দেশের ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ৭ থেকে ৯টি ব্যাংক আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে চলছে। বাকি প্রায় ৪০টি ব্যাংকের মান খুবই দুর্বল। এ ছাড়া প্রায় ১৫টি ব্যাংক বড় ধরনের তারল্য সংকটে রয়েছে। এর মধ্যে কিছু সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকে আমানতকারীরা চরম দুর্ভোগে আছেন। ব্যাংকগুলো থেকে আমানতকারীদের বড় অঙ্কের জমাকৃত অর্থ মাসে মাসে সামান্য পরিমাণে ফেরত দেওয়া হচ্ছে। যা বহু বছরের অনিয়ন্ত্রিত লুটপাটের ফল।

রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওবাব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন অডিটরিয়ামে ‘ব্যাংক সংকট, সংস্কার ও নিয়ন্ত্রণ- ব্যাংক গভর্ন্যান্সে প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশরুর আরেফিন এসব কথা বলেন। ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জার্মানির ওটিএইচ অ্যামবার্গ ওয়েইডেনের যৌথ উদ্যোগে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। 

মাশরুর আরেফিন বলেন, ‘‘দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট ১৮ লাখ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ১১ লাখ কোটি টাকাই দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে ৪ লাখ কোটি টাকা সরাসরি খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া অবলোপনকৃত ঋণ (রাইট অফ) লোন তো রয়েছেই। একই সঙ্গে কিছু ঋণ খেলাপি হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারের নানা উদ্যোগে ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি এখন কিছুটা উন্নতির দিকে। যেমন বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল হয়েছে, বাণিজ্য ও চলতি হিসাবের ভারসাম্য ইতিবাচক হয়েছে। পাঁচটি ব্যাংকের একীভবনের প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া কিছু দুর্বল ব্যাংক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে শক্তিশালী হতে পারে।’’

দেশে সামনের দিনগুলোতে ডিজিজাল ব্যাংক আসছে। আর এই সময়ে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ছে। তাছাড়া ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম কার্যত অনিশ্চিত নিরাপত্তার মধ্যে পড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন।   

সিটি ব্যাংকের এমডি বলেন, ‘‘ব্যাংক খাত রক্ষায় আমাদের লোন স্ট্রাকচার থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বিকল্প হিসেবে বন্ড মার্কেটের দিকে নজর দিতে হবে।’’ বন্ড অনেক দিক দিয়ে ব্যাংকগুলোকে প্রটেকশন দেবে বলে তিনি মনে করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অফ বিজনেস স্টাডিজের ডিন অধ্যাপক ড.

মাহমুদ ওসমান ইমাম বলেন, ‘‘সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংকিং খাতের গভর্ন্যান্স কাঠামো শক্তিশালী করতে হবে। এ ছাড়া ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে। একই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।’’

ব্যাংক এশিয়ার এমডি সোহাইল আর কে হোসেন বলেন, ‘‘ব্যাংকের মোট মূলধনের ৯৫ শতাংশ আসে আমানতকারীদের কাছ থেকে। মাত্র ৫ শতাংশ আসে পরিচালকদের কাছ থেকে। তারপরও অনেক ক্ষেত্রে পরিচালকরা ব্যাংক পরিচালনা করেন নিজেদের খেয়ালখুশিমতো। তারা আমানতকারীদের স্বার্থ উপেক্ষা করেন।’’

তিনি বলেন, ‘‘দেশের ব্যাংক খাত এখন তার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংকটে রয়েছে। কিছু ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ৩০–৪০ শতাংশ। এর মূল কারণ সুশাসনের অভাব, সরকারি হস্তক্ষেপ। গত ৭/৮ বছর ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের নিয়ন্ত্রণ প্রায় ভেঙে পড়েছিল। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা, অডিট, রেটিং সব জায়গায় ছিল সুশাসনের অভাব।’’  

পূবালী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘‘কিছু ইসলামি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক অতীত সরকারের আমলে দুর্নীতির জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ করে কিছু ইসলামি ব্যাংকের বোর্ডে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। ব্যাংক খাতে সু-শাসন ফিরিয়ে আনতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত রাখতে হবে।’’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অফ বিজনেস স্টাডিজের ডিন অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমামের পরিচালনায় মূল আলোচক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. কবির আহমেদ, ব্যাংক এশিয়ার এমডি সোহাইল আর কে হোসেন, সিটি ব্যাংকের এমডি মাশরুর আরেফিন, পূবালী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ আলী, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এমডি মতি উল হাসান। 

এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের পরিচালক ও অধ্যাপক ড. মো. মঈন উদ্দিন, ফাইন্যান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হোসাইন আহমেদ এনামুল হুদাসহ অন্যান্য শিক্ষক ও আইবিএ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
 

ঢাকা/নাজমুল 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন শ চ ত কর ক র এমড স শ সন

এছাড়াও পড়ুন:

ই-কমার্স রপ্তানির সীমা বৃদ্ধি

রপ্তানি অনুমোদন (ইএক্সপি) ফরমে ঘোষণা ছাড়াই ই কমার্স রপ্তানি করার সীমা দিগুণ করা হয়েছে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ঘোষণা ছাড়া ই কমার্স রপ্তানি করার সীমা ১ হাজার মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সীমা আগে ছিল ৫০০ মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।  

বুধবার (৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত দুটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এ সব নির্দেশনার ফলে ক্ষুদ্র ও ই-কমার্স রপ্তানিকারকেরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে রপ্তানি লেনদেন পরিচালনায় উৎসাহিত হবেন।

নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ঘোষণামুক্ত এসব রপ্তানির আয় এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সপ্রাপ্ত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডার (এমএফএস) এবং পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার ( পিএসপি)-এর মাধ্যমে দেশে আনা যাবে। এর ফলে, রপ্তানিকারকরা সরাসরি ওয়ালেট বা ডিজিটাল অ্যাকাউন্টে রপ্তানি আয়ের অর্থ গ্রহণ করতে পারবেন।

এর আগে, এমএফএসপি ও পিএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল তথ্যপ্রযুক্তি সেবা রপ্তানির আয় প্রত্যাবাসনের অনুমতি পেত। নতুন নির্দেশনা জারির ফলে তাদের কার্যপরিধি এখন স্বল্পমূল্যের পণ্য রপ্তানি আয় পর্যন্ত বিস্তৃত হলো।

বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানিয়েছে, অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকগুলোকে এসব লেনদেন সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক কাঠামোর শর্তাবলি মেনে সম্পন্ন করতে হবে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই উদ্যোগ ক্ষুদ্র ও ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এতে রপ্তানি প্রক্রিয়া আরও আধুনিক ও স্বচ্ছ হবে, ক্ষুদ্র রপ্তানিকারকদের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার পথ সহজ হবে এবং আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ আরো বাড়বে।
 

ঢাকা/নাজমুল/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