‘সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের আমানতকারীরা চরম দুর্ভোগে আছেন’
Published: 21st, September 2025 GMT
দেশের ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ৭ থেকে ৯টি ব্যাংক আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে চলছে। বাকি প্রায় ৪০টি ব্যাংকের মান খুবই দুর্বল। এ ছাড়া প্রায় ১৫টি ব্যাংক বড় ধরনের তারল্য সংকটে রয়েছে। এর মধ্যে কিছু সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকে আমানতকারীরা চরম দুর্ভোগে আছেন। ব্যাংকগুলো থেকে আমানতকারীদের বড় অঙ্কের জমাকৃত অর্থ মাসে মাসে সামান্য পরিমাণে ফেরত দেওয়া হচ্ছে। যা বহু বছরের অনিয়ন্ত্রিত লুটপাটের ফল।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওবাব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন অডিটরিয়ামে ‘ব্যাংক সংকট, সংস্কার ও নিয়ন্ত্রণ- ব্যাংক গভর্ন্যান্সে প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশরুর আরেফিন এসব কথা বলেন। ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জার্মানির ওটিএইচ অ্যামবার্গ ওয়েইডেনের যৌথ উদ্যোগে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
মাশরুর আরেফিন বলেন, ‘‘দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট ১৮ লাখ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ১১ লাখ কোটি টাকাই দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে ৪ লাখ কোটি টাকা সরাসরি খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া অবলোপনকৃত ঋণ (রাইট অফ) লোন তো রয়েছেই। একই সঙ্গে কিছু ঋণ খেলাপি হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারের নানা উদ্যোগে ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি এখন কিছুটা উন্নতির দিকে। যেমন বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল হয়েছে, বাণিজ্য ও চলতি হিসাবের ভারসাম্য ইতিবাচক হয়েছে। পাঁচটি ব্যাংকের একীভবনের প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া কিছু দুর্বল ব্যাংক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে শক্তিশালী হতে পারে।’’
দেশে সামনের দিনগুলোতে ডিজিজাল ব্যাংক আসছে। আর এই সময়ে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ছে। তাছাড়া ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম কার্যত অনিশ্চিত নিরাপত্তার মধ্যে পড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সিটি ব্যাংকের এমডি বলেন, ‘‘ব্যাংক খাত রক্ষায় আমাদের লোন স্ট্রাকচার থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বিকল্প হিসেবে বন্ড মার্কেটের দিকে নজর দিতে হবে।’’ বন্ড অনেক দিক দিয়ে ব্যাংকগুলোকে প্রটেকশন দেবে বলে তিনি মনে করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অফ বিজনেস স্টাডিজের ডিন অধ্যাপক ড.
ব্যাংক এশিয়ার এমডি সোহাইল আর কে হোসেন বলেন, ‘‘ব্যাংকের মোট মূলধনের ৯৫ শতাংশ আসে আমানতকারীদের কাছ থেকে। মাত্র ৫ শতাংশ আসে পরিচালকদের কাছ থেকে। তারপরও অনেক ক্ষেত্রে পরিচালকরা ব্যাংক পরিচালনা করেন নিজেদের খেয়ালখুশিমতো। তারা আমানতকারীদের স্বার্থ উপেক্ষা করেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘দেশের ব্যাংক খাত এখন তার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংকটে রয়েছে। কিছু ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ৩০–৪০ শতাংশ। এর মূল কারণ সুশাসনের অভাব, সরকারি হস্তক্ষেপ। গত ৭/৮ বছর ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের নিয়ন্ত্রণ প্রায় ভেঙে পড়েছিল। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা, অডিট, রেটিং সব জায়গায় ছিল সুশাসনের অভাব।’’
পূবালী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘‘কিছু ইসলামি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক অতীত সরকারের আমলে দুর্নীতির জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ করে কিছু ইসলামি ব্যাংকের বোর্ডে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। ব্যাংক খাতে সু-শাসন ফিরিয়ে আনতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত রাখতে হবে।’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অফ বিজনেস স্টাডিজের ডিন অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমামের পরিচালনায় মূল আলোচক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. কবির আহমেদ, ব্যাংক এশিয়ার এমডি সোহাইল আর কে হোসেন, সিটি ব্যাংকের এমডি মাশরুর আরেফিন, পূবালী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ আলী, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এমডি মতি উল হাসান।
এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের পরিচালক ও অধ্যাপক ড. মো. মঈন উদ্দিন, ফাইন্যান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হোসাইন আহমেদ এনামুল হুদাসহ অন্যান্য শিক্ষক ও আইবিএ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/নাজমুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন শ চ ত কর ক র এমড স শ সন
এছাড়াও পড়ুন:
নোয়াখালী হাসপাতালে র্যাবের অভিযান, ৭ দালালের কারাদণ্ড
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ৭ দালাল গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আজ রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয়। র্যাব-১১, সিপিসি-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার মিঠুন কুমার কুন্ডু অভিযানে নেতৃত্ব দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত দালালরা হলেন, মিলন (৩৫), রতন (৩৮), হারুন (৩৫), সজিব (২৫), স্বপন (৪৪), মাসুদ (৪৫) ও আকরাম হোসেন (২৫)।
আরো পড়ুন:
জলবায়ু পরিবর্তনে বদলাচ্ছে রোগের চিত্র, বাড়ছে বিরল সংক্রমণ
শেরপুরে পুলিশের উপর হামলা: থানায় মামলা, গ্রেপ্তার ৪
অভিযান সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকে হাসপাতলে দালালদের দৌরাত্ম্যে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছিলেন। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাবের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়। পরবর্তীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহরাব হোসাইন জানান, হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্যে রোগীদের হয়রানির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আজ র্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তারদের তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/সুজন/বকুল