির ধরন কেমন। আমাদের মতো দলীয় ও লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি সেখানে নেই। তারা পড়াশোনা ও গবেষণায় বেশি ব্যস্ত থাকে। আমাদের এখানকার মতো পড়াশোনাকে গৌণ করে রাজনীতি করে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রতিটি বিভাগের পাঠ্যসূচি এমনভাবে তৈরি করা, যাতে একজন শিক্ষার্থীকে মোটামুটিভাবে পাস করতে হলেও দৈনিক চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পড়াশোনা করতে হয়। অনেকগুলো বিভাগে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার চাপ এতই কম যে তারা মাসেও একবার বই ছুঁয়ে দেখে না। এসব শিক্ষার্থী তাহলে বাকি সময়ে কী করবে?

জন্মের পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি নিয়েই এগিয়েছে। রাজনীতির কারণেই এ ক্যাম্পাসে অনেকগুলো খুন হয়েছে, শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে, শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন বেড়েছে। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোকে পাঁচ বছর প্রকাশ্য ও গুপ্ত রাজনীতির বাইরে রেখে দেখা যেতে পারে; সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকরাজনীতিও। যদি ভালো ফল না আসে, তাহলে এই রাজনীতি আবার ফিরে আসুক। একই রকম পরীক্ষা (কয়েক বছরের জন্য রাজনীতি বন্ধ রাখা) সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও প্রয়োগ করে দেখা যেতে পারে।

মো.

মাইন উদ্দিন অধ্যাপক, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র সন ত ন শ ক ষকদ র র জন ত ক র র জন ত র জন ত র র হওয় র আম দ র র জন য প রক শ প স কর ড বল র বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

অনুমতি ছাড়াই মেটার বিজ্ঞাপনে স্কুলশিক্ষার্থীদের ছবি

ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা। মেটা তার বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিজ্ঞাপনে স্কুলছাত্রীদের ছবি ব্যবহার করছে বলে সমালোচনা চলছে। স্কুলগামী কিশোরী শিক্ষার্থীদের ছবি ব্যবহার করছে মেটা। জানা গেছে, এসব ছবি ৩৭ বছর বয়সী পুরুষদের লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক অভিভাবক বিষয়টিকে ভয়ানক ও বিব্রতকর বলে মনে করছেন।

দেখা গেছে, ৩৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে মেটার খুদে ব্লগ লেখার সাইট থ্রেডসে যোগ দেওয়ার বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা হচ্ছে। ইনস্টাগ্রামে এই বিজ্ঞাপন দেখা যায়। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের পোস্টে ১৩ বছর বয়সী স্কুল ইউনিফর্ম পরা নারী শিক্ষার্থীর মুখ ও নাম দেখা যায়।

মেটা শিশুদের ছবি ব্যবহার করেছে; কারণ, তাদের অভিভাবকেরাই স্কুলে থেকে ফেরার পরে তোলা এসব ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন। অভিভাবকেরা অবশ্য মেটার বিজ্ঞাপনের নিয়ম জানতেন না। একজন মা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট প্রাইভেট করা ছিল। প্রাইভেট থাকার পরেও বিভিন্ন পোস্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে থ্রেডসে চলে গেছে। আরেক অভিভাবক জানান, তিনি তাঁর মেয়ের ছবিটি একটি পাবলিক ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছিলেন। সেই ছবি পরে অপরিচিত ব্যক্তির কাছে শিশুর ছবিসহ সাজেশন হিসেবে দেখানো হচ্ছিল। এসব ছবি দেখা এক ব্যবহারকারী অভিযোগ করেছেন, এমন পোস্ট উদ্দেশ্যমূলকভাবে উসকানিমূলক। এতে সংশ্লিষ্ট শিশু ও তাদের পরিবারকে শোষণ করা হয়েছে। বিভিন্ন ছবিতে থাকা ১৩ বছর বয়সী এক মেয়েশিশুর বাবা এই ঘটনাকে পুরোপুরি ভয়ানক বলে অভিহিত করেছেন। বিভিন্ন ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সব স্কুলছাত্রীই ছোট স্কার্ট পরে আছে। তাদের পা হয় উন্মুক্ত বা স্টকিং পরা সবাই। সেই বাবা জানান, আমার শেয়ার করা একটি ছবি ফেসবুকের মতো এমন একটি বিশাল কোম্পানি যৌনতাপূর্ণ উপায়ে পণ্যের বিপণনের জন্য ব্যবহার করেছে। বিষয়টি দেখে আমি খুবই বিরক্ত বোধ করেছি।

