সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে: ভূমি উপদেষ্টা
Published: 10th, November 2025 GMT
ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের বেতন হয়। তাই সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে। কেউ যদি সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দ্রুত সেবার ক্ষেত্রে সবার আগে জনগণ।”
সোমবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) অডিটরিয়ামে ‘উপজেলা ভূমি অফিসের সেবা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
‘জ্ঞান জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করাই প্রকৃত সাফল্য’
ভূমিসেবা নিশ্চিতের মূল ভিত্তি সঠিক সার্ভে ও সেটেলমেন্ট: ভূমি উপদেষ্টা
তিনি বলেন, “ভূমি প্রশাসন বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত, যার কার্যক্রম মূলত উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা ভূমি অফিসের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সাধারণ মানুষের ভূমি-সংক্রান্ত প্রায় সব সেবা এখান থেকেই দেওয়া হয়। তাই উপজেলা ভূমি অফিস নাগরিক সেবার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।”
তিনি আরো বলেন, “ভূমি সেবার মান ও সুশাসন নিশ্চিত করতে এখনও নানা চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। সেবায় জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্টেকহোল্ডারদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। কিভাবে কাজ করলে জনগণের কল্যাণ হবে, তা নিজস্ব বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নির্ধারণ করতে হবে।”
সুশাসন ছাড়া অগ্রগতি অসম্ভব
ভূমি উপদেষ্টা বলেন, “সুশাসন একটি রাষ্ট্রের অগ্রগতির পূর্বশর্ত। এটি এমন একটি কাঠামো, যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার ও নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়—ভূমি সেবার ক্ষেত্রেও তাই।”
তিনি বলেন, “ভূমি মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। এটি খাদ্য, শিল্প, আবাসন ও অর্থনীতির মূল উৎস। ভূমি সেবার মানোন্নয়ন কেবল প্রযুক্তিনির্ভর নয়, এটি মানবিকতা, সততা ও দায়িত্ববোধের সমন্বয়।”
জনবান্ধব ভূমি প্রশাসনের আহ্বান
ভূমি উপদেষ্টা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “স্বচ্ছতা, দেশপ্রেম, সততা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে ভূমি খাতকে জনবান্ধব করা সম্ভব। সহকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে, অসততার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।”
তিনি বলেন, “অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কাজের জন্য ওপর থেকে সুপারিশ এলে দ্রুত হয়ে যায়, কিন্তু সাধারণ মানুষ সেই দ্রুত সেবা পায় না। এসব অসঙ্গতি পরিহার করতে হবে।”
ভূমি খাতে সুশাসন এখন সময়ের দাবি
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, “ভূমি খাত বাংলাদেশের উন্নয়ন ও জনকল্যাণে অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। এটি শুধু উৎপাদনের উপকরণ নয়; এটি নাগরিকের অধিকার, জীবিকা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল ভিত্তি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ভূমি প্রশাসনে সুশাসনের অভাব ও স্বচ্ছতার ঘাটতির কারণে জনগণ ভোগান্তিতে ছিল।”
নতুন বাংলাদেশের পথে
ভূমি উপদেষ্টা আরো বলেন, “সহকারী কমিশনার (ভূমি) শুধু প্রশাসনিক দায়িত্বই পালন করেন না, বরং নির্বাচন পরিচালনাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাঁরা নির্বাচনের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।”
তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পর নতুন বাংলাদেশকে পুরোনো জীর্ণতা ভুলে সামনে এগোতে হবে। সামনে নির্বাচন—নতুন আশা ও নতুন প্রত্যয়ের প্রতীক। তাই এমন একটি নির্বাচন উপহার দিতে হবে, যেখানে জনগণ নির্ভয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ।স্বাগত বক্তব্য রাখেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড.
বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন টিআইবির পরিচালক (সিভিক এনগেজমেন্ট) ফারহানা ফেরদৌস, প্রফেসর ড. সুরাইয়া খায়ের, উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা), টিআইবি, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. এমদাদুল হক চৌধুরী প্রমুখ।
ঢাকা/আসাদ/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট পর চ ল স শ সন ম নব ক উপজ ল ট আইব
এছাড়াও পড়ুন:
জবির ছাত্রী হলে ‘প্রভোস্টের ছাত্রী’ ত্রাস
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র ছাত্রী হল নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলে ক্যান্টিনের খাবারে পোকা পাওয়া নিয়ে প্রতিবাদ করার জেরে এক শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে ‘প্রভোস্টের ছাত্রী’র বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত ফাতেমা তুজ জোহরা ইমু বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি হল ডিবেটিং সোসাইটির নেত্রী। ভুক্তভোগী হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ১৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থী উম্মে মাবুদা।
আরো পড়ুন:
৩ দাবিতে আবারো রাস্তায় রুয়েট শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব পরিবহন নিশ্চিতের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
জানা গেছে, গত ৩ নভেম্বর রাতে ক্যান্টিনে পরিবেশিত বরবটি-আলু ভাজিতে পোকা পাওয়া যায়। বিষয়টি সমাজকর্ম বিভাগের ১৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থী উম্মে মাবুদা তার ফেসবুকে প্রমাণসহ পোস্ট করেন। পোস্টটি ভাইরাল হলে বহু শিক্ষার্থী এতে সহমত প্রকাশ করেন। পোস্টের পরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযুক্ত ইমু ভুক্তভোগী মাবুদাকে একাধিকবার পোস্ট ডিলিট করতে চাপ দেন এবং প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বারবার তাগাদা দেন।
তবে ভুক্তভোগী মাবুদা ইন্টার্নশিপে থাকা অবস্থায় নির্ধারিত সময়ে দেখা করতে না পারায় গত ৬ নভেম্বর সকালে ইমু সরাসরি তার কক্ষে গিয়ে অপমানজনক ভাষায় কথা বলেন।
ভুক্তভোগী মাবুদা বলেন, “তিনি রুমে এসে চিৎকার করে বলেন— ‘পোস্টটা কেন দিলি? ভোটের প্রসঙ্গ কেন আনলি? এখনই গিয়ে পোস্ট ডিলিট কর, নতুন করে ক্ষমা চেয়ে পোস্ট দিবি।’ তিনি আমাকে ভয় দেখিয়েছেন যে আমার পোস্টে তার ভোট নষ্ট হবে।”
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আঞ্জুমান আরা পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। তিনি প্রাধ্যক্ষের বিভাগের ছাত্রী হওয়ায় গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে জোরপূর্বক ডিবেটিং সোসাইটির পদ দখল করেছেন এবং সেই পদ ব্যবহার করে হলে দীর্ঘদীন ধরেই প্রভাব বিস্তার করে আছেন। তিনি হলে এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ ও ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছেন।
ক্যান্টিনের খাবারের মান, রুম বণ্টন, এমনকি কোনো অভিযোগের বিষয়েও তার ‘শেষ কথা’ চলে। তিনি ছাত্রী হলের সবকিছুই প্রায় নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন হল প্রাধ্যক্ষের প্রশ্রয়ে। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে হলে ছাত্রী তুলে আসন ভাগাভাগিরও অভিযোগও করেন শিক্ষার্থীরা।
হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, ইমু দীর্ঘদিন ধরে হলে ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে ডেকে অপমান করেন ইমু।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, “তিনি প্রাধ্যক্ষ ম্যাডামের বিভাগের ছাত্রী। এ কারণে যা খুশি করেন। অনেকে মুখ খুলতে পারে না।”
আরেকজন বলেন, “ডিবেটিং সোসাইটিতে তার নেতৃত্বই অবৈধ। নির্বাচন হয়নি, গঠনতন্ত্র মানা হয়নি। তিনি নিজেই দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন এবং সেই ক্ষমতা দেখিয়েই বাকি সব নিয়ন্ত্রণ করেন।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফাতেমাতুজ জোহরা ইমু বলেন, “হলের খাবারে মাঝে মাঝে পোকা পাওয়া যায়, এটা সত্যি। তবে ওই শিক্ষার্থী দুই জায়গায় ভিন্ন কথা বলেছে এবং ভোটের প্রসঙ্গ টেনেছে। আমি শুধু জানতে চেয়েছি কেন এমন পোস্ট দিল।” তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন ইমু।
তবে পোস্ট ও হুমকি বিষয়ে মাবুদার বলেন, “আমার পোস্টে কোনো ব্যক্তির নাম ছিল না। শুধু খাবারের মান নিয়ে বলেছি। ইমু আপু সেটাকে রাজনৈতিক ইস্যু বানালেন। এখন যদি ভোটের আগে এমন আচরণ হয়, ভোটে জিতে গেলে কী হবে—তা সহজেই বোঝা যায়।”
মাবুদার পোস্টে সহমত প্রকাশ করে অনেক শিক্ষার্থী মন্তব্য করেছেন, বিষয়টি ‘বাজে রাজনীতি’ এবং ইমুর আচরণের কারণে হলের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সন্ধী লেখেন, “পুরো প্রসঙ্গটাই খাবার নয়, ভোট। কেউ ভালো কিছু বলতে গেলেই তাকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়। এটা খুব নোংরা প্রবণতা।”
সার্বিক বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আঞ্জুমান আরা বলেন, “নির্বাচন সামনে রেখে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। যদি ইমু সত্যিই তাকে (মাবুদা) ক্ষমা চাইতে বলতে গিয়ে চাপ সৃষ্টি করে থাকে, তাহলে তাকেও ক্ষমা চাইতে হবে।”
তিনি বলেন, “খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ এসেছে, বরবটি-কলমিশাক নিষিদ্ধ করা ছিল। তবুও কেন আনা হলো সেটিও তদন্ত করা হবে। রবিবার (৯ নভেম্বর) বৈঠক ডাকা হয়েছে।”
অভিযুক্ত ইমুর বিষয়টি স্বীকার করে প্রাধ্যক্ষ বলেন, “আমি শুনেছি ইমু মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। এ বিষয়ে হলে কয়েকটি অভিযোগ এসেছে। প্রয়োজন হলে কঠোর ব্যবস্থা নেব।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী