ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে ব্রিটেন সময় নিলো ১০৮ বছর
Published: 21st, September 2025 GMT
১০৮ বছর আগে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোড়া ইসরায়েলের জন্মের ঘোষণা দিয়েছিল ব্রিটেন। এই শতবর্ষে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল, বাস্তুচ্যুত করেছে লাখ লাখ মানুষকে। ফিলিস্তিনিদের কান্না ব্রিটিশরা কখনোই শোনেনি। আজ ফিলিস্তিন যখন ধ্বংসের দোরগোড়ায় তখন ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলো ব্রিটেন।
১৯১৭ সালের ২রা নভেম্বর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস বেলফোর স্বাক্ষরিত একটি ঘোষণাপত্রে ফিলিস্তিনে ইহুদি জনগণের জন্য একটি জাতীয় আবাসভূমি (জাতীয় রাষ্ট্র) প্রতিষ্ঠার জন্য ব্রিটেনের সমর্থন দেয়। এই ঘোষণাটি জায়নিস্ট ফেডারেশন অব গ্রেট ব্রিটেন এন্ড আয়ারল্যান্ডের নেতা লিয়োনেল ওয়াল্টার রথচাইল্ডকে পাঠানো একটি চিঠির মাধ্যমে জারি করা হয়েছিল। এই ঘোষণাটি ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের পথ খুলে দেয়। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের বদৌলতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয় ইসরায়েল রাষ্ট্র।
১৯৪৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় দেড় লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। শুধুমাত্র ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এই পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৬৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। সম্প্রতি গাজা সিটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ইসরায়েল। গাজার কেন্দ্রীয় শহর থেকে বাসিন্দাদের বের করে উপকূলীয় এলাকায় যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার রবিবার এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, “একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত ইসরায়েল এবং একটি কার্যকর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র - এই মুহূর্তে আমাদের কাছে এর কোনটিই নেই। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার মুহূর্ত এখন এসে গেছে। তাই, আজ, শান্তি এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের আশা পুনরুজ্জীবিত করার জন্য, এই মহান দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি স্পষ্টভাবে বলছি যে যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।”
যুক্তরাজ্য সরকার জুলাই মাসে বলেছিল, তারা সর্বাধিক প্রভাবের একটি অনুমিত মুহূর্ত পর্যন্ত স্বীকৃতি স্থগিত রাখার দীর্ঘস্থায়ী পদ্ধতি পরিবর্তন করবে - যদি না ইসরায়েল গাজায় তার গণহত্যা যুদ্ধ বন্ধ করে, একটি দীর্ঘমেয়াদী টেকসই শান্তি প্রক্রিয়ায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় যা একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান প্রদান করে এবং ছিটমহলে আরো ত্রাণ প্রদানে সহায়তা করে।
কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে গাজার বিপর্যয়কর পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে আরো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। কারণ ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা শহরকে দখল করার জন্য পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করে চলেছে, একই সাথে ছিটমহলের দুর্ভিক্ষপীড়িত জনগোষ্ঠীকে অনাহারে এবং বাস্তুচ্যুত করে চলেছে।
অধিকৃত পশ্চিম তীর জুড়ে ইসরায়েলি সৈন্যদের প্রতিদিনের অভিযান এবং বসতি স্থাপনকারীদের আক্রমণও অব্যাহত রয়েছে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে সংযুক্ত করার এবং অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি সংলগ্ন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণাকে ‘কবর’ দেওয়ার পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশন শুরু হওয়ার দুই দিন আগে কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়াও আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এরপরই ব্রিটেন এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল র জন য ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
কোনো দলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হলে জোট হতে পারে: সারজিস আলম
আগামীর বাংলাদেশ এবং জনগণের স্বার্থ সামনে রেখে যদি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়, তাহলে নির্বাচনী জোট হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এসসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ নগরের একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। এনসিপির কমিটি গঠন উপলক্ষে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার আহ্বায়ক এবং সদস্যসচিবের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সারজিস আলম বলেন, ‘যদি তারা (রাজনৈতিক দল) জুলাই সনদ বাস্তবায়নে একমত থাকে, বিচারিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে একমত থাকে, যদি তারা বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী এবং আওয়ামী ফ্যাসিস্টবিরোধী তাদের শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পারে—এ বিষয়গুলোতে যদি আমরা ঐকমত্য হতে পারি, তাহলে জনগণের স্বার্থে অ্যালায়েন্স (নির্বাচনী জোট) হতে পারে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলমান, তবে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
আগামী নির্বাচনে এনসিপি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং নিজেদের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করছে জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে যদি প্রতিটি ওয়ার্ডে এনসিপির আহ্বায়ক কমিটি থাকে, তাহলে ৩০০ আসনে শক্তিশালী প্রার্থী দিতে পারবেন। কমিটি গঠনের বিষয়ে কাজ চলছে।
আগামী সংসদ নির্বাচনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির (জাপা) অংশগ্রহণ করার কোনো অধিকার নেই উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি নেতা সারজিস আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এবং তাদের যারা দোসর জাতীয় পার্টি, তাদেরও আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো অধিকার নেই। এই জাতীয় পার্টির কত বড় সাহস, এই জিএম কাদেররা এবং এঁদের যারা সাঙ্গপাঙ্গ আছে, এরা যে খুনিদের দোসর এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ওই খুনিদের মদদদাতা, তার প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়। তারা যখন বলে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না! তাদের জন্মদাতা যে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ যে তাদের পেলেপুষে বড় করেছে, এর প্রমাণ তারা আবার নতুন করে দিচ্ছে। তাদের জাত চেনাচ্ছে। এই খুনিদের আগামীর বাংলাদেশের কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অধিকার নেই।’
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নে সারজিস আলম বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন আমাদের শাপলা প্রতীক দিতে গিয়ে তারা তাদের জায়গা থেকে একটি লম্বা সময় স্বেচ্ছাচারিতা করেছে এবং কোনো আইনগত বাধা না থাকা সত্ত্বেও আমাদেরকে শাপলা না দিয়ে শাপলা কলি দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে আমাদের জায়গা থেকে আহ্বান করব, তারা যদি ওই একই ধরনের আচরণ আগামী দিনে করে, তাহলে তাদের ওপর আস্থার সংকট তৈরি হবে। আমরা চাই, তারা সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠুভাবে তাদের প্রতিষ্ঠানের স্বাধীন যে সাংবিধানিক অবস্থা, তা যেন বজায় রাখে। তারা যেন পূর্বের মতো কোনো দলীয় নির্বাচন কমিশনে পরিণত না হয়। যদি কারও ভেতর এমন চিন্তা বা চেষ্টা থাকে, তাহলে তাদের পরিণতি তাদের পূর্বসূরিদের মতো হবে।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিদা সারোয়ার, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকিন আলম প্রমুখ।