নানা আনুষ্ঠানিকতায় প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন
Published: 6th, October 2025 GMT
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা আজ। যথাযথ ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের সঙ্গে নানা আনুষ্ঠানিকতায় এ উৎসব উদযাপন করা হচ্ছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে।
সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই রাঙামাটির প্রধান বৌদ্ধ ধর্মীয় উপাসনালয় রাজবন বিহারসহ, মৈত্রী বিহার, আনন্দ বিহার প্রায় সব বিহার পূণ্যার্থীদের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে উঠেছে। খাগড়াছড়ির ধর্মপুর আর্যবন বিহার, গোলাবাড়ী আর্য অরণ্য ভাবনা কুঠির, য়ংড বৌদ্ধ বিহারসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে হয়েছে ফুল পূজা, বুদ্ধ পূজা।
ভক্তদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে রাঙামাটির রাজবন বিহার চত্বর। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি চলছে দান-ধ্যান ও বিশেষ প্রার্থনা। শিশু-কিশোরদের জন্য আজকের দিনটি বাড়তি আনন্দের, আর বড়দের জন্য দিনটি ভক্তি ও প্রার্থনায় মগ্ন হওয়ার সময়।
প্রতিবছর আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিনমাস বর্ষাবাস অধিষ্ঠান শেষে হয় শুভ প্রবারণা উৎসব। এর পরপরই বিহারে বিহারে আয়োজন শুরু হয় দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব।
রাজবন বিহারে ধর্মীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়েছে বুদ্ধ পতাকা। এরপর ভিক্ষু সংঘের প্রাতঃরাশ, বুদ্ধ পূজা, পিণ্ডদান, প্রবারণা পূরণ, বুদ্ধমূর্তি দান, সংঘ দান, অষ্টপরিষ্কার দান, হাজারবাতি দান, পঞ্চশীল প্রার্থনা, উৎসর্গ, সদ্ধর্ম দেশনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে অগণিত পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটেছে। এতে বিহারের আবাসিক প্রধান প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির ও রাজবন বিহারের জ্যেষ্ঠ ভিক্ষু জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবির ধর্মীয় দেশনা প্রদান করেছেন।
প্রবারণা পূর্ণিমা মূলত বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাস শেষে আত্মশুদ্ধি ও পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ভিক্ষুদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, পূজা-অর্চনায় অংশ নেন এবং জীবজন্তুর কল্যাণ কামনায় প্রার্থনা করেন। অশুভ বিদায় ও মঙ্গল কামনার মধ্য দিয়ে মানুষ এই উৎসবে মেতে ওঠে।
পুণ্যার্থীরা বলেছেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আজকের দিনে ভিক্ষুরা তিন মাসের বর্ষাবাস শেষ করেন। আজকের দিনে আমরা পরিবার পরিজন ও সমগ্র জাতির মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনা করি।
রাঙামাটি রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির বলেন, আজকের এই দিনে আমরা প্রার্থনা করি, সবাই যেন ধার্মিক, নীতিপরায়ণ ও ন্যায়নিষ্ঠ হয়। আমরা আশা করি, আমরা সকলেই যেন মিলেমিশে থাকতে পারি এবং পূণ্যময় কাজ করতে পারি।
খাগড়াছড়ি য়ংড বৌদ্ধবিহারে আসা ডা.
খাগড়াছড়ির সদরের দক্ষিণ খবং পুড়িয়া আদর্শ বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ নন্দপ্রিয় মহাস্থবির ভন্তে বলেছেন, তারা (বৌদ্ধ ভিক্ষুরা) মূলত বর্ষার সময়টাতে আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত নির্বাণ লাভের আশায় আত্মশুদ্ধির জন্য ধ্যান ও সংযম করেন। বিশেষ কোনো কারণ বা সংঘের অনুমতি ছাড়া নিজস্ব বৌদ্ধবিহারের বাইরে রাত্রি যাপন করেন না। এই সময়ে বৌদ্ধ ধর্মের নর-নারীরা তাদের বিশেষ যত্ন নেন। এর পর শুরু হয় তাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দান।
প্রবারণা পূর্ণিমা শুধু ধর্মীয় আচার নয়, এটি পাহাড়ের মানুষের মিলনমেলা ও সংস্কৃতির অনন্য রূপ। বছরের পর বছর ধরে প্রবারণা পূর্ণিমা পাহাড়ি জনপদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আনন্দ-আলোকের প্রতীক হয়ে রয়েছে।
ঢাকা/শংকর/রূপায়ন/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জবন ব হ র আজক র দ ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
আর্জেন্টিনার উৎসবের রাতে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ ব্রাজিল, ইতিহাসে প্রথম
জয় ছাড়া বিকল্প ছিল না। আর গোল ছাড়া জেতাও যায় না।
স্পেনের বিপক্ষে ‘বাঁচা-মরার’ ম্যাচে এই গোলটাই পেল না ব্রাজিল। উল্টো হজম করেছে। গতকাল রাতে চিলির সান্তিয়াগোয় ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে স্পেনের কাছে ১-০ গোলে হেরেছে ব্রাজিল।
এই হারে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছে ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-২০ দল। আসরের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা প্রথম পর্ব থেকে বিদায় নিল এই প্রথম। একই রাতে গ্রুপসেরা হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ দল।
চিলির ন্যাশিওনাল জুলিও মার্তিনেজ স্টেডিয়ামে ব্রাজিল ‘সি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচটি খেলতে নেমেছিল দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থায়। গ্রুপের প্রথম ম্যাচে মেক্সিকোর সঙ্গে ২-২ ড্র আর মরক্কোর কাছে ২-১ ব্যবধানের হারে হাতে ছিল মাত্র এক পয়েন্ট। স্পেনও এক ড্র এক হারে খাদের কিনারে দাঁড়িয়েছিল। দুই দলের জন্যই ছিল ‘ডু অর ডাই ম্যাচ’।
খেলায় দুই দলই ছিল আক্রমণাত্মক। ব্রাজিল ১৪টি এবং স্পেন মোট ১৩টি শট নিয়েছে। তবে ব্রাজিলের (৩) তুলনায় স্পেনের শট লক্ষ্যে ছিল বেশি (৬)। ৪৭তম মিনিটে তেমনই এক শটে স্পেন এগিয়ে যায় ইকার ব্রাভোর গোলে। শেষ পর্যন্ত এই গোল সম্বল করেই ম্যাচ জিতেছে স্পেন।
ম্যাচ জিতেও অবশ্য স্পেনের পরের পর্বে ওঠা নিশ্চিত হয়নি। ‘সি’ গ্রুপ থেকে ৬ ও ৫ পয়েন্ট নিয়ে শেষ ষোলোয় উঠেছে মরক্কো ও মেক্সিকো। ২৪ দলের টুর্নামেন্টে ৬ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপের সঙ্গে পরের পর্বে খেলবে সেরা চার তৃতীয় স্থানধারী। স্পেন আপাতত সেই তালিকায় থেকে অপেক্ষায় থাকল।
ব্রাজিলের সবচেয়ে বাজেব্রাজিল অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিচ্ছে তিন ম্যাচে দুই হার এক ড্রয়ের হতাশাকে সঙ্গী করে। ১৯৭৭ সালে ফিফা যুব চ্যাম্পিয়নশিপ হিসেবে চালু হওয়া অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে এবার নিয়ে ২০তম বার খেলল ব্রাজিল। আগের ১৯ অংশগ্রহণে ৫ বার চ্যাম্পিয়ন এবং চারবার রানার্সআপ হয়েছে দলটি। সবচেয়ে বাজে ফল ছিল ২০০৭ আসরে—দ্বিতীয় রাউন্ড। এবার তা ছাপিয়ে গ্রুপ পর্বে চতুর্থ হয়ে বিদায়।
আর্জেন্টিনা গ্রুপসেরা‘ডি’ গ্রুপে থাকা আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ দল প্রথম ম্যাচে কিউবাকে ৩-১ আর দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ ব্যবধানে হারিয়ে আগেই শেষ ষোলোর পথে এগিয়েছিল।
গতকাল রাতে ইতালিকে ১-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপসেরা হয়েছে দলটি। ৭৪ মিনিটে ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন গোরোসিতো।
‘ডি’ গ্রুপে আর্জেন্টিনার পয়েন্ট ৯, দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইতালির ৪। অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ৬ বারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা সর্বশেষ দুই আসরে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছিল। দলটি সর্বশেষ শিরোপা জিতেছে ২০০৭ সালে।
এ ছাড়া ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপের শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে ‘এ’ গ্রুপ থেকে জাপান ও চিলি এবং ‘বি’ গ্রুপ থেকে ইউক্রেন ও প্যারাগুয়ে।