মেটা অবশ্য জানিয়েছে, এসব ছবি তাদের নীতি লঙ্ঘন করে না। মেটার ভাষ্যে, যেসব ছবি কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ও মানদণ্ড মেনে জনসম্মুখে শেয়ার করা হয়, তা ব্যবহার করে অন্যদের থ্রেডস ভিজিট করার জন্য উৎসাহিত করা হয়। মেটার সিস্টেম কিশোর-কিশোরীদের মাধ্যমে শেয়ার করা থ্রেডস পোস্ট সুপারিশ করে না। যেসব ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, তা আসলে প্রাপ্তবয়স্কদের অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন দেখা এক ব্যক্তি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শুধু স্কুলছাত্রীদের ছবি দিয়েই প্রচারমূলক পোস্ট পাঠানো হচ্ছে। কোনো স্কুল ইউনিফর্ম পরা ছেলের ছবি দেখা যায়নি। এখানে যৌনতার একটি দিক আছে বলে মনে হচ্ছে।

১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর মা জানান, আমার মেয়ের স্কুলে যাওয়ার একটি সাধারণ ছবি প্রকাশ করেছি। আমার কোনো ধারণাই ছিল না ইনস্টাগ্রাম থেকে তা নিয়ে প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষয়টি অনেক জঘন্য। সে একজন নাবালিকা মাত্র। এ ধরনের কাজে কখনোই আমি সম্মতি দিতাম না। টাকার বিনিময়েও আমি স্কুল ইউনিফর্ম পরা মেয়ের ছবি দিয়ে অনলাইন মাধ্যমে লোক আকর্ষণ করার অনুমতি দিতাম না। যিনি এই অভিযোগ করেছেন সেই মায়ের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২৬৭ জন ফলোয়ার আছেন। আর তাঁর সন্তানের পোস্টটি প্রায় ৭ হাজার ভিউ পেয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই ফলোয়ার নয়। অর্ধেক দর্শক ৪৪ বছরের বেশি বয়সী ও ৯০ শতাংশই পুরুষ।

আরেকজন মা অভিযোগ করে বলেন, মেটা এমন কিছু করছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে। আমাদের কিছু না জানিয়ে এসব হচ্ছে। মেটা কনটেন্ট তৈরি করতে চায়। এটি খুবই ঘৃণ্য কাজ। থ্রেডসে বিজ্ঞাপনটি কে তৈরি করেছে? প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের জন্য মাধ্যমের প্রচারে শিশুদের ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে কেন?

মেটা জানিয়েছে, এ ধরনের পোস্টকে রেকমেন্ডেশন টুলের মাধ্যমে অন্যদের সামনে প্রদর্শন করা হচ্ছে। কোম্পানির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, শেয়ার করা ছবি আমাদের নীতি লঙ্ঘন করে না। এসব ছবি অভিভাবকেরা জনসমক্ষে পোস্ট করেছেন। আমাদের ব্যবস্থায় টিনএজারদের নিজেরা শেয়ার করা ছবি থ্রেডস পোস্টে সুপারিশ করা হয় না। ব্যবহারকারীরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন মেটা তাদের পাবলিক পোস্টকে ইনস্টাগ্রামে সুপারিশ করবে কি না।

যুক্তরাজ্যের লন্ডনের থাকা ৩৭ বছর বয়সী ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী জানান, কয়েক দিন ধরে আমাকে থ্রেডসে যাওয়ার জন্য মেটার বিজ্ঞাপন বারবার দেখানো হয়। সেখানে শুধু অভিভাবকের পোস্ট করা স্কুল ইউনিফর্ম পরা মেয়েদের ছবি ছিল। কিছু ছবিতে তাদের নামও দেখা যাচ্ছিল। একজন বাবা হিসেবে, আমি মনে করি মেটার এ ধরনের পোস্ট প্রাপ্তবয়স্কদের লক্ষ্য করে প্রচারের জন্য উপযুক্ত নয়।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারত ম্যাচের আগে দলে মনোবিদ যুক্ত করেছে পাকিস্তান
  • ডাকাতি হওয়া ২৩ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩
  • বেতনের অর্ধেক যদি চলে যায় বাসা ভাড়ার পেছনে...
  • রাজনৈতিক ‘অস্ত্র’ না হয়ে প্রভাবমুক্ত হোক পুলিশ
  • গকসু নির্বাচন: জাহিদের প্রচারণায় সবুজের ডাক
  • রাকসুতে দুঃখ ঘোচাতে চায় ছাত্রদল, জয় ধরে রাখতে মরিয়া শিবির
  • শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের রাজনৈতিক মনস্তত্ত্ব
  • চুয়াডাঙ্গায় আবাসিক হোটেল থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার
  • অনুমতি ছাড়াই মেটার বিজ্ঞাপনে স্কুলশিক্ষার্থীদের ছবি