বিসিএস ভাইভার পরই আব্বাকে ফোন করে বললাম, ‘আজ থেকে আর রিকশা চালাতে হবে না’
Published: 4th, October 2025 GMT
একদিন ক্রিকেট খেলতে গিয়ে বাঁ কনুই ডিজলোকেটেড (জয়েন্ট নড়ে যাওয়া) হয়ে গেল। আমাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া দরকার; কিন্তু নিয়ে যাওয়ার মতো কেউ নেই। আব্বা গেছেন পদ্মার চরে কাজ করতে। অনেক খুঁজেও কাউকে পাওয়া গেল না। নিরুপায় হয়ে মা–ই আমাকে কোলে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ছুটলেন হাসপাতালের দিকে। বাড়ি থেকে বেশ দূরেই উপজেলা সদর। আমাদের মা-ছেলের খুব অসহায় লাগছিল। হাসপাতালে গিয়ে মা একে-ওকে জিজ্ঞাসা করে অনেকক্ষণ পরে একজন চিকিৎসকের কাছে আমাকে নিয়ে যেতে পারলেন। চিকিৎসা হলো।
আমি তখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি। সেদিন মনে হয়েছিল, বড় হয়ে আমি চিকিৎসকই হব। অসহায়দের সাধ্যমতো সেবা করার চেষ্টা করব।
সে বছরই জীবনে আরেকটি শিক্ষা পাই। পিইসির (প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা) আগে মডেল টেস্ট দিতে হয়। সেই পরীক্ষা দিতে হয় নিজেদের স্কুল ছেড়ে উপজেলার অন্য কোনো স্কুলে। আমাদের পরীক্ষা পড়েছিল মীরগঞ্জে। এ জন্য সব বন্ধু নতুন জামা কেনে। পরীক্ষার দিন তারা নতুন জামা গায়ে দিয়ে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল। আমার কোনো ভালো জামা ছিল না। তাদের দেখে আমিও জিদ করি, নতুন জামা ছাড়া পরীক্ষা দিতে যাব না। যাব না মানে যাবই না—ঘরে বসে কাঁদছিলাম। শেষমেশ আমার বড় ভাই জোর করে আমাকে ধরে নিয়ে পরীক্ষার হলে বসিয়ে দিয়ে আসেন। তখন পরীক্ষার ৪০ মিনিট পার হয়ে গেছে।
ক্লাসে আমি ফার্স্ট বয়; কিন্তু সেই পরীক্ষায় আমি তৃতীয় হয়ে গেলাম। ভীষণ মন খারাপ হলো। আস্তে আস্তে বুঝতে শিখলাম, যখন-তখন নতুন জামা কিনে দেওয়ার সামর্থ্য আমার পরিবারের নেই। মা বোঝালেন, নতুন জামা কিনতে হলে ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে।
বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নশিপ শুরু করছেন অর্ণব হাসান.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গাজার শিক্ষার্থীদের মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন অধরা, কারণ...
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েও আমেরিকায় যেতে পারছেন না গাজার কয়েক ডজন শিক্ষার্থী। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিনি পাসপোর্টধারীদের জন্য প্রায় সব ধরনের অ-অভিবাসী ভিসা স্থগিত করায় বিপাকে পড়েছেন তাঁরা।
ভাঙাচোরা জীবন, সীমান্তে আটকে স্বপ্ন২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর কয়েক দিনের মধ্যেই গাজার মরিয়ামের (নিজেকে এবং পরিবারকে রক্ষার জন্য ছদ্মনাম ব্যবহার করছেন) জীবন ওলটপালট হয়ে যায়। বাড়িঘর, স্কুল এবং ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব গাজা, যেখানে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পড়ছিলেন—সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায় ইসরায়েলের বিমান হামলায়। ডিসেম্বরে নিহত হন তাঁর শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খ্যাতিমান পদার্থবিজ্ঞানী সুফিয়ান তাইয়েহ। মরিয়ম বলেন, ‘আমার কাছে তিনি বাবার মতো ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর খবর শোনার পর আমার মনে হলো পড়াশোনা শেষ হয়ে গেল। মনে হচ্ছে আমার পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেল।’
তবু রাফার তাঁবুতে ঠাঁই নিয়ে অনিশ্চিত বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট–বিভ্রাটের মধ্যেও মরিয়াম হাল ছাড়েননি। সীমান্তের কাছে দুর্বল মিসরীয় সিগন্যাল পাওয়া যায়, এমন স্থানে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি তিনি বিদেশে যাওয়ার জন্য আবেদন করেন আর সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। শেষ পর্যন্ত আমেরিকার মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণ অর্থায়নে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ পান। কিন্তু তিনি এখনো গাজাতেই আটকে আছেন। ভিসা নিষেধাজ্ঞা থামিয়ে দিয়েছে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন।
মরিয়ম বলেন, ‘সম্পূর্ণ অর্থায়িত পিএইচডি প্রোগ্রামের ভর্তির সুযোগের বার্তা পাওয়ার মুহূর্তটি আমি কখনোই ভুলব না। আমাদের তাঁবুতে ফিরে আমার বাচ্চাদের শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সুসংবাদটি জানিয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমরা এই দুঃস্বপ্ন থেকে বাঁচব। কিন্তু ট্রাম্পের ভিসা প্রক্রিয়া স্থগিতের কথা শুনে সবকিছু আবার ভেঙে পড়েছিল। মনে হয়েছিল যেন আমার স্বপ্নগুলো আবারও ধ্বংস হয়ে গেছে।’
যুদ্ধ না থাকলেও ফিলিস্তিন শিক্ষার্থীদের ভিসা সাক্ষাৎকার দিতে মিসর বা ইসরায়েলে যেতে হতো। এখন রাফা সীমান্ত প্রায় বন্ধ আর ইসরায়েল যাওয়ার অনুমতি মেলা অসম্ভব।গাজা শহরের আরেক শিক্ষার্থী ২২ বছরের লায়লারও অবস্থা একই। ইসরায়েলের আক্রমণ শুরু হওয়ার সময় পাঁচ বছরের ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামে চার বছরে চলছিল। ওয়াই–ফাইয়ের সংযোগ পেতে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা হেঁটে এদিক ওদিক যেতেন। সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে ফোন চার্জ করে আবেদনপত্র পাঠাতেন। যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান তিনি। কিন্তু তারপর এল নিষেধাজ্ঞা। সব এলোমেলো হয়ে গেল। তিনি জানালেন, ‘আমরা এখনো গাজাতেই আটকে আছি।’
লায়লাও ছদ্মনাম। তিনি গার্ডিয়ানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেছেন।
যুদ্ধ শুরুর আগে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের শহর রামাল্লার একটি স্কুলে শিক্ষার্থীরা